E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ উন্নয়নের জন্য বড় হুমকি: প্রধানমন্ত্রী

২০১৯ ফেব্রুয়ারি ০৪ ১৩:২৩:২০
সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ উন্নয়নের জন্য বড় হুমকি: প্রধানমন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার : সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ শান্তি, স্থিতিশীলতা এবং উন্নয়নের জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আর এই জঙ্গি দমনে বাংলাদেশ এখন বিশ্বের রোল মডেল বলে উল্লেখ করেন তিনি।

সোমবার রাজধানীর রাজারবাগ প্যারেড গ্রাউন্ডে পুলিশ সপ্তাহ ২০১৯ উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি।

শেখ হাসিনা বলেন, ২০১৬ সালে হলি আর্টিজান ও শোলাকিয়ায় জঙ্গি হামলা হয়। বাংলাদেশ পুলিশ সুদৃঢ় মনোবল, অসীম সাহসিকতা ও দক্ষতার সঙ্গে কাজ করে জঙ্গি সংগঠনগুলোর সাংগঠনিক ভিত্তি ভেঙে দিতে সক্ষম হয়েছে। শুধু দেশেই নয়, গত প্রায় তিন দশক ধরে বাংলাদেশ পুলিশ জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে নিজেদের কর্মদক্ষতা ও পেশাদারিত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে বহির্বিশ্বে ব্যাপক প্রশংসা অর্জন করেছে। সেজন্য জঙ্গি দমনে বাংলাদেশ আজ বিশ্বে রোল মডেল হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

যুবসমাজকে রক্ষায় সরকার মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি, তারুণ্যের শক্তি বাংলাদেশের সমৃদ্ধি। তাই যুবসমাজ ধ্বংসকারী মাদকের বিরুদ্ধে আমরা যুদ্ধ ঘোষণা করেছি। মাদক নির্মূলে পুলিশ কার্যকর ভূমিকা পালন করে চলেছে।’

পুলিশ সদস্যদের সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পুলিশের হাতে যেন কোনো নিরীহ মানুষ হয়রানির শিকার না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

‘জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস দমনে পুলিশ যেমন উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছে, তেমনি মাদক নির্মূল ও নিরাপদ সড়ক গড়ে তুলতেও তাদের অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। কোনো নিরীহ মানুষ যেন পুলিশের হাতে হয়রানির শিকার না হয় সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে। কোনো মানুষ হয়রানির শিকার হলে তার পাশে দাঁড়াতে হবে।’

পুলিশকে আধুনিক ও জনবান্ধব করে গড়ে তোলার লক্ষ্যে সরকারের গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা গত ১০ বছরে বাংলাদেশ পুলিশের জনবল ধাপে ধাপে প্রায় ৮০ হাজার বৃদ্ধি করেছি। সুপার নিউমারারি পদ সৃষ্টির মাধ্যমে পুলিশ সদস্যদের পদোন্নতি প্রাপ্তির জটিলতা নিরসনেও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। জাতির পিতা প্রদত্ত আইজিপি র‌্যাংক ব্যাজ পুনঃপ্রবর্তন করে ইতোমধ্যে সিনিয়র সচিব পদমর্যাদায় উন্নীত করেছি। গ্রেড-১ ও গ্রেড-২ পদের সংখ্যা বৃদ্ধি করা হয়েছে। সাব-ইন্সপেক্টর/সার্জেন্টদের পদমর্যাদা দ্বিতীয় শ্রেণি এবং ইন্সপেক্টরদের পদমর্যাদা প্রথম শ্রেণিতে উন্নীতকরণ করা হয়েছে।

‘পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই), ট্যুরিস্ট পুলিশ, নৌ পুলিশ, স্পেশাল সিকিউরিটি অ্যান্ড প্রটেকশন ব্যাটালিয়নসহ বিভিন্ন বিশেষায়িত পুলিশ ইউনিট গঠন করা হয়েছে। রংপুর রেঞ্জ, রংপুর আরআরএফ, ময়মনসিংহ রেঞ্জ, ২টি র‌্যাব ব্যাটালিয়ন, গাজীপুর ও রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ গঠনসহ নতুন নতুন থানা,তদন্ত কেন্দ্র ও ফাঁড়ি স্থাপন করা হয়েছে। শিল্প ক্ষেত্রে সুষ্ঠু পরিবেশ রক্ষার্থে ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ গঠন করা হয়েছে।’

