E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

প্রাণ-মিল্ক ভিটাসহ পাস্তুরিত দুধে স্বাস্থ্য ঝুঁকি নেই : বিএআরসি

২০১৯ জুলাই ৩১ ১৬:২০:১৪
প্রাণ-মিল্ক ভিটাসহ পাস্তুরিত দুধে স্বাস্থ্য ঝুঁকি নেই : বিএআরসি

স্টাফ রিপোর্টার : প্রাণ, মিল্ক ভিটাসহ পাস্তুরিত দুধে কোনো ভারী ধাতু, অ্যান্টিবায়োটিক, সালফা ড্রাগ পাওয়া যায়নি; তাই দেশীয়ভাবে উৎপাদিত সাতটি ব্র্যান্ডের দুধে কোনো স্বাস্থ্যঝুঁকি নেই বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের (বিএআরসি) পুষ্টি ইউনিট।

আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান এসজিএসের ভারতের চেন্নাই ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষায় পাওয়া ফলাফলের ভিত্তিতে এ তথ্য জানিয়ছে বিএআরসি।

বুধবার (৩১ জুলাই) সচিবালয়ে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের (বিএআরসি) পুষ্টি ইউনিটের দুধে অ্যান্টিবায়োটিক, সালফা ড্রাগ ও ভারী ধাতুর উপস্থিতি বিশ্লেষণ ফলাফল নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়। এ সময় কৃষিমন্ত্রী মো. আব্দুর রাজ্জাক উপস্থিত ছিলেন।

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের পরিচালক (পুষ্টি) ড. মো. মনিরুল ইসলাম বিশ্লেষণের ফলাফল তুলে ধরেন।

কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘গবেষণালব্ধ ফলাফল বিশ্লেষণে নিশ্চিতভাবে বলা যায় দেশীয় প্রতিষ্ঠানের উৎপাদিত বাজারজাতকৃত সাতটি ব্র্যান্ডের দুধ পানে কোনো প্রকার স্বাস্থ্য ঝুঁকি নেই। এসজিএস থেকে আমরা যে পরীক্ষা করে এনেছি, এটা রিল্যায়াবল (বিশ্বাসযোগ্য) এবং সারা পৃথিবীর জন্য এটা গ্রহণযোগ্য।’

গবেষণা কাউন্সিলের পরিচালক মনিরুল ইসলাম জানান, দেশীয়ভাবে উৎপাদিত বিভিন্ন ব্র্যান্ডের তরল দুধ নিয়ে বিতর্ক ওঠার পর বিএআরসি গত ১৬ জুলাই অ্যান্টিবায়োটিক, সালফা ড্রাগ ও ভারী ধাতুর উপস্থিতি বিশ্লেষণ করার জন্য সাতটি ব্র্যান্ডের পাস্তুরিত ও দুটি অপাস্তুরিত দুধসহ মোট ১৬টি নমুনা ভারতের চেন্নাইয়ে পাঠানো হয়।

নমুনা নেয়া পাস্তুরিত দুধের ব্র্যান্ডগুলোর মধ্যে রয়েছে- মিল্ক ভিটা, প্রাণ, আড়ং, ফার্মফ্রেশ, ঈগলু, আরডি ও সাভার ডেইরি। এছাড়া দুটি স্থান থেকে অপাস্তুরিত দুধের নমুনা নেয়া হয়েছে।

