E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

‘বঙ্গবন্ধুর দুয়েকজন খুনিকে শিগগির দেশে আনা হবে’

২০২২ আগস্ট ০৬ ০০:৪৫:৩৭
‘বঙ্গবন্ধুর দুয়েকজন খুনিকে শিগগির দেশে আনা হবে’

স্টাফ রিপোর্টার : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দক্ষ নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত অনেককেই এরই মধ্যে আইনের আওতায় আনা হয়েছে। যারা এখনো পলাতক রয়েছে, তাদের মধ্যে দুয়েকজনকে শিগগির দেশে আনা হবে।

শুক্রবার (৫ আগস্ট) বিকেলে নগরীর আন্দরকিল্লাস্থ চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) চত্বরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৭তম শাহাদাতবার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু পরিবারের সবাইকে হত্যা করা হয়। কারণ খুনিরা ভালো করেই জানতো, বঙ্গবন্ধুর রক্ত যাদের ধমনীতে প্রবাহিত তাদের কেউ বেঁচে থাকলে তাদের বিচার একদিন হবেই। বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকলে বাংলাদেশ অনেক আগেই উন্নয়নের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে যেতো। কিন্তু ষড়যন্ত্রকারীরা তা হতে দেয়নি। তারই সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে কাজ করে যাচ্ছেন।

মুক্তিযুদ্ধে চট্টগ্রামের মুক্তিযোদ্ধাদের ভূমিকা উল্লেখ করে তিনি বলেন, তারা অসীম সাহসিকতার সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়েছেন। বঙ্গবন্ধু কন্যা তাদের সেই ত্যাগের প্রতিদান দিয়েছেন। মুক্তিযোদ্ধাদের সরকারি ভাতাসহ নানা সুযোগ-সুবিধা দিয়ে যাচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রী সবসময় প্রমাণ করেছেন, তিনি বঙ্গবন্ধুর কন্যা। নানা ধরনের ষড়যন্ত্র তিনি মোকাবিলা করছেন।

‘২১ আগস্টের বোমা হামলা, সেই দিনের হত্যাকান্ডের দৃশ্য আপনারা দেখেছেন। কিন্তু বঙ্গবন্ধু কন্যাকে মহান রাব্বুল আলামিন বাঁচিয়েছেন, বাঁচার কোনো উপায় ছিল না। বঙ্গবন্ধু যেটা করে যেতে পারেননি, সেটা মহান রাব্বুল আলামিন বঙ্গবন্ধু কন্যার মাধ্যমে করিয়েছেন। অল্প সময়ে বঙ্গবন্ধু জাতিকে সংবিধান উপহার দিয়েছেন।’

‘একজন একজন করে হারিয়ে যাচ্ছি। আগামী ১০ বছরে ৬০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা হারিয়ে যাবেন। আমরা সারা বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধারা বেঁচে আছি, সেটা প্রমাণ করতে একটি সমাবেশ করবো। বঙ্গবন্ধুর মুক্তিযোদ্ধারা এখনো বেঁচে আছেন, যেকোনো ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করতে তারা প্রস্তুত।’

আসাদুজ্জামান খান বলেন, বঙ্গবন্ধুর ডাকে নিরস্ত্র বাঙালি সশস্ত্র যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছি। আবার বঙ্গবন্ধু কন্যার ডাকে আজকে উন্নত বাংলাদেশ বিনির্মাণে সব ধরনের সহযোগিতা করছি। এই দেশ হলো হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ ও খ্রিষ্টানের দেশ। এই দেশে সবাই স্বাস্থ্য ও শিক্ষাসহ সবকিছুতে সমান অধিকার পাবে।

‘অনেকেই ইতিহাস বিকৃত করে অনেক কথা বলছেন। বঙ্গবন্ধুর নামটাও মুছে ফেলার প্রচেষ্টা চালিয়েছিলেন। আমরা অনেক দৃশ্য দেখেছি। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার দৃশ্য কোনোদিন ভুলতে পারবো না। কী অপরাধ করেছিলো বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্যরা। এসব কিছুর আজকে হিসাব-নিকাশের সময় এসেছে। কারা এর সুবিধাভোগী? বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে খুনি, কুলাঙ্গাররা বাংলাদেশকে অন্ধকারের জগতে ডুবিয়ে দিতে চেয়েছিলো।’

