E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

সম্রাট আওরঙ্গজেবের বাড়িতে প্রচন্ড ভিড়!

২০১৪ জুলাই ৩১ ১২:৫২:৪৭
সম্রাট আওরঙ্গজেবের বাড়িতে প্রচন্ড ভিড়!

নিউজ ডেস্ক : মানুষের প্রচন্ড ভিড় লেগেছে সম্রাট আওরঙ্গজেবের বাড়ীতে। আওরঙ্গজেবের মৃত্যুর পর তার ৩য় পুত্র আজম শাহ এই বাড়িতে বসবাস করতেন। আওরঙ্গবাদ গেট, দরবার হল ও দুর্গ মসজিদে সব খানেই মানুষ আর মানুষ। সবাই যেন স্মৃতিতে ফিরে গিয়েছেন মুঘল সাম্রাজ্যে।

আওরঙ্গজেব ও তার সেনাবাহিনী না থাকলে আছে তার রেখে যাওয়া নানান নির্দশন। আর সেসব নিদর্শন দেখতেই দূর দুরান্ত থেকে নানা বয়সী মানুষ ছুটে এসেছেন আওরঙ্গজেবের কেল্লায়। ঐতিহাসিক এ কেল্লা নারী শিশু ও পুরুষের পদচারণায় মুখর হয়ে উঠেছে।

ঈদুল ফিতরের ছুটি শেষ হলেও বৃহস্পতিবার এমন চিত্রই দেখা গেল পুরনো ঢাকার লালবাগে অবস্থিত লালবাগের কেল্লায়। মোঘল আমলে স্থাপিত এই দুর্গটি একটি মোঘল ঐতিহাসিক নিদর্শনটি অবস্থানগত কারণেই সবার কাছে পরিচিত লালবাগের কেল্লা নামে।

প্রথমে এই কেল্লার নাম ছিল কেল্লা আওরঙ্গবাদ। আর এই কেল্লার নকশা করেন মোঘল সম্রাট আওরঙ্গজেবের ৩য় পুত্র আজম শাহ । তিনি ১৬৭৮ খ্রিস্টাব্দে ঢাকার সুবেদার হয়ে এদেশে এসেছিলেন। তিনি নিজের বাসস্থান হিসেবে কেল্লা আওরঙ্গবাদ নামে এ দুর্গের নির্মাণ কাজ শুরু করেন। দুর্গের নির্মাণ কাজ শুরু করার মাত্র এক বছর শেষ হবার আগেই মারাঠা বিদ্রোহ দমনের জন্য তার পিতা সম্রাট আওরঙ্গজেব তাকে দিল্লি ডেকে পাঠান। এসময় তিনি শুধু একটি মসজিদ ও দরবার হল নির্মাণ করেছিলেন ।

এই কেল্লার ভিতর বাইরের চিত্র আজ অন্যান্য দিনের চেয়ে একেবারেই ভিন্ন। সকালে থেকেই আসতে থাকে দর্শনার্থীরা। এসব দর্শনার্থীদের মধ্যে বেশির ভাগই নারী ও শিশু।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেল, পুরুষ ও নারীরা নিজ নিজ টিকেট কাউন্টার থেকে প্রবেশের টিকেট সংগ্রহ করছেন। প্রচণ্ড ভিড় থাকায় যারা টিকেট বিক্রির দায়িত্বে আছেন অনেকটাই হিমসিম খাচ্ছেন। গেটের ভেতর থেকে শুরু করে সবখানেই দর্শনার্থী। গেট দিয়ে এগাতেই প্রথমেই পরীবিবির মাজার। দর্শনার্থীরা প্রথমেই মাজারের সামনে গিয়ে একপলক হলেও দেখছেন কবরটিকে। মাজারের সামনে কেউ বসে সময় কাটাচ্ছেন। ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা শুকনো ফোয়ারার নিচে নেমে উল্লাস করছে।

তারপরেই ছুটছেন পাশের দক্ষিণ দিকের দুর্গে। নানান বয়সী দর্শনার্থী এ দুর্গে উঠছেন আর ঘুরে ঘুরে দেখছেন। দুর্গের পশ্চিম দিকে কোন কোন তরুণ ওপর থেকে লাফিয়ে পড়ে পানির নালা দেখছেন। অনেকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছেন এ দুর্গের অনেক কিছুই। এ দুর্গের মাঝামাঝি গুপ্তপথ দেখেই অনেকেই বিস্ময় প্রকাশ করছেন।

