E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

গণপরিবহনে যৌন হয়রানির শিকার ৩৬ শতাংশ নারী

২০২২ ডিসেম্বর ০৫ ২৩:৫৮:৪৫
গণপরিবহনে যৌন হয়রানির শিকার ৩৬ শতাংশ নারী

স্টাফ রিপোর্টার : বাস, লঞ্চ, ট্রেন ও টার্মিনালসহ গণপরিবহনে ৩৬ শতাংশ নারী নিয়মিত যৌন হয়রানির শিকার হন। এছাড়াও গণপরিসরে ৮৭ শতাংশ নারী জীবনে অন্তত একবার যৌন সহিংসতার শিকার হন। আর ৬৬ শতাংশ নারী কয়েকবার এবং ৭ শতাংশ নারী বারবার নানা ধরনের যৌন হয়রানির শিকার হন। তবে হয়রানির শিকার ৩৬ শতাংশ নারী প্রতিবাদ করেছেন। ইউএনডিপি, জাতীয় মানবাধিকার কমিশন ও সেন্টার ফর ইনফরমেশন-এর যৌথ উদ্যোগে পরিচালিত অনলাইন জরিপে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

সোমবার (৫ ডিসেম্বর) বিকেলে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের আনোয়ারা বেগম-মুনিরা খান মিলনায়তনে ঢাকা মহানগর শাখার উদ্যোগে গণপরিসর ও গণপরিবহনে নারী ও কন্যাদের প্রতি সংঘটিত সহিংসতা, নির্যাতন ও নিপীড়ন বন্ধের প্রতিবাদ জানিয়ে গণপরিসর ও গণপরিবহনে নারী ও কন্যার নিরাপত্তা চাই শীর্ষক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় ইউএনডিপি, জাতীয় মানবাধিকার কমিশন ও সেন্টার ফর ইনফরমেশন-এর যৌথ উদ্যোগে পরিচালিত অনলাইন জরিপে এসব তথ্য উঠে এসেছে বলে জানানো হয়।

এতে গণপরিসরে ও গণপরিবহনে বিভিন্ন সময়ে নারীর প্রতি সংঘটিত ধর্ষণ ও যৌন হয়রানির ঘটনার উল্লেখ করে বলেন, অনেক ক্ষেত্রে নারী ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনার বিচারহীনতাই নারীকে আরও বেশি অনিরাপদ অবস্থানে নিয়ে গেছে। যার ফলশ্রুতিতে ধর্ষণ ও যৌন সহিংসতার মামলায় মাত্র ৩ শতাংশ অভিযুক্ত ব্যক্তি শাস্তি পায়। বাকিরা নানাভাবে পার পেয়ে যান।

এসময় লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, টেকসই উন্নয়নের অগ্রগতি নির্ধারণে যে ৩৯টি নির্দেশক তৈরি করা হয়েছে তার মধ্যে ১১টি গণপরিবহনে ২০টি আসনে নারী-শিশু, বয়স্ক ও প্রতিবন্ধীদের জন্য সংরক্ষণের কথা বলা হয়েছে। যা ২০৩০ সালের মধ্যে নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট সবাইকে সমন্বিতভাবে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে সুপারিশ তুলে ধরা হয়।

সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরী বলেন, আমাদের সমাজ পরিবর্তন, দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন একদিনে আসবে না। আমাদের সমাজে ছেলে মেয়েরা নানা বৈষম্যমূলক অবস্থার মধ্য দিয়ে বড় হয়। এ ক্ষেত্রে দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তনের জন্য এ রকম আলোচনা অব্যাহত রাখার পাশাপাশি সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন অব্যাহত রাখতে হবে। পরিস্থিতির উন্নয়নের জন্য প্রচার-প্রচারণার ক্ষেত্রে গণমাধ্যমকে জোরালো ভূমিকা পালনের জন্য আহ্বান জানান তিনি। গণপরিবহনের সঙ্গে যুক্ত কর্মীদের জন্য প্রশিক্ষণ ম্যানুয়াল করা হয়েছে। প্রশিক্ষণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে শিগগির।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম বলেন, গণপরিবহনে ও গণপরিসরে নারীর চলাফেরায় নানা সংকট আছে। যার জন্য পরিকল্পনাকারী ও নীতিনির্ধারকদের নিয়ে মতবিনিময় হওয়া প্রয়োজন। গণপরিবহন সংবেদনশীল করে গড়ে তোলার জন্য প্রশাসন, আইন বাস্তবায়নকারী, গণপরিবহন মালিকদের জন্য প্রশিক্ষণ চালুর আহ্বান জানান তিনি।

নিরাপদ সড়ক চাই-এর চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, চালকদের মানবিক আচরণ বিষয়ে প্রশিক্ষণের অভাব আছে। তারাও নানা বঞ্চনা ও নির্যাতনের শিকার। তিনি পরিস্থিতির উন্নয়নের জন্য শিশুদের মানুষ করার দায়িত্ব ও তাদের মূল্যবোধ তৈরিতে পরিবার ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের ডেপুটি আ্যাটর্নি জেনারেল অমিত দাস গুপ্ত বলেন, সমস্যা সমাধানে জনবলের ঘাটতি আছে কথাটি প্রায়ই বলা হয়। দায়িত্ব পালনে তৎপরতা থাকলে জনঘাটতি কমতো। গণপরিবহনে নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধের জন্য থাকা আইনের সেকশন নয় এর কিছু ঘাটতি আছে। আইন পরিবর্তনের জন্য সুপারিশ করা যেতে পারে।

বিআরটিএ এর পরিচালক (অপারেশন) মো. লোকমান হোসেন বলেন, আজকের আলোচনায় আসা সুপারিশসমূহ বিআরটিএর উদ্যোগে দেশব্যাপী বাস্তবায়নের জন্য মনিটরিংয়ের ওপর জোর দিতে হবে। আগামীতে জেন্ডারগত বিষয়ে প্রশিক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হবে উল্লেখ করে কয়েকটি সুপারিশ তুলে ধরেন। তিনি বিআরটিএ এর উদ্যোগে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হলে সেই প্রশিক্ষণে মহিলা পরিষদকে যুক্ত থাকার আহ্বান জানান।

সভাপতির বক্তব্যে সংগঠনের ঢাকা মহানগর শাখার সভাপতি মাহাতাবুন নেসা বলেন, সংগঠন নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে নানা কাজ করার পরও সহিংসতা কমেছে তা বলা যাবে না। দিন দিন সহিংসতার ঘটনা বৃদ্ধি পাওয়ায় আমরা উদ্বিগ্ন। সহিংসতার বিরুদ্ধে নারী আন্দোলনকে গড়ে তোলার জন্য তরুণদেরও সম্পৃক্ত করা আজ প্রয়োজন। সহিংসতা প্রতিরোধের জন্য তরুণদের মধ্যেও মানবিক মূল্যবোধ গড়ে তুলতে হবে। তৃণমূল থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত সমন্বিত কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে। এবং শিক্ষানীতি জেন্ডারসংবেনশীল করতে হবে।

(ওএস/এএস/ডিসেম্বর ০৫, ২০২২)

পাঠকের মতামত:

১৮ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test