E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শিরোনাম:

শিক্ষাবিদ কে.এম আব্দুল করিমের চতুর্থ মৃত্যুবার্ষিকী আজ

২০২০ নভেম্বর ১১ ১৩:৫১:১১
শিক্ষাবিদ কে.এম আব্দুল করিমের চতুর্থ মৃত্যুবার্ষিকী আজ

স্টাফ রিপোর্টার : ঝালকাঠির শিক্ষাবিদ আলহাজ্ব কে.এম আব্দুল করিমের চতুর্থ মৃত্যুবার্ষিকী আজ ১১ নভেম্বর। এ উপলক্ষে সপ্তাহব্যাপী কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে কুরআনখানী ও মিলাদ মাহফিল, দোয়া ও আলোচনা সভা, মাদ্রাসায় অভিভাবক সমাবেশ, স্মৃতিচারণমূলক আলোচনা, চিত্রাংকন ও কুইজ প্রতিযোগিতা, হাদিস পাঠ প্রতিযোগিতা, গরিব ও অসহায় শিক্ষার্থীদের মাঝে শিক্ষা উপকরণ ও খাবার বিতরণ। ঢাকার যাত্রাবাড়ি কাজলারপাড় এলাকায় তাঁর প্রতিষ্ঠিত মাদ্রাসা ও এতিমখানায় এসব কর্মসূচি পালন করা হবে। 

এছাড়াও বরিশাল বটতলা মসজিদে রুকাইয়া প্রপার্টিজের উদ্যোগে মিলাদ ও দোয়া, ঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলার সাতুরিয়া ইঞ্জিনিয়ার এ কে এম রেজাউল করিম কারিগরি স্কুল অ্যান্ড কলেজ মাঠে স্মরণ সভা, মিলাদ মাহফিল ও দোয়া অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।

তাঁর বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনায় সকলের কাছে দোয়া চেয়েছেন তাঁর ছেলে রাজনীতিবিদ, কলামিষ্ট ও সমাজ সেবক ইঞ্জিনিয়ার এ কে এম রেজাউল করিম।

মরহুম কে এম আব্দুল করিম ছিলেন বিশিষ্ট সমাজ সেবক ও দানবীর, ধর্মীয় নেতা, মোসলেম আলী ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশনের সাবেক চেয়ারম্যান, সাতুরিয়া ইঞ্জিনিয়ার এ কে এম রেজাউল করিম কারিগরি স্কুল অ্যান্ড কলেজ ও শের-ই-বাংলা এ কে ফজলুল হক রির্চাস ইনস্টিটিউটের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, খিলগাঁও মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক, খিলগাঁও মডেল হাই স্কুল এবং খিলগাঁও মডেল কলেজের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। তিনি ঝালকাঠি জেলার রাজাপুরের সাতুরিয়া হামিদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ছিলেন।

তিনি সকলকে শোক সাগরে ভাসিয়ে ২০১৬ সালের ১১ নভেম্বর (শুক্রবার) রাত সাড়ে ৮টায় দুনিয়া থেকে চির বিদায় নিয়ে চলে গেলেন না ফেরার দেশে। (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তিনি আর কখনও আমাদের মাঝে আসবেন না।

