E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

মজলুম জননেতা মওলানা ভাসানীর ৪৪তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ

২০২০ নভেম্বর ১৭ ১৩:০৬:০৮
মজলুম জননেতা মওলানা ভাসানীর ৪৪তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ

টাঙ্গাইল প্রতিনিধি : আফ্রো এশিয়া- লাতিন আমেরিকার বুজুর্গপীর মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর ৪৪তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ মঙ্গলবার (১৭ নভেম্বর)। ১৯৭৬ সালের এই দিনে ঢাকার তৎকালীন পিজি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন। টাঙ্গাইলের সন্তোষে পীর শাহজামান দীঘির পাশে তাকে সমাধিস্থ করা হয়। প্রতি বছর এই দিনে সারা দেশ থেকে হাজার হাজার মানুষ তার কবর জিয়ারত করতে আসেন। 

এ উপলক্ষে টাঙ্গাইলের সন্তোষে নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে দিবসটি পালন করা হবে। স্থানীয় প্রশাসন, মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়, আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সামাজিক ও সাংস্কৃৃতিক সংগঠনসহ সর্বস্তরের জনতা প্রয়াত নেতার মাজারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। ভাসানী হুজুরের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ক’দিন আগে থেকেই মওলানা ভাসানীর ভক্ত অনুসারী ও মুরিদানরা সন্তোষে এসেছেন। এরই মধ্যে আয়োজকরা সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন। তবে করোনা মহামারীর কারণে এবার কর্মসূচি অনেকটা সংক্ষিপ্ত করা হয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে মাজারে যাওয়ার জন্য টাঙ্গাইল শহরে মাইকিং করা হচ্ছে।

মওলানা ভাসানী ১৮৮০ সালের ১২ ডিসেম্বর সিরাজগঞ্জের ধানগড়া গ্রামে জন্মগ্রহন করেন। তার বাবা হাজী শারাফত আলী। হাজী শারাফত আলী ও বেগম শারাফত আলীর পরিবারে চার জন সন্তানের জন্ম হয়। একটি মেয়ে ও তিন জন ছেলে। আব্দুল হামিদ খান সবার ছোট। তার ডাক নাম ছিল চেগা মিয়া। ছেলে-মেয়ে ছোট থাকাবস্থায় হাজী শারাফত আলী মারা যান। কিছুদিন পর এক মহামারীতে বেগম শারাফত ও তার দুই ছেলে মারা যায়। বেঁচে থাকেন ছোট্ট শিশু আব্দুল হামিদ খান।

পিতৃ-মাতৃহীন হামিদ প্রথমে কিছুদিন চাচা ইব্রাহিমের আশ্রয়ে থাকেন। ওই সময় ইরাকের এক আলেম ও ধর্ম প্রচারক নাসির উদ্দীন বোগদাদী সিরাজগঞ্জে আসেন। হামিদ তার আশ্রয়ে কিছুদিন কাটান। এরপর প্রথম বিশ্বযুদ্ধের কিছুদিন আগে ১৮৯৩ সালে তিনি জয়পুরহাট জেলার পাঁচবিবি উপজেলার জমিদার শামসুদ্দিন আহম্মদ চৌধুরীর বাড়িতে যান। সেখানে তিনি মাদ্রাসার মোদাররেসের কাজ করেন এবং জমিদারের ছেলে-মেয়েকে পড়ানোর দায়িত্ব নেন। ১৮৯৭ সালে পীর সৈয়দ নাসীরুদ্দীনের সাথে আসাম যান।

১৯০৩ সালে আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হন। ইসালামিক শিক্ষার উদ্দেশে ১৯০৭-এ দেওবন্দ যান। দুই বছর সেখানে শিক্ষা গ্রহন করে আসামে ফিরে আসেন। ১৯২৫ সালে তিনি জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলার জমিদার শামসুদ্দিন মহম্মদ চৌধুরীর মেয়ে আলেমা খাতুনকে বিয়ে করেন। ১৯২৬ সালে তিনি তার সহধর্মিণী আলেমা খাতুনকে নিয়ে আসাম যান এবং আসামে প্রথম কৃষক-প্রজা আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটান। ১৯২৯-এ আসামের ধুবড়ী জেলার ব্রহ্মপুত্র নদের ভাসান চরে প্রথম কৃষক সম্মেলনের আয়োজন করেন। এখান থেকে তার নাম হয়ে ওঠে ‘ভাসানীর মাওলানা’। পরে তার নামের শেষে ভাসানী শব্দ যুক্ত হয়।

সিরাজগঞ্জে জন্ম হলেও মওলানা আব্দুুল হামিদ খান ভাসানী তার জীবনের সিংহভাগই টাঙ্গাইলের সন্তোষে কাটিয়েছেন। তিনি কৈশোর-যৌবন থেকেই রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন।

