E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

সুন্দরবন থেকে ডলফিন হারিয়ে যায়নি !

২০১৪ ডিসেম্বর ১৫ ১৭:৩৬:৩৭
সুন্দরবন থেকে ডলফিন হারিয়ে যায়নি !

মংলা থেকে আহসানুল করিম : সুন্দরবনের একটি ভাল সংবাদ, গুড নিউজের প্রত্যাশায় গোটা জাতী-বিশ্ব। তখন এই ভালো সংবাদটি নিয়ে এসেছে ডলফিন। শ্যালায় ট্যাংকার ডুবিতে তেল ছড়িয়ে পড়ার পর ৬ দিনেও খোজ মিলছিলনা ইরাবতি ডলফিনস ৬ প্রজাতির ডলফিনের।

অনেকে আশংকা করেছিল তার অভয়াশ্রম শ্যালা নদীতে ট্যাংকার ডুবিতে তেল ছড়িয়ে পড়ার ডলফিন মারা গেছে? আবার অনেকে বলছিলো সুন্দরবন ছেড়ে চলে গেছে। না তাদের কোন ধারনাই সত্য হয়নি। ডলফিন সুন্দরবনেই রয়েছে। বঙ্গোপসাগর উপকূলে শ্যার মোহনায় তাম্বুলবুনিয়া,ককিলমুনি,হরিনটানা কটকা-কচিখালী এলাকায় নিরাপদ আশ্রয় নিয়েছে। দল বেধে তারা ঘুরে ফিরছে সেখানে। অনেক বনজীবীদের কাছ থেকে একই তথ্য মিলেছে। পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের ডিএফও আমির হোসাইন চৌধুরী সোমবার বিকালে এই গুড নিউজটি নিশ্চিত করেছেন।

এদিকে ট্যাংকার ডুবির ঘটনায় দায়ী ৪ কর্মচারীসহ এমভি টোটাল ট্যাঙকারটিকে সোমবার দুপুরে আটক করেছে নারায়নগঞ্জ থানা পুলিশ। পূর্ব সুন্দরবনের চাদঁপাই রেঞ্জের মৃগমারি থেকে আন্ধারমানিক পর্যন্ত আরও ১২ কিলোমিটার নতুন এলাকায় তেল অপসারণ শুরু হয়েছে। এ কাজে বন সংলগ্ন মংলা উপজেলার ৭/৮ গ্রামের মানুষ অংশ নিয়েছে। সুন্দরবন বিভাগের শতাধিক নৌকায় দুই’শ শ্রমিক তেল অপসারণে কাজ করছেন। তেল অপসারণে এলাকাবাসীকে উৎসাহিত করতে প্রতি লিটার তেল আরও ১০ টাকা সংযোজন করে ৪০ টাকায় ক্রয় করা হচ্ছে। রবিবার দুপুর থেকে বাড়তি মূল্যে তেল ক্রয় করা হচ্ছে বলে পদ্মা অয়েল কোম্পানীর ঠিকাদার রফিকুল ইসলাম বাবুল জানিয়েছেন। বন বিভাগ ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাইকিং ও জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে ভাসমান তেল অপসারণে এলাকাবাসীকে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।


পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের ডিএফও আমির হুসাইর চৌধুরী জানান, সুন্দরবনের নদী-খাল থেকে তেল অপসারণের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। তেল লেগে থাকা গাছের গোড়ায় স্প্রে করা শুরু করেছে সুন্দরবন বিভাগ। আরও এলাকা ও খালে এ অভিযান চালানো হচ্ছে। দুই/তিন দিনের মধ্যে এখানে বন ও খালে থাকা তেলের অধিকাংশ সংগ্রহ করা সম্ভব হবে বলে তিনি দাবী করেন।


ভাসমান তেল অপসারণ চলছে
সুন্দরবনে শ্যালা নদীতে গত মঙ্গলবার ভোরে ‘ওটি সাউদার্ন স্টার-৭’ নামের অয়েল ট্যাংকার র্দূঘটনার পর সুন্দরবনে ছড়িয়ে পড়ে ৩ লাখ ৫৭ হাজার ৬শ ৬৪ লিটার ফার্নেস অয়েল অপসারনে এগিয়ে এসেছে সাধারন মানুষ। সুন্দরবনের ভাসমান এই তেল সর্ব সাধারনকে উঠিয়ে নিতে ও পদ্ম অয়েল কোম্পানী তা কিনে নেবে বলে মাইকিং করা হয়। প্রথম দু’দিনে ৩০ টাকা দরে ও রবিবার থেকে সুন্দরবনের ভাসমান তেল সাধারনের কাছ থেকে ৩০ টাকার পরির্বতে লিটার প্রতি ৪০ টাকায় কিনছে পদ্ম অয়েল কোম্পানী । প্রথম দিন বৃহস্পতিবার পদ্ম অয়েল কোম্পানী কেনে ৫ হাজার লিটার, শুক্রবার কেনে ১৮ হাজার লিটার ও রবিবার কিনেছে ১৭ হার লিটার। সোমবার বিকাল পযার্ন্ত পদ্ম অয়েল কোম্পানী কেনেছে ১৬ হাজার লিটার।


