E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকের ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াই

২০১৭ সেপ্টেম্বর ২০ ১৪:০১:৪৯
বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকের ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াই

টাঙ্গাইল প্রতিনিধি : উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল আর অতিবৃষ্টির ফলে যমুনা ও ধলেশ্বরীর পানি বিপদসীমার দেড়শ সেঃমিঃ ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। টাঙ্গাইলের ৯টি উপজেলায়ই বানের পানি ঢুকে পড়ে। তবে ৫টি উপজেলায় পানিবন্দি হয়ে পড়ে প্রায় সাড়ে চার লাখ মানুষ। এসব এলাকায় লোকসানের পরিমানও বেশি। বিশেষ করে জেলার রোপা আমনের অপূরণীয় ক্ষতি হয়। বন্যায় ক্ষতি পোষাতে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেও বারবার হোঁচট খাচ্ছে ক্ষতিগ্রস্থ কৃষক।

দুই দফায় জমিতে চারা লাগানোর পরও বানের পানিতে তলিয়ে দু’বারই বিনষ্ট হয়েছে রোপা আমনের চারা। নিজের পরিবারের আগাম খাদ্য সংকট ভেবে কৃষক দিশেহারা হয়ে পড়েছে। ফলে আবারো ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে কৃষকরা। তৃতীয় দফায় জমিতে চারা রোপন করছে কৃষক। যদিও তিনবার রোপন করা খরচের ক্ষতি তুলতে পরবে না তবু জমি অনাবাদী রাখতে চায় না তারা।

রোপা আমন, বোনা আমন ও কালিজিরা ধানের ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে বাড়ির উঠান ও উচু জায়গায় তৈরি করে রেখেছেন বীজতলা। জমি থেকে বন্যার পানি নেমে যাওয়ার সাথে সাথে তৃতীয়বারের মতো কৃষকরা ধানের চারা রোপন করছেন। এবারের বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয় ব্রিধান ৪৯, বিআর ১১ ও বিনাশাইল আগাম জাতের রোপা আমন, বোনা আমন ও সুগন্ধি ধানের। স্থানীয় কৃষি বিভাগও ধানের লক্ষমাত্রা অর্জন নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়ে। পরে কৃষি বিভাগ বাড়ির উঠান ও উচু স্থানে বীজতলা তৈরির কৃষকদের পরামর্শ দেন।

টাাঙ্গাইল সদর উপজেলার দাইন্যা ইউনিয়নের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. ওসমান গণি জানান, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের নিজেদের বাড়ির উঠান ও উচু স্থানে ব্রিধান ৪৬, বিআর ২২ ও কালিজিরার লেট জাতের ধানের বীজতলা তৈরির পরামর্শ দেয়া হয়। এসব জাতের ধান দেরিতে রোপন করলেও অল্প সময়েই ফসল ঘরে তোলা যায়। অনেকেই নিজেদের বাড়ির উঠান ও উচু স্থানে বীজতলা তৈরী করেন।
এদিকে, ধানের চারার সংকট থাকায় ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকের অনেকে নতুন করে জমিতে ধান রোপন করতে পারছেন না। অধিকাংশ কৃষক সরকারি সহযোগিতা পাননি বলেও অভিযোগ করেন। বর্তমানে জেলার একমাত্র কালিহাতী উপজেলার বিভিন্ন বাজারে ধানের চারা পাওয়া যাচ্ছে। যেসব চারার প্রতি আটির মূল্য ছিল ২ থেকে ৩ টাকা বর্তমাতে সেই আটি কিনতে হচ্ছে ১৫ থেকে ২০টাকায়। ফলে কেউ কেউ এতো চড়া মূল্যের চারা কিনে জমিতে ধান রোপন করছেন না।

জেলার দেলদুয়ার উপজেলার পাথরাইলে দেখা যায়, জমি থেকে পানি নেমে যাওয়ায় জমি পুনরায় প্রস্তুত করতে কৃষকরা ব্যস্ত। কয়েকদিন পানি থাকায় জমিতে আবর্জনায় ভরে গেছে। আগের চারার লেশমাত্রও নেই। এসময় জমিতে কাজ করা বর্গাচাষি দুলাল মিয়া বলেন, জমিতে চারা লাগানোর চেয়ে জমি পরিস্কার করে উপযুক্ত করতেই বেশি খরচ পড়ছে।

বগুড়া থেকে আসা শ্রমিক ধানের চারা রোপন করছেন। তিনি বলেন, এখনকার চারা বিস্তার হবে কিনা সন্দেহ। তবুও জমি যেন অনাবদি না থাকে সেজন্য তাদের মাধ্যমে জমির মালিক আব্দুর রাজ্জাক চারা রোপন করাচ্ছেন।

এ সময়ে ধান রোপনের শ্রমিকের মুজুরি বেশি। এমনিতেই বন্যার ধকল, তারপরও প্রতিদিন মাথাপিছু শ্রমিকের মূল্য ৫০০ টাকা। ফলে বাড়ির নারীদের চারা উঠাতে ব্যবহার করছেন কৃষকরা। এরকম এক নারী জানান, ধান রোপনের খরচ বাঁচাতে ও দ্রুত জমিতে চারা রোপন শেষ করতে পুরুষদের সাহায্য করার জন্য ওই নারী উঠান থেকে চারা তুলছেন।

টাঙ্গাইল জেলা কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আবু আদনান জানান, জেলায় চলতি মৌসুমে ৩২ হাজার ৩৪৫ হেক্টর জমিতে বোনা আমন ও ৮১ হাজার ৯০০হেক্টর জমিতে রোপা আমন রোপন করা হয়েছিল। এরমধ্যে বেশিরভাগ জমিই তলিয়ে আবাদি জমি পতিত হয়ে পড়ে।

তিনি আরো জানান, ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। বন্যার পানি নেমে গেছে, এখন ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের পুর্নবাসন করা হবে। এছাড়া বন্যার ক্ষয়ক্ষতি পুষিয়ে নিতে কৃষকদের চারা ও সার সহ অন্যান্য উপকরণ বিনামূল্যে সরবরাহ করা হচ্ছে।


(আরকেপি/এসপি/সেপ্টেম্বর ২০, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

১৯ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test