E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্বে মুসল্লিদের ঢল

২০১৫ জানুয়ারি ০৯ ১৭:৩৮:৪৩
বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্বে মুসল্লিদের ঢল

গাজীপুর প্রতিনিধি : দেশ বিদেশের লাখ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসল্লির অংশগ্রহণে টঙ্গীর তুরাগ নদীর পূর্ব তীরে শুক্রবার থেকে শুরু হয়েছে ৫০তম বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব। ইতিমধ্যে মুসল্লিদের আগমনে শিল্প শহর টঙ্গী এখন ধর্মীয় নগরীতে পরিণত হয়েছে। ২০ দলের ডাকা অবরোধের কারণে সৃষ্ট নানা দুর্ভোগ ও প্রতিকূলতারকে উপেক্ষা করে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন স্থান থেকে মুসল্লিরা জামাতবদ্ধ হয়ে এখনো ইজতেমা স্থলে আসছেন।

শুক্রবার আনুষ্ঠানিক ভাবে শুরু হলেও মূলত বৃহস্পতিবার আসরের পর থেকেই পাকিস্তানের মাওলানা হযরত মো. এহসানের আ’ম বয়ানের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে বিশ্ব ইজতেমার মূল কাজের ১ম পর্ব। ভারতের মাওলানা আহম্মদ লাট ইজতেমা ময়দানে আগত মুসল্লিদের উদ্দেশ্যে ঈমান, আমল ও আখলাকের প্রাক বয়ান শুরু করেন। বয়ান বাংলায় তরজমা করেন বাংলাদেশের মাওলানা মো. আব্দুল মতিন। পাশাপাশি বিভিন্ন ভাষায় এই বয়ান তরজমা করা হচ্ছে।

বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্বে পুরো ময়দানকে ৪০টি খিত্তায় ভাগ করা হয়েছে। প্রথম পর্বে দেশের ৩২ জেলার মুসল্লিরা অংশ নিচ্ছেন। ইজতেমা স্থলের চারদিকে যতদূর চোখ যায় শুধু সাদা টুপি ও পাঞ্জাবী পরিহিত মানুষ আর মানুষ।

শুক্রবার বাদ ফজর তাবলীগ জামাতের শীর্ষ স্থানীয় মুরব্বী পাকিস্তানের হযরত মাওলানা এহসান মূল মঞ্চ থেকে উর্দু ভাষায় প্রদত্ত তার এই বয়ান একইসাথে বাংলায় ভাষান্তর করেন স্বাগতিক বাংলাদেশের তাবলীগ মুরব্বী মাওলানা আব্দুল মতিন। শুরুতেই জুমা বার হওয়ায় সকাল থেকে টঙ্গী ও এর আশপাশের লোকজন ইজতেমায় বৃহত্তর জুমার নামাজে অংশ নিতে পায়ে হেঁটে ইজতেমা ময়দানে আসতে শুরু করেন। শুক্রবার বাদ ফজর থেকে ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের জিকির আসকার ইবাদত বন্দেগীতে টঙ্গী এখন এক পবিত্র পুণ্যভূমিতে পরিণত হয়। জুমার নামাজকে ঘিরে ভোর থেকেই তুরাগ তীরে জন স্রোতের ঢল নামে। ইজতেমার প্রথম দিনেই ইজতেমা মাঠে অনুষ্ঠিত হয় বৃহত্তম জুমার নামাজ। আয়োজকদের ধারণা, আনুমানিক ১০ লক্ষাধিক মুসল্লি জুমার নামাজ আদায় করেছেন।

শুক্রবার জুমা নামাজের আগে বয়ান করেন বাংলাদেশের তাবলীগ মুরব্বী মাওলানা মোহাম্মদ হোসেন। স্মরণ কালের বিশাল জুমার নামাজের ইমামতি করেন ঢাকার কাকরাইল মসজিদের খতিব মাওলানা হাফেজ মোহাম্মদ যুবায়ের। বেলা পৌনে দুইটায় জুমার নামাজ আদায় করা হয়।

