E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানের পর কদর বেড়েছে ‘মুক্তা’ পানির

২০১৯ এপ্রিল ১৫ ১৫:১৭:৫৪
প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানের পর কদর বেড়েছে ‘মুক্তা’ পানির

স্টাফ রিপোর্টার : মুক্তা ড্রিংকিং ওয়াটার। এর বিশেষত্ব হলো এই পানি উৎপাদন করেন প্রতিবন্ধীরা। এ পানির কারখানায় প্রতিবন্ধী ব্যক্তি ছাড়া আর কেউ কাজ করেন না। এ পানি থেকে যে লাভ আসে, তার পুরো অংশই প্রতিবন্ধীদের কল্যাণে ব্যয় করা হয়।

সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ‘শারীরিক প্রতিবন্ধী সুরক্ষা ট্রাস্ট’-এর অধীনে পরিচালিত হচ্ছে মৈত্রী শিল্প প্ল্যান্ট। এখানে তৈরি হচ্ছে এই ‘মুক্তা’ ব্র্যান্ডের বোতলজাত পানি।

এতদিন এ বিষয়ে তেমন একটা প্রচার-প্রচারণা না থাকলেও সম্প্রতি এ পানি ব্যবহারে আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর থেকে কদর বেড়েছে মুক্তা পানির, সেই সঙ্গে বেড়েছে বিক্রিও। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও ব্যাপক সাড়া পড়েছে। সবাই তার নিজ ফেসবুক টাইমলাইনে এ বিষয়ে পোস্ট দিচ্ছেন, আহ্বানও জানাচ্ছেন এ পানি ব্যবহারের।

সম্প্রতি বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস উপলক্ষে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে অটিস্টিকদের মধ্যে সুপ্ত প্রতিভা রয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘নিজেদের প্রতিভা দিয়ে এরা অনেক কিছু তৈরি করতে পারে।’

প্রধানমন্ত্রী এ সময় ‘মুক্তা পানি’ মিনারেল ওয়াটারের বোতল হাতে নিয়ে অনুষ্ঠানের সবাইকে দেখিয়ে বলেন, এটিও কিন্তু আমাদের প্রতিবন্ধীরাই তৈরি করছে। এরপর থেকে তিনি এ পানি কেনার জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানান।

বক্তৃতার একপর্যায়ে তিনি টেবিলে থাকা মুক্তা পানি চেয়ে নেন। তখন শেখ হাসিনা বলেন, ‘এই যে এই পানিটা, এটা কারা তৈরি করে জানেন? এটা প্রতিবন্ধীরা তৈরি করে।

তার এই বক্তব্যের পর থেকে মূলত বেড়েছে মুক্তা পানির কদর, আগের তুলনায় এই পানি বিক্রি বেড়েছে কয়েকগুণ।

এ বিষয়ে শারীরিক প্রতিবন্ধী সুরক্ষা ট্রাস্ট, মুক্তা পানির কারখানা ব্যবস্থাপক মহসিন আলী জাগো নিউজকে বলেন, মূলত প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানের পর থেকে মুক্তা পানির বিক্রি বেড়েছে কয়েকগুণ। প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ডিলারশিপ নেয়ার জন্য আমাদের সঙ্গে অনেকেই যোগাযোগ করছেন। এ ছাড়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও এই মুক্তা পানি নিয়ে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে।

মুক্তা পানির টঙ্গী শো-রুম কাম সেলস সেন্টারের ইনচার্জ সাগর আহমেদ জাগো নিউজকে বলেন, হঠাৎ করেই মুক্তা পানি বিক্রি বেড়ে গেছে কয়েকগুণ। গত পরশু আমরা ১৬ টাকার পানি বিক্রি করেছি। মূলত প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানের পর এই বিক্রি বেড়ে গেছে। সবাই এখন খুঁজে নিচ্ছে মুক্তা পানি।

কথা হয় মুক্তা পানির ময়মনসিংহের ডিলার আলী আহমদের সঙ্গে। তিনিও বলেন, মুক্তা পানি আগে যেমন বিক্রি হত, তার চেয়ে এখন আরও বেশি বিক্রি হচ্ছে। সবাই এখন এসে শুধু মুক্তা পানিই চাচ্ছেন। ব্যস্ত জীবনে, বিশেষ করে শহুরে জীবনে বোতলজাত পানির ওপর অনেকাংশে নির্ভরশীল। প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানের পর থেকে এই মুক্তার পানি কিনতে সাধারণ মানুষের আরও বেশি আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে।

অন্যদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যেমেও ব্যক্তি পর্যায় থেকে মুক্তা পানি ব্যবহারের পক্ষে নিজ নিজ টাইমলাইনে পোস্ট দিয়ে আহ্বান জানাচ্ছেন অনেকে। সব মিলেয়ে এক ধরনের আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে মুক্তাপানি নিয়ে।

নিত্যপণ্যের একটি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান তাদের পেজে বিজ্ঞাপনমূলক পোস্ট দিয়ে বলেছে, ‘পানির অপর নাম জীবন , যাদের জীবন অসম্পূর্ণ তাদের অক্লান্ত পরিশ্রমে তৈরি এই মুক্তা পানি। আসুন যখনই দরকার হবে পানি, আমরা সবাই মিলে প্রতিবন্ধীদের তৈরি মুক্তা পানিই কিনে আনি। মুক্তা পানি কিনতে আমাদের অর্ডার করুন। আমরা পৌঁছে দেব।’

সরকারি ড্রিংকিং ওয়াটার ‘মুক্তা পানি’র কারখানা গাজীপুরের টঙ্গীতে অবস্থিত।

জানা গেছে, শারীরিক প্রতিবন্ধীদের দ্বারা উৎপাদিত ৯টি ভিন্ন ভিন্ন ধারণক্ষমতার বোতলে দৈনিক ১০ থেকে ১২ হাজার লিটার পানি বোতলজাত করা হয়। এর মধ্যে ২৫০ মিলিলিটার, ৫০০মিলিলিটার, ১ লিটার, ১.৫ লিটার বোতলও রয়েছে। তেমন একটা বিজ্ঞাপন না থাকার কারণে এর প্রসার এতদিন ঘটেনি।

মৈত্রী শিল্পের কর্মীদের প্রত্যেকের জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে ‘শারীরিক প্রতিবন্ধী সুরক্ষা ট্রাস্ট’। সমাজের অবহেলিত শারীরিক প্রতিবন্ধীকে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ দিয়ে তাদের কর্মক্ষম করে তোলার পাশাপাশি কাজের সুযোগ করে দিয়েছে ট্রাস্টটি। প্রতিবন্ধীদের পরিচালিত ট্রাস্টটি এখন মুনাফায় চলছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, শারীরিক প্রতিবন্ধী সুরক্ষা ট্রাস্টের মাধ্যমে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি ও পুনর্বাসনের মাধ্যমে শারীরিক প্রতিবন্ধীদের অধিকারের সুরক্ষা দেয়া হচ্ছে। প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীকে সমাজের মূল স্রোতধারায় সম্পৃক্ত করার পাশাপাশি তাদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ মানবসম্পদে রূপান্তরের লক্ষ্য নিয়ে পরিচালিত হচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শারীরিক প্রতিবন্ধী কর্মীদের শ্রম ও মেধা কাজে লাগিয়ে এবং আধুনিক প্রযুক্তির সহায়তা পানি বিশুদ্ধকরণ কার্যক্রম পরিচালনা করছে ট্রাস্টটি।

(ওএস/এসপি/এপ্রিল ১৫, ২০১৯)

পাঠকের মতামত:

২৬ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test