E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শ্রমিক অসন্তোষ, চট্টগ্রামের উদালিয়া চা বাগান বন্ধ

২০১৮ জুলাই ২৯ ১৩:০৭:৩৬
শ্রমিক অসন্তোষ, চট্টগ্রামের উদালিয়া চা বাগান বন্ধ

স্টাফ রিপোর্টার : নতুন ম্যানেজার যোগদানকে কেন্দ্র করে শ্রমিক অসন্তোষ দেখা দিয়েছে চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির উদালিয়া চা বাগানে। শ্রমিক-কর্মচারীদের অসন্তোষের জেরে চা বাগানটি বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। ফলে দৈনিক ৩৫ লাখ টাকার ক্ষতি হচ্ছে বলে জানিয়েছে চা বাগান কর্তৃপক্ষ।

চা বাগান শ্রমিক সংগঠন পঞ্চায়েতের দাবি, কাজে যোগ দেয়া নতুন ম্যানেজার মুহাম্মদ রফিকুল ইসলাম সহকারী ব্যবস্থাপক থাকাকালে শ্রমিকদের বিরুদ্ধে অন্যায়ভাবে মামলা করেছেন। শ্রমিকরা নানাভাবে হয়রানির শিকার হয়েছেন। তাই তিনি বাগানের দায়িত্বে থাকলে শ্রমিকরা কাজে যোগ দেবেন না।

উদালিয়া চা-বাগান কর্তৃপক্ষ জানায়, বাগানে নতুন ব্যবস্থাপক মুহাম্মদ রফিকুল ইসলাম নিয়োগ পেয়ে গত ২৩ জুলাই কাজে যোগদান করেন। সেই দিন সকালেই একদল শ্রমিক কর্মস্থলে এসে কাজে যোগদান না করে ধর্মঘটের ডাক দেয়। এ সময় তারা বাগান কার্যালয় ও বাংলোসহ বিভিন্ন স্থাপনা ভাঙচুর করে।

গত ২৫ জুলাই বাগান কর্তৃপক্ষ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে শ্রমিকদের কাজে যোগদানের জন্য অনুরোধ জানায়। তবে শ্রমিকেরা কাজে যোগ না করায় ২০০৬ সালের বাংলাদেশ শ্রম আইনের ১৩ (১) ধারায় বাগানের সকল কার্যক্রম বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়।

শ্রমিক নেতারা জানান, ১৯৯৪ সাল থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত বর্তমান ম্যানেজার রফিকুল ইসলাম সহকারী ম্যানেজার হিসেবে বাগানে কাজ করেছেন। তখন তিনি বিভিন্ন সময় শ্রমিকদের জুলুম-নির্যাতন করেছেন। শ্রমিকদের জায়গা জমি নিয়ে তাদের সম্পদ হারা করেছেন। এ ম্যানেজার অধিনে শ্রমিকরা কাজে যোগদান করবে না।

বাগানের পঞ্চায়েত সভাপতি আবেশ দাশ বলেন, নতুন যোগদানকারী ম্যানেজার রফিকুল ইসলাম ছাড়া অন্য যে কেউ ম্যানেজারের দায়িত্বে আসলে আমরা কাজে যাব। ইতোপূর্বে তিনি এ বাগানে সহকারী ম্যানেজার ছিলেন। তখন তিনি শ্রমিক-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে মামলা-হামলা করেছেন। এবারও যোগ দিয়ে হয়তো তিনি আমাদের ওপর অত্যাচার চালাবেন। এছাড়া মালিক পক্ষও আমাদের পাওনা ঠিক মতো পরিশোধ করছে না। তাই সব শ্রমিক একত্রিত হয়ে ধর্মঘটের ডাক দিয়েছি।

জানা গেছে, ২০০৩ সাল থেকে এ চা বাগানটি শিল্প প্রতিষ্ঠান মোস্তফা গ্রুপের মালিকানা ও তত্ত্বাবধানে আসে। মোস্তফা গ্রুপ বা উদালিয়া চা বাগান কর্তৃপক্ষ ২০০৪ সালে সরকারি নিয়ম অনুযায়ী বাগানের অনাবাদি জমি আবাদ করার প্রক্রিয়া শুরু করে। এতে শ্রমিকরা বাধা দেন। কারণ, বিভিন্ন সময় বাগানের শ্রমিকরা এসব জায়াগা বাইরের মানুষের কাছে বন্ধক দিয়ে রেখেছিলেন। পরে ২০০৪ সালে তৎকালীন ম্যানেজার এবং সহকারী ম্যানেজার (বর্তমান ম্যানেজার মো. রফিকুল আলম) মোস্তফা গ্রুপরে নির্দেশে স্থানীয়দের সমন্বয়ে এসব জমি উদ্ধার করেন এবং চা চাষের আওতায় এনে শ্রমিকদের জন্য রেশনের ব্যবস্থা করেন।

বাগানের বর্তমান সহকারী ম্যানেজার প্রদীপ কুমার সিংহ জানান, বাগানে ৯৯৭ জন শ্রমিক এবং ৪২ জন কর্মচারী রয়েছেন। বাগান থেকে প্রতিনিদিন গড়ে সাড়ে ৫ হাজার কেজি চা উৎপাদন হয়। এ কার্যক্রম বন্ধ থাকায় দৈনিক ৩৫ থেকে ৪০ লাখ টাকা ক্ষতি হচ্ছে।

বাগানের নতুন ম্যানেজার মুহাম্মদ রফিকুল ইসলাম বলেন, কোম্পানি আমাকে গত ২৫ জুলাই থেকে ম্যানেজার পদে নিয়োগ দেয়। সে হিসেবে কর্মস্থলে যোগদান করি। কিন্তু এতে একটি পক্ষের উসকানিতে বাগানের শ্রমিকরা কাজে যোগদান না করে অফিস ভাঙচুর ও আমাকে মারধর করার চেষ্টা করে।

তিনি অভিযোগ করে আরও বলেন, এ অপকর্মে যে নেতৃত্ব দিচ্ছেন তিনি এ বাগানের শ্রমিক নন। তবে এসব করে তিনি অনেক সম্পদের মালিক হয়েছেন।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দীপক কুমার রায় বলেন, ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে শ্রমিক ও মালিক পক্ষের সাথে সমঝোতার চেষ্টা করা হচ্ছে। আশা করি শিগগিরই একটা সমাধানে আসতে পারব।

(ওএস/এসপি/জুলাই, ২৯, ২০১৮)

পাঠকের মতামত:

১০ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test