E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

চালের দাম যেন আর না বাড়ে : মিলারদের খাদ্যমন্ত্রী

২০১৯ নভেম্বর ১৭ ১৫:১০:৫১
চালের দাম যেন আর না বাড়ে : মিলারদের খাদ্যমন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার : চালের দাম যাতে আর না বাড়ে- সে বিষয়ে চালকল মালিকদের (মিলার) নির্দেশনা দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার। রোববার রাজধানীর আব্দুল গণি রোডে চালকল মালিকদের সঙ্গে সভা শেষে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান খাদ্যমন্ত্রী। বাজারে চালের মূল্য বেড়ে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে এই সভার আয়োজন করা হয়।

সবাই সরু চালের ভাত খাচ্ছে, তাই এই চালের ধানের দাম বেড়েছে। ধানের দাম বাড়ায় চালের দাম কিছুটা বেড়েছে বলে জানান খাদ্যমমন্ত্রী।

চালের দাম নিয়ে পেঁয়াজের মতো কেলেঙ্কারির আশঙ্কা করছেন কিনা- জানতে চাইলে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, ‘না, এ রকম আশঙ্কা নেই। একটা জিনিস আপনারা মনে রাখেন, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মজুদ কিন্তু আমাদের কাছে আছে। বাজার কন্ট্রোল করার জন্য ওএমএস ডিলার রাখা আছে, তাদের ৩০ টাকা দলে চাল নেয়াতে পারছি না। তারা সাহস করতে পারছেন না, ৩০ টাকায়ও বিক্রি করতে পারব না।’

তিনি বলেন, ‘আমার কাছে ৫ বছরের সরু চালের রেট আছে। যখন কৃষকরা দাম পাচ্ছে না, তখন ৫০০/৬০০ টাকা দরে ধান কিনে যে চালের রেট, সেই রেটের সঙ্গে সবসময়ের রেট ধরলে হবে না। তখন তো আপনারাই লিখেছেন, কৃষক দাম পাচ্ছে না। ওই রেট সবসময় থাকলে তো কৃষক জীবনেও দাম পাবে না।’

‘২০১৪ সালে সরু চাল ছিল ৪৪ টাকা ৫২ পয়সা। ২০১৫ সালে ৪২ টাকা ৮৩ পয়সা, ২০১৬ সালে ৪৬ টাকা ৬৯ পয়সা, ২০১৭ সালে অস্বাভাবিভাবে বেড়ে হয়েছে ৫৭/৫৮ টাকা। ২০১৮ সালে ৫১ টাকা ১০ পয়সা, আর আজকে রেট হল ৫১ টাকা ১১ পয়সা।’

গত এক মাসে কেজিতে ৬/৭ টাকা বাড়ল, এটাকে আপনারা স্বাভাবিক মনে করছেন কিনা- এ বিষয়ে সাধন চন্দ্র বলেন, ‘আমি ব্যাখ্যাটা দিয়েছি। যখন ৫০০-৭০০ টাকা ধানের দাম ছিল, সেই ধান ভাঙিয়ে ৪০ থেকে ৪৪ টাকা ছিল। সেই ধানটা এখন কৃষক ৮০০/৯০০/১০০০ টাকায় বিক্রি করছে। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের কষ্ট হলো, কৃষক দাম না পেলেও যেমন আমাদের কষ্ট হয়, তেমনটি কৃষক দাম বেশি পেলে ভোক্তাদের চালের দাম বেড়ে যায়, তখনও কষ্ট হয়।’

খাদ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আজকে মিটিং করে ওনাদের এইটুকু মেসেজ দিয়েছি- চালের দাম যেন আর কোনোক্রমেই না বাড়ে, সেই নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। কোনোক্রমেই যেন না বাড়ে।’

