E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশনে কে এই সর্বভুক আমিনুল ইসলাম জাহাঙ্গীর

২০২৪ এপ্রিল ২৭ ১৬:২৮:০০
ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশনে কে এই সর্বভুক আমিনুল ইসলাম জাহাঙ্গীর

স্টাফ রিপোর্টার : ২০০৫ সালে ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশনে অফিস সহকারি হিসেবে যোগদান করেন  আমিনুল ইসলাম ওরফে জাহাঙ্গীর। মাত্র কয়েক বছরের ব্যবধানে আমিনুল ইসলাম জাহাঙ্গীর চাকরিতে স্থায়ী হন। হঠাৎ করেই তিনি পেয়ে যান ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশনের চলতি দায়িত্বে উপসচিবের পদ। দ্রুতই পাল্টে যায় তার ভাগ্য। চাকরির শুরুতে আমিনুলের আর্থিক অবস্থা খুবই খারাপ ছিল বলে একাধিক সূত্র এ প্রতিবেদককে জানালেও এখন তার বিলাসী জীবন; কী নেই তার, যেন হাতে পেয়েছেন আলাদীনের চেরাগ! 

২০২৩ সালের ৬ ডিসেম্বর সাংবাদিক বেলায়েত হোসেন আমিনুল ইসলাম জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনে একটি অভিযোগ দায়ের করেন। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে এ প্রতিবেদক ও তার সঙ্গীয় সাংবাদিক নিয়ে অভিযোগের সত্যতা অনুসন্ধানে যান ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশনে।

তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, সূচতুর আমিনুল ইসলাম জাহাঙ্গীর মেয়র মহোদয়ের আস্থাভাজন ব্যক্তি হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছেন। তারপরে আর আমিনুলকে পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। রাতারাতি মাত্র কয়েক বছরের ব্যবধানে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়ে গেছেন আমিনুল ইসলাম জাহাঙ্গীর। সিটি কর্পোরেশনের টেন্ডার থেকে শুরু করে নকশা অনুমোদন, বিভিন্ন ট্রেড লাইসেন্স ইস্যু ও নবায়নের সকল দায়িত্ব পালন করতে শুরু করেন আমিনুল।

মুখে মুখে অভিযোগ, এসব করতে করতেই শতকোটি টাকার মালিক হয়ে যান তিনি। সিটি কর্পোরেশনে প্রতিটি ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে গড়ে তোলেন এক একটি শক্তিশালী সন্ত্রাসী গ্রুপ, যাদের মাধ্যমে পুরো সিটি কর্পোরেশন এলাকা নিয়ন্ত্রণ করছেন আমিনুল ইসলাম জাহাঙ্গীর। তার দুর্নীতি ও অবৈধ সম্পদের বিষয়ে বিভিন্ন পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হতে থাকলে আমিনুল সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন বলে এ প্রতিবেদককে আমিনুল ইসলাম জাহাঙ্গীর জানান। মামলার কপি তার কাছে চাইলে এ প্রতিবেদকের হোয়াটসঅ্যাপে পাঠিয়ে দেওয়ার কথা বললেও পরবর্তীতে এ প্রতিবেদকের সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দেন আমিনুল ইসলাম।

এ প্রতিবেদকের টিম অনুসন্ধান কালে বিভিন্ন সূত্রে জানতে পারেন, আমিনুল ইসলাম জাহাঙ্গীর পীর বাড়ি রোডে বিলাসবহুল ডুপ্লেক্স বাড়ি তৈরি করে বিলাসী জীবন যাপন করছেন।এ বিষয়ে আমিনুল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, ওই জমিটি তার পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া।

অনুসন্ধানকালে প্রতিবেদক জানতে পারেন ময়মনসিংহ টাউন সংলগ্ন হল হোটেল মোস্তাফিজ এর পাশে আমিনুল ইসলাম গড়ে তুলেছেন ২০ তালা ভবন। বিষয়টা আমিনুল ইসলামের নিকট জানতে চাইলে তিনি জানান, ভবনটি ৬৮ জন শেয়ারে মিলে করেছি।

কিন্তু স্থানীয়রা জানায়, ভবনটির মালিক একমাত্র আমিনুল ইসলাম। বিভিন্ন লোকের কাছে তিনি কয়েকটি ফ্ল্যাট বিক্রি করেছেন বলে এ প্রতিবেদককে জানান স্থানীয়রা।

