E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

মুজিব-জন্মশতবার্ষিকীর মধ্যেই মুক্তিযোদ্ধাদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি দিন : আবীর আহাদ

২০২০ নভেম্বর ০৪ ১৬:৩৬:০৬
মুজিব-জন্মশতবার্ষিকীর মধ্যেই মুক্তিযোদ্ধাদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি দিন : আবীর আহাদ

স্টাফ রিপোর্টার : একাত্তরের মুক্তিযোদ্ধা সংসদের চেয়ারম্যান লেখক গবেষক আবীর আহাদ বলেছেন, "আমরা বর্তমানে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম-শতবার্ষিকীর মধ্যে অবস্থান করছি । আগামী ২০২১ সালের ১৭ মার্চ তাঁর জন্মশতবার্ষিকী শেষ হবে । এই ঐতিহাসিক মর্যাদাপূর্ণ সময়ের মধ্যে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধের সাংবিধানিক স্বীকৃতি এবং ভুয়ামুক্ত মুক্তিযোদ্ধা তালিকা ও মুক্তিযোদ্ধাদের উন্নত আর্থসামাজিক জীবন ব্যবস্থা নিশ্চিত করার ঘোঘণা দিয়ে বঙ্গবন্ধু-কন্যা প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা একটি ইতিহাস সৃষ্টি করবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করছি ।"

আজ এক বিবৃতিতে আবীর আহাদ উপরোক্ত আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, "আমরা দেশের মুক্তিযোদ্ধারা বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণার মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠিত ঐতিহাসিক মুক্তিযুদ্ধের রক্তাক্ত প্রান্তরে অবগাহন করে সীমাহীন শৌর্য বীর্য ত্যাগ ও বীরত্ব দিয়ে ভারতীয় মিত্রবাহিনীর প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় হানাদার পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীকে পরাজিত করে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ছিনিয়ে এনেছিলাম । কিন্তু অতি পরিতাপের বিষয় এই যে, স্বাধীনতা প্রাপ্তির পর রচিত আমাদের জাতীয় সংবিধানের মূলস্তম্ভ 'প্রস্তাবনা'য় মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধের অবদানের কথা বর্ণিত হয়নি । আমরা মনে করি, তড়িঘড়ি করে সংবিধান রচনা করতে গিয়ে অনিচ্ছাকৃতভাবে 'মুক্তিযোদ্ধা-মুক্তিযুদ্ধ' শব্দদ্বয় সন্নিবেশিত হয়নি । সংবিধান কোনো ধর্মীয় বিষয় নয় যে, কোনো কিছু সংযোজন ও সংশোধন করা যাবে না । অতীতে জাতীয় প্রয়োজনে তো বটেই, এমনকি কোনো কোনো শাসকদের ক্ষমতা ও শাসনের সুবিধার্থে সংবিধানে অনেক সংশোধনী ও সংযোজনী এসেছে এবং দেশ ও যুগের দাগিদে ভবিষ্যতে আরো হতেই থাকবে ।"

আবীর আহাদ বলেন, "আমাদের সংবিধানে মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি না-থাকার ফলে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত হচ্ছে এবং মুক্তিযোদ্ধা না-হয়েও অনেকে মুক্তিযোদ্ধা হয়ে আসছে ! মুক্তিযুদ্ধের কথা সংবিধানে স্থান না-পাওয়ার ফলে একটি বিশেষ মতলববাজ মহল থেকে আমাদের ঐতিহাসিক রক্তাক্ত মুক্তিযুদ্ধকে একাত্তরের গোলমালের বছর, গৃহযুদ্ধ, ভাইয়ে ভাইয়ে যুদ্ধ, ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ ইত্যাকার অপবিশেষণে মণ্ডিত করা হয়ে থাকে । সংবিধানে 'মুক্তিযুদ্ধ' শব্দটি থাকলে ঐসব অপবিশেষণে কেউ মহান মুক্তিযুদ্ধকে কলঙ্কিত করতে পারতো না । অপরদিকে 'মুক্তিযোদ্ধা' শব্দটি সংবিধানে লিপিবদ্ধ থাকলে তা রাষ্ট্রীয় আইনদ্বারা সুরক্ষিত হতো----ফলে মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে সম্পর্কহীন অমুক্তিযোদ্ধারা যত্রতত্র মুক্তিযোদ্ধা হতে পারতো না; মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে কটূক্তিসহ তাদের জীবনের নিরাপত্তা কেউ বিঘ্নিত করার দু:সাহস দেখাতে পারতো না ।

