E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Walton New
Mobile Version

মানবাধিকারের অনন্য নজির ছিটমহলে

২০২৩ ডিসেম্বর ০৯ ১৮:২৪:০৬
মানবাধিকারের অনন্য নজির ছিটমহলে

স্টাফ রিপোর্টার : ছিটমহল বিনিময়ের আগে নাগরিক অধিকার দূরে থাক, মানুষ হিসেবে বেঁচে থাকার স্বাধীনতাটুকুও ছিল না। সেখানে মসজিদ, মন্দির, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, চিকিৎসা পরিষেবার মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান ছিল না। এখন নিজ মা-বাবার নামে স্কুলে ভর্তি হতে পারছে। বড় হতে পারছে। জমিজিরাত কেনাবেচা করতে পারছে। জমির রেকর্ড হয়েছে, প্রতিষ্ঠিত হয়েছে নিজের নাম। ছিটমহলে শিক্ষা বিকাশে বাংলাদেশ সরকার অনেক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় করেছে। মানবাধিকারকর্মীরা বলছেন, বর্তমান সরকারের ঐকান্তিক চেষ্টায় মানুষের জীবন পেয়েছে ছিটমহলবাসী। হাসিনা সরকারের আমলেই এইটা করা সম্ভব হয়েছে। সমস্যাগুলো সমাধান হওয়ার পরে তারা কত ভালো আছে সেইটা নিয়ে খুব কম শোনা যায়।

বাংলাদেশ ও ভারত দুই দেশ মিলে ১৬২টি ছিটমহলের মোট জমি ২৪ হাজার ২৭০.৮৩ একর। এর মধ্যে ভারতের অভ্যন্তরে বাংলাদেশের ৫১টি ছিটমহলের আয়তন সাত হাজার ১১০.২০ একর এবং বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ভারতের ১১১টি ছিটমহলের আয়তন ১৭ হাজার ১৫৮.৫ একর। রাজনীতির মারপ্যাঁচে এসব ভূমিতে বসবাসকারীরা নিজেদের অজান্তেই ছিটমহল নামের কারাগারে বন্দি হয়ে পড়েন। এখানকার মানবগোষ্ঠীকে বিনা বিচারে ৬৮ বছর কাটাতে হয়েছে।

১৯৭৪ সালের ‘ল্যান্ডবাউন্ডারি অ্যাগ্রিমেন্ট’-এর মধ্যেই ছিল ছিটমহল সমস্যার সমাধানের কথা। এই চুক্তির বাস্তবায়নেই ছিটমহলবাসীর মুক্তি নিহিত ছিল। ১৯৭৪ সালে চুক্তিটি বিধিমতো আমাদের সংসদে রেটিফায়েড করেছিলেন বঙ্গবন্ধু। ফলে আমাদের দিক থেকে এর সমাধানে আইনি বাধা আর থাকেনি। কিন্তু এই সমস্যা সমাধান হয়নি কয়েক দশকেও। বর্তমান সরকার এ সমস্যার সমাধান করে স্বর্গের স্বাদ দিয়েছে ছিটমহলবাসীকে।

মানুষের মর্যাদা নিয়ে বাঁচতে শেখা

এখন ছিটমহলে নিজ মা-বাবার নামে স্কুলে ভর্তি হতে পারছে। তারা জমি কেনাবেচা করতে পারছে। জমির রেকর্ড হয়েছে, প্রতিষ্ঠিত হয়েছে নিজের নাম। ছিটমহলে শিক্ষা বিকাশে বাংলাদেশ সরকার অনেক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় করেছে। ইতোমধ্যে বেশকিছু প্রতিষ্ঠান সেখানে হয়েছে। বিলুপ্ত গারাতি ছিটমহলে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে রাজমহল উচ্চ বিদ্যালয়, সায়মা ওয়াজেদ পুতুল অটিজম বিদ্যালয়।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, গৃহনির্মাণ ও নানা প্রতিষ্ঠান

এখানে নতুন করে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দেওয়ার নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পঞ্চগড়ের বালাপাড়া খাগড়াবাড়ি, বেওলাডাঙা ও দহলা খাগড়াবাড়ি ছিটমহলেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপন করা হয়েছে। এরই মধ্যে সেখানে দুটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় সরকারিও করা হয়েছে—বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা উচ্চ বিদ্যালয় এবং শেখ রাসেল উচ্চ বিদ্যালয়।

ছিটমহল আন্দোলনের নেতারা শিক্ষা বিস্তারে কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠিত করেছেন, যার মধ্যে গারাতিতে মফিজার রহমান কলেজ ও দাছিয়ারছড়ায় মইনুল-মোস্তফা কলেজ অন্যতম। এর পাশাপাশি মাদরাসাসহ শতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গঠিত হয়েছে।

এরইমধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গৃহহীনদের আধাপাকা বাড়ি নির্মাণ করে দিয়েছেন। এক গারাতিতেই ৯৮টি বাড়ি হস্তান্তর করা হয়েছে। সেখানে আরো ৪০টি বাড়ি বরাদ্দ আছে। আইটি সেন্টার, ব্যাংক-বীমা প্রতিষ্ঠান, পুলিশ ফাঁড়ি চালু হয়েছে। ২০২১ সালের হিসাব অনুযায়ী শুধু পঞ্চগড়ের ছিটমহলগুলো থেকেই ২২ জন নাগরিক বিজিবির চাকরিতে যোগ দিয়েছেন।

ছিটমহলে কমিউনিটি ক্লিনিক

স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়নে ছিটমহলগুলোতে অনেক কমিউনিটি ক্লিনিক প্রতিষ্ঠা হয়েছে। তারা সারা দেশেই চিকিৎসা নিতে পারে। ছিটমহলবাসী রাষ্ট্রের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় এসেছে। গর্ভবতী নারীর পুষ্টি ভাতা, বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, শিশু ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতাসহ যাবতীয় ভাতাই এখন ছিটমহলগুলোতে চালু হয়েছে।

মানবাধিকার আইনজীবী এস এম আব্রাহাম লিংকন বলেন, সমাধানযোগ্য মানবিক ইস্যু ছিটমহল নিয়ে সমাধানের সব উদ্যোগ বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের পরে আটকে যায়। প্রতিবেশী রাষ্ট্র আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। তারা আর বিষয়টি তাদের সংসদে তোলেনি। যার ফলে বিনিময় বিষয়টি একেবারে থমকে যায়। ছিটমহলে মানুষের বেদনার কথা আমরা কমবেশি অবগত, কিন্তু মুক্তির পর তাদের অগ্রগতির বিষয়গুলো তেমনভাবে আলোচিত হচ্ছে না। তাদের কস্টের কথা যেভাবে গণমাধ্যমে প্রাধান্য পায় সে পরিমাণে আনন্দ ও উন্নয়নের কথাগুলো প্রচারে আসে না। গত আট বছরে বিলুপ্ত ছিটমহলে যে উন্নয়ন হয়েছে তা নজরকাড়া।

(ওএস/এসপি/ডিসেম্বর ০৯, ২০২৩)

পাঠকের মতামত:

২৭ জুলাই ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test