ইজতেমা মাঠে জুমার নামাজের বিস্তৃতি
জুমার নামাজ আদায় করতে রাজধানীর আশেপাশের বিভিন্ন এলাকা থেকে বিপুল সংখ্যক মুসল্লি ছুটে আসেন। ইজতেমার মাঠ উপচিয়ে জামাত চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। ঢাকা-ময়মনসিংহ রোডের পাশ ঘেঁষে ইজতেমা মাঠের উত্তর দিকের রাস্তায়ও জামাত দাঁড়ায়। মূল প্যান্ডেলে জায়গা না পেয়ে অগণিত মুসল্লিদের রাস্তায় কিংবা মহাসড়ক ও খোলা জায়গার উপর খবরের কাগজ, জায়নামাজ, পলিথিন ও হোগলা বিছিয়ে নামাজ আদায় করতে দেখা গেছে। বেলা পৌণে দুইটায় অনুষ্ঠিত বৃহত্তম এ জুমার নামাজের ইমামতি করেন কাকরাইল মসজিদের ইমাম মাওলানা হাফেজ জুবায়ের। এবার বিশ্ব ইজতেমার মূল মঞ্চের বাইরে তুরাগ নদীর পশ্চিম পাড়ে বিশেষ ভাবে স্থাপিত মঞ্চ থেকে জুমার নামাজের ইমামতি করা হয়। বাদ ফজর হতে মাগরিব পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে দেশ-বিদেশের শীর্ষস্থানীয় আলেমগণ ঈমান, আমল ও দাওয়াতের মেহনত স¤পর্কে অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ সারগর্ভ বয়ান করেন।

প্রথম দিনের বয়ানকারীগণ
প্রথম দফার প্রথম দিনে বাদ ফজর ভারতের হযরত মাওলানা এহসান, বাদ জু’মা ভারতের মাওলানা শওকত, বাদ আছর বাংলাদেশের ঢাকার কাকরাইল মসজিদের খতিব মাওলানা হাফেজ মোহাম্মদ যুবায়ের ও মাগরিবের নামাজের পর থেকে বয়ান করবেন দিল্লির মাওলানা মোহাম্মদ সা'দ।

প্রথম দিনের বয়ানে যা বলা হয়:
বয়ানে বক্তাগণ বলেন, যতদিন দ্বীন থাকবে, তত দিন দুনিয়া থাকবে। আর দ্বীন টিকে থাকবে দাওয়াতের মাধ্যমে। যুগে যুগে নবী-রাসুলগণ দ্বীনের দাওয়াতের কাজ করে গেছেন। ফেরাউনের কাছেও দ্বীনের দাওয়াত পৌঁছে দিতে আল্লাহ হযরত মুসা (আ:) কে পাঠিয়েছিলেন। নবী-রাসুলদের আল্লাহ নিজের পরিবার ও বিভিন্ন গোত্রের মানুষের কাছে দ্বীনের দাওয়াত দেয়ার জন্য পাঠিয়েছেন। হযরত মুহাম্মদ (সা:) কে সারা দুনিয়ায় দ্বীনের দাওয়াত দেয়ার জন্য পাঠিয়েছিলেন। আজ তিনি নেই। এ কাজের জিম্মাদারী এখন তার উম্মতের উপর।

বয়ানে আরো বলা হয়, জুম্মার দিন, একটি পবিত্র দিন। সবচেয়ে উত্তম দিন হলো জুমার দিন। এটি হলো সবচেয়ে বড় ও সম্মানি দিন। এটি দু’ ঈদের চেয়েও ফজিলতপূর্ণ। এদিনে হযরত আদম (আ.) কে সৃষ্টি করা হয়। এদিনই দুনিয়া ধ্বংস হবে। এদিনে আল্লাহ্র কাছে যা চাইবে, আল্লাহ তা তাকে দেবেন। জুমা’র নামাজ আদায়ের লক্ষ্যে গোসল-ওজু করে মসজিদের উদ্দেশ্যে রওনা হওয়ার পর থেকে তার নেকী লেখা হয়। আমরা যা করবো আল্লাহকে রাজি করার জন্য করবো। আল্লাহ পাকের হুকুম মতো আমরা যেন সারা জীবন চলতে পারি সে চেষ্টা করতে হবে। এখান থেকে শিক্ষা নিয়ে দেশে ও সারা দুনিয়ায় মানুষের মাঝে দীন কায়েম করার জন্য ছড়িয়ে পড়তে হবে।

