E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

নারীদের অর্থনৈতিক স্বাধীনতার তাগিদ প্রধানমন্ত্রীর

২০১৮ মার্চ ০৮ ১৬:৫২:৪৪
নারীদের অর্থনৈতিক স্বাধীনতার তাগিদ প্রধানমন্ত্রীর

স্টাফ রিপোর্টার : নারী অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য নারীর অর্থনৈতিক স্বাধীনতা অর্জনের তাগিদ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আর এ জন্য সরকার সব ধরনের নীতি সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে বলেও জানান তিনি।

বৃহস্পতিবার আন্তর্জাতিক নারী দিবসে রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা এ কথা বলেন। এবারের দিবসের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে, ‘সময় এখন নারীর, উন্নয়নে তারা, বদলে যাচ্ছে গ্রাম শহরের কর্ম জীবনের ধারা।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘নারীর অর্থনৈতিক স্বাধীনতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মেয়েদেরকে বসে থাকলে চলবে না। নিজেদের কাজ করতে হবে, লেখাপড়া শিখতে হবে এবং নিজেদের পায়ে দাঁড়াতে হবে।’

শেখ হাসিনা চান, চাকরির পাশাপাশি ব্যবসাতেও নারীরা এগিয়ে আসুক। বলেন, ‘এসএমই ফাউন্ডেশনে মহিলা উদ্যোক্তাদের জন্য স্বল্প সুদে ঋণ দেয়া হয়। তারা নিজেরা যেন ব্যবসা বাণিজ্য গড়ে তুলতে পারে, সে সুযোগটা আমরা করে দিয়েছি।’

প্রায় ৪০ মিনিটের বক্তব্যে বাংলাদেশে নারীদের অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম, মুক্তিযুদ্ধের সময় বেপরোয়া ধর্ষণ, যুদ্ধের পর নারীদেরকে পুনর্বাসন, বর্তমান পর্যায়ে নিয়ে আসতে তার সরকারের নানা উদ্যোগ এবং প্রচেষ্টার কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। সেই সঙ্গে চ্যালেঞ্জিং পেশায় নারীরা যে সাফল্য রাখছে, সেটির উল্লেখ করে তিনি ভূয়সী প্রশংসাও করেন।

নারী-পুরুষ সকলে মিলে কাজ করতে পারলেই এই দেশ এগিয়ে যাবে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সমাজে যদি পড়ে থাকে তাহলে এই সমাজ মাথা তুলে উঠে দাঁড়াতে পারবে না।’

মেয়েদেরকে চাকরির পাশাপাশি আত্মকর্মসংস্থানে নিয়োজিত হওয়ার তাগাদা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাবা মা যখন দেখে আমার মেয়ে লেখাপড়া শিখে সে অর্থ উপার্জন করতে পারে, সংসারে সহযোগিতা করতে পারে, তখন বিয়ে দেয়ার জন্য তাড়াহুড়ো করবে না।’

অভিভাবকদের উদ্দেশ্যে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিয়ে দিলেই মেয়ের ওপর দায়িত্ব চলে যায় না। বরং দায়িত্ব বাড়ে। কিন্তু মেয়েকে লেখাপড়া শিখিয়ে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা যেতে পারে, তাহলে সেটাই সমাজের জন্য সবচেয়ে ভালো। পরিবারের জন্যও সেটা একটা সুরক্ষা সৃষ্টি করতে পারে।’

মেয়েরা বাবা মায়ের শেষ জীবনের আশা ভরসা হয় বলেও মনে করেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘বাবা মা বৃদ্ধ হয়ে গেলে ছেলের বউ যতটা না দেখে, মেয়েরা তার চেয়ে বেশি দেখে। সেটাও বাবা মায়ের মনে রাখা উচিত।’

মেয়েদেরকে শ্বশুর বাড়ির প্রতিও দায়িত্বশীল হওয়ার তাগাদা দেন শেখ হাসিনা। বলেন, ‘বাবা মা, শ্বশুর-শাশুড়ি সবার প্রতিই দায়িত্ব সমানভাবে পালন করা উচিত।’

চাকরি বা ব্যবসার পাশাপাশি পরিবারের প্রতি দায়িত্ব পালন করে যেতেও নারীদের আহ্বান জানান শেখ হাসিনা। বলেন, ‘কথাই আছে, সংসার সুখের হয় রমণীর গুণে। এই কথাটাও যেন আমরা ভুলে না যাই।’

১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পর প্রাথমিকে নিয়োগে ৬০ শতাংশ নারী কোটা চালুর কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। জানান, তার আগ্রহেই সচিব, হাইকোর্টের বিচারক, জেলা প্রশাসন, পুলিশ সুপার, সেনাবাহিনী, নৌ বাহিনী, বিমান বাহিনী এবং সব শেষ বিজিবিতে নারী সেনা নিয়োগ করা হয়েছে।

