E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

গবেষণা নিয়ে ঢাবির ফার্মেসি অনুষদের চেয়ারম্যানদের দুঃখ প্রকাশ

২০১৯ জুন ৩০ ১৭:৫৫:৩৭
গবেষণা নিয়ে ঢাবির ফার্মেসি অনুষদের চেয়ারম্যানদের দুঃখ প্রকাশ

স্টাফ রিপোর্টার : বাজারে প্রচলিত বিভিন্ন ব্র্যান্ডের সাতটি প্যাকেটজাত (পাস্তুরিত) দুধসহ ৭২টি খাদ্যপণ্য নিয়ে সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফার্মেসি বিভাগের নামে একটি গবেষণা প্রতিবেদন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। এরপর থেকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে।

বিশ্ববিদ্যালয়টির ফার্মেসি অনুষদভুক্ত চারটি বিভাগের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, এই গবেষণাকে ঢাবির বলা যাবে না। এটি ফার্মেসি বিভাগের একজন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকের ব্যক্তিগত গবেষণা। এর দায় ফার্মেসি অনুষদ নেবে না। ব্যক্তিগত গবেষণার সঙ্গে অনুষদভুক্ত বিভাগগুলোর কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি অনুষদ থেকে সোমবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বিভিন্ন গণমাধ্যমে গত ২৬ জুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি অনুষদ ও ফার্মেসি বিভাগের বরাতে তেল, দুধ ও মসলাসহ ৭১টি খাদ্যপণ্যের মান সংক্রান্ত গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এরপর দিন পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগের গবেষণার ফল মিথ্যা’ মর্মে যে বক্তব্য জাতীয় সংসদে উত্থাপন করেন তার পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি অনুষদভুক্ত চার বিভাগ যথাক্রমে ফার্মেসি, ফার্মাসিউটিক্যাল কেমিস্ট্রি, ক্লিনিক্যাল ফার্মেসি অ্যান্ড ফার্মাকোলজি ও ফার্মাসিউটিক্যাল টেকনোলজি বিভাগের পক্ষ থেকে আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। তাই আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। একই সঙ্গে এতদসংক্রান্ত বিষয়ে আমাদের সুস্পষ্ট বক্তব্য তুলে ধরছি।’

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, বিভিন্ন গণমাধ্যমে খাদ্যপণের মান সংক্রান্ত যে গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়, তা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি অনুষদভুক্ত বিভাগগুলোর পক্ষ থেকে করা কোনো আনুষ্ঠানিক গবেষণা নয়। এটি মূলত অত্র বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক আ ব ম ফারুকের একান্ত ব্যক্তিগত গবেষণালব্ধ রিপোর্ট। এই গবেষণার সঙ্গে অনুষদভুক্ত বিভাগগুলোর কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। তাই এ ব্যাপারে আমরা কোনো প্রকার দায়িত্ব নিতে পারি না।

‘এমতাবস্তায় সরকারের সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা ও জনমনে খাদ্যপণের মান সংক্রান্ত প্রতিবেদন নিয়ে যে বিভ্রান্তি ও আস্থার সংকট তৈরি হয়েছে তার জন্য আমরা আন্তরিকভাবে দুঃখিত ও সামগ্রিক বিষয়ে প্রত্যেককে তাদের অবস্থান থেকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনের জন্য উদাত্ত আহ্বান জানাই,’- উল্লেখ করা হয় বিজ্ঞপ্তিতে।

এই প্রতিবাদ বিজ্ঞপ্তিতে স্বাক্ষর করেন ফার্মেসি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. সীতেশ চন্দ্র বাছার, ফার্মাসিউটিক্যাল কেমিস্ট্রি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. খালিদ হোসেন, ক্লিনিক্যাল ফার্মেসি অ্যান্ড ফার্মাকোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শওকত আলী এবং ওষুধ প্রযুক্তি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. সৈয়দ সাব্বির হায়দার।

ওই গবেষণায় বিভিন্ন ব্র্যান্ডের সাতটি প্যাকেটজাত (পাস্তুরিত) দুধের নমুনা পরীক্ষা করে সেগুলোতে মানুষের চিকিৎসায় ব্যবহৃত শক্তিশালী অ্যান্টিবায়োটিকের উপস্থিতি পাওয়ার কথা বলা হলেও বাজারে থাকা ১৪টি ব্র্যান্ডের ১৮টি পাস্তুরিত/ইউএইচটি দুধ পরীক্ষা করে আশঙ্কাজনক কিছু পাওয়া যায়নি বলে গত ২৫ জুন হাইকোর্টে প্রতিবেদন জমা দেয় বিএসটিআই কর্তৃপক্ষ।

