E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

এক মাসের মধ্যে শ্রমিকদের সমস্যার সমাধান

২০১৯ জানুয়ারি ০৯ ১৫:৩০:৪৭
এক মাসের মধ্যে শ্রমিকদের সমস্যার সমাধান

স্টাফ রিপোর্টার : আগামী এক মাসের মধ্যে গার্মেন্ট শ্রমিকদের সমস্যার সমাধান করা হবে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। এ জন্য তিনি শ্রমিকদের ধৈর্য ধারণ করে কাজে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানান।

বুধবার (৯ জানুয়ারি) বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে জরুরি সংবাদ সম্মেলনে বাণিজ্যমন্ত্রী এ আহ্বান জানান।

টিপু মুনশি বলেন, ‘নতুন বেতন কাঠামোর কারণে কোনো শ্রমিকের যদি বেতন কমে যায় তাহলে তা আগামী মাসের বেতনের সঙ্গে সমন্বয় করে পরিশোধ করা হবে। নতুন বেতন কাঠামোর অসঙ্গতি দূর করতে শ্রমিক পক্ষের পাঁচজন, মালিক পক্ষের পাঁচজনসহ শ্রম এবং বাণিজ্য সচিবের সমন্বয়ে গঠিত কমিটি কাজ করবে। এই কমিটির প্রতিবেদন পাওয়ার পর গার্মেন্ট শ্রমিকদের বেতনের বিষয়ে আর কোনো সমস্যা থাকবে না।’

তিনি আরও বলেন, ‘প্রতিশ্রুতি দেয়ার পরও কারখানা ভাঙচুর কোনো অবস্থাতেই গ্রহণযোগ্য নয়।’

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘এই ধরনের আন্দোলনে অনেক সময় বাইরের লোক ঢুকে যায়। সে বিষয়টি সরকার কঠোরভাবে মনিটর করছে।’

এদিকে সরকার নতুন মজুরি কাঠামো পর্যালোচনার জন্য কমিটি করে দিলেও টানা চতুর্থ দিনের মতো সড়কে নেমেছে পোশাক শ্রমিকরা।

বিভিন্ন পোশাক কারখানার কর্মীরা বুধবার সকাল থেকে রাজধানীর মিরপুরের কালশী এলাকার রাস্তায় অবস্থান করে বিক্ষোভ করছে। বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধের চেষ্টার খবর পাওয়া গেছে ঢাকার দক্ষিণখান ও সাভার থেকেও।

রাজধানীর পল্লবী থানার উপ পরিদর্শক তমিকুল ইসলাম জানান, পুলিশ শ্রমিকরা সকাল ৯টার দিকে ২২তলা গার্মেন্টের সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ শুরু করে। পরে তারা সড়কে অবস্থান নিলে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। যান চলাচল বিঘ্নিত হলেও এখনও বড় কোনো গোলযোগ ঘটেনি। আমরা চেষ্টা করছি তাদের বুঝিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার জন্য।

এদিকে ঢাকার উত্তর খান ও দক্ষিণ খান এলাকার বিভিন্ন পোশাক কারখানার শ্রমিকরাও সকালে ছোট ছোট দলে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে এসে বিমানবন্দরের সামনে অবস্থান নেয়ার চেষ্টা করে। তবে পুলিশের বাধায় তারা প্রধান সড়কে আসতে পারেননি।

পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার (দক্ষিণ খান) নূর আলম বলেন, ‘সকালের দিকে কিছুটা উত্তেজনা ছিল, এখন নেই। শ্রমিকরা ছড়িয়ে ছিটিয়ে জটলা করছে। পুলিশ সতর্ক রয়েছে।’

এদিকে একই ইস্যুতে গাজীপুরে কয়েকদিন ধরে চলা বিভিন্ন পোশাক কারখানার শ্রমিকদের বিক্ষোভ, মহাসড়ক অবরোধ, যানবাহন ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগে ঘটনায় জেলার বিভিন্ন স্থানে বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। জেলা প্রশাসক ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ূন কবীর বিজিবি মোতায়েনের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

