E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

নিম্ন ও মধ্যবিত্তের বাড়ি ভাড়া বেড়েছে

২০২০ জানুয়ারি ০৭ ১৮:৩৬:২১
নিম্ন ও মধ্যবিত্তের বাড়ি ভাড়া বেড়েছে

স্টাফ রিপোর্টার : সদ্যবিদায়ী বছরে (২০১৯ সাল) উচ্চবিত্তের বাড়ি ভাড়া কিছুটা কমলেও নিম্ন ও নিম্ন মধ্যবিত্তের বাড়ি ভাড়ায় বাড়তি খরচ করতে হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে বস্তির ঘর ভাড়া।

মঙ্গলবার (৭ জানুয়ারি) রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবে কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়।

সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের সভাপতি গোলাম রহমান গত বছরের জীবনযাত্রার ব্যয় ও ভোক্তা স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রাসঙ্গিক পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদন তুলে ধরেন।

ক্যাব সভাপতি জানান, ২০১৯ সালে উচ্চবিত্তের বাড়ি ভাড়া কিছুটা কমলেও নিম্ন ও নিম্ন মধ্যবিত্তের বাড়ি ভাড়ায় বাড়তি খরচ করতে হয়েছে।

ক্যাবের প্রতিবেদন বলছে, নিম্ন ও নিম্ন মধ্যবিত্তের বাড়ি ভাড়া বেড়েছে গড়ে ৮.১৮ শতাংশ, বস্তির ঘর ভাড়া বেড়েছে ৯.৭৪ এবং মেস রুমের ভাড়া ৭.৯১ শতাংশ বেড়েছে।

ক্যাব সভাপতি জানান, ১১৪টি খাদ্যপণ্য, ২২টি নিত্যব্যবহার্য সামগ্রী এবং ১৪টি সেবার তথ্য নিয়ে পর্যালোচনা প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। প্রতিবেদনের জন্য রাজধানীর ১৫টি খুচরা বাজার থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়। এসব পণ্য ও সেবা বাবদ পরিবারের মোট ব্যয় তুলনা করে শহুরে জীবনযাত্রার ব্যয়ের হিসাব বের করেছে সংগঠনটি। তবে এ হিসাবে শিক্ষা, চিকিৎসা ও যাতায়াত বাবদ যে ব্যয়, তা বাদ দেয়া হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সদ্য সমাপ্ত ২০১৯ সালের জীবনযাত্রায় ব্যয় বেড়েছে সাড়ে ৬ শতাংশ। পণ্য ও সেবামূল্য বেড়েছে ৬ দশমিক ০৮ শতাংশ। এর আগে ২০১৮ সালে এই বৃদ্ধির হার ছিল যথাক্রমে ৬ শতাংশ এবং ৫ দশমিক ১৯ শতাংশ। অন্যদিকে ২০১৭ সালে ছিল ৮ দশমিক ৪৪ শতাংশ এবং ৭ দশমিক ১৭ শতাংশ।

খাদ্যপণ্যের ব্যয় ভোক্তার ওপর চাপ বাড়াচ্ছে

ক্যাবের বিশ্লেষণ বলছে, ২০১৯ সালের জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে পেঁয়াজের দাম ছিল ২০-২৫ টাকা। নভেম্বর তা বেড়ে ২৫০ টাকায় ওঠে। মসলা জাতীয় পণ্য পেঁয়াজ, রসুন ও আদা ছাড়া অধিকাংশ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য সহনীয় এবং নিম্নমুখী ছিল। বছরের শেষ দিকে চালের দাম সামান্য বাড়লেও তা সহনীয় পর্যায়ে ছিল। তবে বছর শেষে আটা, ডিম, শাক-সবজিসহ বেশকিছু পণ্যের মূল্য ঊর্ধ্বমুখী হয়। যা সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন ব্যয় বাড়িয়ে দিয়েছে।

বছরের শুরুতে শাকসবজির দাম স্বাভাবিক থাকলেও শেষদিকে বেশ চড়া দামেই কিনতে হয়েছে ভোক্তাদের। সারাবছর বিভিন্ন ধরনের শাকসবজির মূল্য বেড়েছে গড়ে ৮.১৩ শতাংশ। শাকসবজির পাশাপাশি বছরজুড়ে ভোক্তাকে মাছ, গুড়ো দুধ, গরুর তরল দুধের পেছনেও বাড়তি খরচ করতে হয়েছে।

গোলাম রহমান বলেন, খাদ্যে নিরাপত্তা অর্জনের পর বছরজুড়ে নিরাপদ খাদ্য নিয়ে বেশ আলোচনা হয়েছে, যার বড় জায়গাজুড়ে ছিল ভেজাল ও দূষণ। তবে নতুন বছরের শুরুতেই তেল, চিনি, পেঁয়াজ, ডিম, সবজির বাড়তি দামকে একটি অশনিসংকেত হিসেবেই দেখছেন ক্যাব সভাপতি। নিত্যপণ্যের বাজার সরকারের নিয়ন্ত্রণে আসেনি বলেও জানান তিনি।

