E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

রোহিঙ্গা সঙ্কট নিরসনে রাজনৈতিক সমাধান জরুরি : মেরাইখি

২০১৯ ফেব্রুয়ারি ২৭ ১৭:২৬:০৬
রোহিঙ্গা সঙ্কট নিরসনে রাজনৈতিক সমাধান জরুরি : মেরাইখি

স্টাফ রিপোর্টার : শুধু মানবিক সহায়তা নয়, রোহিঙ্গা সঙ্কট নিরসনে রাজনৈতিক সমাধান প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশে সফররত জাতিসংঘ মহাসচিবের মানবিক দূত আহমেদ আল মেরাইখি।

বুধবার রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নে জবাবে তিনি একথা বলেন।

ইউনিসেফের নির্বাহী পরিচালক হেনরিয়েটা ফোরের সঙ্গে বাংলাদেশ সফর করছেন আহমেদ আল মেরাইখি। গত ২৫-২৬ ফেব্রুয়ারি কক্সবাজারে দুদিনের মিশন শেষে বুধবার সংবাদ সম্মেলনে আসেন তারা।

আহমেদ আল মেরাইখি বলেন, রোহিঙ্গাদের যে সঙ্কট চলছে কেবলমাত্র মানবিক সহয়তা দিয়ে তার সমাধান সম্ভব নয়। মানবিক সহায়তা শুধু তাদের বেঁচে থাকার জন্য মৌলিক চাহিদা পূরণ করতে পারে। কিন্তু সমস্যার পুরোপুরি সমাধান রাজনৈতিকভাবে হতে হবে। আর এজন্য সকলকে একসাথে কাজ করতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে ইউনিসেফের নির্বাহী পরিচালক হেনরিয়েটা ফোর বলেন, ‘বৈশ্বিক সমাজ হিসেবে আমাদের যে বাধ্যবাধকতা রয়েছে তা অপরিমেয়। যেসব শিশু ও তরুণ জনগোষ্ঠীকে বিশ্ব রাষ্ট্রহীন বলে আখ্যায়িত করেছে তাদের নিজেদের সুন্দর জীবন গঠনে শিক্ষা ও দক্ষতা অর্জন প্রয়োজন।’

ইউনিসেফ জানায়, বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের কক্সবাজারে অবস্থানরত ৫ লাখ রোহিঙ্গা শিশু রাষ্ট্রহীন শরণার্থী অবস্থায় রয়েছে। তারা তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে খুবই উদ্বিগ্ন এবং হতাশা ও নৈরাশ্যের ঝুঁকিতে আছে।

আন্তর্জাতিক সহায়তায় বাংলাদেশ সরকারের নেতৃত্বে ব্যাপক মানবিক প্রচেষ্টা অগণিত শিশুর জীবন রক্ষা করেছে। বিশ্বের সবচেয়ে বড় এবং সবচেয়ে জনবহুল শরণার্থী আশ্রয়কেন্দ্রে বসবাসরত এই রোহিঙ্গা শিশুদের জন্য টেকসই কোনো সমাধান দৃষ্টিগোচর হচ্ছে না। ২০১৭ সালের আগস্টে এই বিপুল সংখ্যক মানুষ তাদের জীবন বাঁচাতে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়।

হেনরিয়েটা জানান, মিয়ানমারে তাদের কোনো আইনি পরিচয় বা নাগরিকত্ব নেই। বাংলাদেশেও শিশুদের জন্ম নিবন্ধন করা হচ্ছে না, তাদের বৈধ পরিচয় নেই এবং তাদের শরণার্থী মর্যাদা নেই। যারা মিয়ানমারে তাদের বাড়িতে ফিরে যাওয়ার যোগ্য, তাদের জন্য মিয়ানমারের পরিস্থিতি যতক্ষণ পর্যন্ত অনুকূল না হচ্ছে ততক্ষণ পর্যন্ত রোহিঙ্গা শিশুরা রাষ্ট্রহীন সংখ্যালঘু অবস্থায় থাকবে। এর ফলে এই শিশুরা আনুষ্ঠানিক শিক্ষার পাঠ্যসূচি গ্রহণের বাইরে থাকছে এবং তাদের বিপণনযোগ্য দক্ষতা অর্জিত হচ্ছে না।