বয়ানের তরজমা
বিশ্ব ইজতেমায় বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানের তাবলিগ মারকাজের ১৫-২০জন শুরা সদস্য ও বুজর্গ বয়ান পেশ করবেন। মূল বয়ান উর্দূতে হলেও বাংলা, ইংরেজী, আরবি, তামিল, মালয়, তুর্কি ও ফরাসি ভাষায় তাৎক্ষনিক অনুবাদ হচ্ছে। বিদেশী মেহমানদের জন্য মূল বয়ান মঞ্চের উত্তর, দক্ষিণ ও পূর্বপাশে হোগলা পাটিতে বসেন। বিভিন্ন ভাষাভাষি মুসল্লিরা আলাদা আলাদা বসেন এবং তাদের মধ্যে একজন করে মুরুব্বী মূল বয়ানকে তাৎক্ষণিক অনুবাদ করে শুনান।

হজ্বের পর মুসলমানদের দ্বিতীয় বৃহত্তম সমাবেশ হলো এ বিশ্ব ইজতেমা। তাবলীগ জামাতের উদ্যোগে প্রতি বছর টঙ্গীর তুরাগ নদীর তীরের ১৬০ একর এলাকা জুড়ে বিশাল চটের ছাউনীর নিচে এ ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়। এখানে তাবলীগ জামাতের শীর্ষ আলেম (মুরব্বি)’রা দ্বীনের বয়ান করেন। বিশ্বের প্রায় সব মুসলিম দেশর তাবলীগ জামাতের অনুসারী ও ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা এ ইজতেমায় অংশ নেন। তারা বয়ান শুনেন এবং ইসলামের দাওয়াতী কাজ বিশ্বব্যাপি পৌঁছে দেওয়ার জন্য জামাতবদ্ধ হয়ে বিশ্ব ইজতেমা থেকেই দাওয়াতি কাজে বের হন।

ইজতেমায় মুসল্লির মৃত্যু :
বিশ্ব ইজতেমায় এসে গত বৃহস্পতিবার রাতে আব্দুর রহিম নামের এক মুসল্লির মৃত্যু হয়েছে। তিনি সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ছিলেন বলে জানা গেছে। শুক্রবার বাদ জু’মা ইজতেমা ময়দানে তার জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়া শুক্রবার জুমার নামাজের পর ইজতেমা ময়দানে দু’জনের নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। ইজতেমার বাইরে মারা যাওয়া এ দুজনকে ইজতেমা ময়দানে এনে জানাজা পড়ানো হয়।

বিশ্ব ইজতেমার কর্মসূচি
বিশ্ব ইজতেমার কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে আম ও খাস বয়ান, তালিম, তাশকিল, ৬ উছুলের হাকিকত, দরসে কোরআন, দরসে হাদিস, চিল্লায় নাম লেখানো, নতুন জামাত তৈরি, যৌতুক বিহীন বিয়ে।

নিরাপত্তা ব্যবস্থা
ইজতেমা মাঠের সার্বিক নিরাপত্তায় পুলিশ ও র‌্যাব কন্ট্রোল রুম ও ওয়াচ টাওয়ার স্থাপন করেছে। সিসি ক্যামেরা মাধ্যমে সার্বিক নিরাপত্তা কন্ট্রেল রুম থেকে মনিটরিং করা হচ্ছে। খিত্তায় খিত্তায় সাদা পোশাকে আইনশৃংখলা বাহিনী সদস্যরা অবস্থান করছেন। জানা গেছে, পুলিশ ও র‌্যাব সদস্যরা ৫টি করে স্তরে বিভক্ত হয়ে পোশাকে ও সাদা পোশাকে দায়িত্ব পালন করছেন। এ ছাড়া বাইনোকুলার, মেটাল ডিটেক্টর, নৌ-টহল, চেকপোষ্ট। দু’পর্বের ইজতেমার মূল ৬দিন র‌্যাবের হেলিকপ্টার টহল দিবে বলে র‌্যাব সূত্রে জানা গেছে।

ভ্রাম্যমাণ আদালতের জরিমানা
জেলা প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণ কক্ষের দায়িত্ব প্রাপ্ত নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট সাজিদ আনোয়ার জানান, টঙ্গী বিশ্ব ইজতেমা মাঠ ও আশপাশ এলাকার হোটেল রেস্তোরায় শুক্রবার বিকাল পর্যন্ত দুই দিনে মোট ১৬টি ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান পরিচালিত হয়। অভিযানে খাদ্যে ভেজাল ও ক্ষতিকর খাদ্য দ্রব্য রাখা ও বিক্রয়ের অভিযোগে বিশুদ্ধ খাদ্য আইনে পৃথক ১৬টি মামলা ও সাড়ে ৪৪ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়।

