E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

ফরিদপুরে ভাল দাম পাওয়ায় পাটচাষিদের মুখে হাসি

২০১৭ জুলাই ১৩ ১৩:০৬:০৮
ফরিদপুরে ভাল দাম পাওয়ায় পাটচাষিদের মুখে হাসি

ফরিদপুর প্রতিনিধি : ‘সোনালী আশ’ খ্যাত পাটের অঞ্চল ফরিদপুর। এই জেলার নয়টি উপজেলার মধ্যে আটটিতে পাটে আবাদ হয়ে থাকে। এর আবাদ গত সাত বছরের অন্য যে কোনো ফসলের চেয়ে সাত হাজার ৮২ হেক্টর জমিতে বেশি পাটের চাষ হয়েছে।

অনুকূল আবহাওয়ায় কারণে ফরিদপুরে মানসম্পন্ন পাট উৎপাদন হওয়ায় প্রতি বছরই বাড়ছে পাটের আবাদ ও উৎপাদন।

কৃষকদের দাবি, পাটের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করা হলে জেলার পাটের আবার আরো বাড়বে।

ফরিদপুর পাট গবেষণা অফিস সূত্রে জানা গেছে, জেলায় চলতি মৌসুমে দুই জাতের (তোসা জিআরও ৫২৪-ভারতীয় এবং মাস্তে ও-৯৮৯৭ দেশি জাত) আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে ভারতীয় জাতে পাট ৯০ শতাংশ চাষ হয়ে থাকে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, গত ২০১০-১১ সালে ৭৫ হাজার ৯৬৮ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ করে আট লাখ ৭৩ হাজার ৫৩ বেল পাট উৎপাদন হয়, ২০১১-১২ সালে ৭৭ হাজার ১৯০ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ করে ছয় লাখ ১৭ হাজার ২২ বেল, ২০১২-১৩ সালে ৭১ হাজার ৪৮৩ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ করে আট লাখ ২০ হাজার ৮১ বেল, ২০১৩-১৪ সালে ৭৪ হাজার ৩৯৬ হেক্টর জমিতে আবাদ করে ছয় লাখ ৮৬ হাজার ৪৩৯ বেল, ২০১৪-১৫ সালে ৭৪ হাজার ৮৬ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ করে ছয় লাখ ৭৩ হাজার ৪৭০ বেল, ২০১৫-১৬ বছরে ৭ হাজার ২০৩ হেক্টর জমিতে আবাদ করে সাত লাখ ৩৩ হাজার ৪৯০ বেল, ২০১৬-১৭ সালে ৮২ হাজার ৫০ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ করে নয় লাখ দুই হাজার ১৪৫ বেল পাট উৎপাদন করা হয়।

চলতি ২০১৭-১৮ বছরে ৮২ হাজার ৮৬৫ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ করা হয়েছে, উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে নয় লাখ দুই হাজার ১৫১ বেল।

গত সাত বছরে পাটের আবাদ বেড়েছে সাত হাজার ৮২ হেক্টর জমিতে। যা অন্য যে কোনো ফসলে চেয়ে বেশি বলে মনে করেন জেলা পাট চাষিরা।

জেলার কৃষকরা জানান, চৈত্রের শেষ ও বৈশাখ মাস থেকে ফরিদপুরে পাটের আবাদ শুরু হয়। কর্তন করা হয় আষাঢ়-শ্রাবণ মাসে জমি থেকে পাট কর্তন করা হয়। এই সময় খরা ও বৃষ্টি প্রবণ হওয়ায় এতদাঞ্চলে পাটের আবাদ করা হয়।

তারা জানান, এ মৌসুমে অন্যান্য ফসলের তুলনায় পাট ভালো হয়। এছাড়া বর্ষা বন্যার পানিতে অন্যান্য ফসলের তুলনায় পাট টিকে থাকতে সক্ষম, তাই পাট ফসলই চাষিদের অধিকরত পছন্দ।

