E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা বিচারের লক্ষ্যে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করুন 

২০২১ অক্টোবর ২৩ ১৩:৫৯:৪৫
ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা বিচারের লক্ষ্যে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করুন 

স্টাফ রিপোর্টার : সম্প্রতি ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জের কুখ্যাত রাজাকার তারা মিয়া আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্তে ধরা পড়লেও জামুকা তাকে মুক্তিযোদ্ধা হিশেবে গেজেটভুক্ত করে প্রমাণ করেছেন যে, তাদের কাছে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়ে কোনো লাভ নেই। কারণ জামুকা নিজেই অমুক্তিযোদ্ধাদের মুক্তিযোদ্ধা বানানোসহ তালিকার ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের রক্ষা করার মিশন নিয়ে কাজ করে আসছে। ভুয়া মুক্তিযোদ্ধারা দেশ ও জাতির শত্রু। তারা অর্থ আত্মীয়তা ও রাজনৈতিক প্রভাবে যখনতখন মুক্তিযোদ্ধা সেজে একদিকে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বে ভাগ বসাচ্ছে, অন্যদিকে জনগণের দেয় অর্থ ও অন্যান্য সুবিধাদি ভোগ করছে। সরকার যদি এসব ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা উচ্ছেদ চান, তাহলে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে দিলে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের কারিগরদের পাকড়াও করা সম্ভব বলে একাত্তরের মুক্তিযোদ্ধা সংসদের চেয়ারম্যান আবীর আহাদ অভিমত ব্যক্ত করেছেন।

আজ শনিবার এক বিবৃতিতে আবীর আহাদ উপরোক্ত মন্তব্য করে বলেন, আমরা রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধারা বড়ো বিস্ময়ের সাথে লক্ষ্য করে আসছি যে, অতীতে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার থেকে শুরু করে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সরকারিভাবে কমবেশি ২ লক্ষ ৩৫ হাজার মুক্তিযোদ্ধাকে গেজেটভুক্ত করা হয়েছে। তথাকথিত যাচাই বাছাই অন্তে চূড়ান্ত তালিকায় হয়তো সামান্যসংখ্যক কমতে পারে যা কোনোভাবেই মেনে নেয়া যাবে না। আমরা যারা মুক্তিযুদ্ধের রণাঙ্গনে ছিলাম, মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে নিরন্তর গবেষণাকর্মে নিয়োজিত আছি তারাই জানি মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা কতো হতে পারে। তাছাড়া মুক্তিযোদ্ধা নির্ণয়ে বঙ্গবন্ধু সরকার ১৯৭২ সালে যে সংজ্ঞা দিয়ে গেছেন, সেটিকে মূল ধরে আগালে মুক্তিযোদ্ধাদের সংখ্যা কোনো অবস্থাতেই ১ লক্ষ ৫০ হাজারের বেশি হবে না। সংগতকারণে বঙ্গবন্ধু সরকারের মুক্তিযোদ্ধা সংজ্ঞাটি এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন। সেটি হলো : Freedom Fighters (FF) means any person who had served as a member of any force engaged in the War of Liberation [ মুক্তিযোদ্ধা মানে একজন ব্যক্তি যিনি মুক্তিযুদ্ধে নিয়োজিত যেকোনো সশস্ত্রবাহিনীর সদস্য হিশেবে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন ]। এটাই সর্বকালের শ্রেষ্ঠ মুক্তিযোদ্ধা সংজ্ঞা। সম্প্রতি মাননীয় হাইকোর্টও বঙ্গবন্ধুর মুক্তিযোদ্ধা সংজ্ঞাকে মৌলিক সংজ্ঞা ধরে অন্যান্য তথাকথিত সংজ্ঞা, নির্দেশিকা, বিশেষ করে লাল মুক্তিবার্তা কেনো বেআইনি ও অকার্যকর ঘোষণা করা হবে না এসব বিষয়ে সরকারের প্রতি একটি রুলনিশি জারি করেছেন। মূলত: বঙ্গবন্ধুর মুক্তিযোদ্ধা সংজ্ঞার বাইরে ২০১৬ সালে যে তথাকথিত মুক্তিযোদ্ধা সংজ্ঞা ও নির্দেশিকা চালিয়ে দেয়া হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে বাণিজ্যিক, আত্মীয়তা ও রাজনৈতিক বিবেচনার দৃষ্টিভঙ্গি যা কোনোক্রমেই গ্রহণযোগ্য নয়। কী এক তামাশার জন্ম দেয়া হয়েছে যে, মুক্তিযুদ্ধে সময় পিরোজপুরের এক রাজাকারের ৮/৯ বছরের শিশুও বীর মুক্তিযোদ্ধা হয়; এমনকি তার সেই রাজাকার পিতাও মুক্তিযোদ্ধা হয়েছে! আবার মুক্তিযোদ্ধা না হয়েও স্বাধীনতার ৫০ বছর পর সেনাবাহিনীর একজন সাবেক কর্মকর্তা ও রাজনীতিক সেনা গেজেটে মুক্তিযোদ্ধা না-হতে পেরে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে বেসামরিক গেজেটে বীর মুক্তিযোদ্ধা সেজেছে! এভাবে অনেক রাজনীতিক, মন্ত্রী, এমপি, আমলা, ব্যবসায়ী, শিল্পপতি, রাজাকার বীর মুক্তিযোদ্ধা বনে গেছেন! আমাদের বদ্ধমূল ধারণা, বীর মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় ৮০/৮৫ হাজার অমুক্তিযোদ্ধা বীর মুক্তিযোদ্ধা বলে অবস্থান করছেন! এটা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার চরম অপমান। এটা ইতিহাস বিকৃতি।

