E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন ছিল ‘নিয়ন্ত্রিত নির্বাচন’ : সুজন

২০১৮ জুলাই ০৫ ১৬:৩৩:৪৫
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন ছিল ‘নিয়ন্ত্রিত নির্বাচন’ : সুজন

স্টাফ রিপোর্টার : খুলনা মডেলে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে, যা ছিল ‘নিয়ন্ত্রিত নির্বাচন’ বলে মন্তব্য করেছেন ‘সুজন-সুশাসনের জন্য নাগরিক’-এর নেতৃবৃন্দ। তারা আজ ‘সুজন’-এর পক্ষ থেকে ‘গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে কেমন জনপ্রতিনিধি পেলাম’ শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে উপরোক্ত মন্তব্য করেন।

বৃহস্পতিবার (৫ জুলাই) সকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনী মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন
অনুষ্ঠিত হয়।

সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন সুজন সভাপতি এম হাফিজ উদ্দিন খান। সুজন নেতৃবৃন্দের মধ্যে সুজন সাধারণ সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার এবং সুজন-এর কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য ড. হামিদা হোসেন উপস্থিত ছিলেন।

এম হাফিজ উদ্দিন খান বলেন, ‘আমাদের নির্বাচনী সংস্কৃতির এমন অবনমন হয়েছে যে, এখানে বিত্তবানরা ছাড়া কেউ প্রার্থী কিংবা নির্বাচিত হতে পারছেন না। আমরা চাই, নির্বাচনের দ্বার যেন সবার জন্য উন্মুক্ত থাকে এবং নির্বাচন যাতে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয়। আমরা আশা করি, নির্বাচন কমিশন ও সরকার এক্ষেত্রে যথাযথ উদ্যোগ নেবে।’ স্থানীয় নির্বাচন নির্দলীয় হওয়ার দরকার বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘গাজীপুর সিটি নির্বাচনে অধিক শিক্ষিতদের বেশি পরিমাণে নির্বাচিত হওয়া ইতিবাচক বিষয়। কিন্তু নেতিবাচক দিক হলো বরাবরের মত এ নির্বাচনেও অধিক পরিমাণে ব্যবসায়ীরাই নির্বাচিত হয়েছে। এছাড়া অধিক সম্পদশালী ও যারা বেশি আয়কর দেন তারা বেশি পরিমাণে নির্বাচিত হয়েছেন।’

তিনি বলেন, ‘জবরদস্তি করে সিলমারার কারচুপির নির্বাচনের একটি অন্যতম বৈশিষ্ট হলো ভোট প্রদানের হার বাড়ার সাথে সাথে বিজয়ীর ভোট প্রাপ্তির পরিমাণ আরও বেশি হারে বাড়বে এবং তাঁর অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বীর পরিমাণ আরও বেশি হারে কমবে। একইভাবে ভোট প্রদানের হার বাড়ার সাথে সাথে বাতিল ভোটের হারও পরিবর্তিত হবে। আমাদের প্রাথমিক বিশ্লেষণ থেকে দেখা যায়, খুলনার মত গাজীপুরেও তা ঘটেছে এবং কেন্দ্রভিত্তিক ফলাফল বিশ্লেষণ করে তাই দেখা গেছে।’

আমরা মনে করি, ‘নির্বাচন কমিশন যদি সাহসিকতা, নিরপেক্ষতা ও দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেয় তাহলে নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় থাকে। তাই আমরা আশা করি, খুলনা ও গাজীপুরের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে রাজশাহী, বরিশাল ও সিলেট সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে আয়োজনের মধ্য দিয়ে নির্বাচন কমিশনকে জনমনে আস্থা সৃষ্টি করতে সক্ষম হবে। অন্যথায় একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে জাতিগতভাবে আমরা নতুন সংকটের মুখোমুখি হতে পারি; যা আমাদের একটি অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে ধাবিত করতে পারে।’

ড. হামিদা হোসেন বলেন, ‘নির্বাচন পেশিশক্তি নির্ভর হওয়ায় এবং নারীদের সম্পদ ও আয় কম হওয়ায় নারীরা নির্বাচনে প্রার্থী ও নির্বাচিত হতে পারছেন না। আমরা আশা করি, এক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলো দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেবে।’

গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিজয়ী প্রার্থীদের তথ্যের বিশ্লেষণ ও সুজন-এর দৃষ্টিতে গাজীপুর সিটি নির্বাচনের একটি চিত্র ও ভবিষ্যতের নির্বাচন সুষ্ঠু করতে সুজন-এর কিছু প্রস্তাবনা তুলে ধরেন সুজন-এর কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকার।

তিনি বলেন, ‘গাজীপুর সিটি নির্বাচনে প্রার্থীদের তথ্যের বিশ্লেষণ উপস্থাপনের পাশাপাশি, একটি অবাধ, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠান এবং স্বচ্ছ নির্বাচন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে সৎ, যোগ্য ও জনকল্যাণে নিবেদিত প্রার্থীদের সপক্ষে আওয়াজ তোলার জন্য বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচি হাতে নেয়া হয়েছিল ‘সুজন’-এর পক্ষ থেকে।

কর্মসূচিসমূহ হলো: ১. সংবাদ সম্মেলন; ২. মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের নিয়ে জনগণের মুখোমুখি অনুষ্ঠান; ৩. ভোটারদের মধ্যে তথ্যচিত্র বিতরণ; ৪. ওয়েবসাইটে তথ্যচিত্র সন্নিবেশন; ৫. সাংস্কৃতিক প্রচারণা; ৬. মানববন্ধন; এবং প্রচারণায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম (সোশাল মিডিয়া) ব্যবহার।’

নির্বাচিত প্রার্থীদের শিক্ষাগত যোগ্যতা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘নব-নির্বাচিত সর্বমোট ৭১ জন জনপ্রতিনিধির মধ্যে ৩৯ জনেরই (৫৪.৯২%) শিক্ষাগত যোগ্যতা এসএসসি বা তার নিচে। পক্ষান্তরে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারীর সংখ্যা ১৯ জন (২৬.৭৬%)। ৭১ জন নব-নির্বাচিত জন প্রতিনিধির মধ্যে ২৪ জন (৩৩.৮০%) মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের গ-ি অতিক্রম করতে পারেননি।

বিষয়টি বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে, প্রতিদ্বন্দ্বিতার তুলনায় উচ্চ শিক্ষিতদের নির্বাচিত হওয়ার হার যেমন কিছুটা বেশি, তেমনি স্বল্প শিক্ষিতদের নির্বাচিত হওয়ার হার প্রতিদ্বন্দ্বিতার তুলনায় অনেক কম। বিষয়টি নিঃসন্দেহে ইতিবাচক।’

নির্বাচিত প্রার্থীদের পেশাগত তথ্য তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘নব-নির্বাচিত ৭১ জন জনপ্রতিনিধির মধ্যে ৪৭ জনই (৬৬.১৯%) ব্যবসায়ী। অর্থাৎ অন্যান্য নির্বাচনের মত গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনেও বিজয়ী জনপ্রতিনিধিদের মধ্যেও ব্যবসায়ীদের প্রাধান্য লক্ষ করা যাচ্ছে।’

নির্বাচিত প্রার্থীদের বিরুদ্ধে মামলার তথ্য তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘নব-নির্বাচিত সর্বমোট ৭১ জন জনপ্রতিনিধির মধ্যে ২৪ জনের (৩৩.৮০%) বিরুদ্ধে বর্তমানে, ১৮ জনের (২৫.৩৫%) বিরুদ্ধে অতীতে এবং ৯ জনের (১২.৬৭%) বিরুদ্ধে উভয় সময়ে মামলা আছে বা ছিল। ৩০২ ধারায় বর্তমানে মামলা রয়েছে ২ জনের (২.৮১%) বিরুদ্ধে এবং অতীতে ছিল ৪ জনের (৫.৬৩%)। বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে যে, প্রতিদ্বন্দ্বিতার তুলনায় মামলা সংশ্লিষ্টদের নির্বাচিত হওয়ার হার বেশি।’