সুন্দরবন বিশেষজ্ঞদের উদ্বেগ
সেভ দ্যা সুন্দরবন ফাউন্ডেশন চেয়ারম্যান ড. শেখ ফরিদুল ইসলাম জানান, পলি পড়ে ঘষিয়াখালী-মংলা আন্তজার্তিক নৌ চ্যানেলটি ২০১১ সালের এপ্রিলে বন্ধ হয়ে যায়। ঘষিয়াখালী-মংলা আন্তজার্তিক নৌ চ্যানেলটি খননের কাজ পুনরায় ২২শে মে ২০১৪ শুরু হয়। কিন্তু গত কয়েক মাসে কোন উল্লেখ যোগ্য অগ্রগতি না হওয়ায় নৌ চলাচল সম্পূর্ন বন্ধ হয়ে যায়। ২০১১ সালের এপ্রিল থেকে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় সুন্দরবনের ভিতর দিয়ে বলেশ্বর-জয়মনিকে বিকল্প রুট হিসাবে ব্যবহার শুরু করে। মাত্র তিনমাস নৌযান চলাচলের কথা বলা হলেও প্রায় চার বছর ধরে চলছে সব ধরণের নৌযান। সুন্দরবন বিভাগের আপত্তি উপেক্ষা করে প্রতিদিন এই বিকল্প রুট দিয়ে প্রায় দুই শতাধিক জাহাজ ও কার্গো ভ্যাসেল চলাচল করায় ক্ষতিগগ্রস্ত হচ্ছে সুন্দরবন। মহাবিপর্যয়ে সুন্দরবনের জীব বৈচিত্রের অফুরন্ত ক্ষতি হবে। হুমকির মুখে পড়বে সুন্দরবন সংলগ্ন লাখ লাখ মৎসজীবি মানুষের জীবন-জীবিকা । গত মঙ্গলবার ভোরে দুর্ঘটনা ঘটে এবং এরই মধ্যে ৫ দিন পার হয়ে গেলেও শুধু ট্যাংকারটি টেনে তোলা ছাড়া দুর্যোগ মোকাবেলায় কার্যকর কোন পদক্ষেপ চোখে পড়ছে না। আমরা মনে করি, সরকারের উচিত অনতিবিলম্বে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি,সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী,প্রশাসনসহ সকলকে নিয়ে পরিস্থিতি মোকাবেলা করা প্রয়োজন হয়ে পড়েছে।


আগেও তেলে ডুবে ছিল সুন্দরবন
শুধু এবার নয়। ১৯৯৪ সালে এমভি পাবলিনা নামের একটি বিদেশী জাহাজ মংলা বন্দরের অদুরে পশুর নদীর বানিশান্তা এলাকায় ডুবে যায়। ওই জাহাজে থাকা ১শ ৯৩ টন তেল ছড়িয়ে পড়ে সুন্দরবনে। ওই জাহাজ ডুবির সময় পশুর নদীতে ভাটা থাকায় তেলের একটি বিরাট অংশ ভেসে নেমে যায় বঙ্গোপসাগরে। সে কারনে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পায় ওয়ার্ল্ড হ্যারিটেজ সুন্দরবন।


কার্গোটিকে রূপান্তর করা হয় জ্বালানী ট্যাংকারে
জ্বালানী তেলের ট্যাংকারসহ সব ধরনের কার্গো ও লাইটারেজ জাহাজের লাইসেন্স দেয়ার কর্তৃপক্ষ হচ্ছে সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তর। দেশের কুইক রেন্টারের জোয়ারের সময় হটাৎ করেই কার্গোটি ট্যাংকার ‘ওটি সাউদার্ন স্টার-৭’ নামে জ্বালানী তেলবাহী জলযানে রূপান্তর করা হয়। সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তর থেকে ছাড় পত্র না নিয়ে ‘ওটি সাউদার্ন স্টার-৭’ ছাড়পত্র নেয় পেট্রো বাংলার কাছ থেকে।


পর্যটক শূন্য সুন্দরবন
শীত মৌসুম হচ্ছে সুন্দবনের পর্যটন মৌসুম। শ্যালা নদীতে ট্যাংকার ডুরি আগের দিনেও সুন্দরবনের পর্যটন স্পট গুলোতে ছির দেশী-বিদেশী পর্যটকদের উপচেপড়া ভীড় । দূঘটনার পাল্টে গেছে দৃশ্যপট। করমজল, কটকা,কচিখালী, হিরন পয়েন্ট, টাইগার পয়েন্টসহ পর্যটন স্পটগুলোতে এখন আর পর্যটক নেই। দুর্ঘটনার পর দেশী-বিদেশী পর্যটকদের উপচেপড়া ভীড় নেই সব থেকে কাছের করমজল পর্যটন কেন্দ্রেও নেই বলে জানান কর্মকর্তা আ: রব। একই কথা জানালেন ট্যুর অপারেটর আব্দুল্লাহ বনি। তিনি জানান, ট্যাংকার র্দূঘটনার পর দেশী-বিদেশী পর্যটকরা তাদের বুকিং বাতিল করেছে। ট্যুরিস্ট লঞ্চ ও গাইডরা অলস সময় কাটাচ্ছে।

(একে/এএস/ডিসেম্বর ১৫, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

২৬ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test