E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

দিল্লির সহিংসতার ধিক্কার জানিয়ে ঢাকায় মানববন্ধন

২০২০ মার্চ ০৩ ১৬:৩১:২০
দিল্লির সহিংসতার ধিক্কার জানিয়ে ঢাকায় মানববন্ধন

স্টাফ রিপোর্টার : শুধু বাংলাদেশ নয়, ভারত উপমহাদেশের শান্তিকামী মানুষের শান্তি-সম্প্রীতি সৌহার্দ্য রক্ষার লক্ষ্যে রাষ্ট্র-রাজনীতির সাথে ধর্ম কোথায় থাকবে তা রাষ্ট্র-রাজনৈতিক পর্যায়ে একাত্ম হয়ে ভাবার আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্ত।

দিল্লিতে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার প্রতিবাদে মঙ্গলবার রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে আয়োজিত এক মানববন্ধনে একথা বলেন তিনি। ‘সাম্প্রদায়িকতা নয়, চাই মানবিক বিশ্ব’ স্লোগান নিয়ে এ মানববন্ধনের আয়োজন করে জঙ্গিবাদ ও সাম্প্রদায়িকতা প্রতিরোধ মোর্চা।

মানববন্ধনে রানা দাশগুপ্ত বলেন, বেদনাবিধুর চিত্তে এখানে আজ উপস্থিত হয়েছি। সম্প্রতি ভারতের নয়াদিল্লিতে যে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা ঘটেছে আমরা বাংলাদেশের মানুষ কি মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ কি খ্রিষ্টান ঐক্যবদ্ধভাবে এই সহিংসতার তীব্র নিন্দা ও ধিক্কার জানাই। ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু পাকিস্তান থেকে ফেরার পথে নয়াদিল্লি বিমানবন্দরে নেমে ইন্দিরা গান্ধীকে পাশে নিয়ে বলেছিলেন, আমাদের সাথে আপনাদের যে সম্পর্ক তা ভ্রাতৃত্বের মিল, আদর্শের ও জনগণের মিল। কিন্তু আজকে স্বাধীনতার ৫০ বছরে এসে দাঁড়িয়েও লক্ষ্য করছি ধর্মনিরপেক্ষ রাজনীতি থেকে রাষ্ট্র-রাজনীতির ক্রমাগত বিচ্যুতি ঘটেছে। সেখান থেকে আমরাও মুক্ত হতে পারিনি।

তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছিলেন। তিনি ভেবেছিলেন ধর্মীয় রাজনীতি রেখে অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়। কিন্তু ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পরে বাংলাদেশের সংবিধান পাকিস্তানি আদলে শুধু নিয়ে যাওয়া হয়নি, ধর্মভিত্তিক রাজনীতির নিষিদ্ধের অনুচ্ছেদ পর্যন্ত বিলোপ করা হয়েছে, যা আজও তা সংবিধানে সংযোজন করতে পারিনি। আজকে নয়াদিল্লির দিকে তাকিয়েও ভিন্নতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। যে ভারতবর্ষের জনগণ মহাত্মা গান্ধীকে জনক হিসেবে মেনে নিয়েছিলেন। সেই মহাত্মা গান্ধীর খুনি নাথুরাম গডসের নামে ভারতে ১৮০ ফুট উচ্চতার ভাস্কর্য নির্মিত হচ্ছে। অর্থাৎ আজকে ভারতে একদিকে মহাত্মা গান্ধী, আরেক দিকে নথুরাম গডসের প্রেতাত্মারা। ভারতের রাজনীতিকে তারা দূষিত করতে চায়।

তিনি আরও বলেন, নয়াদিল্লির ঘটনাকে কেন্দ্র করে যাতে বাংলাদেশ কেউ সাম্প্রদায়িক সহিসংতা তৈরি করতে না পারে, সেজন্য আমাদের ঐক্যবদ্ধ প্রয়াস রাখতে হবে। নয়াদিল্লির সহিংসতার ঘটনায় প্রতিবাদ জানিয়ে বাংলাদেশে যেন ভারতের মতো কোনো সাম্প্রদায়িক পরিস্থিতি তৈরি না হয়, সেজন্য সবাইকে সজাগ, সতর্ক ও সচেতন ভূমিকা রাখার কথা বলায় আলেম সমাজকেও ধন্যবাদ জানান তিনি।

সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুস নোবেল বিজয়ী অমর্ত্য সেনের বক্তব্যের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে বলেন, দিল্লির ঘটনা ভারতের অসাম্প্রদায়িক চেতনার ওপর বড় ধরনের আঘাত। ভারতের সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতার কথা থাকলেও দিল্লির ঘটনা তার বিপরীত ও অসঙ্গতিপূর্ণ। দিল্লিতে যখন সহিংসতা কম ছিল তখন পুলিশ নির্বিকার ছিল। এটা হয় পুলিশের অদক্ষতা নয়তো উদ্দেশ্যপূর্ণ নীরবতা। যেটাই ঘটুক না কেন ভারতের মতো রাষ্ট্রের জন্য তা গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।

তিনি আরও বলেন, দিল্লির ঘটনাকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশে কোনো কোনো মহল একটি বিশেষ পরিস্থিতি তৈরির চেষ্টা করছেন। অতীতেও করেছেন, এখনও করছেন। আসলে তাদের উদ্দেশ্য মানবিকতা রক্ষা করা নয়, মানবিকবোধ জাগ্রত করা নয় বরং বিশেষ পরিস্থিতি তৈরি করে ঘোলা পানিতে মাছ ধরা, যাতে বাংলাদেশেও বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি করা যায়। স্বাধীনতার যুদ্ধে বন্ধুপ্রতীম দেশ হিসেবে পাশে দাঁড়ানো রাষ্ট্রের প্রধান বঙ্গবন্ধুর জন্ম শতবার্ষিকীতে আসবেন সেটাই তো স্বাভাবিক। আমরা মোদির আগমনকে স্বাগতম জানাই। দিল্লীর ঘটনায় আমাদের অবস্থানও জানিয়ে দিয়েছি। কিন্তু কোনো কোনো মহল এই ইস্যু সামনে এনে ভারতবিরোধীতা, নিজেদের সাম্প্রদায়িক দৃষ্টিভঙ্গি সাধারণ মানুষের উপর চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছে।

জঙ্গিবাদ ও সাম্প্রদায়িকতা প্রতিরোধ মোর্চার আহ্বায়ক ব্যারিস্ট্রার তুরিন আফরোজের সভাপতিত্বে ও সমন্বয়ক এফএম শাহিনের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির কেন্দ্রীয় সদস্য চন্দন সেন, অপরাজেয় বাংলার সভাপতি এইচ রহমান মিলু, মুফতি ফয়জুর রহমান।

(ওএস/এসপি/মার্চ ০৩, ২০২০)

পাঠকের মতামত:

১৩ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test