নির্বাচিত প্রার্থীদের সম্পদের তথ্য তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘নব-নির্বাচিত সর্বমোট ৭১ জন জনপ্রতিনিধির মধ্যে ৪৩ জনের (৬০.৫৬%) বার্ষিক আয় ৫ লক্ষ টাকার কম। আয় উল্লেখ না করা নয়জন-সহ এই সংখ্যা দাঁড়ায় ৫২ জন (৭৩.২৩%)। নব-নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের মধ্যে কোটি টাকার অধিক আয়কারী রয়েছেন দুইজন (২.৮১%)। বিশ্লেষণে বলা যায় যে, স্বল্প আয়কারী প্রার্থীদের নির্বাচিত হওয়ার হার প্রতিদ্বন্দ্বিতার তুলনায় কম হলেও অপেক্ষাকৃত অধিক আয়কারী প্রার্থীদের নির্বাচিত হওয়ার হার প্রতিদ্বন্দ্বিতার তুলনায় বেশি।’

নির্বাচিত প্রার্থীদের আয়ের তথ্য তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘নব নব-নির্বাচিত সর্বমোট ৭১ জন জনপ্রতিনিধির মধ্যে ৪৪ জনের (৬১.৯৭%) স¤পদের পরিমাণ ৫ লক্ষ টাকার কম। সম্পদের কথা উল্লেখ না করা নয়জন-সহ এই সংখ্যা দাঁড়ায় ৫৩ জন (৭৪.৬৪%)। কোটিপতি রয়েছেন মাত্র চারজন (৫.৬৩%)। তবে প্রার্থীদের সম্পদের হিসাবের যে চিত্র উঠে এসেছে, তাকে কোনোভাবেই সম্পদের প্রকৃত চিত্র বলা যায় না।

কেননা, প্রার্থীদের মধ্যে অনেকেই প্রতিটি সম্পদের মূল্য উল্লেখ করেন না, বিশেষ করে স্থাবর স¤পদের। আবার উল্লেখিত মূল্য বর্তমান বাজার মূল্য না; এটা অর্জনকালীন মূল্য। বিষয়টি সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার পরেও আমরা হলফনামার ভিত্তিতে শুধুমাত্র মূল্যমান উল্লেখ করা স¤পদের হিসাব অনুযায়ী তথ্য তুলে ধরলাম। অধিকাংশ প্রার্থীর সম্পদের পরিমাণ প্রকৃতপক্ষে আরও বেশি। ছকটি পরিবর্তনের জন্য আমরা নির্বাচন কমিশনের কাছে অনেক আগেই প্রস্তাব দিয়েছি।’

নির্বাচিত প্রার্থীদের ঋণের তথ্য তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘নব-নির্বাচিত সর্বমোট ৭১ জন জনপ্রতিনিধির মধ্যে ঋণগ্রহীতা মাত্র ১২ জন (১৬.৯০%)। নির্বাচনে মোট ১৩.৩৩% (৩৪৫ জনের মধ্যে ৪৬ জন) ঋণগ্রহীতা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে নির্বাচিত হয়েছেন ১৬.৯০% (৭১ জনের মধ্যে ১২ জন)। বিশ্লেষণে দেখা গিয়েছে ঋণগ্রহীতাদের নির্বাচিত হওয়ার হার প্রতিদ্বন্দ্বিতার তুলনায় বেশি।’

নির্বাচিত প্রার্থীদের আয়করের তথ্য তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘নব-নির্বাচিত সর্বমোট ৭১ জন জনপ্রতিনিধির মধ্যে ৩২ জন (৪৫%) করদাতা। এই ৩২ জনের মধ্যে ৫ হাজার টাকা বা তার চেয়ে কম কর প্রদান করেন ১৪ জন (১৯.৭১%) এবং লক্ষাধিক টাকা কর প্রদান করেন আটজন (১১.২৬%)। বিশ্লেষণে দেখা যায় যে, কর প্রদানকারীদের নির্বাচিত হওয়ার হার প্রতিদ্বন্দ্বিতার তুলনায় বেশি।’

সুজন-এর দৃষ্টিতে গাজীপুর সিটি নির্বাচনের চিত্র তুলে ধরে দিলীপ কুমার সরকার বলেন, ‘বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত থেকে এটি সুস্পষ্ট যে, গাজীপুরেও খুলনা মডেলে নির্বাচন হয়েছে, যা ছিল ‘নিয়ন্ত্রিত নির্বাচন’। গাজীপুরে অবস্থিত ‘সুজন’-এর স্বেচ্ছাব্রতীদের মতামতের ভিত্তিতে আমরাও একই উপসংহারে পৌঁছেছি।’
তিনি বলেন, ‘খুলনার মত গাজীপুরেও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তায় প্রধান প্রতিপক্ষকে মাঠছাড়া করার ঘটনা ঘটেছে।