তিনি বলেন, এয়ারপোর্ট আমর্ড পুলিশ ব্যাটালিয়ন ও কক্সবাজার এলাকার নিরাপত্তার জন্য ১৪ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন গঠন করা হয়েছে। জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদ নির্মূলে পুলিশের সক্ষমতা বৃদ্ধিতে পুলিশ এন্টি টেরোরিজম ইউনিট (এটিইউ) এবং কাউন্টার টেররিজম এন্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি) গঠন করা হয়েছে। বাংলাদেশ পুলিশের সাইবার পুলিশ সেন্টার, ডিএনএ ল্যাব, Automated Finger Print Identification System(AFIS) এবং আধুনিক রাসায়নিক পরীক্ষাগার স্থাপন করা হয়েছে যা মামলা তদন্তে নির্ভুল ও প্রকৃত তথ্য উদ্ঘাটনে যথার্থ ভূমিকা রাখছে।

পুলিশ সদস্যদের পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে এপিবিএন বিশেষায়িত ট্রেনিং সেন্টারসহ সারাদেশে ৩০টি ইন-সার্ভিস ট্রেনিং সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে বলে জানান শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘পুলিশ স্টাফ কলেজ, বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমিসহ পুলিশের সকল প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের উন্নয়ন পরিকল্পনা আমাদের সরকারের সক্রিয় বিবেচনায় রয়েছে। পুলিশ সদস্যদের কল্যাণের জন্য পুলিশ কল্যাণ ট্রাস্টের ভিত্তি আমরাই গঠন করে দিয়েছি। দায়িত্ব পালনকালে আহত ও নিহত সদস্যদের পরিবারবর্গকে আর্থিক অনুদান প্রদান করা হচ্ছে। পুলিশের জন্য কমিউনিটি ব্যাংক, বাংলাদেশ এর অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

পুলিশ পরিদর্শকদের জন্য বছরে এককালীন মূল বেতনের সমান বিশেষ ভাতার ব্যবস্থা করা হয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পর্যায়ক্রমে সকল পদের পুলিশ সদস্যদের এই ভাতা দেয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।

‘কর্তব্যরত অবস্থায় নিহত পুলিশ সদস্যদের পরিবারের জন্য রেশন প্রাপ্তির ব্যবস্থা করা হয়েছে। অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্যদের অনুকূলে অবসরকালীন আজীবন রেশন সুবিধা প্রদানের বিষয়টি আমাদের সক্রিয় বিবেচনাধীন রয়েছে।’

নির্বাচনি ইশতেহারে বাংলাদেশকে উন্নত দেশ হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে জনবান্ধব পুলিশ গঠনের বিষয়ে গুরুত্বারোপ করার বিষয়টি তুলে ধরে সরকারপ্রধান বলেন, ‘২০০৯ সালে পুলিশ জনসংখ্যার অনুপাত ছিল ১:১৩৫৫। আমাদের সরকার পুলিশের জনবল ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধির মাধ্যমে এ অনুপাত ১:৮০১-এ উন্নীত করেছে।

ভবিষ্যতে চাহিদা, জনসংখ্যার অনুপাত ও ভৌগলিক আয়তনসহ সামগ্রিক বিষয় বিবেচনা করে পুলিশের জনবল আরও বৃদ্ধি করা হবে। এছাড়া প্রয়োজনীয় আধুনিক যানবাহন-সরঞ্জামাদি ও অস্ত্র সরবরাহ, ভূমি সংস্থান, অবকাঠামো নির্মাণ, প্রশিক্ষণ ও সার্বিক সক্ষমতা বৃদ্ধিসহ পুলিশ সদস্যদের কল্যাণে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।’ পুলিশের সার্বিক উন্নয়নের ধারা বর্তমান মেয়াদেও পূর্ণমাত্রায় অব্যাহত থাকবে বলে জানান তিনি।

যারা বাংলাদেশ পুলিশ পদক ও রাষ্ট্রপতি পুলিশ পদকে ভূষিত হলেন, তাঁদের আন্তরিক অভিনন্দন জানান প্রধানমন্ত্রী। এ পদক কাজের স্বীকৃতির পাশাপাশি ভবিষ্যতে পেশাগত দায়িত্ব পালনে উদ্দীপনা ও প্রেরণা যোগাবে বলে মনে করেন সরকারপ্রধান।

(ওএস/অ/ফেব্রুয়ারি ০৪, ২০১৯)

পাঠকের মতামত:

২৫ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test