এসজিএসের মাধ্যমে পরীক্ষা করা অত্যন্ত ব্যয়বহুল বলেও জানান তিনি।

পরিচালক বলেন, ‘সরকারের সদিচ্ছা ও বিভিন্ন পদক্ষেপের ফলে আমাদের দেশে ইতোমধ্যে দুগ্ধ উৎপাদন একটি বিকাশমান শিল্প হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে। তবে দুধ নিয়ে সাম্প্রতিক সময়ে স্থানীয় কয়েকটি প্রতিষ্ঠান বাজার থেকে পাস্তুরিত ও কাঁচা তরল দুধের নমুনা সংগ্রহ করে স্থানীয় কয়েকটি ল্যাবরেটরি থেকে পরীক্ষা করে দুধে অ্যান্টিবায়োটিক ও ভারী ধাতুর উপস্থিতি রয়েছে বলে দারি করা হয়। পরবর্তী সময়ে এসব রিপোর্ট হাইকোর্টে উপস্থাপন করা হয়।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের বড় সীমাবদ্ধতা হল খাদ্যপণ্যের গুণগত মান বিশ্লেষণে আমাদের দেশে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত অর্থাৎ অ্যাক্রেডিটেড কোনো ল্যাবরেটরি নেই। এমনকি স্থানীয় এসব গবেষণাগারের বিশ্লেষণ সক্ষমতা বা মান কতটুকু গ্রহণযোগ্যতা বরাবরই তা প্রশ্নবিদ্ধ। কিন্তু বিভিন্ন সময়ে একশ্রেণির সুবিধাভোগী ব্যক্তি কোনো প্রকার বিজ্ঞানভিত্তিক তথ্য-উপাত্ত বা কোনো প্রকার মানসম্পন্ন গবেষণা ফলাফল ছাড়া অনেকটা দায়সারা রিপোর্ট তৈরি করে ক্রমাগত বিভিন্ন পণ্যের মান নিয়ে মানুষের মাঝে আতঙ্ক তৈরি করে চলেছে।’

জনমনের অস্থিরতা দূরীকরণে দুধে অ্যান্টিবায়োটিক, সালফা ড্রাগ ও ভারী ধাতুর অবশিষ্টাংশের উপস্থিতি বিশ্লেষণের জন্য বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের পুষ্টি ইউনিট উদ্যোগ গ্রহণ করে বলে জানান মনিরুল ইসলাম।

বাজারজাতকৃত পাস্তুরিত দুধ ঢাকার বিভিন্ন স্থান যেমন- মোহাম্মদপুর, ধানমন্ডি, গুলশান ও ফার্মগেট এলাকা থেকে সংগ্রহ করা হয়। অপাস্তুরিত দুধের নমুনা রাজাসন ও সাভারের খামারি থেকে সংগ্রহ করা হয় বলে জানান তিনি।

প্রতিটি পাস্তুরিত ও অপাস্তুরিত দুধের নমুনা সরাসরি বিশ্লেষণসহ একই সঙ্গে এসব দুধের প্রতিটি নমুনা ৯ মিনিট সিদ্ধ করে অ্যান্টিবায়োটিক, সালফা ড্রাগ ও ভারী ধাতুর অবশিষ্টংশের উপস্থিতিও বিশ্লেষণ করা হয়।

বিশ্লেষণের ফলাফল তুলে ধরে মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘বিশ্লেষণ ফলাফলে পাস্তুরিত ও অপাস্তুরিত দুধে কোনো প্রকার ভারী ধাতু যেমন লিড ও ক্রোমিয়ামের এর রেসিডিউ বা অবশিষ্টাংশ পাওয়া যায়নি। দুধে কোন প্রকার সালফা ড্রাগও পাওয়া যায়নি।’

ফলাফলে কোনো অ্যান্টিবায়োটিকও পাওয়া যায়নি বলে জানান তিনি।

তবে ১৬টির নমুনায় মধ্যে শুধু মিল্ক ভিটার একটি নমুনায় স্টেপটোমাইসিন-এর উপস্থিতি প্রতি কেজিতে ১০ মাইক্রোগ্রামের নিচে পাওয়া গেছে। তা মানব দেহের জন্য নির্ধারিত সর্বোচ্চ সহনীয় মাত্রার অনেক নিচে। সর্বোচ্চ সহনীয় মাত্র কেজিতে ২০০ মাইক্রোগ্রাম। প্রাণের দুধের একটি নমুনায় শুধুমাত্র ক্লোরামফেনিকল-এর উপস্থিতি প্রতি কেজিতে ০.০৬ মাইক্রোগ্রাম পাওয়া গেছে। দুধের ক্ষেত্রে ক্লোরামফেনিকল-এর কোনো প্রকার নির্ধারিত মাত্রা পাওয়া যায়নি। তবে কারও কারও মতে ০.১ মাইক্রোগ্রাম পর্যন্ত গ্রহণযোগ্য বলে জানানা বিএআরসির পরিচালক।