শিক্ষকের ওই প্রতিবেদনের বিষয়ে এর আগে জানতে চাইলে ফার্মেসি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক সীতেশ চন্দ্র বাছার বলেন, আমরা সচরাচর যেসব গবেষণা করে থাকি, তার রিপোর্ট কখনও সংবাদ সম্মেলন করে গণমাধ্যমের কাছে প্রকাশ করি না। এটা আমাদের কাজ না। আমরা সেগুলো বিভিন্ন জার্নালে প্রকাশ করি। এরপর সরকার যদি মনে করে এসব তাদের দরকার, তাহলে তারা আমাদের কাছে আসে। তখন আমরা তাদের কাছে ডাটাগুলো সরবরাহ করি। আমরা কখনও সেগুলো তাদের কাছে গিয়ে দিই না। কিংবা সংবাদ সম্মেলন করে গণমাধ্যমকেও জানাই না। যারা এগুলো করে আমার মনে হয় কোনো একটি বিশাল উদ্দেশ্য থাকে এসবের পেছনে।

ঢাবি শিক্ষকের ওই প্রতিবেদনের বিষয়ে বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে প্রস্তাবিত ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেট সম্পর্কে সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী বলেন, কিছু অসাধু ব্যবসায়ী দুধের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে। আপনারা জানেন গত পরশু বাংলাদেশের কিছু অসৎ ব্যবসায়ী ঢাকা ইউনিভার্সিটির একটি টেস্ট রিপোর্ট দিয়ে বলছে, মিল্কভিটায় আর্সেনিক আছে। মিল্কভিটা দুধের মধ্যে না-কি ফরমালিন আছে। এটি একটি সর্বস্ব মিথ্যা কথা।

সরকার, দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা ও সংশ্লিষ্ট অনুষদের বেশ কিছু শিক্ষকের এ প্রতিবেদন নিয়ে সন্দেহ তৈরি হওয়ায় এ নিয়ে বেশ কয়েকবার যোগাযোগ করা হয় সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠকারী ও গবেষক দলের প্রধান ওষুধ প্রযুক্তি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক আ ব ম ফারুকের সঙ্গে। তার কাছে চাওয়া হয় পরীক্ষা করা পণ্যের ল্যাব টেস্টের রিপোর্ট। তবে তিনি তা দিতে বারবারই অস্বীকৃতি জানান। অধ্যাপক আ ব ম ফারুকের দাবি- ল্যাব রিপোর্ট অন্যের কাছে সরবরাহ করতে আইনি জটিলতা রয়েছে। তিনি তা করতে পারেন না।

আ ব ম ফারুক বলেন, ল্যাব টেস্টের রিপোর্ট দিয়ে আপনি কী করবেন? আপনি কি কেমিস্ট? আমাদের রিপোর্টগুলো কোনো কোম্পানি বা কাউকে দেয়ার কথা না। আমাদের আইনগত বাধ্যবাধকতা আছে। ইউনিভার্সিটির ফান্ড থেকে এ কাজ করছি। আমরা কোনো কোম্পানির হয়ে কাজ করি না।

ফার্মেসি বিভাগের চেয়ারম্যানের প্রতিবাদের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি সরাসরি তার কোনো জবাব না দিয়ে বলেন, আমরা তো কাউকে দায় নিতে বলিনি। উনি যা বলছেন সেটিও ঠিক, আমরা যা বলেছি সেটিও সঠিক... পুরো বিষয়টাকে ইতিবাচকভাবে নিতে হবে। আমাদের প্রতিবেদনে যে অ্যান্টিবায়োটিক-ডিটারজেন্ট পাওয়ার কথা বলা হয়েছে এ বিষয়ে কোম্পানিগুলো একটু সতর্ক হলেই ঠিক হয়ে যাবে। একইসঙ্গে দুধের প্যাকেটজাত কোনো নমুনায় ফরমালিনের উপস্থিতি না পাওয়ার বিষয়টিও বেশ ইতিবাচক বলে মন্তব্য করেন তিনি।

(ওএস/এসপি/জুন ২৯, ২০১৯)

পাঠকের মতামত:

১৭ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test