প্রথম দিনে বিভিন্ন দেশের প্রায় ৫ হাজার বিদেশি মুসল্লি
গাজীপুরের পুলিশ সুপার মুহাম্মদ হারুন অর রশীদ পিপিএম জানান, ইজতেমার পর্বের প্রথম দিন আমেরিকা, আরব, ভারত, পাকিস্থান, ইংল্যান্ডসহ বিশ্বের ৫১টি দেশের প্রায় ৫ সহ¯্রাধিক মুসল্লি ইজতেমায় অংশ নিয়েছেন। আরো অনেক দেশের কয়েক হাজার মুসল্লি আজ শনিবার ইজতেমা ময়দানে আসার পথে রয়েছেন। বিভিন্ন ভাষা-ভাষী ও মহাদেশ অনুসারে ইজতেমা ময়দানে বিদেশী মেহমানদের জন্য মোট ৩টি ট্যান্ট নির্মাণ করা হয়েছে। সেখানে তাদের জন্য প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রীর ইজতেমা মাঠ পরিদর্শন
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আকম মোজাম্মেল হক এমপি শুক্রবার সকালে ইজতেমা মাঠ পরিদর্শন করেছেন। এসময় তিনি পুলিশের কন্ট্রোল রুমের কাছে সাংবাদিকদের বলেন, আমরা ধর্ম নিরপেক্ষতায় বিশ্বাস করি কিন্তু ধর্মহীনতায় না। ১৯৯৬ সালে সরকারে আসার পর আমরাও বিশ্ব ইজতেমার সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে টয়লেট, পানি, রাস্তাঘাট, মুসল্লিদের নিরাপত্তা, সুযোগ সুবিধা, সরকার অত্যান্ত গুরুত্ব দিয়ে কাজ করে যাচ্ছি।

মন্ত্রী বলেন,অবরোধের কারণে মুসল্লিদের ইজতেমা ময়দনে আসতে অনেক সমস্যা হয়েছে। তার পরও বহু কষ্ট করে কিছু দূর হেঁটে, কিছু দূর গাড়িতে করে নানা প্রতিকূলতা অতিক্রম করে তারা ইজতেমা মাঠে এসে পৌঁছেছেন। আমরা বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা করেছিলাম। কিন্তু রেল লাইন উপড়ে ফেলে ছিল। দ্রুত মেরামতের কাজ চলছে। মুসল্লিদের সহমর্মিতা প্রকাশ করছি। এ সময় উপস্থিত ছিলেন গাজীপুরের পুলিশ সুপার মুহাম্মদ হারুন অর রশীদ, জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকট আজমত উল্লাহ খান প্রমুখ।

মন্ত্রী আরো বলেন, অবরোধের কারণে তাদের যে কষ্ট হয়েছে তা অত্যান্ত দুঃখজনক। সব চাইতে দুঃখজনক বিএনপির একজন বুদ্ধিজীবী বলেছেন, মুসল্লিরা নাকি টঙ্গীতে পিকনিক করতে আসে। আমি তার বক্তব্যের তীব্র নিন্দা জানাই। আমাদের দলের একজন মন্ত্রী ধর্ম বিরোধী কথা বলায় তাকে দল থেকে বহিস্কার করেছি। মন্ত্রী সভা থেকেও তাকে বাদ দিয়েছি। আমি আশা করি বিএনপি যদি সত্যিকারে ইসলাম বিশ্বাস করে তারাও এ ধরণের পদক্ষেপ নিবে।

যারা ধর্মহীনতায় বিশ্বাস করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন বলে মনে করি। অবরোধ প্রত্যাহার করার জন্য বিএনপির প্রতি অনুরোধ জানান। তিনি বলেন, ইজতেমায় মুসল্লিদের আসার জন্য সরকার রাস্তায় ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।