আবীর আহাদ বলেন, অতীত বিএনপি- জামায়াত জোট সরকার রাজাকারদের মুক্তিযোদ্ধা বানানোর জন্ম যে জামুকা সৃষ্টি করেছিলো, আওয়ামী লীগ সরকার সেই জামুকা নামক কর্তৃপক্ষ সৃষ্টি করে বিএনপি-জামায়াতের ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বহাল রেখে তারাও যখনতখন যারেতারে মুক্তিযোদ্ধা বানিয়ে আসছে। জামুকার চেয়ারম্যান (মুবিমমন্ত্রী)সহ এর সদস্যরা তালিকা প্রণয়নের ক্ষেত্রে শুধু জটিলতাই সৃষ্টি করে আসছেন, মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা বাড়িয়েই চলেছেন! এদের দিয়ে রাজাকারদের তালিকা করাতে গিয়ে যে হযবরল হয়েছিলো, ঠিক তেমনি এদের হাত দিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের গোঁজামিলের তালিকাই প্রকাশিত হচ্ছে!কিন্তু মুক্তিযোদ্ধা তালিকা নিয়ে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধারা তো বটে, গোটা বাঙালি জাতি কোনো তামাশা ও ছেলেখেলা দেখতে চায় না। অপরদিকে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের গোঁজামিলের তালিকা জাতির পিতার কন্যার হাত দিয়ে অনুমোদিত হয়ে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পাবে তা ভাবাই যায় না!

আবীর আহাদ দু:খ প্রকাশ করে বলেন, মুক্তিযোদ্ধা তালিকার এসব ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা ও রাজাকারদের বিরুদ্ধে জামুকায় অভিযোগ দিলে, কিছু কিছু ক্ষেত্রে লোকদেখানো তদন্তের নামে ভাতা বন্ধ করে তাদের নিকট থেকে বিপুল অর্থ নিয়ে পরবর্তীতে তাদের মুক্তিযোদ্ধা পদ পুনর্বহাল করে দেয়া হয়। এ প্রক্রিয়ায় মুক্তিযোদ্ধা তালিকার হাজার হাজার অমুক্তিযোদ্ধা এমনকি রাজাকাররা পার পেয়ে যাচ্ছে। সেইসঙ্গে যারা অর্থের বিনিময়ে তাদেরকে মুক্তিযোদ্ধা বানিয়েছে তারাও ধরাছোঁয়ার উর্দ্ধে থেকে যাচ্ছে। জামুকার এহেন কীর্তিকলাপ প্রত্যক্ষ করে অনেকেই এটির নাম দিয়েছেন "জাল মুক্তিযোদ্ধার কারখানা"=জামুকা

পরিশেষে আবীর আহাদ বলেন, বঙ্গবন্ধুর ৭২ সালের মুক্তিযোদ্ধা সংজ্ঞার আলোকে বিশেষ ট্রাইব্যুনালে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বিচার করার ব্যবস্থা করা হলে অবশ্যই সওয়াল জবাবে ভুয়ারা ধরা খাবে এবং সেই প্রক্রিয়ায় কারা কিসের ভিত্তিতে তাদেরকে মুক্তিযোদ্ধা বানিয়েছে তাও বেরিয়ে আসবে। এ অবস্থায় ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের কারিগরদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগে কঠিন শান্তি প্রদানের জন্য পূর্বাহ্নে প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়ন করতে হবে। সংশ্লিষ্ট সবাইকে মনে রাখতে হবে, মুক্তিযুদ্ধ কোনো ছেলেখেলা নয় 'মুক্তিযোদ্ধা' কোনো পণ্য নয় যে, যে যার মতো খেলবেন অর্থ আত্মীয়তা ও রাজনৈতিক প্রভাবে বিস্তার করে মুক্তিযোদ্ধা বনে যাবেন!

(এ/এসপি/অক্টোবর ২৩, ২০২১)

পাঠকের মতামত:

১৯ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test