ফলে একটি ভীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় এবং নির্বাচনের আগেই বিএনপির নেতা-কর্মীরা এলাকা ছাড়া হয়। মাঠ ফাঁকা হওয়ার নেতিবাচক প্রভাব নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণার ক্ষেত্রে প্রকটভাবে দেখা দেয়। গ্রেফতার ও হয়রানির ক্ষেত্রে দেখা যায় যে, নির্বাচন স¤পন্ন না হওয়া পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার না করার হাইকোর্টের আদেশ এবং ওয়ারেন্ট ছাড়া কাউকে গ্রেফতার না করার নির্বাচন কমিশনের ২৪ জুনের নির্দেশনা জারি সত্ত্বেও অনেককে গ্রেফতারের অভিযোগ ওঠে, এমনকি নির্বাচনের দিনেও।’

তিনি বলেন, ‘খুলনার মত গাজীপুরেও বিএনপি প্রার্থীর পোলিং এজেন্টদের বিভিন্নভাবে হয়রানি করা হয়েছে। তাদের অনেককে কেন্দ্রে উপস্থিত হতে বাধা দেওয়া হয়েছে এবং কেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। কাউকে কাউকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আটকে রেখে ভোটের পরে মুক্তি দিয়েছে। আবার কয়েকজনকে কেরাণীগঞ্জের কেন্দ্রীয় কারাগারে আটক অবস্থায় পাওয়া গিয়েছে। কেন্দ্রে পোলিং এজেন্টের অনপুস্থিতে কোনো প্রার্থীর পক্ষে ভোটের সংখ্যা বাড়িয়ে দেওয়া সম্ভব। যেমনটি ঘটেছে, ইডব্লিউজি’র পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, গাজীপুরের অন্তত দুটি কেন্দ্রে এমনটি ঘটেছে। পোলিং এজেন্টের অনপুস্থিতে ব্যালট বক্স স্টাফিংও সম্ভব।’

তিনি বলেন, ‘গণমাধ্যম ও আমাদের (সুজন) স্বেচ্ছাব্রতীদের পর্যবেক্ষণে অনুযায়ী, খুলনার নির্বাচনের গাজীপুরেও ক্ষমতাসীনদের পক্ষ থেকে জোর-জবরদস্তি করা হয়েছে। সাময়িকভাবে কেন্দ্র দখল করে জালভোট প্রদান, ভোটকেন্দ্রে এবং এর আশেপাশে ভীতিকর ও বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি এবং ভোট প্রদানে বাধা দান ইত্যাদি নানা অনিয়ম ঘটেছে। এরফলে অনেকগুলো কেন্দ্রে অস্বাভাবিক হারে ভোট পড়েছে। নির্বাচন কমিশনের মতে, গাজীপুরে ভোট প্রদানের হার ৫৭.২ শতাংশ হলেও ৬১টি কেন্দ্রে ৭৩ থেকে ৯৪% পর্যন্ত ভোট পড়েছে। এছাড়াও ৪০টি ভোটকেন্দ্রে অস্বাভাবিকভাবে নি¤œ হারে অর্থাৎ ১৪ থেকে ৪০% ভোট পড়েছে।’

তিনি বলেন, ‘খুলনার মত গাজীপুরের নির্বাচনেও বহু অনিয়ম ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হয়রানি ও বাড়াবাড়ির অভিযোগ উত্থাপন করা হয়েছে, যা সম্পর্কে নির্বাচন কমিশন ছিল বহুলাংশে নির্বিকার।’
দিলীপ কুমার সরকার মূল প্রবন্ধের শেষভাগে বলেন, ‘সাম্প্রতিক খুলনা ও গাজীপুরের নির্বাচনে বিভিন্ন ধাপ সঠিক না থাকার কারণে নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তাই খুলনা ও গাজীপুরের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে আসন্ন তিনটি সিটি করপোরেশনের নির্বাচনকে গ্রহণযোগ্য করার লক্ষে আমরা নিন্মোক্ত প্র্রস্তাবগুলো করছি:

১. এই নির্বাচনে যে সকল অনিয়ম ও ত্রুটি-বিচ্যুতি চিহ্নিত হয়েছে নির্বাচন কমিশন কর্তৃক তা আমলে নেওয়া, এ ব্যাপারে পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত করা; প্রতিটি ঘটনার জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা এবং সীমাবদ্ধতাগুলো কাটিয়ে ওঠার জন্য এখন থেকেই পূর্ব-প্রস্তুতিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা;

