E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

রাজধানীজুড়ে তীব্র গ্যাস সঙ্কট

২০১৪ জুলাই ১৯ ১৩:০১:১২
রাজধানীজুড়ে তীব্র গ্যাস সঙ্কট

স্টাফ রিপোর্টার : রমজানে রাজধানীজুড়ে গ্যাস সঙ্কট তীব্র আকার ধারণ করেছে। এতে বিভিন্ন্ন এলাকার বাসাবাড়িতে ইফতার ও সেহরির খাবার রান্না করা সম্ভব হচ্ছে না। হোটেলের কেনা খাবার দিয়ে ইফতার ও সেহরি সারতে হচ্ছে। অনেকে রাইস কুকার ব্যবহার করছেন। তবে লোডশেডিংয়ের কারণে এ যন্ত্রটিও চালানো যাচ্ছে না।

এদিকে দিনে গড়ে দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা বিদ্যুতের লোডশেডিং হচ্ছে। ইফতার ও সেহরির সময় লোডশেডিং না করার সরকারি নির্দেশনাও কাজে আসছে না। ফলে চরম দুর্ভোগে পড়েছে রাজধানীবাসী।

জানা গেছে, প্রথম রোজা থেকে মিরপুর, শেওড়াপাড়া, কাজীপাড়া, পীরেরবাগ, রামপুরা, বাড্ডা, বনশ্রী, মুগদা, মিরপুরের সাংবাদিক কলোনি, মুসলিম বাজার, আনসার ক্যাম্প, রূপনগর, তুরাগ এলাকার কামারপাড়া, ভাটুলিয়া, দক্ষিণখানের আশকোনা, পুরান ঢাকার টিকাটুলি, গোপীবাগ, মানিকনগর, সায়েদাবাদ, স্বামীবাগ, কেএম দাস লেন, ধলপুর, দোলাইরপাড়, দক্ষিণ যাত্রাবাড়ী, নবীনগর, মুরাদপুর, পাটেরবাগ, হাজী খোরশেদ আলী রোড, কুতুবখালী, জিয়া সরণি, কাজলা, ভাঙ্গা প্রেস, টিপু সুলতান রোড, নবাবপুর রোড, নারিন্দা, ফুলবাড়িয়া, বিবির বাগিচা, করাতিটোলা, মৈশুন্ডি, বনগ্রাম এবং রাজধানীর অদূরে কেরানীগঞ্জের কলাতিয়া, আটি, কালীগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকায় তীব্র গ্যাস সঙ্কট চলছে।

এসব এলাকার বাসিন্দারা জানায়, রমজানের শুরুতে গ্যাসের চাপ বেশ ভালো ছিল; কিন্তু ১২ রোজার পর থেকে চাপ কমে আসে। ১০ থেকে ১২টি পেঁয়াজু, বেগুনি ও ২০০ গ্রাম ছোলা ভাজতেই আড়াই থেকে ৩ ঘণ্টা লাগে। আবার সেহরির সময় ৪০০ গ্রাম চালের ভাত রান্না করতে লেগে যায় দেড় ঘণ্টারও বেশি। মিরপুরের শেওড়াপাড়ার বাসিন্দা তানিয়া ফেরদৌসী জানান, ইফতারের সময় যেনতেনভাবে চলে যায়; কিন্তু সেহরির সময় প্রায়ই গ্যাস পাওয়া যায় না। মাঝে মাঝে লোডশেডিংয়ের কারণে রাইস কুকারও ব্যবহার করতে পারি না। ফলে বাসি খাবার অথবা না খেয়েই রোজা রাখতে হয়।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অব্যবস্থাপনা, পাইপলাইন রক্ষণাবেক্ষণে ত্রুটি, মাত্রাতিরিক্ত অবৈধ সংযোগ আর সরবরাহে ভারসাম্যহীনতার কারণে রাজধানীজুড়ে চলছে তীব্র গ্যাস সঙ্কট। অভিযোগ রয়েছে, তিতাসের কিছু দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারী ও ঠিকাদার মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে নগরীর বিভিন্ন এলাকা, বস্তি ও ডেভেলপার কোম্পানির ভবনে অবৈধভাবে গ্যাস সংযোগ দিয়ে যাচ্ছেন।

সঙ্কট প্রসঙ্গে তিতাস গ্যাস কোম্পানির ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী নওশাদুল ইসলাম বলেন, আমরা চাহিদা অনুযায়ী গ্যাস পাই না। অনেক এলাকায় চাহিদা ও ব্যবহারকারীর সংখ্যা বেড়ে গেছে কয়েকগুণ; কিন্তু সঞ্চালন লাইনের ক্ষমতা বাড়ানো হয়নি। এছাড়া অবৈধ গ্যাস সংযোগ তো আছেই।

তিতাসের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানান, বৃহস্পতিবার ১৮টি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য ৬৫২ মিলিয়ন ঘনফুট চাহিদার বিপরীতে সরবরাহ করা হয় ৩৮৮ দশমিক ৮ মিলিয়ন ঘনফুট। তিনটি সারকারখানায় ১০৪ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের চাহিদা আছে। তবে কারখানা বন্ধ থাকার পরও যন্ত্রপাতি ঠিক রাখতে ১২ দশমিক ৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে। আবাসিকে চাহিদা ছিল ১৮০ মিলিয়ন ঘনফুট। এর বিপরীতে সরবরাহ করা হয় ১৩২ মিলিয়ন ঘনফুট। এছাড়া ৪৮৬ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হয়েছে সিএনজি স্টেশন, ক্যাপটিভ পাওয়ার, ভারি শিল্প কারখানা এবং মাঝারি ও ক্ষুদ্র কারখানায়। তিতাস নির্ধারিত এলাকার জন্য প্রতিদিন গড়ে ১ হাজার ৯০০ থেকে ২ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের চাহিদা আছে। এর বিপরীতে পাওয়া যাচ্ছে গড়ে ১ হাজার ৪০০ মিলিয়ন ঘনফুট। এ কারণে গ্যাস সঙ্কট সৃষ্টি হচ্ছে।

ওই কর্মকর্তা আরও জানান, প্রায় ২০০ কিলোমিটার অবৈধ পাইপলাইন আছে। এ পাইপলাইন থেকে প্রায় ২ লাখ অবৈধ সংযোগ নেয়া হয়েছে। ফলে বৈধ গ্রাহকরা ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। তিনি বলেন, ২ ইঞ্চি ব্যাসের পাইপলাইন দিয়ে বৈধভাবে আগে গ্যাস সংযোগ নিয়েছিলেন ১০০ গ্রাহক। এখন ওই পাইপের সঙ্গে অবৈধভাবে আরও ৫০০ থেকে এক হাজার গ্রাহক সংযোগ নিয়েছেন। ফলে গ্যাসের চাপ কমে যাচ্ছে।

এদিকে রাজধানীতে লোডশেডিং কমাতে রাত ৮টার পর দোকানপাট বাধ্যতামূলক বন্ধ রাখতে অভিযান পরিচালনা করছে ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি- ডিপিডিসি। পরিচালনা করা হয়েছে মোবাইল কোর্ট। বিদ্যুৎ বিভাগের এ সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে ৬৪ জেলার ডিসিকে চিঠি দিয়েছে বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়। রাজধানীতে এসি ব্যবহার কমানোরও নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সিএনজি স্টেশনগুলোর বাতি এক-চতুর্থাংশে নামিয়ে আনার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

(ওএস/এটিআর/জুলাই ১৯, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

০৮ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test