আলহাজ্ব কে, এম, আব্দুল কারীম (রহীমাহুল্লাহ) একাডেমি ও মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আবু আবদুল্লাহ জানান, আলহাজ্ব কে, এম, আব্দুল কারীম (রহীমাহুল্লাহ) এর ছেলে ইঞ্জিনিয়ার এ কে এম রেজাউল করিম তাঁর বাবার স্মরণে ঢাকার যাত্রাবাড়ির কাজলারপাড়ে আলহাজ্ব কে,এম,আব্দুল কারীম (রহীমাহুল্লাহ) ট্রাস্ট প্রতিষ্ঠা করেন। এই ট্রাস্ট্রের মাধ্যমে আলহাজ্ব কে, এম, আব্দুল কারীম (রহীমাহুল্লাহ) একাডেমি, আলহাজ্ব কে,এম, আব্দুল কারীম (রহীমাহুল্লাহ) হাফিজিয়া মাদরাসা ও এতিমখানা পরিচালিত হচ্ছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আলহাজ্জ্ব কে.এম আবদুল করিম (রাহিমাহুল্লাহ) এলাকায় গড়ে তুলেছেন বহু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। যার মধ্যে সাতুরিয়া ইঞ্জিনিয়ার এ কে,এম রেজাউল করিম কারিগরি স্কুল এন্ড কলেজ, আমড়াঝুড়ি জামিয়া ইসলামীয়া বহুমুখী দাখিল মাদ্রাসা, কে,এম, আবদুল করিম জামিয়া ইসলামীয়া এতিমখানা অন্যতম।

এছাড়াও শের-ই-বাংলা এ কে ফজলুল হক রিসার্চ ইনস্টিটিউট, মাওলানা আবদুল রহীম, (র:) স্মৃতি পাঠাগার, মোস্তফা হায়দার একাডেমী, পূর্ব আমড়াঝুড়ি বায়তুল মামুর জামে মসজিদ, সাতুরিয়া খানবাড়ি জামে মসজিদ, উত্তর তারাবুনিয়া মোল্লাবাড়ী জামে মসজিদ প্রতিষ্ঠা করেছেন। তিনি দরিদ্র জনগোষ্ঠির মানোন্নয়নে ভূমিকা রেখেছেন। সম্প্রতি কাউখালি শহরে দৃষ্টি নন্দন ফোয়ারা ও বিশ্রামাগার স্থাপিত হয়েছে মোসলেম আলী খান ফাউন্ডেশনের আর্থিক সহযোগিতায়। ঝালকাঠি ও পিরোজপুর জেলায় তিনি বাংলা অনুবাদ কোরআন শরীফ বিতরণ করেন।

সেবামূলক কাজ পরিচালনার জন্য মোসলেম আলী খান ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে প্রত্যন্ত অঞ্চলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করা ছাড়াও তিনি বিভিন্ন সময়ে গরীব ছাত্র-ছাত্রী ও মসজিদের ইমামদের মধ্যে আর্থিক সহয়তা প্রদান করেছেন। রাজাপুর শহরে আর্সেনিক মুক্ত বিশুদ্ধ পানির জন্য তিনি সম্প্রতি ইসরাব নামক একটি এনজিওকে ঋণ দিয়েছেন।

ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় সিডরের পরে মোসলেম আলী খান ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশনের ত্রাণ তৎপরতা সর্বমহলে প্রশংসিত হয়। এ সময় তাঁর প্রতিষ্ঠিত মোসলেম আলী খান ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে কাউখালি, ভান্ডারিয়া, ঝালকাঠি সদর, রাজাপুর, কাঁঠালিয়া, পিরোজপুর, পটুয়াখালির কলাপড়া, বরগুনার পাথরঘাটা এবং বাকেরগঞ্জ থানায় তিন হাজার ৬৭০ জন দুর্গত মানুষের মধ্যে শাড়ি-লুঙ্গি, শীতের কাপড়, শুকনো খাবার, হাড়ি-পাতিল, থালাবাসন, খাবার স্যালাইন, ওষুধ ও নগদ অর্থ বিতরণ করেন। কুরবানীতে তিনি কাউখালি ও ভান্ডারিয়ার প্রতিটি ইউনিয়নে এবং রাজাপুর ও ঝালকাঠিতে পশু কোরবানী দিয়ে সিডর আক্রান্ত ২ হাজার দুস্থ মানুষের মধ্যে মাংস বিতরণ করেছেন।
সিডরে ক্ষতিগ্রস্ত বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তিনি আর্থিক সাহায্য করেছেন। যার মধ্যে কাউখালির কেউন্দা স্কুল ও সাতুরিয়া রহমতিয়া দাখিল মাদ্রসা অন্যতম। এসব এলাকায় সিডরে ক্ষতিগ্রস্ত বেশ কিছু মসজিদেও তিনি আর্থিক সহয়তা প্রদান করেন।

