E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

সিসা বার : ভোগবাদের সীমান্ত

২০২০ ফেব্রুয়ারি ২৩ ১৭:৩৮:২৮
সিসা বার : ভোগবাদের সীমান্ত

রূপক মুখার্জি : রাজধানী ঢাকা শহর দেশের বিভিন্ন এলাকায় বার, হোটেল, রেষ্টুরেন্ট, কপিশপ গুলোতে দীর্ঘদিন ধরে সীসার কারবার চলছে। উঠতি বয়সী তরুণদের একটি অংশ সীসার নেশায় আসক্ত হয়ে পড়েছে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সীসার ব্যবহার বন্ধে মাঝে মধ্যে অভিযান পরিচালনা করলেও কিছুতেই বন্ধ হচ্ছে না অবৈধ সীসার কারবার। সীসার ব্যবহার বন্ধে সম্প্রতি একটি গোয়েন্দা সংস্থা থেকে প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ে।

জানা গেছে, রাজধানীর গুলশান, বনানী, উত্তরা, বেইলী রোড, ধানমন্ডি এবং ঢাকার বাইরে কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী সহ অন্যান্য বড় শহরগুলোতে প্রকাশ্যে সিসা বিক্রি হচ্ছে। স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা সিসায় আসক্ত হচ্ছে সবচেয়ে বেশি। এরা সিসা সেবনের পাশাপাশি নানা অনৈতিক কর্মকা-েও জড়িয়ে পড়েছে।

সিসায় আসক্তদের বেশির ভাগই উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তান। বার গুলোতে সিসা সেবনের পাশাপাশি মদ, গাঁজা, ফেনসিডিল ও ইয়াবা সেবনের ব্যবস্থা রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মাদক বন্ধে “জিরো টলারেন্স” নীতি ঘোষণা করলেও সিসার ব্যবহার বন্ধে তা কার্যকর হচ্ছে না। অভিযোগ উঠেছে, আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর আশ্রয় প্রশ্রয়ে সিসার কারবার চলছে।

নাম প্রকাশ করা হবে না এই শর্তে পুলিশের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, পূর্বে সিসার ব্যবহার বন্ধে কোন আইনই ছিল না। ২০১৮ সালের ২৭ ডিসেম্বর থেকে নতুন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে কোন ব্যক্তি সিসা সেবন, বহন, বিক্রি ও সরবরাহ করলে তার বিরুদ্ধে শাস্তিমুলক ব্যবস্থা গ্রহণের বিধান রাখা হয়েছে। ভেষজের নির্যাসের সঙ্গে দুই শতাংশের উর্ধ্বে নিকোটিন এবং এসেন্স ব্যাকমের মিশ্রিত ফুট্রো স্লাইস দিয়ে তৈরী করা হয় সিসা।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা নাম প্রকাশ করা হবে না এমন শর্তে জানান, সম্প্রতি একটি গোয়েন্দা সংস্থা সিসার ব্যবহার নিয়ে একটি প্রতিবেদন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করেছে। ওই প্রতিবেদনে সিসার ব্যবহার বন্ধে বেশ কিছু সুপারিশও রাখা হয়েছে।

ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সিসা সেবনের ফলে তরুণ-তরুণীরা উচ্ছৃঙ্খল, আপত্তিকর ও অবাধ যৌনচারের মাধ্যমে সামাজিক পরিবেশ কলুষিত করছে। সিসা বারগুলো ভোগবাদের সীমান্তে পরিণত হয়েছে। বারগুলো কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে কোন নিবন্ধন বা সনদপত্র গ্রহণ করছে না। কতিপয় ব্যবসায়ীরা দীর্ঘদিন ধরে সিসা বার বানিয়ে রমরমা ব্যবসা করছে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ধুমপানের চেয়ে সিসা সেবন মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর। এটা দ্রুত ফুসফুস থেকে রক্ষ প্রবাহের মাধ্যমে মানুষের মস্তিষ্কে পৌঁছে যায়। সিসা সেবনের একটি ্আসরে যে পরিমাণ ধোঁয়া বের হয়, তা ২০০টি সিগারেটের ধোঁয়ার সমান। একবার সিসার ধোঁয়া ফুসফুসে টেনে নিলে যে পরিমাণ নিকোটিন ও কার্বন মনোঅক্সাইড মানুষের দেহে প্রবেশ করে তা ২০টি সিগারেটের চেয়ে বেশি।

সিসার ব্যবহার বন্ধে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর নজরদারি এবং গোয়েন্দা তৎপরতা জোরদারের পাশাপাশি এর ব্যবহার বন্ধে সাড়াশি অভিযানের সুপারিশ করা হয়েছে।

এ বিষয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক জামাল উদ্দিন বলেন, সিসা অবৈধ মাদক। সিসার ব্যবহার হয় এমন একটি তালিকা আমাদের হাতে রয়েছে, সে মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

(আরএম/এসপি/ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০২০)

পাঠকের মতামত:

২৬ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test