E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

জলবায়ু সম্মেলনের আগেই বাংলাদেশের অর্জন নিয়ে হতাশ মন্ত্রী

২০১৭ নভেম্বর ০২ ১৫:৫৩:২৭
জলবায়ু সম্মেলনের আগেই বাংলাদেশের অর্জন নিয়ে হতাশ মন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার : জার্মানির বন শহরে আগামী ৬ থেকে ১৭ নভেম্বর বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন (কপ-২৩) অনুষ্ঠিত হবে। অন্যান্য বছরের মতো এবারও বাংলাদেশ থেকে পরিবেশ ও বনমন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল সম্মেলনে অংশ নেয়ার জন্য যাচ্ছেন।

তবে সম্মেলনে যাওয়ার আগেই বাংলাদেশের অর্জন নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেন পরিবেশ ও বনমন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু। বৃহস্পতিবার জলবায়ু সম্মেলনে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রী সম্মেলন শেষে দেশে ফেরার পর অর্জনের বিষয়ে সাংবাদিকদের জানতে না চাওয়ার বিষয়ে অনুরোধ জানান।

এবারের কপ (কনফারেন্স অব পার্টিস) সম্মেলন আয়োজনকারী দেশ ছিল দ্বীপরাষ্ট্র ফিজি। তবে তাদের এ ধরনের বড় সম্মেলন আয়োজনের কাঠামো না থাকায় জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশনের সচিবালয় জার্মানিতে এ সম্মেলন হচ্ছে।

পরিবেশ ও বনমন্ত্রী বলেন, সম্মেলন যেখানে হওয়ার কথা ছিল সেখানে হচ্ছে না। হচ্ছে আরেক জায়গায়। গত সম্মেলনে আলাপ হয়েছিল একশ বিলিয়ন ডলার সংগৃহীত হবে। বিভিন্ন কাজে তা ব্যবহৃত হবে। উন্নয়নশীল বিশ্ব যারা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তারা বেশি প্রিফারেন্স (অগ্রাধিকার) পাবে।

‘এবার আমরা যাচ্ছি পুরনো কথাগুলোই বলার জন্য এবং কী অগ্রগতি হয়েছে, তা জানতে। অগ্রগতি তো প্রায়…’ বলেই পাশে বসা কর্মকর্তাদের দিকে তাকিয়ে মন্ত্রী বলেন কী বলেন, ‘অগ্রগতি শূন্যের কোঠায় না?’

মঞ্জু বলেন, প্যারিসে গত জলবায়ু সম্মেলনে যে চুক্তি হয়েছিল তার অগ্রগতি প্রায় শূন্য, শূন্যই। লক্ষ্যণীয় বিষয় হলো চীন আমেরিকাকে আহ্বান জানিয়েছে, আসুন এই সংকটে আমরা একসঙ্গে কাজ করি। কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যে নেতৃত্ব তারা ওয়ার্ল্ড অর্ডারকে ডিফাই (তুচ্ছ করা) করছে এবং চ্যালেঞ্জ করছে। উন্নত দেশগুলো উন্নয়ন দেশগুলোর মতো আচরণ করছে। আমাদের উন্নত দেশের মতো আচরণ করতে হবে।

‘অবশ্য প্যারিস অ্যাগ্রিমেন্টটা লিগ্যাল বাইন্ডিং নয়, এটা জেন্টেলম্যান এগ্রিমেন্ট।’

মন্ত্রী বলেন, আমাদের এবার বিরাট টিম যাচ্ছে, আসার পর আপনারা জিজ্ঞাসা করবেন কী পাইলেন, আমি বলব কিছুই পাইনি। আপনারা জিজ্ঞাসা করবেন ট্যাক্স পেয়ারদের (করদাতাদের) পয়সায় গেলেন, খেলেন, সপিং করলেন, এখানে এসে বলছেন কিছুই পেলাম না। তাইলে গেলেন কেন?’