খাদ্য বিষয়ক যেকোনো প্রকার আতঙ্ক বা বিভ্রান্তি এড়ানোর জন্য বিভিন্ন পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণ অর্থাৎ পণ্যের মান পরীক্ষা ও দ্রুত ফলাফল প্রাপ্তি, আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য ও বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয়ে মান সম্পন্ন অ্যাক্রেডিটেড ল্যাবরেটরি প্রতিষ্ঠা এখন সময়ের দাবি বলেও জানান পরিচালক মনিরুল ইসলাম।

গত ২৫ জুন ঢাবির ফার্মেসি অনুষদের শিক্ষকরা একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করেন। মিল্কভিটাসহ সাতটি ব্র্যান্ডের প্যাকেটজাত (পাস্তুরিত) দুধের নমুনা পরীক্ষা করে সেগুলোতে মানুষের চিকিৎসায় ব্যবহৃত অ্যান্টিবায়োটিকের উপস্থিতি পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন তারা।

সংবাদ সম্মেলনে বায়োমেডিকেল রিচার্স সেন্টারের পরিচালক ও ওষুধ প্রযুক্তি বিভাগের অধ্যাপক আ ব ম ফারুক বলেন, পরীক্ষায় পাস্তুরিত দুধের সাতটি নমুনার সবগুলোতেই লেভোফ্লক্সাসিন ও সিপ্রোফ্লক্সাসিন এবং ছয়টি নমুনায় এজিথ্রোমাইসিনের উপস্থিতি পাওয়া গেছে।

আ ব ম ফারুকের এই গবেষণার বিষয়ে মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘তিনি কিন্তু গবেষণার ডাটা দিচ্ছেন না। বারবার বলছেন এটা পাওয়া গেছে। উনি বলছেন রিপোর্ট আমি জমা দিয়েছি, জমা দিলেও তো তার কাছে কপি থাকবে না? তার লিড ও অ্যান্টিবায়োটিক পরীক্ষার কোনো সক্ষমতাই নেই।’

এ বিষয়ে কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশে আইসিডিডিআর’বি-র ল্যাবরেটরিতেও ভারী ধাতু, ডিটারজেন্ট ও অ্যান্টিবায়োটিক পরীক্ষার সুযোগ নেই। আমরা এখনও আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন একটা ল্যাবরেটরি করতে পারিনি এটা আমাদের ব্যর্থতা। অন্যান্য যেসব ল্যাবের কথা বলা হচ্ছে সেখানে সেই সক্ষমতা নেই।’

মন্ত্রী বলেন,‘তার (আ ব ম ফারুক) মেটাল পরীক্ষার কোনো সক্ষমতা নেই। কাজেই তার গবেষণাকে ভুল ও নির্ভুল বলার সুযোগ নেই, কারণ তার এই পরীক্ষা করারই তো সক্ষমতা নেই। উনি বলবেন কোথা থেকে!’

আগামীতে অন্যান্য ব্র্যান্ডের দুধ নিয়ে এ ধরণের পরীক্ষার প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে বলেও জানান কৃষিমন্ত্রী।

সংবাদ সম্মেলনে কৃষি সচিব মো. নাসিরুজ্জামান উপস্থিত ছিলেন।

(ওএস/এসপি/জুলাই ৩১, ২০১৯)

পাঠকের মতামত:

১৮ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test