E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শিরোনাম:

না ফেরার দেশে লোকসাহিত্যিক ড. আশরাফ সিদ্দিকী

২০২০ মার্চ ১৯ ১৬:১৫:৪৯
না ফেরার দেশে লোকসাহিত্যিক ড. আশরাফ সিদ্দিকী

নিউজ ডেস্ক : আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন লোকসাহিত্যিক, বিশিষ্ট কবি, গবেষক, প্রাবন্ধিক ও শিক্ষাবিদ ড. আশরাফ সিদ্দিকী আর নেই (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।

বৃহস্পতিবার ভোর রাতে ঢাকার অ্যাপোলো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। তার বয়স হয়েছিল ৯৩ বছর। ড. আশরাফ সিদ্দিকীর মেয়ে ড. তাসনীম সিদ্দিকী এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

ড. আশরাফ সিদ্দিকী ছিলেন বাংলা একাডেমির সাবেক মহাপরিচালক। এছাড়া তিনি বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার চেয়ারম্যান, প্রেস ইনস্টিটিউটের প্রেসিডেন্ট, নজরুল একাডেমির আজীবন সভাপতি ছিলেন। নজরুল ইনস্টিটিউটের সভাপতির দায়িত্বও পালন করেছেন তিনি। ত্রিশালে কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা এবং জগন্নাথ কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরে অনুঘটকের ভূমিকা পালন করেন ড. আশরাফ সিদ্দিকী।

১৯৪৮ সালে দুর্ভিক্ষের প্রেক্ষাপটে ‘তালেব মাস্টার’ কবিতা রচনা করে তিনি অল্প সময়ের মধ্যে গণমানুষের কবি হিসেবে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। ‘গলির ধারের ছেলেটি’ ছোটগল্প লেখক হিসেবে তাকে প্রতিষ্ঠিত করে। এ ছোট গল্প অবলম্বনে সুভাষ দত্তের পরিচালনায় ‘ডুমুরের ফুল’ চলচ্চিত্রটি জাতীয় পুরস্কার লাভ করে।

বাংলার মৌখিক লোকসাহিত্য ও সংস্কৃতিকে লিপিবদ্ধ করার জন্য ড. আশরাফ সিদ্দিকী বিশেষভাবে সমাদৃত। তার লেখা বইগুলো- ‘লোকসাহিত্য’, ‘বেঙ্গলি ফোকলোর’, ‘আওয়ার ফোকলোর আওয়ার হেরিটেজ’, ‘ফোকলোরিক বাংলাদেশ’ এবং ‘কিংবদন্তীর বাংলা’ দক্ষিণ এশিয়ার লোকসাহিত্যে গবেষণায় মৌলিক বই হিসেবে বিবেচিত হয়। ‘ভোম্বল দাশ: দ্যা আঙ্কল অব লায়ন’ এবং ‘টুনটুনি অ্যান্ড আদার স্টোরিজ’ ইত্যাদি গ্রন্থের মধ্যে দিয়ে তিনি বাংলার লোকজ গল্পকে বিশ্বসাহিত্যের ভাণ্ডারে পৌঁছে দেন। ১৯৫৮ সালে প্রখ্যাত ম্যাকমিলান পাবলিশিং থেকে প্রকাশিত তার ‘ভোম্বল দাশ’ বইটি ছিল সে বছরের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সর্বাধিক বিক্রিত শিশুদের বইয়ের তালিকায়। পরে এ বইটি ১১টি ভাষায় অনুবাদিত হয়। তার সত্তর দশকে লেখা ‘রবীন্দ্রনাথের শান্তিনিকেতন’ ও ‘প্যারিস সুন্দরী’ আজও তরুণ পাঠকদের কাছে জনপ্রিয়।

ড. সিদ্দিকী বহু পুরস্কার ও সম্মাননা অর্জন করেন। তার মধ্যে ১৯৮৮ সালে সাহিত্যে একুশে পদক, ১৯৬৪ সালে শিশু সাহিত্যে বাংলা একাডেমি পুরস্কার, ১৯৬৬ সালে সাহিত্যে সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় পুরস্কার, ইউনেস্কো পুরস্কার, লোকসাহিত্য গ্রন্থের জন্য দাউদ পুরস্কার অন্যতম।

বিংশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছেন যেসব ব্যক্তি আশরাফ সিদ্দিকী তাদের একজন। চল্লিশের দশকের শুরুতে প্রতিশ্রুতিময় কবি হিসেবে তার আত্মপ্রকাশ। তার সাহিত্যিক জীবনে তিনি রচনা করেছেন পাঁচ শতাধিক কবিতা। বাংলার লোকঐতিহ্য নিয়ে করেছেন গভীর গবেষণা। একাধারে তিনি প্রবন্ধকার, লোকসাহিত্যিক, ছোটগল্প লেখক এবং শিশু সাহিত্যিক। তিনি রচনা করেছেন ৭৫টি গ্রন্থ এবং অসংখ্য প্রবন্ধ।

১৯২৭ সালের ১ মার্চ টাঙ্গাইলে নাগবাড়ী গ্রামে কবির জন্ম। তিনি পড়াশোনা করেন শান্তিনিকেতন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ১৯৫১ সালের ২৩ ডিসেম্বর সাঈদা সিদ্দিকীকে বিবাহ করেন। তাদের পাঁচ সন্তান সবাই উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত এবং নিজ নিজ পেশায় সুপ্রতিষ্ঠিত। আশরাফ সিদ্দিকী বাংলা সাহিত্যে অবদানের জন্য একুশে পদকসহ ৩৬টি পুুরস্কার ও সম্মাননা পেয়েছেন।

(ওএস/এসপি/মার্চ ১৯, ২০২০)

পাঠকের মতামত:

২৯ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test