‘আমাকে এই প্রশ্ন করতে পারবেন না, কারণ আল্লাহর রহমতে আপনাদের দোয়ায় আমি ট্যাক্স পেয়ারদের পয়সার (জলবায়ু সম্মেলন) যাই না।’

তিনি বলেন, আমি মনে করি এ ধরনের কনফারেন্সে বাংলাদেশের উপস্থিতি একান্ত প্রয়োজন। কারণ হলো, আবহাওয়ার পরিবর্তনে যে দেশগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হবে বাংলাদেশ সেই দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম।’

পরিবেশ মন্ত্রী বলেন, আমরা যাচ্ছি প্রধানত আমাদের উদ্বেগ জানাতে। কিন্তু আমাদের উদ্বেগ জানালেই একটি বিশেষ দেশের অবস্থান পরিবর্তিত হবে এটা আমি বিশ্বাস করি না। এই পরিস্থিতিতেও বিশ্বব্যাংকসহ অন্যান্য ব্যাংকগুলো অর্থ ধার দেবে। কিন্তু দ্বিপাক্ষিক যে টাকাগুলো পেতাম যেমন ব্রিটিশদের ডিএফআইডি, তা কিন্তু পাচ্ছি না। তাই আমি বলব প্যারিস চুক্তির আগেই আমরা ভাল ছিলাম।

‘সম্মেলনে আমরা ক্ষতিপূরণ শব্দটা ব্যবহার করব না, আমরা গ্র্যান্ড চাইব। বলব আমরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি এজন্য কমপেনসেট কর। পয়সাওয়ালাদের কথা বললে মডেস্টলি বলতে হয়।’

তিনি আরও বলেন, আমাদের টিম ও টিমের বাইরে যারা যাবেন সম্মেলনে তারা গ্র্যান্ড গ্যান্ড করতে থাকবেন। গ্র্যান্ড নিয়ে আসবেন। কিন্তু আপনারা আমাদের প্রশ্ন করবেন না, এটা বলে গেলাম ইনএ অ্যাডভান্স- যে কী নিয়া আইলেন? ‘আমি আগেই যাইতে চাইছিলাম না। বাট আই অ্যাম রিপ্রেজেন্ট দ্য কান্ট্রি।’

জলবায়ু তহবিলের অর্থ ব্যবহারের দুর্নীতির বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে মন্ত্রী বলেন, (জলবায়ু তহবিলের দুর্নীতি নিয়ে) স্পষ্ট করে বললে টিআইবি খুব বিপদে আছে। আগে যত শক্তভাবে লিখতে পারত, এখন পিছলাইয়া যাচ্ছে। ধরে আবার ধরে না, ছাড়ে আবার ছাড়ে না। আমরা প্রজেক্ট নিতে পারছি না এটা হয়তো এক সময় ছিল। এটা বর্তমানে নেই।

মন্ত্রী আরও বলেন, জলবায়ু তহবিলের টাকা স্থানীয় সরকার, শিল্প মন্ত্রণালয়, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে চলে গেল। এই (পরিবেশ ও বন) মন্ত্রণালয়ের দুর্নীতি করার অবকাশ আছে বলে আমি জানি না। প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য টাকা তো অন্য মন্ত্রণালয়ে চলে যাচ্ছে। আমি কোনো প্রজেক্ট বাস্তবায়ন করি না।

পরিবেশ ও বন উপমন্ত্রী আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব বলেন, আমি ফিজিতে প্রি-কপে অংশগ্রহণ করি। যাদের কারণে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি তাদের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে প্রি-কপে, এটা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সেখানে একটা বিশেষ দেশের মন্ত্রী নিজেকে অনেকটা অপরাধী হিসেবে মনে করে সেখানে ছিল।

তিনি বলেন, আশা করি কপ-২৩ সম্মেলনে কিছুটা হলেও আমাদের সফলতা আসবে।

পরিবেশ ও বন সচিব ইসতিয়াক আহমদ বলেন, (জলবায়ু ইস্যুতে) আমাদের স্বার্থ যাতে রক্ষা হয় এজন্য সংশ্লিষ্টদের নিয়ে আমরা একটি স্ট্র্যাটেজি করেছি। বৈশ্বিক প্রচেষ্টা আমাদের থাকবে।

তিনি বলেন, আমাদের ফোকাসটা থাকবে যাতে রুল বুকটা প্রণয়ন করা। রুল বুকে বিভিন্ন অ্যাসপেক্ট থাকবে, এটা হবে বৈশ্বিক বিষয়। এছাড়া ফাইন্যান্সিংয়ের বিষয়গুলোতে আমার বেশি জোর দেব।

(ওএস/এসপি/নভেম্বর ০২, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

০৫ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test