‘১৯৭৫ সালের নারকীয় হত্যাকাণ্ডের পরও ষড়যন্ত্র থেমে নেই। বঙ্গবন্ধু হত্যার পেছনে কারা ছিলো তাদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনতে হবে। বঙ্গবন্ধু একমাত্র নেতা, যিনি সমগ্র বাঙালি জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করতে পেরেছিলেন। তিনি ছিলেন অসাম্প্রদায়িক। আজ তারই সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ উন্নয়নের মহাসড়কে। মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও উদ্দেশ্য হৃদয়ে ধারণ করতে হবে। সমস্ত ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে আপনারা দেশকে ভালোবাসুন, দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র রুখে দিন।’

সভায় মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধারা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান। ১৯৭১ সালে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে সাড়া দিয়ে তারা জীবনবাজি রেখে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়ে আমাদের স্বাধীন বাংলাদেশ উপহার দিয়েছেন। বঙ্গবন্ধুর জন্ম না হলে আমরা আজ স্বাধীন দেশ পেতাম না। স্বাধীনতাবিরোধীরা বঙ্গবন্ধুর কণ্ঠরোধ করতে চেয়েছিলো। খুনি জিয়া-মোস্তাকসহ যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে সহ্য করেনি, তারাই ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যা করেছে।

তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতির ইতিহাসে এক কলঙ্কময় অধ্যায় যুক্ত হয়েছিল। যারা স্বাধীনতাবিরোধী ও বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারের হত্যার মদদ দিয়েছে তাদের খুঁজে বের করতে হবে। স্বাধীনতা পরবর্তী বিএনপি-জামাত-রাজাকারেরা ক্ষমতায় এসে বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনিদের শুধু বিদেশে পাঠায়নি, দূতাবাসের মাধ্যমে তাদের উচ্চপদে চাকরিও দেওয়া হয়েছিল। তাই শোককে শক্তিতে রূপান্তরের মাধ্যমে জাতির পিতার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।

এর আগে মোজাম্মেল হক জাতীয়, শোক ও সাংগঠনিক পতাকা উত্তোলন এবং মোমবাতি প্রজ্জ্বলনের মাধ্যমে ছয়দিন ব্যাপী (৫-১০ আগস্ট) শোক দিবসের কর্মসূচির উদ্বোধন করেন। এরপর এ উপলক্ষে সাহাবউদ্দিন মজুমদার রচিত ‘বাঙালা হতে বাংলাদেশ’ বিষয়ক মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক আলোকচিত্র প্রদর্শনী ঘুরে দেখেন মন্ত্রী।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) উপাচার্য (ভিসি) প্রফেসর ড. শিরীণ আখতার বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সম্পর্কে জানার কোনো শেষ নেই। তিনি অত্যন্ত দূরদর্শী নেতা ছিলেন। দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় তিনি আজীবন যুদ্ধ করে গেছেন। যে ব্যক্তি আজীবন দেশের স্বাধীনতা ও এ দেশের মানুষের জন্য ত্যাগ করে গেছেন, তাকেই সপরিবারে নিষ্ঠুরতম হত্যাকান্ডের শিকার হতে হয়েছে। আমরা দুর্ভাগা জাতি।

‘বঙ্গবন্ধুকে যারা হত্যা করেছে, তারাই আজ ইতিহাস বিকৃত করছে। নতুন প্রজন্মের কাছে মহান মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানাতে হবে। বীর মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের সন্তানদের সরকারের উন্নয়নের মহাসড়কে শামিল হতে হবে। জাতির পিতার হত্যাকারী ও ইতিহাস বিকৃতকারীদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা জরুরি।’

আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ চট্টগ্রাম মহানগর ইউনিট কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মোজাফফর আহমদ। এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন পুলিশের রেঞ্জ ডিআইজি মো. আনোয়ার হোসেন, চট্টগ্রাম মেট্টোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) কমিশনার কৃষ্ণপদ রায়, চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান ও জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) এস এম রশিদুল হক।

অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ চট্টগ্রাম জেলা ইউনিটের ভারপ্রাপ্ত কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা এ কে এম সরওয়ার কামাল দুলু, মহানগর ইউনিটের সহকারী কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা সাধন চন্দ্র বিশ্বাস, কমিউনিটি পুলিশিং চট্টগ্রাম মহানগরীর সদস্যসচিব অহিদ সিরাজ চৌধুরী স্বপন, চবির উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. ওমর ফারুক রাসেল ও মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড মহানগর কমিটির আহ্বায়ক সাহেদ মুরাদ সাকু।

সভায় বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ চট্টগ্রাম মহানগর ও জেলা ইউনিটের অধীন সর্বস্তরের বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সন্তান কমান্ডের নেতারা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

(ওএস/এএস/আগস্ট ০৬, ২০২২)

পাঠকের মতামত:

১৯ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test