E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

‘খালেদার চিকিৎসকরা রাজনীতি করছেন’

২০১৮ জুন ১০ ১৭:১৩:৪১
‘খালেদার চিকিৎসকরা রাজনীতি করছেন’

স্টাফ রিপোর্টার : কারাগারে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার ‘মাইল্ড স্ট্রোক’ বা ‘অজ্ঞান হয়ে পড়ে যাওয়ার’ বিষয়ে তার ব্যক্তিগত চিকিৎসকদের তথ্য অসত্য বলে দাবি করেছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।

রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইন কর্মকর্তার অভিযোগ, জামিন আবেদনকে সামনে রেখে বিএনপি নেত্রীর আইনজীবীরা রাজনীতি করছেন। তারা আদালতের সহানুভূতি পাওয়ার চেষ্টা করছেন।

শনিবার বিএনপি নেত্রীকে দেখে এসে তার ব্যক্তিগত চিকিৎসকরা যে কথা জানান, রবিবার নিজ কার্যালয়ে এ বিষয়ে সাংবাদিকদের কাছে এসব কথা বলেন রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা।

কুমিল্লায় নাশকতার অভিযোগে দায়ের করা বিশেষ ক্ষমতা আইনের মামলায় খালেদা জিয়ার জামিন চেয়ে করা আবেদনের ওপর আজ শুনানি হয় হাইকোর্টে।

খালেদা জিয়ার অসুস্থতা নিয়ে তার চিকিৎসকদের দাবি নিয়ে প্রশ্ন তুলে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘আজকে মামলার শুনানি অথচ ব্যাক্তিগত চিকিৎসকরা গতকাল গেল তার সঙ্গে দেখা করতে। ৫ জুন যদি তিনি অজ্ঞান হতেন তাহলে সেদিনই বিষয়টি মিডিয়াতে আসতো। কিন্তু তা আসেনি। আজ ১০ জুন। এ বিষয়টি নিয়ে ঘোলাটে করার চেষ্টা হচ্ছে। একটা বিভ্রান্ত তথ্য দেওয়া হচ্ছে।’

‘দুঃখজনক ব্যাপার হলো, চিকিৎসকরাও যদি রাজনীতির সাথে যুক্ত হয়ে যান এবং এ ধরনের কথা বলেন তিনি অজ্ঞান হননি তারা বলছে সাত/আট মিনিট অজ্ঞান ছিলেন, এটা দুঃখজনক।’

অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘এটা আমার কাছে বিশেষ রকম ব্যাপার মনে হয়, আজ একটি মামলার তারিখ, আর তার আগের দিন গতকাল তার চিকিৎসকরা কারাগারে গেলেন। আর এসেই এমন একটা প্রেস কনফারেন্স করে ফেললেন যে, তিনি (খালেদা জিয়া) অজ্ঞান ছিলেন।

‘তিনি যদি অজ্ঞান হতে তাহলে নিশ্চই আইজি প্রিজনের কাছে রিপোর্ট থাকত, সিভিল সার্জন জানত। এগুলো নিয়ে তারা একটি জনমত সৃষ্টির চেষ্টার করছেন। উনি অজ্ঞান হননি, উনার সুগার লেভেল কমে গিয়েছিল। এই হলো আসল কথা।’

খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত ডাক্তার বলছেন তার মাইল্ড স্ট্রোক হয়েছে। এ সম্পর্কে অ্যাটর্নি বলেন, ‘এটাও ঠিক না। তিনি অসুস্থ হলে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে এনে স্ক্যান করা হতো। তার চিকিৎসায় সরকার কতটা গুরুত্ব দিচ্ছে, কোন আসামির ব্যাপারে আপনারা দেখেছেন ব্যাক্তিগত চিকিৎসকদের চেলে যেতে দেওয়া হয়?’

‘কিন্তু তারা যাতে কোনরকম সরকারকে দোষারোপ করতে না পারে এজন্যই সরকার বেশ কয়েকবার তার ব্যক্তিগত চিকিৎসকদের জেলে যেতে অনুমতি দিয়েছে।’

‘যা হয়েছে’ খালেদার

অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘তিনি (খালেদা জিয়া) যে অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলেন এটা ঠিক না বা অজ্ঞান ছিলেন এটাও ঠিক না। সুগার লেভেল পরে যাওয়ার পরে উনি দাঁড়ানো থেকে ঘুরে গিয়েছিলেন। সঙ্গে সঙ্গে তাকে চকলেট খাইয়ে ঠিক করা হয়েছিল।’

‘খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের বিষয়ে যে বক্তব্য আদালতে (খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা) রেখেছেন, আমি জানি এ বিষয়টি নিয়ে তারা নানারকম মিডিয়াকে মাতাবেন, অনেক কিছু বলবেন। তাই আমি আদালতে যাওয়ার আগে আইজি প্রিজনের সাথে আলাপ করেছি।’

‘আইজি প্রিজন যে তথ্য আমাকে দিয়েছেন, গত ৫ জুন ইফতারির ঠিক আগে আগে উনার সুগার লেভেল কমে গিয়েছিল। সেই জন্য তিনি যে অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলেন, এটা ঠিক না। বা অজ্ঞান ছিলেন, এটাও ঠিক না।’

