E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

রোহিঙ্গা স্রোতে চাপের মুখে স্থানীয়দের জীবিকা

২০১৮ জানুয়ারি ২১ ১১:০৩:৪৪
রোহিঙ্গা স্রোতে চাপের মুখে স্থানীয়দের জীবিকা

নিউজ ডেস্ক : মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নির্যাতনের মুখে গত বছরের আগস্ট মাস থেকে সাড়ে ছয় লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থী কক্সবাজারে এসে আশ্রয় নিয়েছেন। এছাড়া আগে থেকে আশ্রয় নেয়াসহ বর্তমানে ওই অঞ্চলে রোহিঙ্গা শরণার্থীর সংখ্যা প্রায় দশ লাখ। খুব অল্প সময়ের মধ্যে স্রোতের মতো আসা রোহিঙ্গাদের চাপে কৃষি জমি, শ্রমবাজার ও শিক্ষাসহ ওই অঞ্চলের মানুষজনের জীবনের নানা দিক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় মানুষজন ও উন্নয়নকর্মীরা। খবর বিবিসি বাংলা।

উখিয়া ও টেকনাফে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর তুলনায় রোহিঙ্গাদের জনসংখ্যা এখন দ্বিগুণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশ্বব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বিবিসিকে বলেন, মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদেরকে যে স্থানীয় লোকেরা আশ্রয় দিচ্ছেন তাদের জন্য জরুরি ভিত্তিতে সহায়তা দরকার।

বিশ্ব ব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক ভাইস প্রেসিডেন্ট এ্যানেট ডিক্সন বলেন, বিপুল সংখ্যায় রোহিঙ্গারা আসার ফলে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর অবকাঠামো এবং পানির উৎসের ওপর তীব্র চাপ পড়েছে।

এ্যানেট ডিক্সন গত পাঁচ দিন ধরে মিয়ানমার থেকে গত ছয় মাসে পালিয়ে আসা ৬ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা মুসলমানদের ক্যাম্পগুলো সফর করেছেন। বিশ্ব ব্যাংক বলছে, রোহিঙ্গাদের মতোই তাদের আশ্রয় দানকারী স্থানীয় জনগোষ্ঠীরও ব্যাপক সহায়তা দরকার।

কিভাবে প্রভাবিত হচ্ছে তাদের জীবন? এর জবাবে টেকনাফের নীলা ইউনিয়নের লবণ চাষী মোহাম্মদ আলী বিবিসিকে বলেন, গত আগস্টে ঐ এলাকায় মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের তিনি সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন। তার জমিতে থাকার ব্যবস্থা ও খাবার দিয়েছেন। কিন্তু তার মূল পেশা লবণ চাষ এখন একদম বন্ধ হয়ে রয়েছে।

তিনি বলেন, আমাদের লবণের খেত ও চাষের জমি বলতে গেলে ওদের দখলে। আমার জমিতে রোহিঙ্গাদের দুইশ পরিবার বাস করছে। লবণ চাষের সময় হল শুকনা মৌসুম। বর্ষাকালে লবণ চাষ সম্ভব না। বৈশাখ মাস পর্যন্ত লবণ চাষ করা যায়। কিন্তু বৈশাখ আসতে মাত্র তিন মাস। এর মধ্যে তারা না উঠে গেলে এই মৌসুমে আমি তো চাষই করতে পারবো না।

এই পরিস্থিতি ঐ অঞ্চলের বহু মানুষের। উখিয়া ও টেকনাফের স্থানীয় জনগোষ্ঠী পাঁচ লাখের মতো। কিন্তু আগে আসা রোহিঙ্গাসহ ঐ অঞ্চলে এখন রোহিঙ্গাদের সংখ্যা দশ লাখ ছাড়িয়ে গেছে।

মানবিক কারণে রোহিঙ্গাদের সহায়তায় ঐ অঞ্চলের মানুষ এগিয়ে এসেছে এবং এখনও অনেকে সহায়তা করছে। কিন্তু প্রাণ ভয়ে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের দীর্ঘস্থায়ী অবস্থানের ফলে এলাকার মূল জনগোষ্ঠীরও যে সহায়তার দরকার হবে বা স্থানীয়দের কথা ভুলে গেলে যে চলবে না সেটি কেবল অনুধাবন করতে শুরু করেছেন উন্নয়নকর্মী ও সরকারি কর্মকর্তারা।

কক্সবাজার ভিত্তিক এনজিও শেডের প্রোগ্রাম কো-অরডিনেটর শওকত আলী বলেন, স্থানীয় মানুষজনের জীবন তাদের উপস্থিতিতে নানাভাবে প্রভাবিত হচ্ছে। রোহিঙ্গারা কৃষি জমিতে আশ্রয় নেবার কারণে কৃষি কাজ বন্ধ রয়েছে অনেকের। অর্থের অভাবে স্থানীয় শ্রমবাজার সস্তায় কাজ করছেন রোহিঙ্গারা। যার ফলে স্থানীয় শ্রমবাজারে আর স্থানীয়দের আর কাজ জুটছে না।

পাহাড় ও গাছ কেটে বাড়িঘর বানানোর কারণে এলাকার জীববৈচিত্র্য ও গাছপালা ঝুঁকির মুখে বলে জানিয়েছেন উন্নয়ন কর্মীরা। নাফ নদীতে রোহিঙ্গাদের পারাপার বন্ধে নিষিদ্ধ করা হয়েছে জেলেদের মাছ ধরা। তাই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন এলাকার জেলেরা।

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আলী হোসেইন বলেন, স্থানীয় লোকজনের উপর যে ইমপ্যাক্ট পড়ছে বা তারা যে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সেই ব্যাপারে আমাদের জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিস্তারিত একটি প্রতিবেদন আকারে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে তুলে ধরেছি। বিশেষ করে কৃষি মন্ত্রণালয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, পরিবেশ ও বন সহ যে মন্ত্রণালয়গুলো এখানে দরকার তাদের জানিয়েছি। এই ক্ষতির বিষয় ও পরিমাণ নিরূপণ করে কিভাবে তা কাটিয়ে ওঠা যায় সেই ব্যাপারে চিঠি দেয়া হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার কাছে সহায়তা চাওয়া হয়েছে। আমরা আশা করি এ ব্যাপারে এটা সহযোগিতা পাওয়া যাবে।

(ওএস/এসপি/জানুয়ারি ২১, ২০১৮)

পাঠকের মতামত:

১৮ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test