তার উদ্যোগে ১৯৫৭ সালে টাঙ্গাইলের কাগমারীতে অনুষ্ঠিত ঐতিহাসিক কাগমারী সম্মেলন বাংলাদেশের রাজনীতিতে মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছিল। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় তিনি সর্বদলীয় ওয়ার কাউন্সিলের উপদেষ্টা ছিলেন। স্বাধীনতার পর তার সর্বশেষ কীর্তি ছিল- ফারাক্কা লংমার্চ। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে অত্যন্ত স্নেহ করতেন মওলানা ভাসানী। বঙ্গবন্ধুও তাকে শ্রদ্ধা করতেন পিতার মত। শিক্ষা অনুরাগী ও গ্রাম-বাংলার নির্যাতিত মানুষের জন্য আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন মহান এই নেতা। প্রথা উচ্ছেদ, জমিদারদের নির্যাতনবিরোধী আন্দোলন- সারাজীবনই তিনি সাধারণ মানুষের কল্যাণে আন্দোলন-সংগ্রাম করেছেন। চিনের সাথে সুসম্পর্ক থাকা ও সমাজতন্ত্র কায়েমে ভূমিকা রাখায় অনেকে তাকে ‘লাল মওলানা’ হিসেবেও ডেকে থাকেন।

বঙ্গীয় প্রাদেশিক মুসলিম লীগের জনবিরোধী কার্যকলাপের ফলে মওলানা ভাসানী ১৯৪৯ সালের ২৩-২৪ জুন ঢাকার টিকাটুলিতে রোজ গার্ডেনে মুসলিম লীগের কর্মী সম্মেলন আহ্বান করেন। ২৩ জুন ওই কর্মিসম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সারাদেশ থেকে প্রায় ৩০০ কর্মী সম্মেলনে যোগদান করেন। সভায় আতাউর রহমান খানের সভাপতিত্বে মওলানা ভাসানী ছিলেন প্রধান অতিথি। ২৩ জুন পূর্ববঙ্গের প্রথম বিরোধী রাজনৈতিক দল পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ গঠিত হয়। মওলানা ভাসানী সর্বসম্মতিক্রমে এই দলের সভাপতি নির্বাচিত হন। সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন শামসুল হক এবং যৌথভাবে যুগ্ম-সম্পাদক নির্বাচিত হন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান ও খন্দকার মোশতাক । ২৪ জুন আরমানীটোলা ময়দানে আওয়ামী মুসলিম লীগের প্রথম জনসভা অনুষ্ঠিত হয়।

কারাবন্দি অবস্থায় ১৯৬২ সালের ২৬ অক্টোবর থেকে ২ নভেম্বর পর্যন্ত বন্যাদুর্গতদের সাহায্য ও পাটের ন্যায্যমূল্যসহ বিভিন্ন দাবিতে অনশন ধর্মঘট পালন করেন। ৩ নভেম্বর মুক্তিলাভ করেন এবং ন্যাশনাল ডেমোক্রাটিক ফ্রণ্টের রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার সাথে জড়িত হন। ১৯৬৩ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর চিনের বিপ্লব দিবসের উৎসবে যোগদানের জন্য মওলানা ভাসানী ঢাকা ছেড়ে চিনে সাত সপ্তাহ অবস্থান করেন। ১৯৬৪ সালের ২৯ ফেব্রুয়ারি ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি পুনরুজ্জীবিত করে দলের সভাপতির দায়িত্বভার গ্রহণ করেন এবং একই বছর ২১ জুলাই সম্মিলিত বিরোধী দল (কপ) গঠনে ভূমিকা পালন করেন।

মওলানা ভাসানী ১৯৬৯ সালের ৮ মার্চ পশ্চিম পাকিস্তানে গিয়ে সেখানে পাকিস্তান পিপলস পার্টির নেতা জুলফিকার আলী ভুট্টোর সাথে সাক্ষাত করে গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্র কায়েমের লক্ষে একমত হন। ২৬শে ফেব্রুয়ারি আইয়ুব খান কর্তৃক আহুত গোলটেবিল বৈঠক প্রত্যাখান করে তিনি শ্র্রমজীবীদের ঘেরাও কর্মসূচি পালনে উৎসাহ দেন। আইয়ুব খান সরকারের পতনের পর নির্বাচনের পূর্বে ‘ভোটের আগে ভাত চাই, ইসলামিক সমাজতন্ত্র কায়েম’ ইত্যাদি দাবি উত্থাপন করেন।

রাজনীতির পাশাপাশি তিনি সমাজ সংস্কারমূলক কর্মকান্ডে জড়িত ছিলেন। জয়পুরহাটের পাঁচবিবিতে মহিপুর হক্কুল এবাদ মিশন প্রতিষ্ঠা করেন যার অধীনে একটি মেডিকেল, টেকনিক্যাল স্কুল, হাজী মুহসিন কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন। আসামে ৩০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি সন্তোষে কারিগরী শিক্ষা কলেজ, শিশু কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেন। সন্তোষে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন অপূর্ণ রয়ে গেছে। তবে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থানে ‘মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়’ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।

১৯৭৬ সালের ১৭ নভেম্বর ঢাকার তৎকালীন পিজি হাসপাতালে দেশ বরেণ্য এ নেতা মৃত্যুবরণ করেন।

(আরকেপি/এসপি/নভেম্বর ১৭, ২০২০)

পাঠকের মতামত:

২৬ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test