E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

বাস্তবে মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যা ত্রিশ লাখের বেশি

২০১৮ মার্চ ৩০ ১৭:৩৯:৩৯
বাস্তবে মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যা ত্রিশ লাখের বেশি

স্টাফ রিপোর্টার : সরকারি হিসাবে মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের সংখ্যা ৩০ লাখ বলা হলেও বাস্তবে এই সংখ্যা আরও বেশি বলে দাবি করেছেন ইতিহাসবিদ অধ্যাপক মুনতাসিম মামুন। তিনি বলেন, ‘এখানে ধীরে ধীরে দীর্ঘদিন ধরে গণহত্যা চালানো হয়নি, খুব দ্রুত এবং জনসংখ্যার ঘনত্ব বেশি থাকায় খুব অল্প সময়ের মধ্যেই অনেক বেশি মানুষকে হত্যা করা হয়েছে।’ উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, চুকনগরে কয়েক ঘণ্টায় প্রায় ১০ হাজার মানুষকে হত্যা করা হয়েছিল।

শুক্রবার (৩০ মার্চ) বাংলা একাডেমির কবি শামসুর রাহমান সেমিনার কক্ষে গণহত্যা-নির্যাতন ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষণা কেন্দ্রের উদ্যোগে ‘গণহত্যা বধ্যভূমি ও গণকবর জরিপ’ শীর্ষক দিনব্যাপী সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন।

মুনতাসির মামুন বলেন, ‘সার্বজনীন মানবাধিকার জরিপের ভিত্তিতে জাতিসংঘ একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল ১৯৮২ সালে। তাতে বলা হয়, মুক্তিযুদ্ধের সময় প্রতিদিন গড়ে ছয় হাজার থেকে ১২ হাজার মানুষ হত্যা করা হয়েছিল। জাতিসংঘের অনুমিত সর্বোচ্চ গড় হিসাব নিলে মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যা ৩০ লাখ পেরিয়ে যায়। মুক্তিযুদ্ধে নিহতদের সংখ্যা ৩০ লাখ বলে যে হিসাব সরকার দিয়েছিল, সেটাও সারাবিশ্ব মেনে নিয়েছে।’

এই সেমিনারে দেশের ১০টি জেলার গণহত্যার নতুন জরিপ প্রকাশ করা হয়। স্বাধীনতার পর এই প্রথম এ ধরনের কোনো জরিপে গণকবর, বধ্যভূমি ও নির্যাতন কেন্দ্রের নতুন হিসাব প্রকাশ করা হয়েছে বলে সেমিনারে জানানো হয়।

প্রাথমিক ফলাফল বিশ্লেষণ করে জেলা ১০টিতে দুই হাজার ১০৭টি গণকবর, বধ্যভূমি ও নির্যাতন কেন্দ্র পাওয়া গেছে। এর মধ্যে খুলনায় প্রাপ্ত গণকবর, বধ্যভূমি ও নির্যাতন কেন্দ্রের সংখ্যা ১২২৭টি, রাজশাহীতে ২২৬টি, নারায়ণগঞ্জে ২৮৮টি, নীলফামারীতে ৮৫টি, কুড়িগ্রামে ৮৪টি, পাবনায় ১২৬টি, বগুড়ায় ১৩৯টি, নাটোরে ১২৬টি, সাতক্ষীরায় ৪১টি ও ভোলায় ৭৪টি।

এই জরিপের বিষয়ে অধ্যাপক মুনতাসির মামুন বলেন, ‘স্বাধীনতার ৪৭ বছর পর এই প্রথম গণহত্যা-বধ্যভূমি ও গণকবর নিয়ে জরিপ শুরু হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ১০টি জেলায় এই জরিপ করা হয়েছে। পরবর্তী সময়ে দেশের প্রতিটি জেলায় এই জরিপ চালানো হবে।’

মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে বাদ দিয়ে আমাদের আমাদের সংস্কৃতির চর্চা হতে পারে না ব‌লে ম‌নে ক‌রেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। তি‌নি বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধে সংঘটিত অনেক হত্যাকাণ্ডের কথা আমাদের অজানা রয়ে গেছে। এই ইতিহাস তরুণ প্রজন্মকে জানাতে হবে, সারাবিশ্বকে জানাতে হবে।'

সম্প্রতি মিয়ানমা‌রের সেনাবাহিনী রাখাইন রা‌জ্যে অভিযা‌ন চা‌লি‌য়ে রো‌হিঙ্গা নাগরিকদের নি‌র্বিচা‌রে হত্যা ক‌রে‌ছে। তাদের এই অভিযানকে এরই মধ্যে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ গণহত্যা বলে মন্তব্য করেছে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখেরও বেশি মানুষকে পাকিস্তানি সেনারা হত্যা করেছে। ৪৭ বছর পার করলেও ওই হত্যাকাণ্ড গণহত্যা হিসেবে বিশ্বে তেমনভাবে সাড়া ফেলেনি। এ বিষয়ে দুঃখ প্রকাশ করেন আসাদুজ্জামান নূর।

মন্ত্রী বলেন, ‘মিয়ানমারের গণহত্যা বিশ্বের কাছে স্বীকৃতি পেয়েছে। কিন্তু আমাদের দেশে সংঘটিত গণহত্যা ছিল আরও ভয়াবহ। কিন্তু কোন রাজনীতির কারণে এই গণহত্যার স্বীকৃতি মিলছে না— তা আমার জানা নেই।’

নিজ বক্তব্যে এ ধরনের গবেষণার ফল বই আকারে বের করে দেশের প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সরকারি উদ্যোগে পৌঁছাতে দেয়ার পরামর্শ দেন লেখক ও সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির। তিনি বলেন, ‘এ ধরনের গবেষণার ফল বই আকারে বের করে দেশের প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সরকারি উদ্যোগে পৌঁছাতে দিতে পারলে এ দেশে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী তরুণ প্রজন্ম গড়ে উঠবে।’ একই সঙ্গে যারা এ দেশে গণহত্যা নিয়ে কটূক্তি করে, যারা ইতিহাস বিকৃত করছে তাদের যথাযথ শাস্তির বিধান রেখে আইন প্রণয়ন করারও পরামর্শ দেন তিনি।

(ওএস/এসপি/মার্চ ৩০, ২০১৮)

পাঠকের মতামত:

১৯ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test