আলহাজ্জ্ব কে.এম আবদুল করিম (রহিমাহুল্লাহ) এর ছেলে ইঞ্জিনিয়ার এ কে এম রেজাউল করিম বলেন, বাবা সারাজীবন মানুষের উপকার করেছেন। তিনি নিজেকে নিয়ে যতটুকু ভাবতেন তার চেয়ে বেশি ভাবতেন দেশ এবং সমাজকে নিয়ে। তাঁর জীবনের আদর্শ ছিল মানুষের উপকার করা। সাধারণভাবে চলাফেরা করা তার পছন্দ ছিল। তিনি সারাজীবন সৎভাবে জীবনযাপন করেছেন, মানুষের উপকার করার চেষ্টা করেছেন, কারো কোনো ক্ষতি করেননি। ‘কারো উপকার করতে না পারো, কখনোই কারো ক্ষতি কোরো না।’ ছোটোবেলা থেকেই এটা সবসময়ই শুনে এসেছি। তাঁর বন্ধুবান্ধব ও আত্মীয়-স্বজনসহ সব বয়সী মানুষের সঙ্গে কথা বলতে ভালোবাসতেন। বাড়িতে কেউ এলে কখনোই তাঁকে কিছু না খাইয়ে বাবা বিদায় দিতেন না। আপ্যায়ন করতে তিনি ভালোবাসতেন। বাবা ছিলেন ঝালকাঠি জেলার রাজাপুরস্থ সাতুরিয়া হামিদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক।

প্রচুর ইংরেজি শব্দ জানতেন, ছোটোবেলায় আমাদের শেখাতেন। তাঁর শিক্ষকতার আদর্শই সমগ্র জীবনাচরণের অঙ্কুর ও শেকড়কে ধারণ করেছিল। কত মানুষের উপকার করেছেন, কত স্টুডেন্টকে ফ্রিতে পড়িয়েছেন, পার্থিব সম্পদের চাইতে মনের ঐশ্বর্য বাড়াতে চেষ্টা করেছেন; কিন্তু কখনোই বিন্দুমাত্রও অহংকার দেখাতে দেখিনি। কিন্তু নির্দ্বিধায় বলা যায় আমার বাবা একজন আজন্ম সংগ্রামী মানুষ ছিলেন। সভ্রান্ত এক মুসলিম পরিবারে তাঁর জন্ম। তিনি ধর্মভীরু ছিলেন, কিন্তু ধর্মান্ধ ছিলেন না। কখনোই তাঁর মধ্যে কোন গোঁড়ামি দেখিনি।

তাঁর সকল মানবিক গুণাবলি, কর্তব্য-পরায়ণতা, দৃষ্টিভঙ্গির উদারতা, সাহসিকতা ও ন্যায়ের পাশে দাঁড়ানোর সমুদয় সত্যনিষ্ঠায় যর্থাথই হয়ে উঠেছিল তাঁর পরিচয় ও যা সঠিক মনে করেছেন, তা দ্বিধাহীনভাবে প্রকাশ করেছেন। তিনি মৃত্যুর ১৫ দিন আগেও একটি মানববন্ধনে অংশ নিয়ে বলেছিলেন শের-ই বাংলা এ কে ফজলুল হকের জন্মভিটার স্মৃতি রক্ষার্থে যেন সরকার কার্যকর ভূমিকা পালন করেন।

কখনো তিনি আশা ছাড়েননি। তিনি বিশ্বাস করেছেন, আমাদের মধ্যে যে অপূর্ণতা, অসত্য ও অমানবিকতা রয়েছে, তা পেড়িয়ে আমরা একদিন সত্যিই সুন্দর ও সত্যের ভোর দেখব।

(পিআর/এসপি/নভেম্বর ১১, ২০২০)

পাঠকের মতামত:

১৮ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test