‘সুগার লেভেল পরে যাওয়ার পরে উনি দাঁড়ানো থেকে ঘুরে গিয়েছিলেন। সঙ্গে সঙ্গে তাকে চকলেট খাইয়ে ঠিক করা হয়েছিল।’

‘এই বয়সে যার ডায়াবেটিক আছে তার সুগার লেভেল তো সারাদিনের পরে একটু এদিক ওদিক হতেই পারে।’

‘হিতাহিত জ্ঞান হারিয়েছেন, খালেদার আইনজীবীরা’

খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের দাবি, অ্যাটর্নি জেনারেলের সম্মতি ছাড়া তাদের নেত্রীর জামিন মিলবে না। এ বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেলের বক্তব্য হলো, ‘এটা শুধু মিথ্যা কথা নয়, দুঃখজনক এবং আদালত অবমাননাকর।’

‘আদালত কারও কথায় চলে না। আমার কথা বা সরকারের কথায় চলার তো প্রশ্নেই আসে না। কাজেই এ কথাগুলো বলছেন তাতে মনে হচ্ছে, তারা হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছেন। কারণ, তারা তো অনেক মামলায় জামিন পাচ্ছেন।’

সুপ্রিম কোর্টের ওপর বিএনপির আইনজীবীরা আস্থা রাখতে পারছেন না বলে তাদের বক্তব্যের বিষয়ে জানতে চাওয়া হয় মাহবুবে আলমের কাছে। জবাবে তিনি বলেন, ‘আমাদের বিচার বিভাগ সম্পূর্ণ স্বাধীন। এবং তারা তাদের নিজেদের বিবেক, বিচার, বিশ্লেষণ দ্বারা পরিচালিত হবেন।’

‘খালেদা জিয়াকে তারা (হাইকোর্ট) জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় জামিন দিয়েছেন। সুতরাং এ রকম কোন অভিযোগ করা অহেতুক যেম অ্যাটর্নি জেনারেলের সম্মতি ছাড়া কোনো জামিন হবে না। বহু মামলায় তারা জামিন নিয়েছেন এবং নিচ্ছেন।’

‘এর আগে যে (মানচিত্র, জাতীয় পতাকা ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে বিকৃত করার অভিযোগে এবং মিথ্যা তথ্য দিয়ে জন্মদিন পালনের অভিযোগের মামলা) মামলায় আদালত থেকে অর্ডার নিয়েছিলেন, দুটি মামলাই হলো কমপ্লেইন্ট কেস।’

‘দুটি মামলাই দুই জন করেছেন। একটি হলো তার (খালেদা জিয়া) মিথ্যা তথ্য দিয়ে জন্মদিন পালন করছেন। ওনার কাবিন নামায়, ম্যাট্রিক সার্টিফিকেট ও অন্য এক জায়গায় অন্য রকম জন্মদিন (তারিখ)। সর্বশেষ উনি জন্মদিন দেখিয়েছেন ১৫ আগস্ট, যেদিন আমাদের শোক দিবস এবং বঙ্গবন্ধুর পরিবারসহ সকলেই নিহত হয়েছেন। সেটি উনি ঘটা করে পালন করেছেন। এটাতে আহত হয়ে এক ব্যক্তি একটি কমপ্লেইন্ট কেস করেছেন।’

‘সেই কেসে ম্যাজিস্ট্রেট একটি ওয়ারেন্ট অব অ্যারেস্ট তামিলের অর্ডার দিয়েছেন। নিয়ম হলো, প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে এটা তামিল করা হয় এবং তিনি অন্য মামলায় আটক থাকলে তাকে শ্যোন অ্যারেস্ট দেখানো হয়। উনি নিজে থেকেই আবেদন করেছেন আমাকে এ মামলায় শ্যোন অ্যারেস্ট দেখানো হোক এবং জামিন দেওয়া হোক।’

‘ম্যাজিস্ট্রেট বলেছেন আমাদের এমন কোনো বিধান নেই যে আসামিপক্ষের আবেদনে শ্যোন অ্যারেস্ট দেখানো যায়। সেই আদেশের বিরুদ্ধে তারা হাইকোর্টে এসেছেন।’

‘হাইকোর্ট বলেছেন যে, ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের আদেশ ঠিক না, তাকে এই মামলা শ্যোন অ্যারেস্ট দেখানো যেতে পারে যেহেতু সে অন্য মামলায় জেলে আছে।’

‘এই মামলার, এই রায়ের বরাত দিয়ে তারা চৌদ্দগ্রামের একটি মামলাতে একই আদেশ পাওয়ার জন্য হাইকোর্টে এসেছেন।’

‘সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে, এই মামলায় আসামির দরখাস্তের পরে যে শ্যোন অ্যারেস্ট দেখানো যায় এমন আদেশের বিরুদ্ধে আমরা আপিলে যাব। আজকেই আপিল ফাইল হচ্ছে। ওই রায়ের সার্টিফায়েডকপি পেয়েছি এবং আদালতকে জানিয়েছি সেই রায়ের বিরুদ্ধে আজকেই আপিল বিভাগে যাচ্ছি।

(ওএস/এসপি/জুন ১০, ২০১৮)

পাঠকের মতামত:

১৯ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test