E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

প্রভিশন সংরক্ষণে ব্যর্থ ১২ ব্যাংক

২০২০ ডিসেম্বর ০১ ২৩:১৭:০০
প্রভিশন সংরক্ষণে ব্যর্থ ১২ ব্যাংক

স্টাফ রিপোর্টার : ব্যাংক খাতের প্রধান সমস্যা খেলাপি ঋণ কমার সঙ্গে প্রভিশন ঘাটতিও কমে এসেছে। চলতি বছরের সেপ্টেম্বর শেষে খেলাপি ঋণের বিপরীতে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা সঞ্চিতি (প্রভিশন) সংরক্ষণে ব্যর্থ হয়েছে ১২টি ব্যাংক। এসব ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতির পরিমাণ মোট ৯ হাজার ৪৬৯ কোটি টাকা।

এগুলোর মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত চারটি আর বেসরকারি আটটি। অন্যদিকে একই সময়ে কিছু ব্যাংকের প্রভিশন উদ্বৃত্ত থাকায় সার্বিক ঘাটতি দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ৬৪৩ কোটি ৫৭ লাখ টাকা, যা আগের প্রান্তিকে জুন পর্যন্ত ১১টি ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতিতে ছিল। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ম অনুযায়ী, ব্যাংকের অশ্রেণিকৃত বা নিয়মিত ঋণের বিপরীতে দশমিক ২৫ থেকে দশমিক ৫০ শতাংশ পর্যন্ত প্রভিশন রাখতে হয়। নিম্নমান বা সাব-স্ট্যান্ডার্ড ঋণের বিপরীতে রাখতে হয় ২০ শতাংশ, সন্দেহজনক ঋণের বিপরীতে ৫০ শতাংশ এবং মন্দমানের ঋণের বিপরীতে শতভাগ প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হয়। দেশের শীর্ষ ১০ গ্রাহক মন্দমানের খেলাপিতে পরিণত হলে তাদের প্রভিশন বাবদ যে টাকা সংরক্ষণ করতে হবে, তার মাধ্যমে বিশাল ক্ষতির মুখে পড়বে ব্যাংক খাত। মূলধন ঘাটতিতে পড়বে প্রায় ৩৮টি ব্যাংক।

প্রভিশন ঘাটতিতে থাকা ব্যাংগুলোর শীর্ষে রয়েছে বেসিক ব্যাংক লিমিটেড। সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংকটির প্রভিশন ঘাটতি তিন হাজার ২৩৩ কোটি ২৩ লাখ টাকা। তালিকার দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেড। ব্যাংকটির ঘাটতি এক হাজার ৬২০ কোটি টাকা। এছাড়া তালিকায় রয়েছে অগ্রণী, রূপালী, সোনালী, এবি, ব্যাংক এশিয়া, ঢাকা, মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট, সোশ্যাল ইসলামী, ট্রাস্ট ও বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক লিমিটেড।

ঋণ শ্রেণিকরণ ও প্রভিশনিং নিয়ে প্রতি তিন মাস অন্তর প্রতিবেদন তৈরি করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। গত সেপ্টেম্বরের প্রতিবেদনে দেখা যায়, চলতি বছরের জুন মাস শেষে দেশের ৫৯টি ব্যাংক মোট ঋণ বিতরণ করেছে ১০ লাখ ৬৩ হাজার ৬২৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৯৪ হাজার ৪৪০ কোটি টাকা, যা মোট বিতরণকৃত ঋণের ৮ দশমিক ৮৮ শতাংশ।

তিন মাস আগে চলতি বছর জুন শেষে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৯৬ হাজার ১১৬ কোটি টাকা, যা মোট বিতরণ করা ঋণের ৯ দশমিক ১৬ শতাংশ। এই হিসাবে গত তিন মাসে খেলাপি ঋণ কমেছে প্রায় এক হাজার ৬৭৬ কোটি টাকা। তার আগের প্রান্তিক গত মার্চ মাস শেষে খেলাপি ঋণ ছিল ৯২ হাজার ৫১০ কোটি টাকা বা ৯ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ।

প্রতিবেদন বলছে, গত সেপ্টেম্বর শেষে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মোট বিতরণ করা এক লাখ ৯০ হাজার ৭৫৪ কোটি টাকার মধ্যে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৪২ হাজার ৮৩৪ কোটি ৮৩ লাখ টাকা বা ২০ দশমিক ৮১ শতাংশ। জুন শেষে যা ছিল ৪২ হাজার ৯৩৯ কোটি ৮৬ লাখ টাকা বা ২২ দশমিক ৭৩ শতাংশ।

