E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

মানবপাচারে পুলিশের দৈনিক আয় আড়াই লাখ!

২০১৪ সেপ্টেম্বর ১৭ ১৪:২৬:০৬
মানবপাচারে পুলিশের দৈনিক আয় আড়াই লাখ!

কক্সবাজার প্রতিনিধি : কক্সবাজারে পুলিশের সহায়তায় চলছে সাগরপথে অবৈধভাবে মালয়েশিয়ায় মানবপাচার। আর এসব কাজে সহযোগিতার জন্য জনপ্রতি ৫ থেকে ৭ হাজার টাকা করে আদায় করছে পুলিশ। সরকার সাগরপথে মালয়েশিয়ায় মানবপাচাররোধে কঠোর পদক্ষেপের কথা জানালেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কিছু অসাধু সদস্য এই মানবপাচারে জড়িয়ে পড়ছে। পুলিশের সহযোগিতায় প্রতিদিনই মালয়েশিয়ায় পাচার হচ্ছে ২০০ থেকে ২৫০ জন যাত্রী। এ খাত থেকে শুধু উখিয়া ও রামু থানা পুলিশের দৈনিক আয় করছে আড়াই লাখ টাকা।

সূত্র জানিয়েছে, অবৈধভাবে মালয়েশিয়ায় মানবপাচারের জন্য এতোদিন নাফ নদী, সাবরাং ও শাহপরীর দ্বীপ, মহেশখালীর কুতুবজুমসহ টেকনাফের আরো কয়েকটি পয়েন্টকে ব্যবহার করা হলেও তা এখন পরিবর্তন করেছে দালালরা।

অনুসন্ধানে জানা যায়, আগের পয়েন্টসমূহে বিজিবির তৎপরতা বেড়ে যাওয়ায় ওই এলাকাগুলো দিয়ে মানবপাচারের ঝুঁকি বেড়েছে। এমন কি ওইসব পয়েন্ট দিয়ে মানবপাচারকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষ হওয়ায় আরো কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। ফলে মানবপাচারকারীরা তাদের রুট পরিবর্তন করে এখন উখিয়া ও রামু উপজেলার মাঝামাঝি রেজু খালকেই মানবপাচারের নিরাপদ রুট হিসেবে ব্যবহার করছে।

মানবপাচারে জড়িত দালালদের কাছে থেকে পাওয়া তথ্য মতে, প্রতিরাতে এই নদী দিয়ে ২০০ থেকে ২৫০ জন মানুষ অবৈধভাবে মালয়েশিয়ার উদ্দেশে যাত্রা করছে। রেজু নদী কক্সবাজার শহর থেকে কাছাকাছি ও যাতায়াতে সুবিধা হওয়ায় এই পয়েন্ট দিয়ে দিন দিন মানবপাচার বৃদ্ধি পাচ্ছে।

নিরাপদ হওয়ায় এই রুটে মানবপাচারের জন্য সক্রিয় রয়েছে একাধিক সংঘবদ্ধ দালাল সিন্ডিকেট। এই চক্র রামু থানা, উখিয়া থানা, হিমছড়ি পুলিশ ফাঁড়ি ও ইনানী পুলিশ ফাঁড়ির সহযোগিতায় মানবপাচার করে আসছে। এজন্য রামু থানাকে মাথাপিছু ১ হাজার টাকা, উখিয়া থানাকে ১ হাজার টাকা, হিমছড়ি পুলিশ ফাঁড়িকে ৫০০ টাকা ও ইনানী ফাঁড়িকে ৫০০ টাকা করে দেয়া হচ্ছে।

এছাড়া প্রশাসনকে ম্যানেজ করতে সমন্বয়কারী হিসেবে উখিয়া থানার এসআই নজরুলকে দৈনিক যাত্রী পিছু দেয়া হচ্ছে ১ হাজার টাকা। আর টাকার লোভে উখিয়া থানার এসআই নজরুল, ইনানী ফাঁডির আইসি হাবিবুর রহমান ও হিমছড়ি ফাঁড়ির আইসি বদরুল হাসান সরাসরি সহযোগিতা করছেন। এই পুলিশ সদস্যরা পর্যায়ক্রমে উপস্থিত হয়ে যাত্রী হিসেব করে টাকা আদায় করে আসছেন। এছাড়াও সাগরে যাত্রীপ্রতি ২ হাজার টাকা করে আদায় করছে সেন্টমার্টিনের কোস্টগার্ড সদস্যরাও।