জুমার নামাজে ভিআইপিরা
শুক্রবার ইজতেমা ময়দানে জুমার নামাজ আদায় করেন প্রধান বিচারপতি মোজাম্মেল হক, মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রী আকম মোজাম্মেল হক এমপি, স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক আইনমন্ত্রী আব্দুল মতিন খসরু এমপি, জাহিদ আহসান রাসেল এমপি, পুলিশের ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি এসএম মাহফুজুল হক নুরুজ্জামান, গাজীপুরের জেলা প্রশাসক মোঃ নূরুল ইসলাম, পুলিশ সুপার মুহাম্মদ হারুন অর রশীদ পিপিএম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ দেলোয়ার হোসেন ও মিজানুর রহমান।

আজ যৌতুক বিহীন বিয়ে
ইসলামিক শরিয়া অনুযায়ি আজ শনিবার বাদ আসর শতাধিক যৌতুকবিহীন বিয়ে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। সকাল থেকে ওইসব বিয়ের জন্য বয়ান মঞ্চের কক্ষেই বর-কনের নাম তালিকাভুক্ত করা হবে। বাদ আসর বিয়ের কাজ সম্পন্ন হবে।

টঙ্গী হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা
টঙ্গী হাসপাতাল ও সিভিল সার্জনের তত্ত্ববধানে পরিচালিত ৩টি মেডিক্যাল ক্যাম্পে ও টঙ্গী হাসপাতালে শুক্রবার সকাল ৮টা পর্যন্ত গত দু’দিনে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত ২ হাজার ৭৮১ মুসল্লি প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন। এদের মধ্যে শ্বাস কষ্ট, হৃদরোগ ও ডায়েরিয়া জনিত কারণে ৯ জনকে ঢাকায় রেফার্ড করা হয়েছে। ৬ জন কে টঙ্গী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন গাজীপুরের সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ আনিসুর রহমান। এছাড়াও ইজতেমাস্থলের আশপাশে প্রায় অর্ধশত ফ্রি-মেডিক্যাল ক্যাম্পে কয়েক হাজার মুসল্লি চিকিৎসা নিয়েছেন।

ইজতেমায় স্বাস্থ্য সেবা
ইজতেমায় স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে ঢাকা বিভাগের ১৭টি জেলা থেকে শতাধিক চিকিৎসককে আনা হয়েছে। মুসল্লিদের বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা দিতে মন্নু গেট, এটলাস গেট, বাটা কারখানার গেট ও টঙ্গী হাসপাতালমাঠসহ ছয়টি অস্থায়ী মেডিক্যাল ক্যা¤প স্থাপন করা হয়েছে। এখানে হৃদরোগ, অ্যাজমা, ট্রমা, বার্ন, চক্ষু এবং ওআরটি কর্নারসহ বিভিন্ন ইউনিটে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকগণ চিকিৎসা দেবেন। মুসল্লি রোগীদের হাসপাতালে নেওয়ার জন্য সার্বক্ষণিক ১৪টি অ্যাম্বুলেন্স মোতায়েন থাকবে।

ইজতেমায় ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প
বৃহস্পতিবার থেকে বিশ্বইজতেমায় আগত মুসুল্লিদের স্বাস্থ্য সেবা দিতে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা কাজ করছে। এবার প্রায় অর্ধশত স্বেচ্ছাসেবী, সরকারি ও বেসরকারী সংস্থা স্বাস্থ্য সেবা প্রদান করছে বলে জানাগেছে। মন্নুনগর এলাকায় হামদর্দ ফ্রি-মেডিক্যাল ক্যাম্প ছাড়াও গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন, গাজীপুর সিভিল সার্জন, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ আয়ুর্বেদিক ইউনানী হারবাল মেডিক্যাল সোসাইটি, রবি, জাতীয় ইমাম সমিতি-টঙ্গী শাখা, যমুনা ব্যাংক ফাউন্ডেশন, শহীদ মনসুর আলী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, জনকল্যাণ ফ্রি-মেডিক্যাল ক্যাম্প, ইবনে সিনা, আঞ্জুমান মফিদুল ইসলাম, র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন’র ফ্রি মেডিক্যাল ক্যাম্প বৃহস্পতিবার থেকে মুসল্লিদের চিকিৎসা সেবা শুরু করেছেন। সংশ্লিষ্টরা জানান, চিকিৎসা নিতে আসা মুসল্লিদের অধিকাংশই জ্বর, ঠান্ডা, পেটের পীড়া জনিত রোগে আক্রান্ত।

