E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

কোটা নিয়ে এখনও অন্ধকারে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়

২০১৮ জুলাই ০১ ১৮:২৩:২৪
কোটা নিয়ে এখনও অন্ধকারে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়

স্টাফ রিপোর্টার : সরকারি চাকরিতে কোটার রূপরেখার বিষয়ে এখনও অন্ধকারে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য অনুযায়ী, কোটা ব্যবস্থা বাতিল নাকি সংস্কার হবে- সেই বিষয়ে কিছু জানে না কোটা ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা মন্ত্রণালয়টি। যদিও ফের চাঙা হচ্ছে কোটা সংস্কারে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন।

কোটা নিয়ে জানতে চাইলে রবিবার বিকেলে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ইসমাত আরা সাদেক বলেন, ‘আই হ্যাভ নো আনসার (আমার কাছে কোনো জবাব নেই)। প্রধানমন্ত্রী পার্লামেন্টে যা বলার বলে দিয়েছেন। সেই মতোই হবে। আপাতত আমার কাছে বলার মতো এর বেশি কিছু নেই।’

তিনি বলেন, ‘কোটা নিয়ে এখন এই প্রেক্ষাপট কেন তৈরি হয়েছে আপনারা সেটা বোঝেন, আমাদের বলার কিছু নেই।’

প্রধানমন্ত্রী কোটা বাতিলের ঘোষণা দেয়ার পর এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি না হওয়ায় রবিবার (১ জুলাই) থেকে ফের আন্দোলনের ডাক দেয় বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ। যদিও শনিবার আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা ছাত্রলীগের মারধরের শিকার হন। শনিবার ছাত্রলীগের এক নেতার মামলার পর রোববার পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক রাশেদ খানকে গ্রেফতার করেছে ডিবি পুলিশ।

বর্তমানে সরকারি চাকরিতে সংরক্ষিত কোটা ৫৬ শতাংশ। বাকি ৪৪ শতাংশ নেয়া হয় মেধা যাচাইয়ের মাধ্যমে। বিসিএসে নিয়োগের ক্ষেত্রে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ৩০, জেলা কোটায় ১০, নারী কোটায় ১০ ও উপজাতি কোটায় ৫ শতাংশ চাকরি সংরক্ষণ করা আছে। এই ৫৫ শতাংশ কোটায় পূরণযোগ্য প্রার্থী পাওয়া না গেলে সেক্ষেত্রে ১ শতাংশ পদে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের নিয়োগের বিধান রয়েছে।

এ কোটা ব্যবস্থা সংস্কারের দাবিতে বেশ কিছুদিন ধরেই আন্দোলন করছিলেন শিক্ষার্থীরা। কোটা সংস্কারের দাবিতে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সড়ক অবরোধও করছিলেন তারা।

গত ৯ এপ্রিল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে বৈঠকে বসে কোটা সংস্কার নিয়ে আন্দোলনকারীরা। সেখানে পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে কোটার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে ৭ মে পর্যন্ত সময় নেন ওবায়দুল কাদের। কিন্তু এরপরের দিনও আন্দোলন চালিয়ে যান শিক্ষার্থীরা।

শনিবার কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা চালানো হয়

কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ক্ষুব্ধ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ১১ এপ্রিল বুধবার জাতীয় সংসদে কোটা ব্যবস্থা বাতিলের ঘোষণা দেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কোটা নিয়ে যখন এতকিছু, তখন কোটাই থাকবে না। কোনো কোটারই দরকার নেই। যারা প্রতিবন্ধী ও ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী তাদের আমরা অন্যভাবে চাকরির ব্যবস্থা করে দেব।’

মন্ত্রিপরিষদ সচিবের নেতৃত্বে একটি কমিটি কোটা ব্যবস্থা পর্যালোচনা করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে বলেও জানিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী।

কিন্তু এরপর প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য অনুযায়ী কোটা নিয়ে কোনো প্রজ্ঞাপন জারি কিংবা কমিটি গঠন করা না হলে ফের স্বোচ্চার হন শিক্ষার্থীরা। এই অবস্থায় গত ২৭ এপ্রিল কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের একটি প্রতিনিধি দল আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবীর নানকের সঙ্গে বৈঠক করেন।

অস্টেলিয়া সফর শেষে প্রধানমন্ত্রী দেশে ফিরলেই দ্রুততম সময়ের মধ্যে প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে- এই আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে ওই বৈঠকে ৭ মে পর্যন্ত কোটাবিরোধী আন্দোলন স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত হয়।

কিন্তু ৭ মে’র মধ্যে কোটার প্রজ্ঞাপন জারি না হওয়ায় ফের আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা।

পরে গত ১০ জুন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মোজাম্মেল হক খান সাংবাদিকদের জানান, কোটার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠনের প্রস্তাব প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে পাঠানো হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী অনুমোদন দিলে এই কমিটি সবকিছু পর্যালোচনা করে সরকারের কাছে কোটার বিষয়ে প্রতিবেদন দাখিল করবে। এই প্রতিবেদনের ভিত্তিতেই প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে।

৩০ জুন, শনিবার চাকরি থেকে স্বেচ্ছায় অবসরে গেছেন মোজাম্মেল হক খান। নতুন জনপ্রশাসন সচিব হিসেবে আজ রবিবার সকালে যোগ দিয়েছেন স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব ফয়েজ আহম্মদ।

সর্বশেষ গত ২৭ জুন জাতীয় সংসদে ‘সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা থাকতে হবে, কমানো যাবে না’- বিরোধী দলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদের এই বক্তব্যকে সমর্থন করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘অবশ্যই, মুক্তিযোদ্ধাদের জন্যই তো আজ আমরা স্বাধীন। তাদের অবদানেই তো আমরা দেশ পেয়েছি।’

(ওএস/এসপি/জুলাই ০১, ২০১৮)

পাঠকের মতামত:

২০ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test