এ সময়ে বেসরকারি ৪১টি ব্যাংকের মোট বিতরণ করা ৮ লাখ ৯ হাজার ৫৪৮ কোটি টাকার মধ্যে খেলাপি হয়েছে ৪৫ হাজার ৩৬ কোটি টাকা বা ৫ দশমিক ৩৬ শতাংশ। আগের প্রান্তিক জুন শেষে এই ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৪৬ হাজার ৫৯২ কোটি টাকা বা ৫ দশমিক ৮৬ শতাংশ।

সেপ্টেম্বর শেষে ৯টি বিদেশি ব্যাংকের ৩৪ হাজার ৯৩১ কোটি টাকা বিতরণ করা ঋণের মধ্যে খেলাপির পরিমাণ দুই হাজার ৪৮ কোটি টাকা, বা ৫ দশমিক ৮৬ শতাংশ। গত জুন শেষে এই ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল দুই হাজার ৬৩ কোটি টাকা, বা ৫ দশমিক ৪৯ শতাংশ। এই হিসাবে বিদেশি ব্যাংকগুলোতে পরিমাণের দিক থেকে খেলাপি ঋণ কমলেও শতকরা হিসাবে এ হার বেড়েছে।

এ সময় পর্যন্ত বিশেষায়িত খাতের তিন ব্যাংকের বিতরণ করা ২৮ হাজার ৩৯১ কোটি টাকার ঋণের মধ্যে খেলাপি হয়েছে চার হাজার ৫২০ কোটি টাকা, বা ১৫ দশমিক ৯২ শতাংশ। তিন মাস আগে জুন পর্যন্ত এসব ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল চার হাজার ৫২১ কোটি টাকা, বা ১৫ দশমিক ৯২ শতাংশ।

ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণ কমাতে ২০১৯ সালের ১৬ মে ঋণ পুনঃতফসিল ও এককালীন এক্সিট সংক্রান্ত বিশেষ নীতিমালা জারি করা হয়। এই সার্কুলারের আওতায় যেসব ঋণ ২০১৮ সালের ৩১ ডিসেম্বর মন্দমানে শ্রেণিকৃত রয়েছে, সেসব খেলাপির অনুকূলে মাত্র ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট আদায় সাপেক্ষে এক বছরের গ্রেস পিরিয়ডসহ সর্বোচ্চ ১০ বছর মেয়াদে পুনঃতফসিল এবং ৩৬০ দিন মেয়াদে এককালীন এক্সিট সুবিধা প্রদান করার নির্দেশনা প্রদান করা হয়। চলতি বছরের ১৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এই সুবিধা বহাল ছিল। এই সুবিধার আওতায় গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সাড়ে ১৯ হাজার কোটি টাকার মতো পুনঃতফসিল হয়েছে। ১৩ হাজার ৩০৭ জন গ্রাহক এই সুবিধা নিয়েছেন।

খেলাপিদের অনেকেই ঋণ পুনঃতফসিলের মাধ্যমে নতুন করে প্রণোদনার ঋণ নিতে চাচ্ছেন। ফলে ডাউন পেমেন্ট হিসাবে কিছু টাকা আদায় হয়েছে। তাছাড়া চলতি বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকের ঋণ আদায়ে শিথিলতা জারি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এই সময় শেষে মোট খেলাপি বৃদ্ধি পেতে পারে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৯৪ হাজার কোটি টাকার বেশি, এটা অনেক। এর মধ্যে মাত্র তিন মাসে মাত্র দুই হাজার কোটি কমাটা খুব বেশি গুরুত্ব বহন করে না। আরও কয়েকটি সময় দেখে বোঝা যাবে অবস্থা কেমন। তবে কমে আসাটা ইতিবাচক। হয়তো নতুন ঋণে শর্ত যোগ হওয়ায় নতুনটি পাওয়ার আশায় বড় খেলাপিরা কমিয়ে দিচ্ছে। আবার কমে আসার কারণটা হতে পারে ব্যাংকারদের কড়াকড়ি আরোপ।’

তিনি আরও বলেন, ‘এখন খেলাপিদের অনেকেই ঋণ পুনঃতফসিলের মাধ্যমে নতুন করে প্রণোদনার ঋণ নিতে চাচ্ছেন। ফলে ডাউন পেমেন্ট হিসাবে কিছু টাকা আদায় হয়েছে, এটা খুব বেশি বলা যাবে না। তাছাড়া চলতি বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকের ঋণ আদায়ে শিথিলতা জারি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এই সময় শেষে মোট খেলাপি বৃদ্ধির জোর আশঙ্কা রয়েছে।’

(ওএস/এসপি/ডিসেম্বর ০১, ২০২০)

পাঠকের মতামত:

২০ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test