বিদ্যুত, গ্যাস ও জ্বালানি তেল

বিগত এক দশকে বিদ্যুতে অভাবনীয় উন্নতি হলেও বাড়তি ব্যয়ে চালানো কুইক রেন্টালগুলো সামগ্রিকভাবে বিদ্যুৎ ব্যবহারের খরচকে ঊর্ধ্বমুখী করে তুলছে। ২০০৮ থেকে এ পর্যন্ত বিদ্যুতের পাইকারী মূল্য সাতবার এবং খুচরা মূল্য ৯ বার বাড়ানো হয়েছে। বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানিগুলো ভোক্তাদের নিকট চড়া মূল্যে বিদ্যুত বিক্রি করা সত্ত্বেও উৎপাদন ও বিতরণ ব্যয় সংকুলান সম্ভব হচ্ছে না এমন অজুহাত তুলে আবারও মূল্য বৃদ্ধির প্রক্রিয়া শুরু করেছে।

এদিকে দেশে এলপিজির ব্যবহার দ্রুত বাড়লেও এখানে সরকারের নজরদারির বড় অভাব দেখছে ক্যাব। বেসরকারি খাতের অনেক কোম্পানি বাজারে আসলেও চাহিদার তুলনায় সরবরাহ বৃদ্ধি সীমিত হওয়ায় প্রতিযোগিতার মাধ্যমে মূল্য নির্ধারণের প্রক্রিয়া ভোক্তা স্বার্থ রক্ষায় কার্যকর হয়নি। সম্প্রতি বিভিন্ন কোম্পানি প্রতি ১২.৫ কেজি সিলিন্ডার গ্যাসের দাম ১৭০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি করেছে। অন্যদিকে খুচরা পর্যায়ে গ্যাস সিলিন্ডারের দাম কোম্পানি কর্তৃক নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে অনেক বেশি।

এ অবস্থায় বিইআরসির মাধ্যমে স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় প্রতিটি কোম্পানির এলপিজি সিলিন্ডারের সর্বোচ্চ বিক্রয় মূল্য নির্ধারণ এবং সিলিন্ডারের গায়ে তার উল্লেখ করার দাবি জানিয়েছে ক্যাব।

দরিদ্ররা এখনো কাঙ্ক্ষিত স্বাস্থসেবা থেকে বঞ্চিত দাবি করে ক্যাব সভাপতি বলেন, দেশে সরকারি-বেসরকারি স্বাস্থ্য সেবার ব্যাপক সম্প্রসারণ হওয়ার পরও সরকারের অনেক নামিদামি ব্যক্তি ঘটা করে ভারত, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশে চিকিৎসা নিতে যাচ্ছে। এতে স্পষ্ট হয় দেশে চিকিৎসা সেবার মান এখনও কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে পৌঁছায়নি, তবে ব্যয় ঠিকই বেড়েছে। এছাড়া প্রতি বছর অপ্রয়োজনীয় অনেক যন্ত্রপাতি কিনে বিপুল অর্থ অপচয় করছে সরকার, যেগুলো পর্যাপ্ত দক্ষ লোক না থাকায়, চিকিৎসকদের কম উপস্থিতি, অপ্রতুল ওষুধ সরবরাহ, প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নীরিক্ষার ব্যবস্থা না থাকার কারণে দারিদ্র লোকজন কাঙ্ক্ষিত স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

ক্যাব বলছে, ওষুধ উৎপাদনে বাংলাদেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ এবং বিশ্বের ১৪২ দেশে রফতানি করছে। কিন্তু দেশের বাজারে এখনও ব্যাপকভাবে নকল, ভেজাল, মেয়াদ উত্তীর্ণ ও নিম্নমানের ওষুধ বিক্রি হচ্ছে। আবার কিছু ওষুধের উচ্চ মূল্য দরিদ্র রোগীর ক্রয় ক্ষমতার বাইরে। বাংলাদেশে এখনও বেসরকারি হাসপাতালে ডাক্তারদের ফি এবং হাসাপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে বিভিন্ন স্বাস্থ্য পরীক্ষার ফি বহুলাংশে অনিয়ন্ত্রিত।

ক্যাবের প্রতিবেদনে বৈদেশিক বাণিজ্য নীতির সমালোচনা করে বলা হয়, দেশের বাজারে পণ্যমূল্য আন্তর্জাতিক বাজারের মূল্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে এটা প্রত্যাশিত হলেও তা হচ্ছে না। উচ্চহারে আমদানি শুল্ক আরোপের ফলে ২০১৭ অর্থবছরে বাংলাদেশে ভোক্তদের পণ্য ক্রয়ে ১৪২ কোটি ২৩ লাখ মার্কিন ডলার অতিরিক্ত ব্যয় করতে হয়েছে। বাংলাদেশে আমদানি শুল্কহার গড়ে ২৫.৬৪ শতাংশ, যা দক্ষিণ ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক বেশি। ২০১৬ সালে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার দেশসমূহের গড় আমদানি শুল্ক হার ছিল ৪.৭৩ শতাংশ। ভোক্তাদের সাশ্রয়ী মূল্যে পণ্য সরবরাহের লক্ষ্যে আমদানি শুল্কের ব্যাপক হ্রাস যুক্তিযুক্ত হবে বলে জানান গোলাম রহমান।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, ক্যাবের জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. এম শামসুল আলম, সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট হুমায়ুন কবীর ভূঁইয়া প্রমুখ।

(ওএস/এসপি/জানুয়ারি ০৭, ২০২০)

পাঠকের মতামত:

২৮ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test