E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শিরোনাম:

অ্যাপে মিলছে না কাঙ্ক্ষিত টিকিট

২০১৯ মে ২২ ১৩:৩৬:২২
অ্যাপে মিলছে না কাঙ্ক্ষিত টিকিট

স্টাফ রিপোর্টার : প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করা বাঙালির দীর্ঘদিনের ঐতিহ্য। তাই তো শত বাঁধা, ভোগান্তি, বিড়ম্বনা উপেক্ষা করে প্রতি ঈদেই নাড়ির টানে বাড়ি ফেরে রাজধানীবাসী। তবে ঈদে অগ্রিম টিকিট সংগ্রহ থেকে শুরু করে বাড়ি ফেরা পর্যন্ত মানুষকে পোহাতে হয় নানা ভোগান্তি-বিড়ম্বনা। শত ভোগান্তি উপেক্ষা করে ট্রেনে-বাসে সবাই ছোটে নাড়ির টানে। রেলপথে ভোগান্তি কমাতে ট্রেনের টিকিট এবারই প্রথম ৫০ শতাংশ অনলাইনে অর্থাৎ অ্যাপের মাধ্যমে দেয়া হচ্ছে।

তবে অ্যাপ বিষয়ে যাত্রীদের অভিজ্ঞতা সুখের নয়। অ্যাপসটি সঠিকভাবে কাজ করছে না জানিয়ে প্রথম থেকেই অভিযোগ জানিয়ে আসছে যাত্রীরা। সকাল থেকে বেশ কয়েকবার চেষ্টা করেও রেলের অ্যাপ ‘রেল সেবা’তে প্রবেশ করা যায়নি বলে অভিযোগ জানিয়েছেন অনেকেই। কোনো কোনো বার প্রবেশ করা গেলেও শেষ পর্যন্ত অ্যাপের মাধ্যমে টিকিট কাটা যাচ্ছে না।

রেলভবন সূত্রে জানা গেছে, অনলাইনে ঈদের সময় একসঙ্গে প্রায় দেড় লাখ হিট পড়ে। তবে সিএনএসবিডির যে সক্ষমতা তাতে মাত্র ২০ হাজার লোড নিতে পারে। যে কারণে সাধারণ মানুষ অ্যাপের মাধ্যমে টিকিট পেতে কিছুটা ভোগান্তিতে পড়ছে।

কমলাপুর স্টেশনে আগামী ৩১ তারিখের রাজশাহীগামী বনলতা এক্সপ্রেস ট্রেনের টিকিট কাটতে লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন জুবায়ের আল হাসান। তিনি বলেন, অনলাইনে ৫০ শতাংশ টিকিট থাকা সত্ত্বেও আমাদের স্টেশনে টিকিটের লাইনে দাঁড়াতে হয়েছে। কারণ অ্যাপের মাধ্যমে কোনো টিকিট কাটা যাচ্ছে না। তাই বাধ্য হয়ে লাইনে এসে দাঁড়িয়েছি। যদি সেবা নাই পাওয়া যায় তাহলে বড় বড় কথা বলে অ্যাপ নামিয়ে লাভ কী?

আরেক টিকিট প্রত্যাশী সুলতান আহমেদও টিকিট কাটতে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়েছেন। তিনি বলেন, সকাল ৯টা থেকে টানা চেষ্টা করেছি অ্যাপের মাধ্যমে টিকিট কাটতে, কিন্তু টানা ২ ঘণ্টা চেষ্টা করেও টিকিট কাটতে না পেরে স্টেশনে এসে লাইনে দাঁড়ালাম। আমার পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ৩১ মে রংপুর যেতেই হবে। রেল কর্তৃপক্ষের কথা আশ্বস্ত হয়ে, ভেবেছিলাম এবার ভোগান্তি ছাড়া অনলাইনে অ্যাপের মাধ্যমে টিকিট কাটব। কিন্তু সে আশা পূরণ হলো না। সেবার মান ও টেকনিক্যাল বিষয়গুলো ঠিক না করে একটি মানহীন অ্যাপ বানানো হয়েছে।

অনেক সময় অ্যাপ প্রবেশ করা গেলেও ভেতরে টিকিট কেনার অপশনে যাওয়া যাচ্ছে না। ভেতরে ইন্টারফেস কাজ করছে না। এই ঘটনায় অভিযোগ তোলার পাশাপাশি ভুক্তভোগীরা ক্ষোভ প্রকাশ করছেন রীতিমতো।