‘মেয়েরা এখন এয়ারফোর্স বিমান ও হেলিকপ্টার চালানো শুরু করে দিয়েছে। আর্মিতে তো পেয়ে পাইলট আছে, রেলগাড়িতে মেয়ে ড্রাইভার আছে, গাড়িচালক মেয়ে আছে।...‘এখন আমাদের বেশ কয়েকজন মহিলা এমবাসেডরও (রাষ্ট্রদূত) আছে।’

‘সংসদে সংরাক্ষত আসনে ৫০ জনের পাশাপাশি ২২ জন সরাসরি নির্বাচিত। স্পিকার, সংসদ নেতা হিসেবে আমি আছি, বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ, উপনেতা সাজেদা চৌধুরী আছেন। জাতীয় সংসদে চারটি উচ্চপদ, সবই মহিলারা দখল করে আছে।’

নারীদের দক্ষতারও প্রশংসা করেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘মেয়েরা যখন কাজ করে, আমি মনে করি খুব ভালোভাবে কাজ করে। তাদের কাজের দক্ষতা অনেক বেশি, এ বিষয়ে আমার কোনো সন্দেহ নাই।’

‘আজকে খেলাধুলায় মেয়েরা পিছিয়ে নেই। আমাদের মেয়েরা তো আজকে এভারেস্টে চলে যাচ্ছে। সুযোগ পেলে তারা করতে পারে, দেখাতে পারে, এটা প্রমাণিত সত্য।’

‘যেখানেই দেখি মেয়েদের দায়িত্ব দেয়া যায়, মেয়েরা সেখানেই খুব ভালো দক্ষতার পরিচয় দিয়ে যাচ্ছে।’

‘মেয়েরা যে পারে, সেটা সর্বক্ষেত্রেই আজকে প্রমাণ হচ্ছে। নেভিতে মেয়েরা অত্যন্ত চমৎকার কাজ করে যাচ্ছে, আর্মিতে করছে, এয়ারফোর্সে করছে, বিজিবিতে কখনও মেয়ে ছিল না। বিজিবিতে আমরা নিয়োগ দিয়েছি, তারাও খুব ভালো কাজ করছে।’

‘এত সহজে হয় না বাধা আসে, কিন্তু তার পরও আমরা করেছি।...আমি যখন প্রথম নারী পুলিশ এসপি করতে চাই, অনেক বাধা এসেছিল। মেয়েরা আবার এসপি হবে কীভাবে। আমি কিন্তু জোর করে দিয়েছিলাম। মুন্সিগঞ্জে প্রখম রওশন আরা, তাকে আমরা এসপি করলাম। প্রথম গিয়েই একটা ডাকাত ধরল। নিজে পিস্তল উঁচিয়ে ধরে ডাকাত ধরেছিল। তখন গর্বে আমার বুকটা ভরে গিয়েছিল। যারা বাঁধা দিয়েছিলেন, তাদের বললাম, দেখেন কত সাহসের সঙ্গে আমার মেয়েরা সব পারে। এভাবেই একেকটা জায়গায় আমরা মেয়েদের নিয়ে এসেছি।’

নারীর ক্ষমতায়নে বাংলাদেশের অগ্রগতির প্রশংসাও করেন শেখ হাসিনা বলেন, ‘অনেক উন্নত দেশ, সভ্য দেশ যা পারে না, তা আমরা করে দেখিয়েছি। কাজেই আমি চাই আমাদের বোনেরা একটা আত্মবিশ্বাস নিয়ে, আত্মমর্যাদা নিয়ে চলবেন।’

নারীদের প্রতিষ্ঠায় সরকার সব ধরনের চেষ্টা চালাচ্ছে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী। মাতৃত্বকালীন ছুটি, তিন মাস থেকে দুই ধাপে ছয় মাস করা, সন্তানের পরিচয়ে বাবার সঙ্গে মায়ের নাম যুক্ত করা, ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারে ছেলের পাশাপাশি একজন নারী উদ্যোক্তা নিশ্চিত করা মেয়েদের তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিতে তথ্য আপা প্রকল্প চালু, নগরভিত্তিক প্রান্তিক মহিলা উন্নয়ন প্রকল্প, নারী উদ্যোক্তাদের বিকাশ সাধন প্রকল্প, অতি দরিদ্র ১০ লক্ষ মহিলার দক্ষতা উন্নয়ন ও কারিগরি বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ দেয়া, নারী উদ্যোক্তাদের উৎপাদিত পণ্য ও সেবা দেশে বিক্রির জন্য নারীবান্ধব বিপণন নেটওয়ার্ক জয়িতা গড়ে তোলার কথা বলেন শেখ হাসিনা।

উচ্চ শিক্ষায় সরকার যে বৃত্তি দেয়, তার ৭৫ শতাংশ মেয়েরা পায় বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী।

(ওএস/এসপি/মার্চ ০৮, ২০১৮)

পাঠকের মতামত:

১৮ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test