ইউনিসেফ বলছে, বর্তমানে কক্সবাজারের ‘শিক্ষা কেন্দ্রগুলোতে’ ভর্তি হওয়া ১ লাখ ৮০ হাজার রোহিঙ্গা শিশুর ওপর ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে করা এক জরিপে দেখা যায়, ৯০ শতাংশেরও বেশি শিশু প্রাক-প্রাথমিক থেকে গ্রেড ১-২ পর্যায়ে পড়াশোনা করার যোগ্য। মাত্র ৪ শতাংশ গ্রেড ৩-৫ পর্যায়ে এবং ৩ শতাংশ গ্রেড ৬-৮ পর্যায়ে পড়ার যোগ্য ছিল। ২০১৮ সালের শেষে ১৫ থেকে ২৪ বছর বয়সী রোহিঙ্গাদের মাত্র ৩ শতাংশ কোনো ধরনের শিক্ষা বা কারিগরি দক্ষতা অর্জন করে।

ড. আল মেরাইকি বলেন, ‘এই প্রজন্মের রোহিঙ্গাদের পেছনে বিনিয়োগের জন্য আমাদের এ মুহূর্তে এবং সম্মিলিতভাবে সম্মত হতে হবে, যাতে তারা আজ তাদের জীবনকে আরও ভালোভাবে পরিচালনা করতে পারে এবং তারা যখন মিয়ানমারে ফিরে যেতে সক্ষম হবে তখন যেন তারা সেখানকার সামাজিক পুনর্নির্মাণে গঠনমূলক অংশ হতে পারে। বর্তমানে আইনি পরিচয় ব্যাতীত তারা পাচারকারী এবং মাদক ব্যবসায়ীদের অনুকম্পায় রয়েছে।’

ইউনিসেফ শিক্ষামূলক প্রকল্প নিয়ে ৪-১৪ বছর বয়সী ১ লাখ ৫৫ হাজার শিশুর কাছে পৌঁছেছে। প্রকল্পটিতে ক্রমান্বয়ে উন্নত মান, কাঠামোগত শিক্ষা ও দক্ষতা যুক্ত হচ্ছে। ২০১৯ সালের জন্য অগ্রাধিকার হচ্ছে, বেশি বয়সী কিশোর-কিশোরীদের সাক্ষরতা ও সংখ্যা গণনার প্রাথমিক দক্ষতা এবং সংশ্লিষ্ট কারিগরি দক্ষতা শেখানো। বাংলাদেশের অন্যতম দরিদ্র জেলা কক্সবাজারে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়া স্থানীয় জনগোষ্ঠীকে সহায়তা প্রদানের বিষয়েও বেশ জোরালো প্রচেষ্টা থাকবে।

হেনরিয়েটা ফোর বলেন, ‘এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কাজ। কিন্তু এটি প্রয়োজনের বালতিতে পানির একটি ফোটা মাত্র। এটি একটি অগ্রহণযোগ্য পরিস্থিতি। রোহিঙ্গা শিশু ও তরুণ জনগোষ্ঠীকে তাদের নিজেদের জীবন গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় শিক্ষা ও দক্ষতাবিহীন রাখা যায় না! তারা যদি নিজেরা বেঁচে থাকার যোগ্য হয়ে উঠতে পারে, তাহলে তাদের কমিউনিটিগুলোও নিজে থেকে টিকে থাকতে এবং সমৃদ্ধি লাভ করতে পারবে। সঠিক বিনিয়োগের মাধ্যমে এই রোহিঙ্গারা তাদের কমিউনিটি এবং বিশ্বের কাছে সম্পদ হতে পারে।’

২০১৯ সালে ৬ লাখ ৮৫ হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থী এবং তাদের আশ্রয় প্রদানকারী স্থানীয় জনগোষ্ঠীকে জরুরি সহায়তা প্রদানে ১৫ কোটি ২০ লাখ ডলার সহায়তা চেয়েছে ইউনিসেফ বাংলাদেশ। ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আবেদনের ২৯ শতাংশ তহবিল পেয়েছে সংস্থাটি।

(ওএস/এসপি/ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০১৯)

পাঠকের মতামত:

৩০ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test