প্রশাসনের একটি সংস্থার তথ্যমতে, এ পয়েন্ট দিয়ে মানবপাচারে সক্রিয় রয়েছে একাধিক দালাল সিন্ডিকেট। এই দালাল সিন্ডিকেটের নেতৃত্বে রয়েছে মহেশখালীর কালারমারছড়ার আঁধার ঘোনার ফজল করিমের পুত্র নুরুল হক, মৃত চান মুল্লুকের পুত্র মোঃ ছৈয়দ, উখিয়ার জালিয়াপালং ইউনিয়নের পাইন্যাসিয়ার মোহাম্মদ সেলিম, সোনাইছড়ির আবুল কাশেম বাবু, ভালুকিয়ার ইমাম হোসেন, মরিচ্যার রুবেল, সোনার পাড়ার নুরুল কবির, নুরুল কবিরের স্ত্রী বেবি বেগম, সোনার পাড়ার বর্মাইয়া লালু মাঝি, নিদানিয়ার ফয়েজ (বর্তমানে উখিয়া থানা এলাকায় বসবাস করছে), সোনার পাড়ার বহুল আলোচিত রুস্তম মাঝি। এই সিন্ডিকেটের অনেক সদস্যের বিরুদ্ধে মানবপাচার আইনে মামলাও রয়েছে।

এ সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে ৮টি ইঞ্জিনচালিত মাছ ধরার ট্রলার। এর মধ্যে রুস্তম মাঝির ২টি, শামশু মাঝির ৩টি, সেলিমের ১টি, বর্মাইয়া লালু মাঝির ১টি ও আবুল কালামের একটি মাছ ধরার ট্রলার অবৈধভাবে মালয়েশিয়ায় মানবপাচার করে আসছে।

এই সিন্ডিকেটগুলো প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে দালালের মাধ্যমে লোকজন জড়ো করে কক্সবাজার শহরের বাস টার্মিনাল, লিংক রোড, বাংলাবাজার ও ঈদগাহ এলাকার কয়েকটি আবাসিক হোটেল ও নির্ধারিত বাড়িতে জমা করে রাখে। ওই স্থানগুলো থেকে সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রিত সিএনজি, মাইক্রোবাস ও ছাড়পোকা দিয়ে যাত্রীদের টেকনাফ সড়কের কোর্টবাজার ও কলাতলি দিয়ে মেরিন ড্রাইভরোড দিয়ে প্রকাশ্যেই রেজু খালে নিয়ে আসে। এ সময় প্রতিটি গাড়িকে কয়েকটি মোটরসাইকেল দিয়ে দালালরা পাহারা দিয়ে নিয়ে যায়। দালালরা পথে কোনো সমস্যা হলে পুলিশের সহযোগিতা নিয়ে যাত্রীদের উদ্ধার করে নিয়ে আসে। সন্ধ্যার পর থেকেই প্রতি বোটে ৫০ থেকে ৬০ জন করে যাত্রী তোলে। ৪ থেকে ৫টি বোটে করে তাদের গভীর সাগরে পৌঁছে দেয়া হয়। গভীর সাগরে কোস্টগার্ড সদস্যরা যাত্রীদের মাথাপিছু ২ হাজার টাকা করে আদায় করে থাকে।

কক্সবাজারের নবাগত পুলিশ সুপার শ্যামল কান্তি নাথ জানান, সাগরপথে মানবপাচাররোধে কঠোর অভিযান পরিচালনার কাজ শুরু করেছেন। এজন্য পাচারকারীদের চিহ্নিত করে তালিকা করা হচ্ছে। পুলিশের মাঝেও দুষ্ট লোক আছে। এ দুষ্ট পুলিশ সদস্যদেরও তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

(ওএস/এটিআর/সেপ্টেম্বর ১৭, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

০৫ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test