E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

বোরো ধানের খেতে ব্লাস্ট ছত্রাকের আক্রমন, চাষীদের মাথায় হাত

২০১৭ এপ্রিল ০৯ ১২:৫৩:১৩
বোরো ধানের খেতে ব্লাস্ট ছত্রাকের আক্রমন, চাষীদের মাথায় হাত

রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার দেয়াড়া ইউনিয়নের পাকুড়িয়া গ্রামের নূর হোসেন বোরো চাষ করেছেন চার বিঘা জমিতে। বিঘা প্রতি আট হাজার টাকা করে লীজের টাকা দিতে হয়েছে তাকে। জমি চাষ, বীজ, সার, সেচ, কীটনাশক ও শ্রমিকদের মুজুরি বাবদ খরচ করেছেন বিঘা প্রতি পাঁচ হাজার টাকা। সব মিলিয়ে ৫২ হাজার টাকা খরচ হলেও ১০ হাজার টাকার ধান পাবেন না বলে আশঙ্কা করছেন।

তিনি জানান, তিন সপ্তাহ আগে যশোরের মনিরামপুরে বোরো খেতে ব্লাস্ট ছত্রাকের আক্রমণ দেখা দেয়। তার পর দেখা দেয় সাতক্ষীরা জেলার তালা উপজেলায়। এ খবর তার কাছে পৌঁছানোর এক দিন যেতে না যেতেই তার খেতেও ব্লাস্ট রোগ দেখা দেয়। এতে ফলন্ত ধানের শীষগুলো দিনে পর দিন শুকিয়ে যাচ্ছে। কৃষি বিভাগের কোন পরামর্শই তাদের কাজে লাগছে না বলে দাবি করেন তিনি।

একই ইউনিয়নের খোর্দ গ্রামের কৃষক মতিয়ার রহমান জানালেন, কপোতাক্ষের কারণে বছরের ছয় মাস জলাবদ্ধতা থাকে তাদের এলাকায়। ফলে এ এলাকার সকল জমি এক ফসলীতে পরিণত হয়েছে। তাই তারা বোরো চাষ করতে বাধ্য হন। তিনি আট বিঘা জমিতে বোরো চাষ করেছেন। দু’ সপ্তাহ আগে ধানের শীষ শুকায়ে যেতে দেখে তিনি কৃষি বিভাগের পরামর্শ নেন। তারা ইফরিয়া সার ব্যবহার করতে নিষেধ করেন। একইভাবে সঞ্চয় করে রাখা পানি ব্যবহারের পাশাপাশি নাটিবো ঔষধ ব্যবহার করতে বলেন। তিন তিন বার স্প্রে করেও কোন লাভ হয়নি। ১০ মণ ধান পাবেন কিনা তা নিয়ে সন্দিহান তিনি। সেক্ষেত্রে বোরো চাষের জন্য এনজিও থেকে নেওয়া ঋণ শোধ করতে না পেওে আত্মহত্যা করা ছাড়া কোন উপায় থাকবে না।

একইভাবে দেয়াড়া গ্রামের আইয়ুব হোসেন, ঘলঘলিয়া গ্রামের সাহেব আলীসহ কয়েকজন জানান, ধান লাগানোর কিছুদিন পর পাতায় এক ধরণের চোখ দেখা দেয়। চোখের পাশে কয়েকটি সাদা দাগও তারা লক্ষ্য করেন। এটাকে পাতা ব্লাস্ট বলা হয়। কয়েকদিন যেতে না যেতেই ধানের ফুল আসার সাথে সাথে শীষের নীচের গীট শুকিয়ে যেতে দেখেছেন। এটাকে ধানের নেক ব্লাস্ট বলা হয়। তবে পাতা ব্লাস্ট ও নেক ব্লাস্টের খুব বেশি প্রভাব পড়েনি তাদের এলাকায়। তবে দু’ সপ্তাহ আগে থেকে গীট ব্লাস্ট (ধানের শীষ শুকিয়ে সাদা হয়ে যাওয়া) রোগ যেভাবে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করেছে তাতে শুধু দেয়াড়া ইউনিয়ন নয়, পার্শ্ববর্তী ইউনিয়নগুলোতে এর প্রভাব পড়েছে। ছত্রাকনাশক নাটিবো, টাটাবো ও টু-ওভার স্প্রে করেও মাঠের পর মাঠ সাদা হয়ে যাচ্ছে। এতে হাজারো কৃষকের জীবনে দুর্গতি নেমে আসবে।

তালা উপজেলার জালালপুর ইউনিয়নের জালালপুর গ্রামের রমজান আলী, সোহাগ হোসেনসহ কয়েকজন জানান, প্রায় এক মাস আগে থেকে কপোতাক্ষেও দু’তীরের কৃষকদের ধান খেতে ব্লাস্ট ছত্রাকের আক্রমণ দেখা দেয়। বিষয়টি তারা ইউনিয়ন সহকারি কৃষি কর্মকর্তা গোলাম মোস্তফাকে জানিয়েছেন। পরামর্শও দিয়েছেন তিনি। এতে কোন কাজ হয়নি। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদেও বাঁচিয়ে রাখার জন্য তারা সরকারের সহযোগিতা কামনা করেন।

তারা জানান,আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় এবার বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছিল তালা ও কলারোয়ায়। বাতাসে ধান গাছের দোল দেখে কৃষকের মনেও দোলা লেগেছিল। তবে তাদের এখন মাথায় হাত। ব্লাস্ট নামক ছত্রাকের আক্রমনে ধানের শীষ শুকিয়ে যাওয়ায় কৃষকের মুখের হাসি এখন রুপান্তরিত হয়েছে বোবাকান্নায়। কৃষি বিভাগের পরামর্শও কোন কাজে লাগছে না। এমনকি জেলা খামার বাড়ির কৃষি কর্মকর্তা প্রকৃত ক্ষতি মানতে চাইছেন না।

সাতক্ষীরা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (খামার বাড়ি) সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর জেলায় ৭৪ হাজার ৪৩০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। যা’ লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৬৫০ হেক্টর বেশী। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে দু’ লক্ষ ৯৭ হাজার মেট্রিক টন।

সাতক্ষীরা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কাজী আব্দুল মান্নান জানান, বর্তমানে ধানে দানা বাঁধা শুরু হয়েছে। কিছু কিছু ধান পেকে যাওয়ায় কাটা শুরু হয়েছে। বর্তমানে কিছু কিছু এলাকায় ব্লাস্ট রোগ দেখা দিয়েছে। এটি একটি ছত্রাক জনিত রোগ। কৃষকদের ছত্রাকনাশক স্প্রে , জমিতে পানি ধরে রাখা, ও কখনো জমিতে ইউরিয়া ব্যবহার না করার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এ ব্যাপারে কৃষকদের মাঝে লিফলেটও বিতরণ করা হয়েছে। যদি কৃষক ভাইরা এসব অনুসরণ করেন তাহলে উৎপাদনে খুব একটা অসুবিধা হবে না বলে মনে করেন তিনি।


(আরকে/এসপি/এপ্রিল ০৯, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

২৯ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test