একসময় এসব গুপ্তপথ দিয়েই নারায়ণগঞ্জের সোনাকান্দা দুর্গে যাওয়া যেতো বলে প্রচলিত রয়েছে। তবে গুপ্তপথ নোংরা আবর্জনা জমে দর্শনার্থীদের যাবার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। তাই এখন গুপ্তপথটি বন্ধ রেখেছে কর্তৃপক্ষ। দুর্গের পূর্ব দিকে অসমাপ্ত কাজ দেখার জন্য অনেক দেয়ালে ওঠারও চেষ্টা করছেন। কেউ কেউ এ স্মৃতিকে ফ্রেমে ধরে রাখার ছবিও তুলছেন।

ইতিহাস সূত্রে জানা যায়, ১৬৮০ সালে নবাব শায়েস্তা খাঁ ঢাকার সুবেদার হয়ে আসেন। কেল্লার কাজ সমাপ্ত করার জন্য শাহজাদা আজম শাহ তাকে অনুরোধ করেছিলেন। তাই তিনি এদেশে সুবেদার হয়ে আসার পর পুনরায় দুর্গের নির্মাণ কাজ শুরু করেন। কাজ শুরু করার চার বছরের মাথায় তার আদরের কন্যা পরীবিবির মৃত্যু হয়। এতে তিনি মানসিক ভাবে ভীষণ বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন। ১৬৮৪ খ্রিস্টাব্দে শায়েস্তা খান এর নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দেন।

দুর্গ দেখা হলেই দর্শনার্থীরা ছুটছেন দক্ষিণের ফটক থেকে উত্তরের ফটকে যাওয়ার মাঝ পথে পুকুরে। পুকুরে এখন পানি না থাকলেও তরুণ তরুণীরা লোহার বেড়া টপকে সেই পুকুরে নামছেন আর ঘুরছেন। জনশ্রুতি আছে, তখনকার সময়ে সিপাহী বিপ্লবে নিহত এ অঞ্চলের সৈন্যদের লাশ এ পুকুরে ফেলা হতো।

দুর্গ, পুকুর দেখা হলেই ছুটছেন কেল্লার দরবার হল ও হাম্মামখানায়। একসময় দরবার হলেই সুবেদাররা দর্শনার্থীদের সঙ্গে দেখা করতেন। দরবার ঘরের নিচতলায় হাম্মামখানায় প্রচণ্ড ভিড় মানুষের। মুঘল স্থাপত্যের নিদর্শনটি জাদুঘর হিসেবে সংরক্ষণ করায় সেই আমলের বিভিন্ন হালকা, ভারী অস্ত্র, যুদ্ধের পোষাক, গোসলখানা ও ব্যবহার্য তৈজসপত্রগুলো ঘুরে ফিরে দেখছেন দর্শনার্থীরা।

যেসব দর্শনার্থী সারা কেল্লা ঘুরে ক্লান্ত হয়ে পড়ছেন তারা ছুটছেন পূর্বদিকের গাছের ছায়ায়। সেখানে গিয়ে নিজেকে জিরিয়ে নিচ্ছেন। কেউ কেউ পুরো পরিবার ও বন্ধু বান্ধব নিয়ে গল্প ও গুজবে মেতে উঠছেন।

এ কেল্লায় বাড্ডা এলাকা থেকে আসা সায়েম আহমেদ জানান, তিনি তার স্ত্রী ও দুই সন্তানকে তেমনটা সময় দিতে পারেন না। সপ্তাহে মাত্র একদিন ছুটি থাকে তার। কিন্তু তখন সময় ও সুযোগ তেমনটা হয়ে ওঠে না। সায়েম আহমেদ বলেন, ‘ছুটি পাওয়ার কারণে পরিবারকে সময় দিতে পারছি। আজ অনেক ভাল লাগছে। ফাঁকা শহরে ঘুরতে ঘুরতে ভাবলাম যাই কেল্লাটাও দেখে আসি।’

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নর্দান ইউনিভার্সিটির তৃতীয় সেমিস্টারের আইন বিভাগের ছাত্র তামজিদ সরকার বলেন, ‘অন্যান্য দিনের চেয়ে ভিড় বাড়লেও ঘুরে বেড়াতে বেশ ভালো লাগছে।’

প্রেমিক জুটি মিমি ও রাফি বলেন, ‘ঢাকার অন্যান্য বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে যাওয়ার কোন পরিবেশ নেই। এখানে আসলে ইচ্ছেমতো ঘুরে ফিরে দেখে গল্প গুজব করে সময় কাটানো যায়। তাই আমার পাখির পছন্দ মতই এখানে এলাম।’

(ওএস/এটিআর/জুলাই ৩১, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

২০ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test