E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

আজ ইয়াসমিন ট্রাজেডী দিবস

সারাদেশে পালিত হচ্ছে নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবস

২০১৪ আগস্ট ২৪ ১২:১৬:৩১
সারাদেশে পালিত হচ্ছে নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবস

দিনাজপুর প্রতিনিধি : আজ ২৪ আগষ্ট। ১৯ বছর আগে ১৯৯৫ সালের এই দিনে দিনাজপুরে কয়েকজন বিপথগামী পুলিশ সদস্যদের হাতে ধর্ষন ও নির্মম হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল কিশোরী ইয়াসমিন। এর প্রতিবাদে বিক্ষোভে ফেটে পড়েছিল দিনাজপুরের সর্বস্তরের জনতা। প্রতিবাদী জনতার উপর পুলিশ নির্বিচারে গুলি চালায়।  নিহত হয়েছিল সামু, সিরাজ, কাদেরসহ ৭ জন ব্যক্তি। আহত হয় ৩ শতাধিক। তখন থেকেই দিনাজপুরসহ দেশব্যাপী দিবসটি “নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবস” হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।

দীর্ঘ ১৯ বছরে ইয়াসমিন , সামু, সিরাজ, কাদেরসহ নিহতদের পরিবারগুলো সরকারীভাবে তেমন সুযোগ সুবিধা পায়নি। নিহত সামু, সিরাজ, কাদের এর স্ত্রীদের তৎকালীন বিএনপি সরকার চাকুরীর প্রতিশ্রতি দিলেও আজও তা বাস্তবায়িত হয়নি।

১৯৯৫ সালের ২৪ আগষ্ট। দীর্ঘদিন পর মাকে দেখার জন্য আকুল হয়ে ঢাকা থেকে দিনাজপুরে বাড়ী ফিরছিলো কিশোরী ইয়াসমিন। কিন্তু দিনাজপুরের কোচে না উঠতে পেরে সে পঞ্চগড়গামী একটি কোচে উঠায় কোচের লোকজন তাকে দশমাইল নামক স্থানে নামিয়ে দিয়ে সেখানকার চায়ের দোকানে জিম্মায় দেয়। নিরাপদ ও রক্ষক ভেবে ইয়াসমিনকে দিনাজপুর শহরে মায়ের কাছে পৌছে দেয়ার জন্য কাক ডাকা ভোরে পুলিশের হাতে তুলে দেয় দশমাইলের লোকজন। কিন্তু রক্ষক হয়ে পুলিশ ভক্ষক সেজে পথিমধ্যে কিশোরী ইয়াসমিনকে উপর্যুপরি ধর্ষণ করে হত্যা করে। পুলিশ ইয়াসমিনের লাশ দিনাজপুর শহরে থেকে ৫ কিলোমিটার দুরে ব্র্যাক অফিসের পাশে রাস্তায় ফেলে চলে যায়।

পরের দিন পুলিশের এই পৈশাচিক ঘটনা জানাজানি হলে হাজার হাজার বিক্ষুব্ধ জনতা শহরে প্রতিবাদ মিছিল বের করে দোষিদের দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তির দাবী জানান। কিন্তু তৎকালীন পুলিশ প্রশাসন ঘটনাকে ধামাচাপা দিতে উল্টো নিস্পাপ কিশোরী ইয়াসমিনকে পতিতা হিসেবে চালিয়ে দেয়ার অপচেষ্টা করে। এতে আরও বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠে প্রতিবাদী জনতা। বিক্ষোভে ফেটে পড়ে দিনাজপুরের সর্বস্তরের মানুষ। বিক্ষুব্ধ জনতার উপর পুলিশ লাঠিচার্জ করে। ফলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনের বাইরে চলে যায়। ২৬ আগষ্ট রাতে বিক্ষুব্ধ জনতা কোতয়ালী থানা ঘেরাও করে বিক্ষোভ করতে থাকলে পুলিশ আবারও তাদের উপর লাঠিচার্জ করে। এসময় হাজার হাজার জনতা কোতয়ালী থানার সীমানা প্রাচীর ভেঙ্গে ফেলে। ২৭ আগষ্ট বিক্ষুব্ধ জনতা একে একে রাজপথে নেমে এসে সকল প্রশাসনিক কর্মকর্তার বদলি এবং দোষী পুলিশ কর্মকর্তাদের শাস্তির দাবীতে জনতার বিশাল মিছিল বের হলে মারমূখী পুলিশ শহরের বিভিন্ন স্থানে নির্বিচারে গুলি চালায়। ফলে সামু, কাদের ও সিরাজসহ নাম না জানা ৭ জন নিহত হয়। আহত হয় ৩ শতাধিক। পরবর্তীতে বিক্ষুব্ধ জনগন শহরের ৪টি পুলিশ ফাড়ি জ্বালিয়ে দেয়। বিক্ষোভের এই সুযোগ নিয়ে কতিপয় স্বার্থান্বেষী ও দুস্কৃতিকারী প্রেস ক্লাব,স্থানীয় ৫টি পত্রিকা অফিস আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয়।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনের নিরাপত্তাজনিত কারনে ইয়াসমিন হত্যা মামলাটি দিনাজপুর থেকে স্থানান্তর করা হয় রংপুরে। রংপুর বিশেষ আদালতে ১৯৯৭ সালে ইয়াসমিন হত্যা মামলার স্বাক্ষ্য প্রমান শেষে দোষী প্রমানিত হওয়ায় এএসআই মায়নুল ইসলাম, পুলিশ কনষ্টেবল আব্দুস সাত্তার ও পিক-আপ ড্রাইভার অমৃত লাশ বর্মনের মৃত্যুদন্ডাদেশ দেয়া হয়। ২০০৪ সালে রংপুর কারাগারে এই মৃত্যুদণ্ডাদেশ কার্যকর হয়।

নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবস উপলক্ষে নিহত ইয়াসমিনের মা শরিফা বেগম রবিবার তার গোলাপবাগ বাড়ীতে কোরান খানি ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করেছে। এছাড়াও জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা), মহিলা পরিষদ, বালুবাড়ী মহিলা উন্নয়ন সংস্থা, পল্লীশ্রীসহ বেশ কিছু স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ইয়াসমিনের কবর জিয়ারত, দিনব্যাপী দোয়া মাহফিল, আলোচনা সভাসহ বিভিন্ন কর্মসূচী গ্রহন করেছে।


(এটি/এইচআর/আগস্ট ২৪, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

২৫ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test