E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

চাকরি দেওয়ার নামে প্রতিদিন হাতিয়ে নিতো ১৫ লাখ টাকা

২০২১ সেপ্টেম্বর ১৮ ১৪:৪৮:৫৫
চাকরি দেওয়ার নামে প্রতিদিন হাতিয়ে নিতো ১৫ লাখ টাকা

স্টাফ রিপোর্টার : সামাজিক যোগাযো গমাধ্যম ফেসবুক এবং মেসেজিং ও ভয়েস-ওভার-আইপি সার্ভিস হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহারে প্রথমে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি করতো একটি প্রতারক চক্র। চক্রটি বিভিন্ন গ্রুপে বিভক্ত হয়ে ভিকটিমের সঙ্গে যোগাযোগ করে বন্ধুত্ব গড়ে তুলেছে। কখনো বিদেশে চাকরির অফার দিয়ে চাকরিপ্রত্যাশীদের সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপ, মেসেঞ্জার এবং ইমেইলে যোগাযোগ করে। চাকরি প্রত্যাশীদের কাছে বিভিন্ন ফির বাহানায় ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ব্যবহারে প্রতিদিন হাতিয়ে নিচ্ছে ১২ থেকে ১৫ লাখ টাকা।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চাকরির প্রলোভন ও বন্ধুত্ব করে প্রতারণার সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে প্রতারক চক্রের তিন সদস্যকে গ্রেফতারের পর এসব তথ্য জানিয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)।

শনিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান অতিরিক্ত কমিশনার ডিবি প্রধান এ কে এম হাফিজ আক্তার।

গতকাল শুক্রবার (১৭ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর কল্যাণপুর এলাকা হতে তাদের গ্রেফতার করে গোয়েন্দা লালবাগ বিভাগের একটি টিম। গ্রেফতারকৃতরা হলেন মো. কবির হোসেন, শামসুল কবীর ও ইয়াছিন আলী। এ সময় তাদের কাছ থেকে বিভিন্ন ব্যাংকের চেক বই ২৫৭টি, ডেবিট কার্ড ২৩৪টি, মোবাইল ফোন ৮টি ও ১১টি মোবাইল সিম জব্দ করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে কদমতলী থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়েছে।

এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, ড্রিম জবস ইন কানাডা নামে প্রতারক চক্রটি বিভিন্ন গ্রুপে বিভক্ত হয়ে প্রতারণামূলক কর্মকাণ্ড করে আসছে। চক্রের একটি গ্রুপ প্রথমে ভিকটিমের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করে তার সঙ্গে নিবিড় বন্ধুত্ব গড়ে তোলে। আবার ফেসবুকে বিদেশে চাকরির অফার দিয়ে চাকরিপ্রত্যাশীদের সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপ, মেসেঞ্জার এবং ইমেইলে যোগাযোগ করে। চাকরিপ্রত্যাশীদের কাছে বিভিন্ন ফির বাহানায় ব্যাংকে টাকা জমা দিতে বলে। হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নম্বর প্রদান করে।

তিনি বলেন, আবার ফেসবুকে বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে উপহার পাঠানোর কথা বলে কাস্টমস কর্মকর্তা সেজে ফোন করে। দ্বিতীয় গ্রুপের কাজ হলো বিভিন্ন নামে ব্যাংক হিসাব খোলা। এসব হিসাবধারীরা কমিশনের বিনিময়ে নিজের বৈধ জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে বিভিন্ন ব্যাংকে হিসাব খুলতে থাকে এবং ঘন ঘন বাসা এবং মোবাইল নম্বর পরিবর্তন করে।

‘চক্রের তৃতীয় গ্রুপ এসব ব্যাংক হিসাবধারীদের স্বাক্ষরিত চেকবইয়ের পাতা এবং এটিএম কার্ড এবং কার্ডপিন কুরিয়ারের মাধ্যমে সংগ্রহ করে। চতুর্থ গ্রুপ প্রতিদিন ভিকটিমদের জমাকৃত টাকা চেক বা কার্ডের মাধ্যমে উত্তোলন করে একজন ম্যানেজানের হাতে তুলে দেয়। ম্যানেজার এই টাকা তাদের কথিত বসের হাতে পৌঁছায়। এভাবে সাপ্তাহিক বন্ধ ছাড়া প্রতিদিনি হাতিয়ে নিচ্ছে ১২ থেকে ১৫ লাখ টাকা।’

এই কর্মকর্তা বলেন, গ্রেফতার কবীর হোসেনের কাজ যাবতীয় অর্থ সংগ্রহ করে ম্যানেজানের হাতে পৌঁছে দিতেন। কবীর হোসেনের সহযোগী হিসাবে কাজ করেন গ্রেফতার ইয়াসিন। আর গ্রেফতার শামসুল কবীর হলেন ব্যাংক হিসাবধারী। তারা সবাই মাসিক ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা বেতনে বিভিন্ন স্তরে কাজ করেন এবং তাদের অন্য কোনো পেশা নেই বলে প্রাথমিকভাবে তারা জানাযন।

কাটআউট পদ্ধতিতে চলছে প্রতারণা

ডিবি প্রধান বলেন, চক্রটিতে জড়িতরা একে অপরকে চেনেন না। ফোনে ফোনে বা হোয়াটসঅ্যাপে তাদের মধ্যে যোগাযোগ হয়। অনেকটা কাটআউট পদ্ধতি ব্যবহারে চক্রের অপকর্ম করছে জড়িতরা। চক্রের মূলহোতা মূলত কমিউনিকেশন স্কিলকে ব্যবহার করছেন। এতে করে কাটআউট পদ্ধতিতে ভিকটিমরা যেমন প্রতারিত হচ্ছেন তেমনি চক্রের অন্য সদস্যদের অপকর্মে জড়ানো সহজ হচ্ছে।

চক্রটির কথিত বসকে শনাক্ত করা গেছে কি-না জানতে চাইলে হাফিজ আক্তার বলেন, আমরা এখনো বসকে শনাক্ত করতে পারিনি। তবে চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। আমরা প্রাথমিকভাবে চাইছি যাতে নতুন করে আর কেউ প্রতারিত না হন। আরও ভিকটিম থাকলে তাদের যোগাযোগ করার অনুরোধ জানান তিনি।

এ কে এম হাফিজ আক্তার আরও বলেন, কারো প্রলোভনে পড়ে প্রতারিত হওয়ার আগে খোঁজ নিন। চাকরি কখনো এভাবে মেলে না, সেটা আগে বুঝুন। আর কুরিয়ার, পার্সেল, উপহার প্রতারণার বিষয়ে ডিবি পুলিশ অনেক অভিযান পরিচালনা করেছে। এসব প্রতারণার ব্যাপারে সাবধান থাকার অনুরোধ জানান তিনি।

(ওএস/এসপি/সেপ্টেম্বর ১৮, ২০২১)

পাঠকের মতামত:

২৪ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test