E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

সোনালী ব্যাংক: এসএমএসে প্রশ্নের উত্তর দেয়ার চুক্তি!

২০১৪ আগস্ট ২০ ১৪:৪৪:২৩
সোনালী ব্যাংক: এসএমএসে প্রশ্নের উত্তর দেয়ার চুক্তি!

স্টাফ রিপোর্টার : রাষ্ট্রয়াত্ত সোনালী ব্যাংকের নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপ্রত্র নিয়ে এবার নতুন কৌশল অবলম্বন করা হয়েছে। পরীক্ষার্থীদের সঙ্গে এসএমএসের মাধ্যমে প্রশ্নের উত্তর পাঠিয়ে দেয়ার বিনিময়ে মোটা অঙ্কের টাকার চুক্তি করা হচ্ছে।

প্রশ্নপত্র ফাঁসের সিন্ডিকেট ইতোমধ্যে অনেক পরীক্ষার্থীদের সঙ্গে চুক্তি করেছেন। তারা পরীক্ষা সেন্টারে পরীক্ষার্থীর মোবাইলে প্রশ্নের উত্তর চলে যাবে। বিনিময়ে ৩০ থেকে ৫০ হাজার টাকা ঐ সিন্ডিকেটকে দিতে হবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পরীক্ষার্থী জানান, ‘ঢাকা কলেজের এক শিক্ষার্থী তাকে মোবাইল ফোনে এসএমএসের মাধ্যমে প্রশ্নের উত্তর পাঠাবেন- এমন প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্তু বিনিময়ে তাকে ৫০ হাজার টাকা দিতে হবে।’

চাকরি পাওয়ার লোভে এভাবে অনেকে শিক্ষার্থীই সিন্ডিকেটের খপ্পরে পড়ছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র হেমায়েত উদ্দিন বলেন, ‘এভাবে পরীক্ষার আগে প্রশ্নপত্র ফাঁস হলে মেধাবীরা কিভাবে পরীক্ষায় অংশ নেবে ‘ এ ঘটনায় চরম হতাশা ব্যক্ত করে হেমায়েত বলেন, বার বার প্রশ্নপত্র ফাঁস হলে চাকরিপ্রার্থী মেধাবী শিক্ষার্থীরা হতাশ হয়ে পড়বে।

এদিকে প্রশ্নফাঁসের অভিযোগ ওঠাসহ এ সংক্রান্ত রিপোর্টের বরাত দিয়ে সোনালী ব্যাংককে সতর্কীকরণ নোটিশ দিয়েছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের চিঠি পেয়ে বোর্ড সভা করেছে সোনালী ব্যাংক। সেই সভায় প্রশ্নপত্র করার দায়িত্ব পাওয়া প্রতিষ্ঠানকেও ডাকা হয়েছে।

প্রশ্ন প্রণয়নকারী প্রতিষ্ঠানকেও সোনালী ব্যাংকের পক্ষ থেকে যথেষ্ট সতর্কতা অবলম্বনের জন্য বলা হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চেয়ে সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রদীপ কুমার দত্তকে ফোনে যোগাযোগ করেও তাকে পাওয়া যায়নি। তবে তার ব্যক্তিগত সহকারী মো. ইমরান আলী বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে ব্যাংকের বোর্ড অব ডিরেক্টরস সভা করেছে। সভায় বিশদ আলোচনা হয়েছে। সেখানে প্রশ্ন তৈরি করার দায়িত্ব দেয়া প্রতিষ্ঠানও ছিল।’

তিনি বলেন, ‘প্রশ্নফাঁস হওয়ার সুযোগ নেই। এরকম কোনো ঘটনা ঘটেওনি। তারপরেও ব্যাংক এটি নিয়ে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করছে।’

এর আগেও বিভিন্ন ব্যাংক ও পাবলিক পরীক্ষার প্রশ্নপত্র মোবাইলে এসএমএসের মাধ্যমে ফাঁস হয়েছে। এটি যেন এখন মহামারি আকার ধারণ করছে।

২০১৩ সালে অগ্রণী ব্যাংকের প্রশ্নপত্রও এভাবে ফাঁস হয়েছে। প্রশ্নপত্র ফাঁস হলেও সেই পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। কিন্তু পরে প্রশ্নফাঁসের তথ্য প্রমাণ পাওয়ায় কর্তৃপক্ষ পরীক্ষা বাতিল করেছে।

এভাবে ফাঁস প্রশ্নপত্র বিক্রি করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে জালিয়াত চক্র।এ জালিয়াত চক্রের সাথে সরকারদলীয় ছাত্র সংগঠনের জড়িত থাকার অভিযোগ পাওয়া গেছে ঐ সময়। মোবাইলে এসএমএসে'র মাধ্যমে অসদুপায়ে প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন পরীক্ষার্থীদের একটি অংশ।

এ প্রসঙ্গে অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান খন্দকার বজলুল হক বলেন, প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে। পরীক্ষা নেওয়া প্রশ্ন ও ফাঁস হওয়া প্রশ্ন হুবহু মিল থাকায় পরীক্ষা বাতিল করা হয়েছে।

ঐ পরীক্ষার দায়িত্বে ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগ।

পরীক্ষার্থী এবং ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্র পেয়েছেন এমন চাকরিপ্রার্থী এবং সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, পরীক্ষার আগের রাতেই প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়। অগ্রণী ব্যাংকেও এরকম হয়েছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, নীলক্ষেত, ঢাকা কলেজ, ইডেন কলেজসহ বিভিন্ন এলাকায় ২০ হাজার থেকে ৪০ হাজার টাকায় প্রশ্নপত্রের অনুলিপি বিক্রি হয়। পরীক্ষায় কমন পড়লেই ক্রেতারা জালিয়াতকারীদের টাকা দিবে নইলে নয়, এমন শর্তেই অধিকাংশ লেনদেন হয়।

ছাত্রলীগের একাধিক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু হলে অবস্থানরত ছাত্রলীগের একজন সহ-সভাপতি, সূর্যসেন হলে অবস্থানরত যুগ্ম সম্পাদক, জগন্নাথ হলে অবস্থানরত একজন সহসভাপতি ও এক সম্পাদকসহ কেন্দ্রীয় এবং বিশ্ববিদ্যালয় শাখার প্রায় দশজন নেতার হাত ধরেই মূলত ক্যাম্পাসে ফাঁস প্রশ্নপত্র বিক্রি হয়। পরে কনিষ্ঠ নেতারাও ফাঁসকৃত প্রশ্ন বিক্রি করেন। ফাঁস প্রশ্ন পেয়েছেন এমন পরীক্ষার্থীরাও বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

এদিকে মোবাইলে এসএমএস ব্যবহার করে রাজধানীর ইডেন কলেজ, তিতুমীর কলেজে, তেজগাঁও কলেজ, ঢাকা কলেজ, মিরপুর বাংলা কলেজসহ বিভিন্ন পরীক্ষাকেন্দ্রে ছাত্রলীগের নেতারা প্রবেশ করে দায়িত্বরত শিক্ষক-কর্মকর্তাদের শাসিয়ে তাদের প্রার্থীরা মোবাইল ব্যবহার করবে এমন সুযোগ প্রদান নিশ্চিত করে।

(ওএস/এটিআর/আগস্ট ২০, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

১৮ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test