বোয়ালমারীর বিভিন্ন মাঠের পাটচাষি দাবি করেন, বিগত বছরগুলোর অধিকাংশ সময়ই পাটের ন্যায্য মূল্য না পেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তারা। তবে এবছর পাটের মূল্য ভাল বলে দাবি তাদের। চাষিরা আশা করছেন, সরকার পাট পণ্যের বিষয়ে এখন আন্তরিক, তাই পাটের ভাল দাম আমরা পাব।

জেলা অন্যতম পাটের বাজার বোয়ালমারী সাতৈর বাজার সেখান কার পাট ব্যবসায়ী কামরুল ইসলাম, খন্দকার নাছিরুল ইসলাম, লিয়াকত হোসেনসহ বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, বর্তমানে প্রথম শ্রেণির পাট ২ হাজার থেকে ২৩শ টাকায়, দ্বিতীয় শ্রেণির পাট ১৮ থেকে ১৯শ টাকায় বিক্রি হচ্ছে সর্বনিম্ন ১৬শ টাকায় প্রতি মণ পাট বিক্রি হচ্ছে।

তারা জানান, এবছর সর্বোচ্চ দুই হাজার পাঁচশ টাকায় প্রতি মণ পাট বিক্রি হয়েছে।

জেলার পাটে আরো একটি বড় বাজার কানাইপুর। এই বাজারের ব্যবসায়ী ফকির মো. বেলায়েত হোসেন, আনন্দো সাহাসহ আরো অনেকেই জানান, ফরিদপুর অঞ্চলের পাটে বিশেষ গুণ হলো এই আশের দানা যেনো অঞ্চল বা দেশের পাটের আশের দানার চেয়ে ভাল মানের। যে কারণে জগত বিখ্যাত পাট উৎপাদন হয় ফরিদপুরে। আমাদের এই বাজারে শুধু ফরিদপুরের ব্যবসায়ীরা নয়, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ব্যবসায়ীরা পাট ক্রয় করতে আসেন। এমনকি সরকারি পাট ক্রয়কেন্দ্রে অধিকাংশ পাটই ফরিদপুর থেকে নিয়ে থাকে।

ফরিদপুরের বোয়ালমারীর ধুলপুকুরিয়ার পাটচাষি পরিতোষ কির্ত্তুনীয়া, সোলায়মান শেখ জানান, বিপুল পরিমাণ পাট উৎপাদন হলেও পাট প্রাক্রিয়াকরণে নানা সমস্যায় পড়তে হয় তাদের। অনেক সময় পানির অভাবে পাট পচানো সম্ভব হয় না। তবে এবারের পানির সেরকম সমস্যা কম হবে। যার কারণে পাটের ভাল রং পাওয়া যাবে।

পাটচাষিদের দাবি, সরকার ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করলে ও আধুনিক পদ্ধতিতে পাট পঁচানোর ব্যবস্থা করলে ফরিদপুর অঞ্চলে পাট আবাদে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে।

ফরিদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক জি এম আব্দুর রউফ জানান, রিবন রেটিং পদ্ধতিতে পাট আবাদে কৃষকদের পরামর্শ দেয়া হলেও তারা বিষয়টিকে নানা ঝামেলার মনে করে গ্রহণ করছে না। তিনি জানান, আবহাওয়াগতভাবে ফরিদপুর অঞ্চল পাট আবাদের জন্যে উপযোগী, ন্যায্যমূল্যের নিশ্চয়তা পেলে কৃষকরা আরো বেশি পাট আবাদে আগ্রহী হবে।

ফরিদপুর চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ড্রাস্ট্রিজের সিনিয়র সহ-সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান জানান, আমাদের জেলা পাট উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত এই জন্য ব্যক্তি উদ্যোগে অনেকগুলো পাটের কলকারখানা তৈরি হয়েছে। আর এই প্রতিষ্ঠানগুলো হাজার হাজার বেকারদের কর্মস্থানের সুযোগ হয়েছে।

তিনি দাবি করে বলেন, সরকার ফরিদপুর অঞ্চলের পাট পণ্যে ভারী শিল্প প্রতিষ্ঠা করলে পাটচাষিরা আরো বেশি লাভবান হবেন।

(ওএস/এসপি/জুলাই ১৩, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

২৫ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test