E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

রিকশাচালকদের অবরোধে সীমাহীন ভোগান্তি

২০১৯ জুলাই ০৯ ১৭:১৬:২৯
রিকশাচালকদের অবরোধে সীমাহীন ভোগান্তি

স্টাফ রিপোর্টার : রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ সড়ক থেকে রিকশা তুলে দেয়ার প্রতিবাদে রাজধানীর মালিবাগ, রামপুরা, বাড্ডাসহ বেশ কয়েকটি পয়েন্টের সড়কে নেমেছেন রিকশাচালকরা। মঙ্গলবার সকাল আটটা থেকে রাজধানীর কুড়িল-রামপুরা-মালিবাগ সড়কের বিভিন্ন অংশে অবস্থান নিয়ে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছে তারা।

তাদের অবরোধে থমকে আছে রাজধানীর ব্যস্ততম সড়ক প্রগতি সরণি। মালিবাগ রামপুরা হয়ে উত্তর বাড্ডা পর্যন্ত সড়ককে যানবাহন স্থবির হয়ে আছে। বিপরীত দিকের সড়ক পুরোটাই ফাঁকা। সেখানে মানুষ পায়ে হেঁটে চলাচল করছেন, কারণ কুড়িল বিশ্বরোড থেকে কোনো গাড়ি এমনকি মোটরসাইকেলও ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না। ফলে সকাল থেকেই এই সড়ক ব্যবহার করা কর্মক্ষেত্রগামী সাধারণ মানুষ পড়েছেন বিপাকে।

উত্তরা থেকে মুগদা যেতে চেয়েছিলেন হামিদুর রহমান একজন যাত্রী। কিন্তু কুড়িল থেকেই সব ধরনের যানবাহন বন্ধ থাকায় তিনি পায়ে হেঁটেই গন্তব্যে চলেছেন।

হামিদুর রহমান বলেন, জরুরি কাজ থাকায় আমাকে পায়ে হেঁটেই গন্তব্যে যেতে হচ্ছে। রিকশাচালকদের সড়ক অবরোধের কারণে সব ধরনের যানবাহন বন্ধ আছে। তাই বাধ্য হয়ে আমার মতো হাজার যাত্রীদের পায়ে হেঁটে যেতে হয়েছে। আধাঘন্টা সময়েরও বেশি সময় ধরে হেঁটে কুড়িল থেকে উত্তর বাড্ডা পর্যন্ত এসেছি। এখন বাকি পথও হেঁটে যাওয়া ছাড়া কোনো উপায় দেখছি না।

জুবায়ের আহমেদ নামের আরেক পথচারী বলেন, আমাদের মতো সাধারণ যাত্রীদেরই সব ধরনের ভোগান্তি পোহাতে হয়। একবার ছাত্র আন্দোলন, একবার রিকশাচালকদের অবরোধ। আমরা আসলে স্বাচ্ছন্দ্যে চলাফেরা করতে চাই। আমাদের মতো অনেক সাধারণ মানুষ আছে যারা স্বল্প দূরত্বে রিকশায় যাতায়াত করে। তাদের জন্য গণপরিবহনের কোনো ব্যবস্থা না করে হঠাৎ রিকশা বন্ধ করে দেয়া হলো। যে কারণে রিকশাচালকরা আন্দোলনে, আর ভোগান্তি পোহাচ্ছি আমরা সাধারণ মানুষ।

মালিবাগ থেকে উত্তর বাড্ডা পর্যন্ত হেঁটে এসেছেন একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সানজিদা তাসলিম। তিনি বলেন, সকালে একটি জরুরি কাজের জন্য খিলক্ষেত বাসা থেকে মালিবাগ যাওয়া দরকার ছিল। কিন্তু রাস্তায় এসে দেখি বাস চলছে না। তখন বাধ্য হয়ে হেঁটে গেছি। কাজ শেষ করে আবার পায়ে হেঁটেই ফিরতে হচ্ছে। আমার মতো এমন হাজার হাজার মানুষ সীমাহীন ভোগান্তিতে পড়েছে। অফিসগামী, কর্মক্ষেত্রে যাওয়া মানুষের ভোগান্তি নিরসনের যেন কেউ নেই। রোগীসহ হাজারও মানুষের ভোগান্তির কথা চিন্তা করে এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়া জরুরি।

উত্তর বাড্ডায় অবস্থান নেয়া এনামুল হক নামের এক রিকশাচালক বলেন, দাবি মেনে না নেয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবেই। আমাদের পেটে লাথি মেরে সড়কে রিকশা বন্ধের সিদ্ধান্ত মানি না। আমাদের একটাই দাবি, রিকশা চলতে দিতে হবে। আমাদের দাবি মেনে নিলে তবেই আমরা সড়ক ছেড়ে দেব।

অপরদিকে আলোচনার প্রস্তাব দিয়ে বৈধ ও লাইসেন্সধারী রিকশাচালক মালিকদের নগর ভবনে চায়ের দাওয়াত দিয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র সাঈদ খোকন। মঙ্গলবার রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে নগরীর সুশৃঙ্খল গণপরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তোলার লক্ষে, আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা বিনিময় শীর্ষক এক কর্মশালায় তিনি এ আহ্বান জানান।

মেয়র সাঈদ খোকন বলেন, সবাই মিলে বসে আলোচনা করে যেকোনো সমস্যার সমাধান করা সম্ভব। তাই আমি লাইসেন্সধারী রিকশাচালক-মালিকদের নগর ভবনে চায়ের দাওয়াত দিচ্ছি। তাদের আলোচনায় বসার আমন্ত্রণ জানাচ্ছি। আমরা আলোচনা করে এই সমস্যার সমাধান করতে পারি। কুড়িল বিশ্বরোডসহ বেশ কয়েকটি জায়গায় তারা আন্দোলন করেছে। তাদের সঙ্গে রিকশার মালিক এবং কিছু অচেনা মুখও দেখা গেছে। রাস্তায় রিকশা বন্ধ করা হয়েছিল যানজট কমানোর জন্য। কিন্তু তারা রাস্তা বন্ধ করে আন্দোলন করায় পুরো শহর স্থবির হয়ে পড়েছে। এটা খুবই দুঃখজনক।

এর আগে গত ৩ জুলাই রাজধানীর নির্দিষ্ট মূল সড়কে রিকশা চলাচল বন্ধের ঘোষণা দেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন। প্রাথমিকভাবে গাবতলী থেকে আসাদগেট হয়ে আজিমপুর ও সায়েন্স ল্যাব থেকে শাহবাগ পর্যন্ত রিকশা চলাচল করবে না। এছাড়া কুড়িল বিশ্বরোড থেকে রামপুরা হয়ে খিলগাঁও-সায়েদাবাদ পর্যন্ত রিকশাসহ অন্যান্য অবৈধ ও অনুমোদিত যানবাহন চলাচল নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। ডিটিসিএর (ঢাকা ট্রান্সপোর্ট কন্ট্রোল অথরিটি) এক বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এরই প্রেক্ষিতে গতকাল থেকে তাদের আন্দোলন অব্যাহত রেখেছেন রিকশাচালকরা।

(ওএস/এসপি/জুলাই ০৯, ২০১৯)

পাঠকের মতামত:

১৯ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test