মাইক স্বল্পতা
মাইকের স্বল্পতার কারণে ইজতেমা মাঠের বাহির যারা জুমার নামাজে অংশ গ্রহণ করেছেন তাদের অনেকেই নামাজের তাকবির ও বয়ান শুনতে পাননি বলে অভিযোগ করেছেন। মুসল্লিদের দাবি সামনের দিনগুলোতে ইজতেমা কর্তৃপক্ষ যেন ময়দানের চর্তুপাশের এক কিলোমিটার পর্যন্ত মাইকের ব্যবস্থা করে।

ওজুর ও গোসলের পানি
ইজতেমা ময়দানে পানির অপ্রতুলতার কারণে মুসল্লিদের আশপাশ এলাকা থেকে ওজু ও গোসল করা জন্য পানি ক্রয় করতে হয়েছে। তারা ওজুর পানি ১০টাকা এবং গোসলের পানি ২৫ টাকা দরে ক্রয় করেছেন। ঢাকার যাত্রাবাড়ি থেকে আসা মুসল্লি মিন্টু রহমান জানান, ‘ময়দান থেকে পানি সংগ্রহে কষ্টের কারনে বাহির থেকে ১০ টাকা প্রতি বদনা পানি ক্রয় করে নামাজের জন্য ওজু করছি।’

যানজটের কবলে মুসল্লিরা
শুক্রবার ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক, কালিগঞ্জ সড়ক ও আশুলিয়া-সাভার সড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। বাস, মিনিবাস, ট্রাক, অটোরিকশাসহ বিভিন্ন ধরনের যানবাহনগুলো এ সময় ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকা পড়ে থাকে। ইজতেমায় আসা লাখ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসল্লি¬ এ সময় হেঁটে ইজতেমাস্থলে আসেন। এছাড়া জুমা নামজের পরও মুসল্লিদের প্রচন্ড ভিড় থাকায় যানজটের সৃষ্টি হয়। তীব্র যানজটের কারণে মুসল্লি¬দের বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা যানজট নিয়ন্ত্রণ করতে হিমসিম খেতে হয়েছে।

পুলিশ- র‌্যাবের নিছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে শুরু হওয়া বিশ্ব ইজতেমা এবারও দুই পর্বে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ১১ জানুয়ারী আখেরী মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে প্রথম পর্ব। দ্বিতীয় পর্ব শুরু হবে ১৬ জানুয়ারি এবং একই ভাবে শেষ হবে ১৮ জানুয়ারি।

ইজতেমার মুরুব্বীদের দেয়া তথ্যমতে, ১৯৪৬সালে প্রথম কাকরাইল মসজিদে ইজতেমার আয়োজন শুরু করা হয়। তারপর ১৯৪৮সালে চট্টগ্রামের হাজী ক্যাম্পে ও ১৯৫৮সালে নারায়নগঞ্জের সিদ্ধরগঞ্জে ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর লোকসংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় ১৯৬৬সালে গাজীপুরের টঙ্গীর তুরাগ নদীর তীরে বর্তমানস্থলে স্থানান্তর করা হয়েছে। পরে সরকারীভাবে তুরাগ তীরের ১৬০একর জমি স্থায়ীভাবে ইজতেমার জন্য বরাদ্দ দেয়া হয়।

মিডিয়া সেন্টার স্থাপন
বিশ্ব ইজতেমায় এবারই প্রথম সাংবাদিকদের জন্য মিডিয়া সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে। গাজীপুরের পুলিশ সুপার মুহাম্মদ হারুন অর রশীদ পিপিএম-এর উদ্যোগে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের কন্ট্রোল রুম সংলগ্ন স্থাপিত মিডিয়া সেন্টারে সাংবাদিকদের কাজের সুবিধার জন্য বিনামূল্যে দ্রুত গতির ইন্টারনেট সুবিধা, টেলিফোন, সার্বক্ষণিক বিদ্যুত ব্যবস্থা রয়েছে। এছাড়াও পুলিশের পক্ষ থেকে সাংবাদিকের জন্য চা নাস্তাসহ দুপুরের খাবারের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

(এসএএস/এএস/জানুয়ারি ০৯, ২০১৫)

পাঠকের মতামত:

২৫ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test