E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিবেদন একপেশে, প্রত্যাখ্যান করছি

২০১৯ মার্চ ১৯ ১৭:০০:৩৮
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিবেদন একপেশে, প্রত্যাখ্যান করছি

স্টাফ রিপোর্টার : বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি ও নির্বাচন নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিবেদন একপেশে, তাই এ প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করে তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, ‘আমরা মনে করি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে এ রিপোর্ট কোনো প্রভাব ফেলবে না।’

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরের প্রকাশিত বার্ষিক মানবাধিকার প্রতিবেদন নিয়ে মঙ্গলবার সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তথ্যমন্ত্রী এ কথা বলেন।

গত ১৩ মার্চ ‘কান্ট্রি রিপোর্ট অন হিউম্যান রাইটস প্র্যাকটিস ২০১৮’ শীর্ষক প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে যুক্তরাষ্ট্র। বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশে মানবাধিকার পরিস্থিতি তুলে ধরা হয় এ প্রতিবেদনে।

প্রতিবেদনে যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, গত ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত অভাবনীয় রকম একপেশে একটি নির্বাচনের মাধ্যমে টানা তৃতীয় দফায় ক্ষমতায় এসেছে আওয়ামী লীগ। নানা অনিয়মে ভরা ওই নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য হিসেবে বিবেচিত হয়নি।

তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘ইউএস স্টেট ডিপার্টমেন্ট বাংলাদেশের নির্বাচন এবং একই সঙ্গে মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। ওই প্রতিবেদনটি একটি একপেশে প্রতিবেদন। এটি মূলত কিছু সংস্থার পাঠানো রিপোর্টের ওপর ভিত্তি করে প্রতিবেদনটি তৈরি হয়েছে বলে আমরা মনে করি। আমরা এ প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করছি।’

তিনি বলেন, ‘গত ৩০ ডিসেম্বর বাংলাদেশে যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে, এটি অত্যন্ত শান্তিপূর্ণ, উৎসবমুখর ও অংশগ্রহণমূলক পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়েছে। দেশের প্রায় সব রাজনৈতিক দল এ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছিল। অতীতে যে সব নির্বাচন হয়েছে তার তুলনায় এ নির্বাচন অনেক শান্তিপূর্ণ ছিল।’

হাছান মাহমুদ বলেন, ‘এ নির্বাচনে বিএনপি প্রথমদিকে রেকর্ড সংখ্যক ৩০০ আসনে ৮০০ মনোনয়ন দিয়েছিল। যেটি বাংলাদেশের ইতিহাসে, রাজনৈতিক দলের মনোনয়ন দেয়ার ইতিহাসে একটি রেকর্ড। এটি করতে গিয়ে যে মনোনয়ন বাণিজ্যের কথা আমরা জেনেছি, শুনেছি; এটি অত্যন্ত দুঃখজনক ও অনভিপ্রেত। এ বিষয়গুলো এ রিপোর্টের মধ্যে আসেনি।’

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকার পরিস্থিতি তুলে ধরে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মোটামুটিভাবে সবসময় ২৩ লাখ মানুষ কারাগারে থাকে। যেটি জনসংখ্যার আনুপাতিক হারের ভিত্তিতে পৃথিবীতে সর্বোচ্চ।’

‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কালো মানুষের কারাগারে থাকার হার সাদা মানুষের তুলনায় ৬ গুণ। পুলিশের গুলিতে কালো মানুষের নিহত হওয়ার হার সাদা মানুষের তুলনায় আড়াই গুণ বেশি। সহজেই অনুমেয়, সেখানে মানবাধিকার পরিস্থিতিটা কেমন?’

তথ্যমন্ত্রী আরও বলেন, ‘যারা যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে গত কিছুদিন ধরে প্রবেশ করতে চাচ্ছিল, তাদের সন্তানদের মা-বাবাদের কাছ থেকে আলাদা করে রাখা হয়েছে। এটা তো হিউম্যান রাইটসের সিরিয়াস ভায়োলেশন, সেটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেও প্রচণ্ডভাবে সমালোচনার সম্মুখীন হয়েছে।’

‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আমাদের অত্যন্ত বন্ধুপ্রতীম একটি দেশ। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে, আওয়ামী লীগ সরকারকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। বাংলাদেশ সরকারের সাথে কাজ করার ঘোষণা দিয়েছেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের বহুমাত্রিক সম্পর্ক রয়েছে’ বলেন আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক হাছান মাহমুদ।

‘আপনার দেয়ার পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে ভালো কিনা’- জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘আমি মনে করি, বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি খুব ভালো এবং যুক্তরাষ্ট্র আমাদের ব্যাপারে যে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, আমি মনে করি, তাদের নিজেদের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়েও একটু নজর দেয়া প্রয়োজন আছে। কারণ জাতিসংঘের পক্ষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে আহ্বান জানানো হয়েছিল, তাদের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে তদন্ত করার জন্য। যুক্তরাষ্ট্র সেটি রিজেক্ট করেছে।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের সমালোচনা করার অধিকার সবার আছে। তবে সমালোচনা করার আগে নিজেদের অবস্থা সম্পর্কে নজর দেয়া প্রয়োজন বলে আমরা মনে করি।’

কী কারণে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে নিয়ে এ প্রতিবেদন প্রকাশ করলো- জানতে চাইলে হাছান মাহমুদ বলেন, ‘তারা কয়েকটি সংগঠন কর্তৃক সবসময় প্রভাবিত। রিপোর্টে তারা অধিকার, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল, হিউম্যান রাইটস অ্যালায়েন্স- এ ধরনের কয়েকটি সংগঠনের নাম উল্লেখ করেছে। এ সংগঠনগুলো অব্যাহতভাবে বাংলাদেশে হিউম্যান রাইটস সিচুয়েশন নিয়ে মনগড়া প্রতিবেদন প্রকাশ করে। তাদের তথ্য-উপাত্ত নিয়ে কেউ রিপোর্ট প্রকাশ করলে সেটি একপেশেই হবে। সুতরাং আমি মনে করি, নির্দিষ্ট কয়েকটি সংগঠনের তথ্য-উপাত্ত নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ না করে বিষয়টি আরও ভালভাবে দেখার প্রয়োজন ছিল।’

ওই সংস্থাগুলোর বিরুদ্ধে সরকার কেন ব্যবস্থা নিচ্ছে না- এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা সমালোচনাকে সমাদৃত করি। আমরা চাই যেখানে কাজের ভুল থাকে সেখানে সমালোচনা হোক। সেক্ষেত্রে সমালোচনাটা অন্ধ না হোক, একপেশে না হোক। সেই কারণে এসব সংগঠনের কার্যক্রম আমরা বন্ধ করে দেইনি। আমরা আশা করব, তারা যেভাবে একপেশে সমালোচনা করে বা রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে তারা যে তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপন করে সেটি পরিহার করবে।’

স্থানীয় সরকার নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন স্থানে সহিংসতা হচ্ছে- এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আশপাশের দেশে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের তুলনায় আমাদের দেশের নির্বাচন অনেক ভালো হয়েছে, সহিংসতাও কম হয়েছে। (পার্বত্য এলাকায়) একটি পক্ষ নির্বাচন বর্জন করেছিল তারা নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য যারা নির্বাচনে দায়িত্বরত ছিলেন তাদের ওপর হামলা চালিয়েছে।’

(ওএস/এসপি/মার্চ ১৯, ২০১৯)

পাঠকের মতামত:

১৬ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test