E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

রোহিঙ্গাদের ফেরাতে জাতিসংঘের সঙ্গে মিয়ানমারের চুক্তি

২০১৮ জুন ০৬ ১৭:২৫:১৬
রোহিঙ্গাদের ফেরাতে জাতিসংঘের সঙ্গে মিয়ানমারের চুক্তি

স্টাফ রিপোর্টার : রাখাইনে সেনা নিপীড়ন ও নির্যাতনের মুখে প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে জাতিসংঘের সঙ্গে চু্ক্তি করেছে মিয়ানমার।

এতদিন ধরে দেশটি রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে জাতিসংঘের সঙ্গে চুক্তিতে যেতে তীব্র অনীহা প্রকাশ করে আসছিল। এমনকি মিয়ানমারের ডি-ফ্যাক্টো নেত্রী অং সান সু চিও রাখাইন সংকটে জাতিসংঘের মধ্যস্থতার প্রয়োজন নেই বলে জানান।

বুধবার মিয়ানমারের রাজধানী নেপিডোতে এ সমঝোতা চুক্তি সই হয়। চুক্তি অনুযায়ী রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মিয়ানমারে ফিরিয়ে নিতে সহযোগিতা, অবকাঠামোগত উন্নয়ন, নিরাপত্তা এবং টেকসই প্রত্যাবর্তনের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

চুক্তিটিকে ‘রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে এই চু্ক্তি গুরুত্বপূর্ণ প্রথম পদক্ষেপ’ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন মিয়ানমারে জাতিসংঘের আবাসিক এবং মানবিক সমন্বয়কারী নাট ওসৎবি।

এই সমঝোতা চুক্তির মাধ্যমে অনেক কাজ হবে এবং সেই কাজগুলোকে অবমূল্যায়ন করা উচিত হবে না জানিয়ে ওসৎবি বলেন, ‘আমরা আনুমানিক সাত লাখ রোহিঙ্গার ব্যাপারে কথা বলেছি। যারা শুধুমাত্র মিয়ানমারে ফিরবেই না বরং সম্পূর্ণ নিরাপত্তা পাবে।’

‘তারা মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনের পর সামাজিক পরিচয় এবং সকল কাজে যোগ দিতে পারবে। একইসঙ্গে স্থায়ীভাবে বসবাস করতে পারে।’

জাতিসংঘ বলছে, এই চু্ক্তির ফলে শরণার্থী এবং উন্নয়ন সংস্থাগুলি রাখাইনে প্রবেশের অনুমতি পাবে এবং রাখাইনের বাস্তব পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে পারবে। এছাড়া সঠিক তথ্য সরবরাহ করা এবং এসব সংস্থা রোহিঙ্গাদের ফেরার জন্য রাখাইন উপযুক্ত কি না সে বিষয়েও সিদ্ধান্ত দিতে পারবে।

তবে জাতিসংঘের সঙ্গে মিয়ানমারের চুক্তি হওয়া সত্বেও রোহিঙ্গাদের নিরাপদে মিয়ানমারে ফেরা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন অনেকে। তারা এ বিষয়ে মিয়ানমারের দৃঢ় অঙ্গীকারের অভাব এবং সংখ্যালঘুদের ওপর কয়েক দশকের আগ্রাসনকে দায়ী করেছেন। এছাড়া ১৯৮২ সালে তাদের নাগরিকত্ব অস্বীকার করার যে আইন করা হয়েছে- রোহিঙ্গাদের নিরাপদে ফেরাতে তা বাধা হয়ে দাঁড়াবে বলেও মনে করছেন রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে কাজ করা বিশ্লেষকরা।

প্রশ্ন তুলেছেন খোদ মিয়ানমারের মানবাধিকার কর্মী বার্মা হিউম্যান রাইটস নেটওয়ার্কের নির্বাহী পরিচালক কিউ উইন। বলেন, ‘বার্মিজ সরকার কি গ্যারান্টি দিতে পারে যে, রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে ফেরত আসার পর আবারও একই সমস্যার মুখোমুখি হবে না?’

এ মানবাধিকার কর্মী ব্রিটিশ গণমাধ্যম টাইমের কাছে দাবি করেছেন, ‘সম্পূর্ণ রাজনৈতিক কারণে এই চুক্তিতে সই করেছে মিয়ানমার। কিন্তু তারা এটি কখনোই রক্ষা করবে না।’

এর আগে গত নভেম্বরে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে বাংলাদেশের সঙ্গে সমঝোতা চুক্তি সই করে মিয়ানমার। তবে পরিচয় যাচাই-বাছাইয়ের নামে নানা ছল-ছুতোর আশ্রয় নেয় দেশটি।

বিশ্লেষকরা অভিযোগ করে আসছেন, মিয়ানমারের শর্তানুযায়ী বেশিরভাগ রোহিঙ্গায় মিয়ানমারে ফেরার অনুমতি পেতে ব্যর্থ হবে।

এছাড়া রোহিঙ্গারাও রাখাইনে তাদের ফিরে যাওয়ার ব্যাপারে তাদের ভীতি এবং নিরাপত্তার অভাবের কথা জানায়।

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে বসবাসকারী দেশটির সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাদের নাগরিক হিসেবে স্বীকার করে না মিয়ানমার। দেশটির সেনাবাহিনীর দমন-পীড়নের শিকার হয়ে প্রাণ বাঁচাতে চার দশক ধরে পার্শ্ববর্তী বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে লাখ লাখ রোহিঙ্গা।

সর্বশেষ ২০১৭ সালের আগস্টে রাখাইন রাজ্যের একটি নিরাপত্তা চৌকিতে কথিত আরসার হামলার অভিযোগ তুলে সেনা অভিযানের নামে নৃশংসতা শুরু হলে রোহিঙ্গারা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়। এদের আশ্রয় হয়েছে কক্সবাজারের বিভিন্ন শরণার্থী ক্যাম্পে।

সব মিলিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গার সংখ্যা ১১ লাখ ছাড়িয়ে গেছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ সরকার।

জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর দমন-পীড়নের ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের আলামত খুঁজে পেয়েছে বলে জানিয়ে আসছে। এছাড়া সেখানে হাজার হাজার রোহিঙ্গা নারী ধর্ষণ ও যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছে বলেও জানাচ্ছে বিশ্বগণমাধ্যম।

জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক কমিশন রোহিঙ্গা নিধনের ঘটনাকে জাতিগত নিধনযজ্ঞের ‘পাঠ্যপুস্তকীয় উদাহরণ’বলেও আখ্যা দিয়েছে। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রসহ উন্নত বিশ্বের বিভিন্ন দেশ রোহিঙ্গা নিপীড়নকে জাতিগত নিধন বলে অভিহিত করেছে। তবে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ সমস্ত অভিযোগই বরাবরের মতো অস্বীকার করে আসছে।

(ওএস/এসপি/জুন ০৬, ২০১৮)

পাঠকের মতামত:

০৬ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test