২. আইনানুযায়ী হলফনামায় মিথ্যা তথ্য দিলে বা তথ্য গোপন করলে মনোনয়নপত্র বাতিল হবার এবং পরবর্তীতে নির্বাচন বাতিল হবার কথা। তাই আমাদের নির্বাচনী তথা রাজনৈতিক অঙ্গনকে কলুষমুক্ত করার লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশনের/রিটার্নিং কর্মকর্তার পক্ষ থেকে প্রার্থীদের, বিশেষত মেয়র পদপ্রার্থীদের হলফনামাগুলো প্রয়োজনে এনবিআর ও দুদকের সহায়তা নিয়ে চুলচেরাভাবে যাচাই-বাচাই করা;

৩. বর্তমানে জাতীয় নির্বাচনে প্রার্থীদের পক্ষ থেকে প্রতিপক্ষের হলফনামা চ্যালেঞ্জ করার বিধান রয়েছে। এই বিধান স্থানীয় সরকারের ক্ষেত্রেও এবং সকল ভোটারের জন্যও প্রযোজ্য করা;

৪. আমাদের সকল নির্বাচনী আইনের অন্তর্নিহিত আকাক্সক্ষা হলো প্রশাসন, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও নির্বাচনী দায়িত্বে নিয়োজিত ম্যাজিস্ট্রেটগণ নির্বাচনকালীন সময়ে নির্বাচন কমিশন/রিটার্নিং কর্মকর্তার নিয়ন্ত্রণে দায়িত্ব পালন করবেন, যা বাস্তবে ঘটে না। তাই আইনের সংশ্লিষ্ট ধারাগুলোর (যেমন, সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন বিধিমালা, ২০১০-এর ৮৪, ৮৯ ধারা) স্পষ্টকরণ আবশ্যক, যাতে বিরাজমান ‘দ্বৈত শাসনে’র অবসান ঘটে এবং নির্বাচনকালীন সময়ে সংশ্লিষ্ট সকল কর্মকর্তা নির্বাচন কমিশন/রিটার্নিং কর্মকর্তার নিয়ন্ত্রণে কাজ করেন। এলক্ষ্যে ‘সকল প্রার্থীর সমান সুযোগ নিশ্চিতকরণে’র অভিপ্রায়ে নির্বাচন কমিশনের ‘গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন কোনো বাসিন্দা বা ভোটারকে বিনা ওয়ারেন্টে গ্রেফতার না করার’ নির্দেশনা সম্বলিত নির্বাচন কমিশনের ২৪ জুন ২০১৮-এর প্রজ্ঞাপনের মত একই নির্দেশনা সিলেট, রাজশাহী ও বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের জন্যও অনতিবিলম্বে জারি করা আবশ্যক;

৫. ভোট গ্রহণের সময় সকাল ৯.০০টা থেকে বিকাল ৫.০০টা পর্যন্ত করা এবং ব্যালট বাক্স ও ব্যালট পেপার ভোটকেন্দ্রে আগের রাতের পরিবর্তে ভোটের দিন সকালে বিতরণ করা। গ্রীষ্মকালীন সময়ে এবং মহানগরের নির্বাচনে এটি করা অতি সহজেই সম্ভব;

৬. ভোট গ্রহণের শুরুতে ব্যালট বাক্স সবাইকে প্রদর্শনের সময়ে বাক্স খালি বলে সকল প্রার্থীর এজেন্টের স্বাক্ষর সম্বলিত যদি না কোনো প্রার্থী তার এ অধিকার প্রয়োগ করতে না চায় একটি প্রত্যয়নপত্র প্রকাশ করা;

৭. প্রতি ঘণ্টায় মোট ভোট প্রদানের সংখ্যা সকল প্রার্থীর এজেন্টের স্বাক্ষর সম্বলিত একটি প্রত্যয়নপত্র প্রকাশ করা; ৭. ভোট গণনা শেষে ভোটের হিসাব সকল প্রার্থীর এজেন্টের স্বাক্ষর সম্বলিত একটি প্রত্যয়নপত্র প্রকাশ করা।’

(বিজ্ঞপ্তি/এসপি/জুলাই ০৫, ২০১৮)

পাঠকের মতামত:

২০ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test