E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শিরোনাম:

ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড, অধ্যাদেশে রাষ্ট্রপতির সই

২০২০ অক্টোবর ১৩ ১৩:১৩:১০
ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড, অধ্যাদেশে রাষ্ট্রপতির সই

স্টাফ রিপোর্টার : ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন (সংশোধন) অধ্যাদেশে সই করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।

মঙ্গলবার (১৩ অক্টোবর) রাষ্ট্রপতি অধ্যাদেশে সই করেন বলে তার প্রেস সচিব মো. জয়নাল আবেদীন গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন।

এর আগে গতকাল সোমবার (১২ অক্টোবর) ‘নারী ও শিশু নির্যাতন দমন (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০০০’ এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা।

নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন অনুযায়ী, ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি ছিল যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। দেশজুড়ে ধর্ষণ ও নারী নির্যাতন বিরোধী আন্দোলন এবং ধর্ষণকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড করার দাবির মধ্যে সরকার এই পদক্ষেপ নিল।

সোমবার মন্ত্রিসভায় খসড়া অনুমোদনের পর সচিবালয়ে ব্রিফিং করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম। সংশোধিত আইন অনুযায়ী ৯(১) উপধারায় ‘যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড’ শব্দগুলোর পরিবর্তে ‘মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড’ শব্দগুলো প্রতিস্থাপিত হবে বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।

তিনি বলেন, ‘গত কিছু দিনের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে নারী ও শিশু নির্যাতনমূলক অপরাধগুলো কঠোরভাবে দমনের জন্য নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯(১) উপধারা পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নেয়। এই উপধারায় বিধান ছিল- যদি কোনো পুরুষ কোনো নারী বা শিশুকে ধর্ষণ করেন, তা হলে তিনি যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডনীয় হবেন এবং এর অতিরিক্ত অর্থদণ্ডেও দণ্ডনীয় হবেন।’

‘এটার পরিপ্রেক্ষিতে মন্ত্রণালয় থেকে প্রস্তাব আসে নারী বা শিশু ধর্ষণ একটি জঘন্য অপরাধ, সমাজে নারী বা শিশু নির্যাতন কঠোরভাবে দমনের লক্ষ্যে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯(১) উপধারায় অধীন ধর্ষণের অপরাধের জন্য মৃত্যুদণ্ড অথবা যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড প্রদানের লক্ষ্যে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন-২০০০ সংশোধন করা প্রয়োজন।’

ধর্ষণের সংজ্ঞার পরিবর্তনের বিষয়ে মন্ত্রিসভা বৈঠকে কোনো কথা হয়েছে কিনা- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ডেফিনেশনের বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়নি।’

ধর্ষণ মামলার বিচার কত দিনের মধ্যে শেষ হবে- এ বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, আগের আইনের ২০(৩) ধারায় এটা আছে, ১৮০ দিনের মধ্যে হবে। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে বিচার হবে। এখানে বিচার পদ্ধতি মেনশন করা আছে।

আগে যাবজ্জীবন ছিল, সেই শাস্তিও দেয়া যায়নি, এখন সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড করে লাভটা কোথায় হবে- এ বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘যেভাবে প্রমোশন ক্যাম্পেইন হচ্ছে, এটাও তো একটা প্রমোশনের জায়গা। এটা অবশ্যই সাধারণ মানুষের মধ্যে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। যারা ক্রাইম করে তারা অন্তত দুইবার চিন্তা করবে যে, এটাতে তো মৃত্যুদণ্ড আছে। এখন তো আর যাবজ্জীবন কারাদণ্ড নয়। ১৮০ দিন তো দীর্ঘ সময়ও নয়। ডেফিনেটলি এটার পজিটিভ ইম্প্যাক্ট হবে।’

‘এই আইনে বলা হয়েছে আরোপিত অর্থদণ্ডকে, প্রয়োজনবোধে, ট্রাইব্যুনাল অপরাধের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তির জন্য ক্ষতিপূরণ হিসেবে গণ্য করিতে পারিবে এবং অর্থদণ্ড বা ক্ষতিপূরণের অর্থ দণ্ডিত ব্যক্তির নিকট হইতে বা তাহার বিদ্যমান সম্পদ হইতে আদায় করা সম্ভব না হইলে, ভবিষ্যতে তিনি যে সম্পদের মালিক বা অধিকারী হইবেন সেই সম্পদ হইতে আদায়যোগ্য হইবে এবং এইরূপ ক্ষেত্রে উক্ত সম্পদের ওপর অন্যান্য দাবি অপেক্ষা উক্ত অর্থদণ্ড বা ক্ষতিপূরণের দাবি প্রাধান্য পাইবে।’

সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন স্থানে ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে। এরমধ্যে গত ৪ অক্টোবর নোয়াখালীতে এক নারীকে (৩৭) বিবস্ত্র করে নির্যাতনের এক ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। যদিও গত সেপ্টেম্বর মাসের শুরুর দিকে বেগমগঞ্জ উপজেলার একলাশপুর ইউনিয়নে এই ঘটনা ঘটেছিল।

এই ঘটনা ভাইরাল হওয়ার পর দেশজুড়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে। জড়িতদের অধিকাংশকে গ্রেফতার করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এছাড়া ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে রাজধানীসহ সারাদেশে প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে।

গত শুক্রবার (৯ অক্টোবর) বিকেলে শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে ধর্ষণ ও নারী নির্যাতন বিরোধী মহাসমাবেশ থেকে সারাদেশে অব্যাহত ধর্ষণ ও বিচারহীনতার প্রতিবাদে লংমার্চের ঘোষণা দেয়া হয়।

‘ধর্ষণ ও বিচারহীনতার বিরুদ্ধে বাংলাদেশ’ ব্যানারে আয়োজিত মহাসমাবেশে দেয়া ঘোষণা অনুযায়ী, আগামী ১৬ ও ১৭ অক্টোবর নোয়াখালী অভিমুখে লংমার্চের ঘোষণা দেয়া হয়। এছাড়া ধর্ষণ ও নিপীড়নের বিচার এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর অপসারণ চেয়ে নয় দফা দাবি ঘোষণা করা হয়।

(ওএস/এসপি/অক্টোবর ১৩, ২০২০)

পাঠকের মতামত:

২৭ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test