E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

আ. লীগের কপালে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রশ্রয়ের কলঙ্কতিলক লাগিয়ে দেয়া হচ্ছে 

২০২১ জানুয়ারি ২১ ২২:৩৮:৫০
আ. লীগের কপালে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রশ্রয়ের কলঙ্কতিলক লাগিয়ে দেয়া হচ্ছে 

স্টাফ রিপোর্টার : ২০১৭ সালের বিতর্কিত মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটির সদস্যদের দিয়ে ২০২১ সালের যাচাই যাচাই হওয়ার মানে অভিজ্ঞ বাণিজ্যিক ধান্দাবাজদের পুনরায় ব্যবসা ফেঁদে অর্থ কামানোর সুযোগ সৃষ্টি করে দেয়া । এভাবে হাজার হাজার অমুক্তিযোদ্ধাদের মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় পুনর্বহাল করার এ অশুভ খেলার সাথে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কতিপয় প্রভাবশালী মন্ত্রী, এমপি, নেতাসহ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের সাবেক নেতৃবৃন্দ জড়িত বলে একাত্তরের মুক্তিযোদ্ধা সংসদের চেয়ারম্যান আবীর আহাদ ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেছেন, এ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আওয়ামী লীগের কপালে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রশ্রয় দেয়ার কলঙ্কতিলক পরিয়ে দিয়ে তাকে ইতিহাসে অমর করে রাখার আয়োজন করা হচ্ছে ! তিনি বিষয়টির ব্যাপারে দৃষ্টি দেয়ার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার প্রতি আবেদন জানিয়েছেন ।

আজ এক বিবৃতিতে উপরোক্ত মন্তব্য করে আবীর আহাদ বলেন, সরকারের মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় কোনো কোনো মন্ত্রী-এমপিসহ হাজার হাজার অমুক্তিযোদ্ধা, এমনকি রাজাকাররাও মুক্তিযোদ্ধা হিশেবে অবস্থান করছে বলে সরকারের সর্বোচ্চ মহলসহ প্রকৃত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের বদ্ধমূল ধারণা । মুক্তিযোদ্ধা তালিকা থেকে এসব অমুক্তিযোদ্ধাদের উচ্ছেদের জন্যে বহুকাল ধরে আমরা ধারাবাহিক আন্দোলন-সংগ্রামসহ প্রচুর লেখালেখি করে আসছি । তারই ফলস্বরূপ সরকারের সর্বোচ্চ মহলের নির্দেশে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা) ৩৩ তালিকার মধ্যে বেসামরিক গেজেট ও বাতিলকৃত বাহিনী গেজেটধারীদের ভেতর বেশিসংখ্যক অমুক্তিযোদ্ধা রয়েছে ধারণা করে কয়েক দফা তারিখ পরিবর্তন করে অবশেষে আগামী ৩০ জানুয়ারি সারা দেশের জেলা ও উপজেলায় একযোগে পুনরায় যাচাই বাছাইয়ের কার্যক্রম হাতে নিয়েছে ।

বেসামরিক গেজেট ও বাতিলকৃত বাহিনী গেজেটধারীদের যাচাই বাছাই করার লক্ষ্যে নতুন করে যে কমিটি গঠন করা হচ্ছে, তা নিয়ে সারা দেশের প্রকৃত বীর মুক্তিযোদ্ধারা গভীর উৎকণ্ঠা ও হতাশা প্রকাশ করছেন । বলা চলে, সবার অভিযোগ এই যে, ২০১৭ সালের বাণিজ্যনির্ভর যাচাই বাছাই কমিটির সাথে যারা জড়িত ছিলেন, সেসব অভিজ্ঞ ব্যবসায়ীদের দিয়ে আগামী ৩০ জানুয়ারির অনুষ্ঠিতব্য মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি গঠন করা হচ্ছে এবং এসব কমিটি গঠনের পশ্চাতে ক্ষমতাসীন কতিপয় মন্ত্রী-এমপি-নেতা কলকাঠি নাড়ছেন ! এটা যদি সত্য হয় তাহলে যাচাই বাছাই কার্যক্রমটি যে পুনরায় বাণিজ্যনির্ভর হয়ে নিষ্ঠুর প্রতারণা, ধাপ্পাবাজি ও তামাশায় পর্যবসিত হবে তাতে কোনোই সন্দেহ নেই । এ প্রক্রিয়ায় অভিজ্ঞ কুশীলবদের অনৈতিকতার যোগসাজশে ২০১৭ সালের মতো অমুক্তিযোদ্ধারা পুনরায় পার পেয়ে যাবে বলে যথেষ্ট সন্দেহ সৃষ্টি হয়েছে । দেশে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার অভাব নেই যে, পুরোনো ধান্দাবাজদের দিয়েই নতুন করে যাচাই বাছাই কমিটি করতে হবে ! নতুন কমিটিতে পুরনোদের রাখার কর্মসূচি পুরোপুরি পরিহার করতে হবে ।

