E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শিরোনাম:

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ১৯ মামলার আসামি পিন্টু যেভাবে গ্রেফতার

২০২২ জুন ২৬ ২২:৩৬:১৫
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ১৯ মামলার আসামি পিন্টু যেভাবে গ্রেফতার

স্টাফ রিপোর্টার : দিনাজপুরে যাওয়ার সময় ১৯৯৪ সালে পাবনার ঈশ্বরদী রেলস্টেশনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বহনকারী ট্রেনে হামলা ও গুলিবর্ষণে হত্যাচেষ্টা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামি জাকারিয়া পিন্টুকে গ্রেফতার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব-২)।

শনিবার (২৫ জুন) কক্সবাজারের টেকনাফ থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। পিন্টু অস্ত্রসহ একাধিক মামলায় সাজাপ্রাপ্ত এবং ওয়ারেন্টভুক্ত পলাতক আসামি।

র‌্যাব জানায়, প্রধানমন্ত্রীকে হত্যাচেষ্টার মামলায় ২০১৯ সালে মৃত্যুদণ্ডের রায় ঘোষণার পর আত্মগোপনে যান পিন্টু। পাশ্ববর্তী দেশ ভারত ছাড়াও দেশের বিভিন্ন স্থানে আত্মগোপনে ছিলেন তিনি। পিন্টু পাবনা অঞ্চলের চরমপন্থী দলের প্রভাবশালী সদস্য এবং তার নিজেরও একটি সন্ত্রাসী বাহিনী ছিলো বলে ধারণা র‌্যাবের।

রবিবার (২৬ জুন) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজার র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

তিনি বলেন, ১৯৯৪ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর (শুক্রবার) ট্রেনযোগে খুলনা থেকে সৈয়দপুর যাবার পথে ঈশ্বরদী রেলস্টেশনে পৌঁছলে সন্ধ্যা ৬টার দিকে প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী বগিকে লক্ষ্য করে গুলি বর্ষণ ও ককটেল বিস্ফোরণ ঘটানো হয়।

‘ওই ঘটনায় ঈশ্বরদীর জিআরপি থানায় বিস্ফোরক দ্রব্যাদি আইন ও বিশেষ ক্ষমতা আইনে একটি মামলা করা হয়। আদালতের নির্দেশে মামলা তদন্তের দায়িত্ব পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগকে (সিআইডি) দেওয়া হয়।’

‘এরপর সিআইডির তদন্ত কর্মকর্তা ১৯৯৭ সালের ৩ এপ্রিল মোট ৫২ জনের বিরুদ্ধে বিজ্ঞ আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। এর মধ্যে পাঁচজন আসামি মৃত্যুবরণ করায়, তাদের ওই মামলা থেকে অব্যাহতি দিয়ে বাকি ৪৭ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়।’

‘পরবর্তীতে দীর্ঘ বিচারিক প্রক্রিয়া শেষে ২০১৯ সালের ৩ জুলাই জাকারিয়া পিন্টুসহ ৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড, ২৫ জনকে যাবজ্জীবন এবং ১৩ জনকে ১০ বছর কারাদণ্ড দেওয়া হয়।’

খন্দকার আল মঈন বলেন, গ্রেফতার জাকারিয়া পিন্টুর নেতৃত্বে ঈশ্বরদীতে আধিপত্য বিস্তার, চাঁদাবাজি ও মারামারিসহ বিভিন্ন অরাজকতা চলতো। ১৯৮৮ সালের পর বিভিন্ন অপরাধে সম্পৃক্ততায় তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা হয়। ওই সব মামলায় গ্রেফতার এড়াতে তিনি এলাকা ত্যাগ করে ২০০৪ সাল থেকে ঢাকার মিরপুরে বসবাস শুরু করেন।

‘তবে পরিবার ঢাকায় থাকলেও নিয়মিত ঈশ্বরদীতে যাতায়াত করতেন পিন্টু। তিনি ২০১৫ সালে ঈশ্বরদীতে উপজেলা নির্বাচনে স্বতন্ত্রভাবে অংশ নিয়ে পরাজিত হন।’

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে র‌্যাবের এই কর্মকর্তা জানান, পিন্টু ১৯৯৪ সালে ঈশ্বরদীতে চম্পা হত্যা মামলার অভিযুক্ত আসামি। এছাড়া ২০০৯ সালে ঈশ্বরদীতে আজম হত্যা মামলায় অভিযুক্ত হয়ে কারাবরণ করেন তিনি।

‘পরবর্তীতে ২০১১ সালে অস্ত্রসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক গ্রেফতার হন পিন্টু এবং তার বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে কুষ্টিয়া ভেড়ামারা থানায় একটি মামলা করা হয়। এই মামলায় তিন মাস কারাভোগ করলেও পরবর্তীতে জামিনে মুক্তি নিয়ে ফেরারি হন তিনি। ওই মামলায় বিজ্ঞ আদালত তাকে ১৭ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেন।’

‘এছাড়াও ২০১২, ২০১৪ ও ২০১৫ সালে আধিপত্য বিস্তার, বিভিন্ন সন্ত্রাসী ও ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডের জন্য তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় ১০টি মামলা করা হয়। মৃত্যুদণ্ড ও ১৭ বছরের সশ্রম কারাদণ্ডের সাজা ছাড়াও তার নামে বিভিন্ন অপরাধে ছয়টি গ্রেফতারি পরোয়ানা রয়েছে। আর বিভিন্ন থানায় তার বিরুদ্ধে ১৯টি মামলা রয়েছে।’

‘২০১৯ সালে প্রধানমন্ত্রীকে হত্যাচেষ্টা মামলার রায় ঘোষণার পরের দিনই তিনি দেশ ত্যাগ করে ভারতে আত্মগোপনে যান। সেখানে কিছুদিন অবস্থানের পর পুনরায় দেশে ফিরে আসেন। পরবর্তীতে করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় সীমান্ত যোগাযোগ বন্ধ থাকাকালীন তিনি ঢাকা, রাজশাহী ও কক্সবাজারসহ বিভিন্ন জায়গায় আত্মগোপনে ছিলেন। সর্বশেষ কক্সবাজারের টেকনাফে তার বন্ধুর বাসায় আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় র‌্যাব-২ তাকে গ্রেফতার করে।’

পিন্টুর রাজনৈতিক পরিচয় জানতে চাইলে কমান্ডার মঈন বলেন, যে সময় হামলার ঘটনা ঘটেছিল, তখন পাবনা কুষ্টিয়া অঞ্চলে ছিল সর্বহারা ও চরমপন্থীদের আধিপত্য। তবে মামলায় ধরণে বলা যায়, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সঙ্গেই জড়িত ছিলেন পিন্টু। ১৯৮৮ সালের পর তিনি বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়েছেন।

(ওএস/এসপি/জুন ২৬, ২০২২)

পাঠকের মতামত:

২৭ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test