E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

তিন হাজার কর্মচারীর মুক্তিযোদ্ধা সনদ বাতিল হচ্ছে!

২০১৪ আগস্ট ০৪ ১৩:২৮:১৪
তিন হাজার কর্মচারীর মুক্তিযোদ্ধা সনদ বাতিল হচ্ছে!

স্টাফ রিপোর্টার : তিন হাজার কর্মচারীর মুক্তিযোদ্ধা সনদ বাতিল হতে যাচ্ছে। মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয় শিগগির এমন সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে।

জানা গেছে, চাকরিতে আবেদনের সময় যারা নিজেদের মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে উল্লেখ করেননি তারা মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে চাকরির বয়সসীমা বৃদ্ধির সুযোগ পাবেন না। ইতিমধ্যে যারা নানা প্রক্রিয়ায় শুধু সনদের সুবাদে চাকরির বয়স বৃদ্ধির সুযোগ নিয়েছেন-তাদের সনদ বাতিলসহ চাকরির সুবিধা বাতিল হচ্ছে।

এ প্রক্রিয়ায় কমপক্ষে তিন হাজার কর্মচারীর সনদ ও চাকরির বয়সসহ অন্যান্য বাড়তি সুবিধা বাতিল হতে পারে। সর্বোচ্চ পর্যায়ের সচিবসহ কর্মচারী, শিক্ষক, প্রকৌশলীসহ নানা পেশার কর্মচারী রয়েছেন এ তালিকায়। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আজ-কালের মধ্যে এ সিদ্ধান্ত সকল সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে জানিয়ে চিঠি পাঠানো হবে।

প্রসঙ্গত, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ১৯৭৪ সালের গণকর্মচারী আইন সংশোধন করে মুক্তিযোদ্ধা গণকর্মচারীর অবসরের বয়স দুই বছর বৃদ্ধি করে। এ সময় গণকর্মচারীদের মধ্যে মুক্তিযোদ্ধার সনদ জোগাড়ের হিড়িক পড়ে যায়। চাকরিকালে ঘোষণা না দিলেও এ সময়ে এসে অনেকে রাতারাতি মুক্তিযোদ্ধা বনে যান। বাগিয়ে নেন মুক্তিযোদ্ধার সনদ। আর সুযোগ নেন বাড়তি দুই বছরের চাকরির সুবিধা যাতে আর্থিকভাবেও লাভবান হন অনেকে।

মুক্তিযোদ্ধার সনদ জোগাড়ের হিড়িক এমন পর্যায়ে পৌঁছে যে, জাতীয় একটি গোয়েন্দা সংস্থা তদন্ত করে জানতে পারে অসংখ্য কর্মচারী ভুল ও অসত্য তথ্য দিয়ে মুক্তিযোদ্ধার গেজেট ভুক্ত হচ্ছেন এবং বয়স বৃদ্ধির সুযোগ নিচ্ছেন। ২০১১ সালের ২২ জুন গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনের ভিত্তিতে এ বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়কে নির্দেশনা দেয়া হয়।

উল্লেখ করা যেতে পারে, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় একক সিদ্ধান্তে কোন সনদ ইস্যু বা বাতিল করতে পারে না। জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা) এর সিদ্ধান্ত অনুযায়ী যথাযথ কর্তৃপক্ষের যাচাই বাছাই শেষে সনদ দেয়া না দেয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। সে সময় জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের চেয়ারম্যানসহ ৮ জন এমপির মধ্যে এখনো চারজন মন্ত্রী।

মুক্তিযোদ্ধা গণকর্মচারীর অবসরের বয়স বাড়ানোর পর ২০১০ সালের ৭ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের তত্কালীন সচিব মোল্লা ওয়াহেদুজ্জান একটি পরিপত্র জারি করেন। এতে চারটি শর্ত মেনে মুক্তিযোদ্ধা গণকর্মচারীর বয়স বৃদ্ধি কার্যকর করার কথা বলা হয়।

এসব শর্ত হচ্ছে যারা চাকরিতে প্রবেশের সময় নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে ঘোষণা করেছিলেন অথবা যাদের নাম মুক্তিবার্তায় প্রকাশিত হয়েছিল অথবা মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে যাদের নাম গেজেটে প্রকাশ হয়েছিল অথবা যাদের মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সই করা সনদ রয়েছে।

এ চারটির যে কোন একটি শর্তে মুক্তিযোদ্ধা হওয়ার সুযোগ পান অনেকেই আর দুই বছর অতিরিক্ত চাকরি করার সুবিধা ভোগ করতে থাকেন।

গত ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর নতুন সরকারের মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রী নিযুক্ত হন আ ক ম মোজাম্মেল হক এমপি। তিনি গণকর্মচারী ছাড়াও বেসরকারি পর্যায়েও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার অনুসন্ধান শুরু করেন। যদিও এ সময় জামুকা কার্যকর নেই। তবুও নিজ উদ্যোগে তিনি ইতিমধ্যে ১৫১ জন অমুক্তিযোদ্ধার মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে নেয়া সনদ বাতিল করেছেন। জামুকার সিদ্ধান্তে দেয়া এসব সনদ মন্ত্রণালয় বাতিল করতে পারেন কি না- সে নিয়ে কেউ কেউ প্রশ্ন তুললেও কাজটিকে ভাল বলেছেন অনেকেই।

মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, গণকর্মচারীর মধ্যে থেকে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বাদ দিতে এবার মন্ত্রণালয় নতুন উদ্যোগ নিয়েছে। এরই অংশ হিসাবে যারা চাকরিতে প্রবেশের সময় নিজেদের মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে ঘোষণা দেননি তাদের সনদ বাতিল করে দেয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট মুক্তিযোদ্ধার অবসরের বয়স বৃদ্ধির সুযোগও বাতিল করে দেবে।

মন্ত্রণালয় বলছে, মুক্তিযোদ্ধার সনদ যাচাই বাছাই করে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় প্রত্যায়ন দেয়ার পরই কেবল কেউ মুক্তিযোদ্ধা গণকর্মচারীর সুযোগ পেতে পারেন। কিন্তু বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ, আধাসরকারি প্রতিষ্ঠান, বিশ্ববিদ্যালয়, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, দপ্তর সংস্থা, করপোরেশন, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে নিজেরাই মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে অনেককে চিহ্নিত করে বাড়তি বয়সের সুযোগ করে দিচ্ছেন। এ ধরনের সুযোগ যারা নিয়েছেন অবিলম্বে তাদের সুযোগ রহিত করে সুযোগ সুবিধা বাতিলের চিঠি যাচ্ছে সংশ্লিষ্ট সব প্রতিষ্ঠানে।

মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞা ঠিক হবে:

জামুকার প্রথম বৈঠক আগামী ৬ আগস্ট। এদিন ঠিক হবে মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞা। স্বাধীনতার পর এ বিষয়টি স্পষ্ট না করায় মুক্তিযোদ্ধার সনদ নিয়ে বিতর্কের অবসান হচ্ছে না।

জানা গেছে- যারা মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছেন, লালমুক্তিবার্তায় যাদের নাম আছে, যারা ভারতে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন , শিল্পী, সাহিত্যিকসহ বিভিন্ন পেশাজীবী যারা নানাভাবে মুক্তিযুদ্ধে সহযোগিতা করেছেন, যারা বঙ্গবন্ধুর ঘোষিত ভাতা পেতেন, যারা অস্ত্র সমর্পণ করেছেন এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞা ঠিক করা হবে।

(ওএস/এটিআর/আগস্ট ০৪, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

২৬ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test