E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শিরোনাম:

হাকিমপুরী জর্দা পেলেই জব্দ

২০১৯ ডিসেম্বর ০৯ ১৪:৪৮:৪৫
হাকিমপুরী জর্দা পেলেই জব্দ

স্টাফ রিপোর্টার : দুই ধাপে পরীক্ষা করে হাকিমপুরী জর্দায় ক্ষতিকর মাত্রায় সিসা, ক্যাডমিয়াম ও ক্রোমিয়ামের মতো ভারী ধাতুর উপস্থিতি পাওয়া গেছে। এবার উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ (বিএফএসএ)। হাকিমপুরীর সব জর্দা বাজার থেকে তুলে নিতে হবে। পাশাপাশি বিশুদ্ধ খাদ্য আদালতে মামলা করবে সরকারি এ সংস্থাটি।

বিএফএসএর চেয়ারম্যান সৈয়দা সারওয়ার জাহান বলেন, আমরা একটা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে তাদের (হাকিমপুরী) কারখানা থেকেই নমুনা সংগ্রহ করে ল্যাব টেস্ট করি। তবে তার ফলাফলও আগের মতোই খারাপ এসেছে। তিনি বলেন, তাদের জর্দায় কয়েকটি ভারী ধাতুর উপস্থিতি পাওয়া গেছে, যা জর্দার মধ্যে থাকার কোনো সুযোগ নেই।

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি মামলা করার এবং একই সঙ্গে সারাদেশের বাজার থেকে সমস্ত হাকিমপুরী জর্দা তুলে নেয়ার নির্দেশ দেয়া হবে। যেখানে নির্দেশনা পালন করা হবে না, সেখানে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে এগুলো জব্দ করা হবে।’

প্রায় দুই মাস আগে বাজার থেকে ২২ ধরনের জর্দা, খয়ের ও গুলের নমুনা সংগ্রহ করে তা পরীক্ষা করে বিএফএসএ, যেখানে ক্ষতিকর মাত্রায় সিসা, ক্যাডমিয়াম ও ক্রোমিয়ামের মতো ভারী ধাতুর উপস্থিতি পাওয়া যায়। যদিও এ ধরনের ভারী ধাতু এই পণ্যগুলোতে থাকার কথা নয়।

বিএফএসএ গত ৩১ অক্টোবর সংবাদ সম্মেলন করে জানায়, ২২টি নমুনায় ল্যাব পরীক্ষায় প্রতি কিলোগ্রামে দশমিক ২ মিলিগ্রাম থেকে ১১ দশমিক ২ মিলিগ্রাম পর্যন্ত ক্ষতিকর বিভিন্ন উপাদানের উপস্থিতি পাওয়া যায়। যেখানে বাজারের জনপ্রিয় হাকিমপুরী জর্দার প্রতি কেজিতে দশমিক ২৬ মিলিগ্রাম সিসা, দশমিক ৯৫ মিলিগ্রাম ক্যাডমিয়াম এবং ১ দশমিক ৬৫ মিলিগ্রাম ক্রোমিয়াম পাওয়া যায়।

বিএফএসএর সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য প্রকাশ করার পর থেকেই একটু ভিন্ন কৌশলে প্রতিবাদ শুরু করে হাকিমপুরী জর্দার মালিক হাজি মো. কাউছ মিয়া। তার প্রতিষ্ঠানে উৎপাদাদিত জর্দায় কোনো প্রকার ক্ষতিকর কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয় না দাবি করে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও খাদ্যমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা করেন। একই সঙ্গে, দাবি করেন, বিএফএসএ যেসব জর্দা পরীক্ষা করেছে, সেগুলো আসলে নকল জর্দা, হাকিমপুরীর নয়।

