E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শিরোনাম:

বাসে আগুন : ফাঁস হওয়া কল রেকর্ড খতিয়ে দেখছে পুলিশ

২০২০ নভেম্বর ১৩ ২৩:৫৩:০৫
বাসে আগুন : ফাঁস হওয়া কল রেকর্ড খতিয়ে দেখছে পুলিশ

স্টাফ রিপোর্টার : রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে গাড়ি পোড়ানোর পেছনে বিএনপি ও এর অঙ্গ-সংগঠন যুবদলের সম্পৃক্ততা রয়েছে বলে দাবি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর। ইতোমধ্যে বাস ও সরকারি যানবাহন পোড়ানোয় দায়ের করা ১৩টি মামলায় ২৮ জনকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। তাদের আদালতের মাধ্যমে বিভিন্ন মেয়াদে রিমান্ডেও নেয়া হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (১২ নভেম্বর) দুপুর থেকে দুই ঘণ্টার মধ্যে রাজধানীর বেশ কয়েকটি স্থানে বাস পোড়ানোর ঘটনা ঘটে। এরপর বিকেলেই বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট নিতাই রায় চৌধুরীর একটি কল রেকর্ড ফাঁস হয়।

ওই কল রেকর্ডে বাসে আগুন দেয়ার বিষয়টি নিতাই রায়কে টেলিফোনে জানাতে শোনা যায় এক নারীকে। ‘ফরিদা’ পরিচয় দেয়া ওই নারীর কণ্ঠ বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ফরিদা ইয়াসমিনের বলে দাবি তদন্ত সংশ্লিষ্টদের।

ডিএমপির ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বলছে, রাজধানীর বেশ কয়েকটি জায়গায় হঠাৎ বাসে আগুন দেয়ার ঘটনায় একটি কল রেকর্ড পেয়েছি আমরা। সেগুলো বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। যারা কথা বলেছেন তাদের পরিচয় জানতে কাজ করা হচ্ছে। কল রেকর্ড আর আগুনের ঘটনার সঙ্গে কথোপকথনের মিল রয়েছে।

তারা বলছেন, ফাঁস হওয়া কল রেকর্ড সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার (১২ নভেম্বর) বাসে আগুন দেয়ার ঘটনায় ফরিদা ইয়াসমিন দলীয় অফিসে আটকা পড়েন এবং পরে সাংবাদিকদের সহযোগিতায় বের হয়েছেন বলে নিতাই রায় চৌধুরীকে জানান।

কথোপকথনে যা আছে

নারীকণ্ঠ : আমি ফরিদা বলছি, পার্টি অফিসে আটকা পড়েছিলাম এতক্ষণ। গাড়ি পুড়িয়েছে ছেলে-পেলে। ১১টার সময় প্রেস কনফারেন্স হলো, এখন তো এখানে আটকা পড়ে দেরি হয়ে গেলো।

নিতাই রায় চৌধুরী : গাড়ি পোড়ানো হয়েছে? কোন জায়গায়?

নারীকণ্ঠ : পার্টি অফিসের সামনে। সব গাড়ি পুড়িয়েছে। পুলিশ-র‌্যাব এসে পার্টি অফিস ঘেরাও দিয়ে রেখেছে।

নিতাই রায় চৌধুরী : কোন গাড়ি পুড়িয়েছে?

নারীকণ্ঠ : স্টাফ গাড়ি থাকে না, পুলিশের স্টাফ গাড়ি, ওগুলোর মধ্যে আগুন দিয়েছে।

নিতাই রায় চৌধুরী : কয়টা গাড়ি?

নারীকণ্ঠ : যুবদলের ছেলেরা আগুন দিয়েছে।

নিতাই রায় চৌধুরী : কয়টা গাড়ি? একটা গাড়ি?

নারীকণ্ঠ : একটা গাড়ি।

প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ের আওয়ামী লীগ অফিসের সামনে একটি গাড়িসহ রাজধানীর সাতটি স্থানে বাসে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। ওইদিন দুপুরে রাজধানীর ঢাকা-১৮ ও সিরাজগঞ্জ-১ আসনের উপ-নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগে নয়াপল্টনে বিক্ষোভ মিছিল করে বিএনপি। এ সময় পাশেই হঠাৎ করে একটি বাসে আগুনের ঘটনা ঘটে।

ওই ঘটনার আধাঘণ্টার মধ্যেই রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে আরেকটি বাসে আগুন লাগে। পরে ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয়রা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। প্রায় একই সময়ে জাতীয় প্রেস ক্লাব সংলগ্ন সচিবালয় মোড়ে আরেকটি বাসে লাগে আগুন। আগুনের ঘটনা ঘটে শাহবাগ মোড়, কমলাপুর ও মতিঝিলেও। সন্ধ্যায় বাড্ডার প্রগতি সরণিতে আগুনের ঘটনা ঘটে আরও একটি বাসে। তবে, এসব ঘটনায় কোনো হতাহতের তথ্য পাওয়া যায়নি।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার ও কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ‘এই কল রেকর্ড মামলা প্রমাণের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ এভিডেন্স হিসেবে কাজ করবে। কল রেকর্ড আর আগুনের ঘটনার সঙ্গে কথোপকথনের মিল রয়েছে।’

শুক্রবার বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (ক্র্যাব) কার্যালয়ে এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

মনিরুল ইসলাম বলেন, বৃহস্পতিবার বাসে আগুন দেয়ার সঙ্গে ২০১৪-১৫ সালের ঘটনাগুলোর মিল রয়েছে। তবে কারা আগুন দিয়েছে, তা নিয়ে তদন্ত করছে পুলিশ। ছয় বছর আগের ওই সময়ে আগুন দেয়ার ঘটনাগুলোতে মানুষ যেমন আতঙ্কগ্রস্ত ছিল, একইভাবে বৃহস্পতিবারে হঠাৎ বাসে আগুনের ঘটনায় নগরবাসী আতঙ্কিত হয়েছে। এটি হওয়ারই কথা। পুলিশও হতবাক হয়েছে, হঠাৎ এতগুলো বাসে আগুন দেয়ার ঘটনায়। আমরা কাজ করছি, যারা এসব ঘটনায় জড়িত তাদের খুঁজে বের করা হবে।

অন্যদিকে, ফাঁস হওয়া কল রেকর্ডের কথোপকথনের ব্যাপারে জানতে যোগাযোগ করা হলে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট নিতাই রায় চৌধুরী বলেন, ‘এ ব্যাপারে আমার কোনো বক্তব্য নেই।’

ঢাকা মহানগর পুলিশের মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-কমিশনার মো. ওয়ালিদ হোসেন দুপুরে বলেন, ‘বৃহস্পতিবার রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে বাসে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় ঢাকা মহানগর পুলিশের ছয়টি থানায় (পল্টন, মতিঝিল, শাহবাগ, ভাটারা, কলাবাগান ও বংশাল) নয়টি মামলা রুজু হয়েছে।’

বাসে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় থানা পুলিশ ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ২৮ জনকে গ্রেফতার করেছে। এছাড়া এজাহারনামীয় অন্যান্য পলাতক অভিযুক্তদের গ্রেফতার অভিযান অব্যাহত রেখেছে থানা পুলিশের একাধিক টিম।

(ওএস/এসপি/নভেম্বর ১৩, ২০২০)

পাঠকের মতামত:

১৮ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test