আবীর আহাদ বলেন, আমি তো বহুকাল ধরে বলেই আসছি, জামুকার যাচাই বাছাই পদ্ধতি ও কর্মসূচি মূলত: কোনোই সঠিক পদক্ষেপ নয় । এ পদ্ধতিতে অর্থ, আত্মীয়তা ও রাজনৈতিক সংযোগের কারণে সাক্ষ্যদাতা ও যাচাই বাছাই কমিটির সদস্যরাও সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারবেন, তার কোনোই নিশ্চয়তা নেই । আমরা বলেছি, উচ্চপর্যায়ের বিচার বিভাগ ও সামরিক বাহিনীর সমন্বয়ে একটি মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিশনের নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধু সরকারের বাহাত্তর সালের মুক্তিযোদ্ধা সংজ্ঞার আলোকে শেষবারের মতো মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই করা হোক । আমাদের প্রস্তাব উপেক্ষা করে জামুকার মহাপণ্ডিত মহাশয়রা চলমান পদ্ধতিতেই যখন মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই করতে মনস্থির করেছেন তখন বাধ্য হয়েই আমরাও তাতে সমর্থন জানিয়েছি ।

বিবৃতিতে আবীর আহাদ বলেন, জামুকার চলমান মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই যাতে দুর্নীতিমুক্ত হয়ে সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়, সেজন্য ইতোমধ্যেই আমি একটা পরামর্শ দিয়েছি যে, যাচাই বাছাই কমিটির সদস্য, অমুক্তিযোদ্ধা ও সাক্ষ্যদাতাদের মধ্যকার বাণিজ্যিক ধান্দাবাজদের প্রতিহত করার লক্ষ্যে যাচাই বাছাই এলাকায় এক্ষুনি এনএসআই এসবি ডিবি ডিজিএফআই ও দুদকের নিশ্ছিদ্র গোয়েন্দা জাল বিস্তারের পাশাপাশি যাচাই বাছাই স্থলে তারাসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতি ও কড়া নজরদারি ব্যবস্থা রাখা হোক । কেউ অনৈতিক লেনদেনে জড়িত হওয়াসহ ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রমাণিত হলে তৎক্ষণিক তাদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির বিধান রাখুন । তবে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, সরকারের নীতিনির্ধারণী মহল আমাদের সুপারিশটি আমলে নিয়েছেন ।

জামুকার প্রতি কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে আবীর আহাদ বলেন, যে পদ্ধতিই গ্রহণ করুন না কেনো, আমরা চাই, যাচাই বাছাইয়ের মাধ্যমে যেনো কোনো প্রকৃত বীর মুক্তিযোদ্ধা চক্রান্তের শিকার হয়ে অমুক্তিযোদ্ধা বলে গণ্য না হন----তদ্রুপ অর্থ, আত্মীয়তা ও রাজনৈতিক ক্ষমতার প্রভাবে যেনো কোনো অমুক্তিযোদ্ধা মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় ফিরে না আসেন । এটা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মর্যাদা ও সম্মানবোধের প্রশ্ন ।

পরিশেষে আবীর আহাদ মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী মহোদয়ের উদ্দেশ্যে বলেন, শুধুমাত্র বেসামরিক গেজেট ও বাতিলকৃত বাহিনী গেজেটধারীদের যাচাই বাছাই নয়----মনে রাখতে হবে, এ ধরনের যাচাই বাছাইয়ে ঐ তালিকার মধ্যে অবস্থানকারী প্রকৃত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্যে এটা একটা অবমাননাও বটে । সুতরাং পর্যায়ক্রমে অবশ্যই অন্যান্য তালিকা যেমন লাল মুক্তিবার্তা, যুদ্ধাহত, মুজিবনগর প্রভৃতি তালিকার মধ্যে অবস্থানকারী বিপুলসংখ্যক অমুক্তিযোদ্ধাদের উচ্ছেদের কার্যক্রম চালিয়ে যেতে হবে । কারণ ভুয়া মুক্তিযোদ্ধারা বীর মুক্তিযোদ্ধাদের পবিত্র নামের জঘন্যতম কলঙ্ক । তাদের কারণে প্রকৃত বীর মুক্তিযোদ্ধারা সমাজের চোখে হেয়প্রতিপন্ন হচ্ছেন । মুক্তিযোদ্ধা না হয়েও ভুয়ারা বীরদর্পে মুক্তিযোদ্ধা সেজে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বে ভাগ বসিয়ে তাদের সম্মানহানি করছে, জনগণ তথা প্রজাতন্ত্রের অর্থ ও অন্যান্য সুবিধাদি লুটপাট ও ভোগ করে চলেছে ! এটা বীর মুক্তিযোদ্ধা ও দেশের জনগণ কোনো অবস্থাতেই মেনে নিতে পারেন না । অতএব বীর মুক্তিযোদ্ধারা ৩০ জানুয়ারিকে একটা টেস্টকেস হিশেবে দেখছেন । যাচাই বাছাই সফল হলে আমরা যেমন জামুকাকে অভিনন্দন জানাবো, কিন্তু কোনোপ্রকার প্রতারণা ও তামাশা করা হলে আমরাও যেকোনো চরম পন্থা বেছে নিতে বাধ্য হবো ।

(এ/এসপি/জানুয়ারি ২১, ২০২১)

পাঠকের মতামত:

২৫ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test