পত্রিকার মাধ্যমে প্রতিবাদ জানানো হলেও বিএফএসএর কাছে কোনো ধরনের প্রতিবাদ পাঠানো বা আলোচনায় বসেনি প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা। তবে বিএফএসএর কর্মকর্তারা প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে যোগাযোগ করে এবং ফ্যাক্টরি থেকে পুনরায় জর্দার চারটি নমুনা সংগ্রহ করে। এই নমুনাগুলোতেও প্রথমবারের মতোই সীসা, ক্যাডমিয়াম ও ক্রোমিয়ামের উপস্থিতি ধরা পড়ে।

এরই পরিপ্রেক্ষিতে বিএফএসএ সিদ্ধান্ত নিয়েছে, বাজারে যত হাকিমপুরী জর্দা রয়েছে, সেগুলো বাজার থেকে তুলে নেয়ার নির্দেশনা দেয়া হবে এবং মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে বাজারে যত জর্দা পাওয়া যাবে তা বাজেয়াপ্ত করা হবে। পাশাপাশি তাদের বিরুদ্ধে দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের বিশুদ্ধ খাদ্য আদালতে মামলা করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এ সিদ্ধান্ত দ্রুত বাস্তবায়ন করা হবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএফএসএর এক কর্মকর্তা বলেন, ‘হাকিমপুরী জর্দার মালিক বিএফএসএকে এক ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দিয়েছিল। কিন্তু এখন তারাই আইনিভাবে আটকে যাচ্ছে।’

বিএফএসএ বলছে, যে ভারী ধাতুগুলো জর্দায় পাওয়া গেছে সেগুলোর মূল উৎস রঙ। বিভিন্ন শিল্প-কারখানা তাদের প্রয়োজনে এসব রঙ আমদানি করে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ফানির্চারের বার্নিশে এসব রঙ ব্যবহার করতে দেখা যায়।

এদিকে হাকিমপুরী জর্দার গায়ে কোনো ধরনের ব্যাচ নম্বর বা লট নম্বর প্রদান করা হয় না বলে জানা গেছে। ফলে কোন ব্যাচ থেকে কোন ব্যাচ পর্যন্ত তুলে নেয়ার নির্দেশ দেয়া হবে তা নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়েছে।

হাকিমপুরী জর্দা সারাদেশেই পরিচিত একটি পণ্য, যা কোটি কোটি মানুষ খায় বলে ধারণা করা হয়। যদিও এর কোনো সঠিক হিসাব সংশ্লিষ্টদের কাছে নেই।

তবে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ বলছে, মজাদার-সুগন্ধি এই জর্দা দীর্ঘদিন খাওয়ার কারণে মানুষ ক্যান্সারের মতো দাঁতের মাড়ি ও লিভারে দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছে।

এদিকে প্রতিষ্ঠানটির মালিক হাজি মো. কাউছ মিয়া জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) কর্তৃক সর্বমোট ১৪ বার সেরা করদাতার পুরস্কার পেয়েছেন।

উল্লেখ্য, প্রথমবার পরীক্ষা করে হাকিমপুরীসহ মোট ১৩ প্রতিষ্ঠানের জর্দা, ছয় প্রতিষ্ঠানের খয়ের ও তিন প্রতিষ্ঠানের গুলের নমুনা পরীক্ষা করে ক্ষতিকর এসব ভারী ধাতু পায় নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ। পরীক্ষা করা পণ্যগুলোর মধ্যে ছিল গিলা খয়ের, তীর মার্কা খয়ের, মালাই খয়ের, অন্তরা খয়ের, কালো পাথর বাল্ক খয়ের, সাদা বাল্ক খয়ের, ঈগল গুল, মোস্তফা গুল, শাহজাদা গুল, রতন জর্দা, হাকিমপুরী জর্দা, গুরুদেব জর্দা, শাহজাদী জর্দা (নির্মল), মহিউদ্দিন জর্দা, ঢাকা জর্দা, মকিমপুর জর্দা, শাহি হীরা জর্দা, জাফরানী জর্দা, শাহজাদী জর্দা (আলম), বউ শাহজাদী জর্দা এবং চাঁদপুরী জর্দা।

(ওএস/এসপি/ডিসেম্বর ০৯, ২০১৯)

পাঠকের মতামত:

০২ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test