E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

রোহিঙ্গাদের কারণে মানসিক চাপে কক্সবাজারবাসী : টিআইবি

২০১৯ ডিসেম্বর ০৫ ১৫:২৬:৫২
রোহিঙ্গাদের কারণে মানসিক চাপে কক্সবাজারবাসী : টিআইবি

স্টাফ রিপোর্টার : মিয়ানমারে নির্যাতনের শিকার হয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রােহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর কারণে কক্সবাজারের স্থানীয়রা সংখ্যালঘুতে পরিণত হয়েছে। বর্তমানে মানসিক চাপে রয়েছে তারা।

বৃহস্পতিবার রাজধানীর ধানমন্ডির মাইডাস সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ‘রোহিঙ্গা নাগরিকদের বাংলাদেশে অবস্থান : সুশাসনের চ্যালেঞ্জ উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক এক গবেষণা প্রতিবেদনে উঠে আসা এসব তথ্য তুলে ধরে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।

টিআইবি জানায়, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া দীর্ঘায়িত হওয়ায় স্থানীয় জনগােষ্ঠী অর্থনৈতিক, সামাজিক, পরিবেশগত, নিরাপত্তা ও রাজনৈতিক বিভিন্ন ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।

সামাজিক ঝুঁকিগুলোর মধ্যে রয়েছে- স্থানীয়রা সংখ্যালঘু হয়ে যাচ্ছে, কক্সবাজারের স্থানীয় অধিবাসী মােট জনসংখ্যার ৩৪.৮%, যেখানে রােহিঙ্গা জনগােষ্ঠী ৬৩.২%, স্থানীয় অধিবাসীদের মধ্যে মানসিক চাপের ঝুুঁকি তৈরি ইচ্ছে। এছাড়া সরকারি হাসপাতালগুলাের মােট চাহিদার ২৫ শতাংশের অতিরিক্ত রােহিঙ্গাদের স্বাস্থ্য সেবায় ব্যয় হচ্ছে। ফলে চিকিৎসাসেবা ব্যাহত হচ্ছে স্থানীয় জনগােষ্ঠীর। পাশাপাশি স্থানীয়দের খাদ্য নিরাপত্তার ঝুকি তৈরি হচ্ছে।

টিআইবি আরও জানায়, রােহিঙ্গাদের কারণে কক্সবাজারে সামাজিক অবক্ষয়ের ঝুঁকি বৃদ্ধিসহ মাদক পাচার, নারী পাচার, পাতিতাবৃত্তি বৃদ্ধি পাচ্ছে। এছাড়া রােহিঙ্গাদের মধ্যে এ পর্যন্ত ৬০০ জন এইডস আক্রান্ত শনাক্ত করা হয়েছে। তাদের মাধ্যমে স্থানীয়দের মধ্যে এইডস ছড়ানাের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

প্রতিবেদনটি সম্পর্কে টিআইবি জানায়, ২০১৭ সালে আগত রােহিঙ্গাদের ব্যবস্থাপনা একটি সুনির্দিষ্ট কাঠামাের মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে। কিন্তু এই ব্যবস্থাপনা কাঠামােতে সমন্বয়, আন্তঃযোগাযোগ ও তদারকিতে ঘাটতিসহ বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ বিদ্যমান। রােহিঙ্গাদের জন্য মানবিক সহায়তা কার্যক্রমকে কেন্দ্র করে অনিয়ম ও দুর্নীতির প্রাতিষ্ঠানিকীকরণের ঝুঁকি সৃষ্টি হয়েছে। এক্ষেত্রে বিভিন্ন পর্যায়ে সুবিধাভােগী গােষ্ঠীর উদ্ভব ঘটেছে। জনবল ঘাটতির ফলে এনজিওগুলাের কার্যক্রমের তদারকি ব্যাহত হচ্ছে। এছাড়া কেন্দ্রীয় ডাটাবেজের অনুপস্থিতি ও তথ্য প্রকাশে ঘাটতির কারণে মানবিক সহায়তা কার্যক্রমে স্বচ্ছতার ঘাটতি রয়েছে।

রােহিঙ্গা সংকটের গুরুত্ব আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে ধীরে ধীরে কমে যাওয়ায় মানবিক সহায়তায় অনুদান ক্রমান্বয়ে হ্রাস পাচ্ছে। ফলে খাতভিত্তিক বিভিন্ন সহায়তায় অপ্রতুলতা তৈরি হচ্ছে। আবার রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ত্বরান্বিতকরণে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সুনির্দিষ্ট উদ্যোগ ও অগ্রগতির ঘাটতি লক্ষ্য করা যায়। প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া দীর্ঘায়িত হওয়ায়, দীর্ঘমেয়াদে বাংলাদেশের জনগণ ও সরকারের ওপর আর্থিক ঝুঁকি ও অর্থনীতির ওপর চাপ বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে। অর্থনীতির ওপর নেতিবাচক প্রভাব ও তা মােকাবিলায় কৌশলগত পরিকল্পনা গ্রহণে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে যথাযথ শুরুত্ব দেয়া হচ্ছে না বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, রোহিঙ্গাদের কারণে কক্সবাজার ও বাংলাদেশ চরম অর্থনৈতিক ঝুঁকিগুলাের মধ্যে রয়েছে। অল্প পারিশ্রমিকের বিনিময়ে স্থানীয়রা বিভিন্ন কাজে (লবণ চাষ, চিংড়ি হ্যাচারি, চাষাবাদ) রোহিঙ্গাদের নিয়ােজিত করছে। ফলে রােহিঙ্গা শ্রমিকদের সহজলভ্যতার কারণে স্থানীয়রা কাজের সুযােগ হারাচ্ছে। এছাড়া স্থানীয় বাজারে বিভিন্ন পণ্যের হঠাৎ চাহিদা বৃদ্ধিতে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রতিদিন বিপুল সংখ্যক রােহিঙ্গা, মানবিক সহায়তায় নিয়ােজিত কর্মী ও সরকারি কর্মকর্তাদের যানবাহন এবং ত্রাণবাহী ট্রাকের চলাচল ও চাপের কারণে রাস্তা-ঘাটের ক্ষতি ও যানজট সৃষ্টি হচ্ছে।

রোহিঙ্গাদের কারণে পরিবেশগত ঝুঁকিগুলাের মধ্যে রয়েছে- ৬.১৬৪ একর বনভূমি উজাড় হওয়াসহ জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হওয়া, ভূমিধসের ঝুঁকি। ক্যাম্পে জঙ্গিসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী গােষ্ঠীর তৎপরতার ফলে বাংলাদেশে অস্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তার ঝুঁকি বিরাজ করছে বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান সংকট নিরসনের কিছু সুপারিশ তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, রােহিঙ্গাদের সম্ভাব্য দ্রুত সময়ে প্রত্যাবাসনের লক্ষ্যে বিভিন্ন রাষ্ট্র, জাতিসংঘ, আন্তর্জাতিক সংস্থা ও দাতা সংস্থাদের সমন্বিত উদ্যোগ নিশ্চিত করার জন্য কূটনৈতিক তৎপরতা জোরদার করতে হবে। ভারত-চীনের মতো প্রতিবেশী দেশগুলো আন্তরিকতার সাথে সহায়তা করলে রােহিঙ্গা সংকট নিরসন সহজ হতো।

(ওএস/এসপি/ডিসেম্বর ০৫, ২০১৯)

পাঠকের মতামত:

২৩ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test