তিনি জানান, পোশাক শ্রমিকদের বিশৃঙ্খলা রোধে গাজীপুরের টঙ্গী, গাজীপুরা, হোতাপাড়া, কোনাবাড়ী ও মৌচাক এলাকায় ৪ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে বুধবার (৯ জানুয়ারি) সকাল থেকে বিজিবি সদস্যরা টহল দিচ্ছেন।

গত চারদিন ধরে ঢাকার মিরপুর, সাভার-আশুলিয়াসহ গাজীপুরের বিভিন্ন স্থানে পোশাক কারখানার শ্রমিকরা বেতন-ভাতা বৃদ্ধির দাবিতে বিক্ষোভ, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও মহাসড়ক অবরোধ করছেন।

আজ বুধবারও একই দাবিতে তারা সড়কে নেমে বিক্ষোভ করেন। ঢাকা-ময়মনসিংহ ও ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করলেও পুলিশ তাদের সড়ক থেকে সরিয়ে দেন। তবে পরিস্থিতি থমথমে রয়েছে।

দেশের রফতানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাক শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ৮ হাজার টাকা নির্ধারণ করে গত ২৫ নভেম্বর গেজেট প্রকাশ করে সরকার। ডিসেম্বরের ১ তারিখ থেকে তা কার্যকর করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল।

মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধি ও অনান্য খাতের শ্রমিকদের মজুরির বিবেচনায় পোশাক খাতের শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ১৬ হাজার টাকা করার দাবি ছিল বিভিন্ন বাম শ্রমিক সংগঠনের। সেই দাবি পূরণ না হওয়ায় বিক্ষোভ, মানববন্ধনের মতো কর্মসূচি পালন করে আসছিল সংগঠনগুলো।

নির্বাচনের পর নতুন সরকারের অভিষেকের আয়োজনের মধ্যেই গত রোববার ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ প্রবেশমুখ বিমানবন্দর সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করে পোশাক শ্রমিকরা।

সরকার ঘোষিত কাঠামো পর্যালোচনা করে ন্যূনতম মজুরি বৃদ্ধি ও বাস্তবায়নের দাবিতে সোম ও মঙ্গলবারও তারা রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ দেখায়।

তাদের অভিযোগ, সরকার তাদের জন্য যে নতুন বেতন কাঠামো নির্ধারণ করে দিয়েছে, মালিকপক্ষ সে অনুযায়ী বেতন দিচ্ছে না। বরং তাদের নানাভাবে ‘অন্যায়-অবিচারের’ শিকার হতে হচ্ছে।

টানা আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে আওয়ামী লীগের নতুন সরকারের বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি এবং শ্রম প্রতিমন্ত্রী মুন্নজান সুফিয়ান মঙ্গলবার বিকেলে গার্মেন্ট মালিক, শ্রমিক ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তাদের নিয়ে জরুরি বৈঠকে বসেন।

দুই ঘণ্টা বৈঠকের পর বেরিয়ে এসে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মনুশি জানান, দেড় মাস আগে ঘোষিত নতুন মজুরি কাঠামো পর্যালোচনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।

তিনি বলেন, মালিক পক্ষের পাঁচজন, শ্রমিক পক্ষের পাঁচজন এবং সরকারের বাণিজ্য সচিব ও শ্রম সচিবকে নিয়ে ১২ সদস্যের একটি কমিটি করার সিদ্ধান্ত হয়েছে বৈঠকে। এই কমিটি আগামী এক মাসের মধ্যে মজুরির অসঙ্গতিগুলো খতিয়ে দেখবে এবং সমস্যার সমাধানে পদক্ষেপ নেবে।

(ওএস/এসপি/জানুয়ারি ০৯, ২০১৯)

পাঠকের মতামত:

২০ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test