তিনি বলেন, অবশ্য বাহাত্তর সনে বঙ্গবন্ধু সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের একটি সংজ্ঞা দিয়েছিলেন, সেই সংজ্ঞার আলোকে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই করলেও ভুয়ারা মুক্তিযোদ্ধা হতে পারতো না । কিন্তু দু:খের বিষয়, বিএনপি-জামায়াত, এমনকি মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনাকারী আওয়ামী লীগ দলীয় সরকারও বঙ্গবন্ধু সরকারের মুক্তিযোদ্ধা সংজ্ঞাটিকে হিমাগারে পাঠিয়ে নানান গোঁজামিলের সংজ্ঞায় হাজার হাজার অমুক্তিযোদ্ধা ও রাজাকারদের মুক্তিযোদ্ধা বানিয়ে দেয়ার সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছে । আমি হলফ করে বলতে পারি, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সংখ্যা কোনো অবস্থাতেই দেড় লক্ষের বেশি হবে না । কিন্তু এখন দু'লক্ষ পঁয়ত্রিশ হাজারের মতো মুক্তিযোদ্ধার নাম সরকারি তালিকায় উঠেছে । অর্থাত্ সরকারি তালিকায় আশি/পঁচাশি হাজার ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা রয়েছে যারা প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের মতো রাষ্ট্রীয় ভাতাসহ অন্যান্য সুবিধাদি ভোগ করছে । এটা মুক্তিযোদ্ধাদের মর্যাদার চরম অবমাননা ।

তিনি আরও বলেন, মুক্তিযোদ্ধা না-হয়েও মুক্তিযোদ্ধা----এটা কোনো সভ্য মানুষ মেনে নিতে পারেন না । এই যে হাজার হাজার ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা, এরা মুক্তিযোদ্ধা হয়েছে অর্থ, আত্মীয়তা ও রাজনৈতিক বিবেচনায় । এ-জন্য আমরা দাবি জানিয়ে আসছি যে, বঙ্গবন্ধুর সরকারের মুক্তিযোদ্ধা সংজ্ঞার আলোকে একটি উচ্চপর্যায়ের বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশনের মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই করে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের একটি নির্ভুল তালিকা প্রণয়ন করত হবে । উপরোক্ত বিষয়াদি নিয়ে প্রকৃত বীর মুক্তিযোদ্ধারা চরম মনোবেদনা নিয়ে দিনাতিপাত করছেন ।"

আবীর আহাদ পরিশেষে বঙ্গবন্ধু-কন্যা প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার সদয় দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, "বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী শেষ হওয়ার আগেই তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি ও বঙ্গবন্ধুর মুক্তিযোদ্ধা সংজ্ঞার ভিত্তিতে ভুয়ামুক্ত মুক্তিযোদ্ধা তালিকা প্রণয়নের ঘোষণাসহ মুক্তিযোদ্ধারদের মাসিক ভাতা যৌক্তিক পর্যায়ে বৃদ্ধি, একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ চিকিৎসা ভাতা ও বাসস্থানের জন্যে ২০ লক্ষ টাকার গৃহঋণ প্রদান বিষয়ে একটি ঐতিহাসিক ঘোষণা দিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের অশান্ত মনকে শান্ত করবেন । কারণ মেঘে মেঘ অনেক বেলা গড়িয়ে গেছে । প্রতিদিন বীর মুক্তিযোদ্ধারা চরম হতাশা নিয়ে জীবন থেকে বিদায় নিচ্ছেন । তারা জীবনের এ-প্রান্তসীমায় দাঁড়িয়ে জীবদ্দশায় তাদের ঐতিহাসিক অবদানের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি, এচটু উন্নত জীবন ও ভুয়ামুক্ত মুক্তিযোদ্ধা তালিকা দেখে যেতে চান ।"

( এএ/এসপি/নভেম্বর ০৪, ২০২০)

পাঠকের মতামত:

২৫ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test