এছাড়াও হোল্ডিং নং ৭ ও ৮ মদন বাবু রোডের আমপট্টি সদরে বর্তমানে ২০ তলা ভবনের নির্মাণের কাজ চলছে আমিনুল ইসলাম জাহাঙ্গীরর কর্তৃত্বে। অনুসন্ধান কালে আরও জানা যায়, ৩৮ নং হোল্ডিং এ আমিনুল ইসলাম ১৮ তলা বিশিষ্ট একটি বাড়ির নির্মাণ কাজ প্রায় শেষ করে ফেলেছেন। পাার্শবর্তী ভবনে আমিনুল ইসলামের একটি ফ্ল্যাট রয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশনের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, আমিনুল ইসলামের আরো দুইটি ১০ তলা ভবন রয়েছে। এ সকল বিষয়সহ দৈনিক এই বাংলা পত্রিকায় 'সহকারী সচিব আমিনুল ইসলামের ৫০ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদের সন্ধান' শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ করে। গত ১৯ জানুয়ারি ২০২৩ উর্মি বাংলা প্রতিদিন পত্রিকায় 'নগর ভবনে জন্ম নিবন্ধনে মানুষের ভোগান্তি' শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশ করে। এছাড়াও সাপ্তাহিক আলো পত্রিকায় হুন্ডির মাধ্যমে শতকোটি টাকা বিদেশে পাচারের চেষ্টা শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশ করে আমিনুল ইসলামের বিরুদ্ধে। সহকারী সচিব আমিনুল ইসলাম জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ করায় সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মামলা করেন বলে আমিনুল ইসলাম নিজেই এ প্রতিবেদককে জানান। মামলার কপি হোয়াটসঅ্যাপে এ প্রতিবেদককে পাঠিয়ে দেয়ার কথা বললেও আজ পর্যন্ত আমিনুল ইসলাম ওই মামলার কপি পাঠায়নি এবং এ প্রতিবেদককে অনুসন্ধানে সহায়তা করেনি।

আমিনুল ইসলামের সিন্ডিকেটের ভয়ে অনেক স্থানীয় সংবাদকর্মী তার কোন বিষয়ে সংবাদ প্রকাশ করতে সাহস পায় না। অনুসন্ধানকালে আরও জানা যায়, আমিনুল ইসলাম জোরপূর্বক সাধারণ মানুষের রেকর্ডীয় ভূমির উপর দিয়ে তার নিজের স্বার্থে ড্রেন ব্যবস্থার কার্যক্রম করতে গিয়ে রেকর্ডিয় জায়গায় না করে শত শত মানুষের ঘরবাড়ির উপর দিয়ে কাজ শুরু করতে গেলে স্থানীয়রা মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট ডিভিশনে একটি রিপিটেশন দায়ের করেন, যার নং ১৬২৬৭/২০২৩। মহামান্য আদালত সিটি কর্পোরেশনকে ৯০ কার্য দিবসের মধ্যে বিষয়টি নিষ্পত্তি করার আদেশ প্রদান করেন।

অনুসন্ধানকালে আরও জানা যায়, একই ব্যক্তি বেশ কয়েকটি দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে, যেমন, সিটি কর্পোরেশনের ভিতর নকশা অনুমোদন, টেন্ডার, অটো রিক্সার লাইসেন্সসহ বেশ কয়েকটি দায়িত্ব একাই পালন করে যাচ্ছেন আমিনুল ইসলাম। মাত্র কয়েক বছর চাকরির বয়সে শত শত কোটি টাকা বিভিন্ন দুর্নীতি, ঘুষ, অনিয়মের মাধ্যমে সম্পদ গড়ে তুলেছেন চলতি দায়িত্বে কর্মরত আমিনুল ইসলাম জাহাঙ্গীর। তার বিরুদ্ধে লেখালেখি করলে নেমে আসে মামলা সহ শারীরিক নির্যাতন নিপীড়ন। এত শক্তির উৎস কোথায় আমিনুল ইসলাম জাহাঙ্গীরের, এ প্রশ্ন ঘুরছে ময়মনসিংহের জনমনে।

আমিনুল ইসলাম জাহাঙ্গীর অনুসন্ধান টিমের কাছে দম্ভের সাথে জানিয়েছেন, তার বিরুদ্ধে কেউ কিছু বলতে বা লিখতে সাহস পায় না। আপনারা সংবাদ প্রকাশ করলেও আমার কিছুই যায় আসে না। আমি তা দেখে নেব বলে অনুসন্ধানী টিমকে হুমকি দেন উপসচিবের চলতি দায়িত্বে থাকা সর্বভুক আমিনুল ইসলাম জাহাঙ্গীর।

(ওএস/এসপি/এপ্রিল ২৭, ২০২৪)

পাঠকের মতামত:

০৯ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test