রেলের অনলাইন টিকিট ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠান কম্পিউটার নেটওয়ার্ক সিস্টেমস লিমিটেড বাংলাদেশ (সিএনএসবিডি) সূত্রে জানা গেছে, এবার ৫০ ভাগ টিকিট অনলাইনে তিন পদ্ধতিতে দেয়া হচ্ছে। মোবাইল ফোনের এসএমএসে, ওয়েবসাইট থেকে এবং রেলের টিকিট কাটার সবশেষ ফিচার অ্যাপের মাধ্যমে। ঢাকা থেকে সবগুলো আন্তঃনগর ট্রেন মিলিয়ে দিনে প্রায় ৩০ হাজার ট্রেনের টিকিট রয়েছে। এর মধ্যে ৫ ভাগ রেলওয়ে কমকর্তা কর্মচারী ও ৫ ভাগ ভিআইপি ছাড়া বাকি সব টিকিটের ৫০ শতাংশ অনলাইন ও এসএমএস ও অ্যাপে পাওয়ার কথা।

ঈদ উপলক্ষে টিকিট বিক্রি কার্যক্রম পরিদর্শনে বুধবার কমলাপুর স্টেশন পরিদর্শনে এসে রেলমন্ত্রী বলেন, অ্যাপে টিকিট পেতে সাধারণ যাত্রীদের ভোগান্তির অভিযোগ আমরা পেয়েছি। আমরা এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করব, পাশাপাশি অ্যাপের মাধ্যেমে যে সব টিকিট বিক্রি হবে না, আমরা পরবর্তিতে তা কাউন্টার থেকে বিক্রি করব।

অন্যদিকে ট্রেনের টিকিট পেতে ভোগান্তির অভিযোগ পেয়ে কমলাপুর রেল স্টেশনের সার্ভার রুমসহ অন্যান্য স্থান পরিদর্শনে এসেছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) টিম।

উল্লেখ্য, বুধবার সকাল ৯টা থেকে কমলাপুরে ঈদের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হয়েছে। অগ্রিম টিকিট পাওয়া যাবে ২৬ মে পর্যন্ত। আজ (২২ মে) বিক্রি হচ্ছে ৩১ মের টিকিট। ২৩ মে যারা টিকিট সংগ্রহ করবেন তারা ১ জুন, যারা ২৪ মে সংগ্রহ করবেন তারা ২ জুন, যারা ২৫ মে সংগ্রহ করবেন তারা ৩ জুন, যারা ২৬ মে সংগ্রহ করবেন তারা পাবেন ৪ জুনের টিকিট।

যাত্রীদের সুবিধার্থে এবার পাঁচটি স্থান থেকে রেলের অগ্রিম টিকিট বিক্রির হচ্ছে। যমুনা সেতু দিয়ে সমগ্র পশ্চিমাঞ্চলগামী ট্রেনের টিকিট পাওয়া যাচ্ছে কমলাপুরে। চট্টগ্রাম ও নোয়াখালীগামী সব আন্তঃনগর ট্রেনের টিকিট পাওয়া যাবে বিমানবন্দর স্টেশনে। ময়মনসিংহ ও জামালপুরগামী সব আন্তঃনগর ট্রেনের টিকিট অগ্রিম সংগ্রহ করা যাবে তেজগাঁও রেলস্টেশন থেকে। নেত্রকোনোগামী মোহনগঞ্জ ও হাওড় এক্সপ্রেস ট্রেনের টিকিট সংগ্রহ করা যাবে বনানী স্টেশন থেকে।

ময়মনসিংহ ও জামালপুরগামী সব আন্তঃনগর ট্রেনের টিকিট অগ্রিম সংগ্রহ করা যাবে তেজগাঁও রেলস্টেশন থেকে। নেত্রকোনাগামী মোহনগঞ্জ ও হাওড় এক্সপ্রেস ট্রেনের টিকিট সংগ্রহ করা যাবে বনানী স্টেশন থেকে। এছাড়া সিলেট ও কিশোরগঞ্জগামী সব আন্তঃনগর ট্রেনের টিকিট সংগ্রহ করতে হবে ফুলবাড়িয়া (পুরনো রেলভবন) থেকে।

একজন যাত্রী চারটির বেশি টিকিট সংগ্রহ করতে পারবেন না। ঈদের অগ্রিম বিক্রিত টিকিট ফেরত নেয়া হবে না। জাতীয় পরিচয়পত্র দেখিয়ে টিকিট সংগ্রহ করতে হবে। যাত্রীরা ৫০ শতাংশ টিকিট অনলাইনে অ্যাপের মাধ্যমে কিনতে পারবেন। স্টেশন কাউন্টার থেকে ৫০ শতাংশ টিকিট অগ্রিম কিনতে পারবেন। অনলাইনে ৫০ শতাংশ টিকিট বিক্রি না হলে অবিক্রিত টিকিট কাউন্টার থেকে দেয়া হবে। এদিকে রেলের ফিরতি টিকিট বিক্রি ২৯ মে শুরু হয়ে ২ জুন পর্যন্ত চলবে।

(ওএস/এসপি/মে ২২, ২০১৯)

পাঠকের মতামত:

২৫ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test