সবাই সরু চালের ভাত খাওয়ায় সরু চালের উপর চাপ বেড়ে গেছে জানিয়ে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, ‘এই কারণেই ধানের দাম বেড়েছে। আমরা তো চাচ্ছিলামও ধানের দামটা বাড়ুক। ধানের দাম বাড়ায় দামটা কৃষক পাচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের এখন সরু ধান উৎপাদন করতে হবে। সর্বত্র যদি সরু করতে পারি তবে তা দেশের জন্য লাভবান হব। আমাদের রুচি পরিবর্তন হয়েছে কিন্তু চাষ ব্যবস্থা পরিবর্তন হয়নি। সেটা পরিবর্তন করার জন্য সুপারিশ করেছি, বিভিন্ন জায়গায় আমরা মিটিং করে বলেছি।’

‘এখন আমন কাটা শুরু হয়েছে। ধান উঠে যাবে, তাই ম্যাসিভ রকম দাম বাড়ার অবস্থা আর নেই।’

সারাদেশে ২০০টি ধানের সাইলো নির্মাণের প্রকল্পটি এখন পরিকল্পনা কমিশনের রয়েছে জানিয়ে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, ‘সামনের সপ্তাহে পরিকল্পনা কমিশনে মিটিং হবে, এরপর একনেকে যাবে। ২০২১ সালের মধ্যে প্যাডি সাইলোর নির্মাণ কাজ শেষ হবে, আমরা সেভাবেই এগোচ্ছি। তখন এর উপকার পাওয়া যাবে।’

সভার সিদ্ধান্তের বিষয়ে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমনে যে চাল কেনা হবে এবং ধান ভাঙানো হবে সেটার কোয়ালিটি যাতে কোনোক্রমেই খারাপ না হয়, কোয়ালিটি নিয়ে আমরা কোন আপস করব না। সেই নির্দেশনাই ওনাদের দেয়া হয়েছে। তাদের ক্র্যাসিং বিল বা রেশিও নিয়ে আলাপ হয়েছে। সেজন্য টেস্ট মিলিং হবে তারপর রেশিও নির্ধারণ হবে, সেই অনুপাতে ক্র্যাসিং বিল নির্ধারিত হবে।’

বাংলাদেশ অটো-রাইস মিল মালিক সমিতির সভাপতি এ কে এম খোরশেদ আলম সাংবাদিকদের বলেন, ‘চালের দাম যাতে আর না বাড়ে সেই বিষয়ে মন্ত্রী মহোদয় আমাদের সতর্ক করেছেন। সহনীয় পর্যায়ে যাতে থাকে, মানুষ যাতে কষ্ট না পায়- এই কথাগুলোই মন্ত্রী আমাদের ডেকে বলেছেন। বাজারটা যাতে আর উপরে না যায়, আমরা সেদিকে লক্ষ্য রাখব।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের চালের কোনো অভাব নেই, সংকট নেই। ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের প্রভাব আমাদের উপর আসেনি। আমরা এইটুকু আশ্বস্ত করতে পারি, আমাদের সবার কাছে চাল আছে, কৃষকদের কাছে ধানও মজুদ আছে।’

খোরশেদ আলম আরও বলেন, ‘নতুন সড়ক পরিবহন আইনের জন্য ভবিষ্যতে (ফিটনেসবিহীন) গাড়ি রাস্তায় নাও নামতে পারে। তখন কিছুদিনের জন্য চালের দাম বেড়ে যেতে পারে, এটা আমরা আশঙ্কা করছি। আমরা মন্ত্রী মহোদয়ের কাছে দাবি জানিয়েছি, এখন যাতে গাড়িগুলো বন্ধ না করে যে ঠিকঠাক করতে সময় দেয়া হয়। গাড়ি বন্ধ হলে শুধু চালই না অন্যান্য নিত্যপণ্যের উপরই প্রভাব পড়বে। মন্ত্রী আমাদের আশ্বস্ত করেছেন বিষয়টি নিয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয় আলোচনা করবেন।’

সভায় খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিবের দায়িত্বপ্রাপ্ত অতিরিক্ত সচিব ওমর ফারুক, খাদ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক মোছাম্মৎ নাজমানারা খানুমসহ মিল মালিকরা উপস্থিত ছিলেন।

(ওএস/এসপি/নভেম্বর ১৭, ২০১৯)

পাঠকের মতামত:

২০ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test